চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩০

0
2167

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩০
লেখা আশিকা জামান

” ইশ্ রে দেখ পোলাডা কি সুইট! অনন্যা দেখ না। কিছু একটা কর দোস্ত।” দীশা অনন্যার কাধ ঝাকাতে ঝাকাতে, তাদের ঠিক দুই টেবিল পরের কোণার দিকের ঝাকড়া চুল ওয়ালা ছেলের দিকে ইশারা করল।
অনন্যা কুঞ্চিত চোখে তাকিয়ে অনুভূতিশূন্য হয়ে রইল। নিনিত আড়চোখে ব্যাপারটা লক্ষ্য করে এবার মুখ খুলে,

“অনন্যা, তোর কি হয়েছে রে? এমন মন মরা হয়ে বসে আছিস ।”

” হয়নি কিছু!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” তাহলে!” দীশার উচ্ছ্বাসে ভাটা পরে।

” তাহলে আবার কি! দীশা প্রত্যেকদিন দুই চাইটা ক্রাশ খায় এ আর নতুন কি? এর জন্যে ওই নীরিহ পোলাডারে পটাইয়া ওর ঘাড়ে ঝুলানোর মত পাপ আমি করতে পারুম না। মাফ চাই!”

” কি?” দীশা লাল টমেটোর মতো ফুলে ফেঁপে রইল। তাতেও অনন্যার ভ্রুক্ষেপ হল না।

” আমি মোটেও দীশাকে নিয়ে ভাবছি না! ভাবছি তোকে নিয়ে? আমাদের আজকে মিট করার কথা ছিলো এবং প্ল্যানটা তোর ছিল। কিন্তু তুই কি করলি? লাস্ট মুহুর্তে এসে বললি আসবি না। ব্যাপারটা গোলমেলে নাহ!”

” সবসময় মুড একরকম থাকে না। তাছাড়া তোরা কি আমার নিষেধের তোয়াক্কা করেছিস, ধরে বেধে ঠিক নিয়াসছিস।”

” তোর হিরোর কি খবর! কেমন সময় টময় দেয়। তুই যে হিরোকে পেয়ে আমাদের ভুলেই গেছিস এটা তো প্রমাণিত! ”

” এই ইতর শ্রেণীর লোকের কথা আর একবারের জন্যেও মনে করিয়ে দিবি না।”

” মনের ভেতর তো ঢুকে বসে আছে! তাকে কি অন্য কারো মনে করিয়ে দিতে হয়।”

অন্যার বুকের রক্ত ছলকে উঠল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। চোখের কোণে জল চিক চিক করে উঠল। বান্ধবীদের উৎকন্ঠা ক্রমশ বেড়ে গেল। দীশা অনন্যার পিঠে স্পর্শ করতেই অনন্যা কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে বলল,
” এতদিন বলত সে আমাকে ফ্রেন্ড ভাবে , তবে ভালোবাসেনা, কিন্তু বিয়ে করতে রাজি। আর আজ সকালে বলে ভালোবাসে কিন্তু বিয়ে তে রাজি নয়। তোরাই বল বেছে বেছে এমন অদ্ভুত মানুষকেই কেন আমার ভালোবাসতে হবে! বিশ্বাস কর এমন জটিল অবস্থায় আমি জীবনেও পরিনি। মোরাল অফ দ্যা স্টোরি এতকিছুর পর এই বালটারেই ভাল্লাগে!”

দীশা, নিনিত এমন কথা শুনে হাসবে না-কি কাঁদবে বুজে উঠতে পারে না। এমন আজগুবি কথাবার্তা তারা জীবনেও শোনে নি। একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিল।
” ভালোবাসে তো বিয়া করতে কি সমস্যা! আবার ইয়ে ঠিয়ে’র সমস্যা না তো! ” নীনিত কিছু না বুঝেই বলে উঠল।

অনন্যা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত গলায় বলে, ” মা-নে? ”

” মা-নে, আরে তুই বুঝিস না! ইয়ে ওই যে ইয়ে, তুই বরং ডাক্তার দেখাইতে বল। বেশি সমস্যা হইলে তুই ও সইরা যা। খালি ভালোবাসা দিয়া কি আর সংসার চলে!”

এতোক্ষণে বিষয়টা ধরতে পেরে অনন্যা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, নিনিতের দিকে স্যান্ডেল উঁচাইয়া ধরতেই নিনিত ভয়ে চোখ মুখ কু্ঁচকে এক দৌড়। পেছনে অনন্যাও ধাওয়া।

এইসব দৌড়া দৌড়ি দেখে রেস্টুরেন্ট তখন প্রবল উত্তেজনা। দীশাও উঠতে উদ্যত হতেই
ওয়েটার এসে বলে,
” ম্যাডাম বিল! বিলটা দিয়া যান।”
এ,তো ভারী জ্বালা হলো! আজকের ট্রিটটা অনন্যার দেওয়ার কথা! এত টাকা দীশা কই পাবে! আজ তো সে টাকাই আনে নি।

****************

ইমতিয়াজ সাহেব সব শুনে নিজ ঘরে বিষন্ন মুখে বসে আছেন। অনীলা, অন্বেষা বেশ কয়েকবার অঙ্কন কে ডেকে ডেকে হয়রাণ হয়ে জিরোচ্ছে। ছেলেটা কিছুতেই দরজা খুলছে না। দুপুর থেকে অভুক্ত অনীলাও মুখে কিছু দেন নি। এবার আর কিছু ভালো লাগছে না!

ইমতিয়াজ উঠে এসে ছেলের দরজায় কড়া নাড়লেন।
উচ্চ্বস্বরে ডাকলেন,
” বাবা!, ওহ্ বাবা, আমার রাজপুত্র দরজাটা খোল বাবা। এই বুড়ো মানুষটা কে আর কষ্ট দেইস না বাপ! একটু খোল আমি কেবল একপলক দেখেই চলে যাব। কথা দিচ্ছি বিরক্ত করব না।”
দরজা খোলার শব্দ হলো। অনীলা, অন্বেষা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। অনুভূতিহীন নির্জিব এক দেহ ভেতর থেকে বের হয়ে এলো।
” দেখেছো তো, এবার আমাকে একা থাকতে দাও।” শান্ত গলায় অঙ্কন বলল।
ইমতিয়াজ ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
” তুই আমার ছেলে! আমার একমাত্র ছেলে! অনীহা-অন্বেষার বড় ভাই। এটাই সত্যি! এর চেয়ে বড় কোন সত্যি পৃথিবীতে নেই। কেউ এসে শত চেষ্টাতেও এই সত্যি টা বদলাতে পারবে না।”

অঙ্কনের যেন কি হলো! বাবার বুকের উষ্ণতম ভালোবাসায় ছোট শিশুর মতো কেঁদে দিল।
” অঙ্কন শক্ত হও। নিজেকে সামলাও। যাই হয়ে যাক না কেন তোমাকে মেন্টালি স্ট্রং থাকতে হবে! যত দূর্বল হবে শত্রুপক্ষ ততো আঘাত করবে।”

অঙ্কন চোখ মুছে এবারের মত সরে যায়। কিন্তু অন্বেষা আর অনীলা এসে আবার তাকে জাপটে ধরে।
” তুই আমার অংশ! আমার সবটুকু দিয়ে তিলে তিলে তোকে আমি মানুষ করেছি। তোর উপর আমার সব থেকে বেশি অধিকার। কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসলেই মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নিতে পারে না।”
অনীলা ছেলে কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অঙ্কন ও কাদঁছে, অন্বেষার চোখের জল ও মিলেমিশে একাকার। কার জল কোন টা পার্থ্যক্য করা বড় কঠিন।

**********************

ঘুমাতে ঘুমাতে কাল প্রায় মাঝরাতে ঘুমানো হয়েছে। আজকে সকালে যেহেতু আর কোন শিডিউল নেই তাই অঙ্কন ধরেই নিয়েছিল আজ প্রায় বেলা করে উঠবে।

কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি! এই সাত সকালে ঘরের দরজা নক করার শব্দ হচ্ছে। অঙ্কনের জানামতে এই কাজ করার দুঃসাহস কারো নেই। একমাত্র জিহাদ ছাড়া! তার আজই ফেরার কথা। তাই বলে সাতসকালে! এটা অবিশ্বাস্য!
অঙ্কন একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে দরজা খুলতে উদ্যত হয়। যেই হোক না কেন ঝারি খেতেই হবে।

” অনন্যা আপু! প্লিজ এইভাবে ধাক্কাইয়ো না! ভাইয়া রাগ করবে! বিশ্বাস করো আমাকে ঝারি দিবে। প্লিজ চলো আমরা বরং দুজনে গল্প করি। প্লিজ!”

” উঁহু! দেখি তোমার ভাই কত ঝারি দিতে পারে।”
অন্বেষা কুঞ্চিত চোখে তাকায়। এই মেয়ে সাতসকালে কি অনাসৃষ্টি ঘটাতে উদয় হয়েছে আল্লাহ মালুম!
এরমধ্যে ফাঁকা বাড়ি মা বাবা দুজনেই জগিং এ! কি যে করি!

অঙ্কন ডান হাতে চোখ কচঁলাতে কচঁলাতে দরজা খোলে। চোখে তখনও রাজ্যের ঘুম। অনন্যা অঙ্কনকে ঠ্যালে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
অঙ্কনের বুজা চোখটা মুহুর্তেই বিস্ফোরিত হয়। ভুত দেখার মত চমকে উঠে।

অনন্যা সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু নাঁচাতে থাকে।
অঙ্কন বিছানায় বসে দুই হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে বসে পড়ে। একটুপর আবার তাকায়! অনন্যাকে মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফের আবার ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়া আসে।
ঠিক আগের মতোই অনন্যা নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণে অঙ্কন শিউর হয় অনন্যা সত্যিই এসেছে। কিন্তু কেন?

” কি বসতে বলবে না!” অঙ্কন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই, অনন্যা বলল।

” হ্যাঁ, বসো!”
অঙ্কন নিজে খানিকটা সরে গিয়ে অনন্যাকে বসার জন্য নিজের যায়গা ছেড়ে দেয়। কিন্তু অনন্যা অঙ্কনের গা ঘেঁষে বসে পড়ে।
” আমাকে দেখে অবাক হয়েছো?”
” ঠিক তা না! তুমি হঠাৎ এত সকালে। বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো।”
” একটু না তোমার তো অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। তুমি আমাকে হ্যালুসিনেশন ভেবেছিলে রাইট!” কথাটা বলেই অনন্যা বিজ্ঞের মত হেসে দিলো।
অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে অনেকটা অবাকই হলো। কাল মেয়েটাকে সে খুব কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য! আজ কথাবার্তায় সেদিনের রেশ মাত্রও নেই। এভাবে এত গায়েপড়ে কাছে কেন আসছে সে? আর কতদিন নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। এবার তো নিজের খোলস থেকে বের হতেই হবে!
” কেন এসেছ?” দ্বিধাগ্রস্ত গলায় প্রশ্নটা করল।

” কেন! তোমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেছে।”

” হ্যাঁ ঘুম পাচ্ছে,আমি ঘুমাবো। তুমি যাও।”

” শোধ নিচ্ছো! আমি কালকে তোমাকে যেতে বলেছি বলে কি তুমিও বলছ।”

” আমার সত্যিই ঘুম পাচ্ছে।” অঙ্কন ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়াতে জড়াতে কথাটা বলল।

” উঁহু, তোমার জন্য কাল আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেছে এবার শাস্তিস্বরূপ তোমাকেও ঘুমাতে দিব না।” অনন্যা এক টানে ব্ল্যাঙ্কেট নিয়ে নেয়। অঙ্কন ও এক কোণা ধরে নিজের দিকে টানতে থাকে।
ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে অনন্যা, অঙ্কন দুজনেই ব্ল্যাঙ্কেট সহ বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়।
হঠাৎ কি যেন হলো, অঙ্কন অনন্যার দুই কাধসন্ধিতে হাত চেপে ধরল।
” ঠিক আছে! ঘুমাতে দিবে না তো। ওকে আমি আর ভদ্র থাকতে চাই না। ভদ্রভাবে বলেছি যাও নি এবার অভদ্র রুপটা দেখাই। তুমি নিজেই চলে যাবে।”
অনন্যা চকিতে তাকায়। অঙ্কন কি বলতে চাইছে অনন্যা বুঝে উঠতে পারে না।

চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে