চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৪

0
2329

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৪
লেখা আশিকা জামান

অনন্যার দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকাতে চাইলো।

কিন্তু শেষ চেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হলো৷ এরপরের কয়েকটা সেকেন্ড অঙ্কনের দিকে না ফিরে নিয়ন্ত্রণহীন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
অঙ্কন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



ঠিক কিভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় তা এইমুহুর্তে বুঝে উঠতে পারছে না। অঙ্কনের বুকের ভেতরে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হতে লাগলো। একসময় ব্যাথাটা সর্বাঙ্গ বেয়ে তীর তীর করে মস্তিষ্কে আলোড়িত হলো। কিন্তু মস্তিষ্ক কোন সাড়া দিলো না। অসাড়, নিস্তেজ মস্তিষ্ক ব্যাথাটা আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো।

বাঁ হাতে অনন্যা চোখ মুছে নিজেকে সামলাতে চাইলো কিন্তু জেদটা এতোটাই চেপে বসলো যে হিতাহিতজ্ঞান শুন্য হয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে উদ্যত হলো। যারপরনাই অঙ্কন অষ্টম আশ্চর্য হয়ে শক্ত হাতে অনন্যার হাত আঁকড়ে ধরে। উদ্ধত মেজাজে বাজখাঁই গলায় বললো,
“ড্যাম ইট! হ্যাভ ইউ এনি সেন্স?”
অনন্যা গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। অঙ্কনের সাথে পেড়ে উঠা হয়তো এ জীবনেও সম্ভব নয়। তবে হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী সে নয়।

অঙ্কন দ্রুত গাড়ি থামিয়ে অগ্নিগরম চোখে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বললো,
” পাগল হয়ে গেছো তুমি? চাইছো কি? আমি জেলে যাই !”
অনন্যা হীম শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। এতে অঙ্কনের খুব ইগোতে লাগলো। ভাষাজ্ঞান শূন্য হয়ে অধৈর্য্য গলায় আবার বললো,
” ল্যাংড়া হওয়ার সখ হয়েছিলো! ল্যাংড়া! তার জন্য গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ার কোন দরকার নেই। আমিই হাত পা ভেঙ্গে সারাজীবনের জন্য লেংড়া বানিয়ে রাখছি।”

অনন্যা গোঁ গোঁ শব্দে ফুঁসছিলো। একপর্যায়ে হাতের মুঠ কিঞ্চিৎ আলগা হতেই দ্রুত গাড়ি থেকে জোর খাটিয়ে নেমে পড়ে। অনন্যার এই জগৎছাড়া কার্যকলাপে অঙ্কন চরম অপমানিত বোধ করতে লাগলো। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা ক্রোধ সংবরনের নিমিত্তে হাতের মুঠ শক্ত করে বেদম জোরে স্টিয়ারিং এ ঘুষি বসায় সে। ব্যাথা পেয়ে বারবার গালে আর মাথায় হাত ঘষতে লাগলো দিশোহারা অবস্থায়।

অনন্যা রাস্তা ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে হাটছে। শরীর টলছে না কেবল বিক্ষিপ্ত মনের অবিন্যস্ত যন্ত্রণা নিবারণের আশায় কোনরকমে ঢুলে ঢুলে হাটছে। একটা লিফট যদি পেয়ে যেতো! না পেলেও হেটে যাবে তবুও অঙ্কনের সাথে আর একমুহূর্তও না।
অনন্যার দু’ চোখ ফেটে আবার জলের ফোয়ারা নামলো। ভেবেছিলো লিফট চাইবে কিন্তু চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে খেয়াল ওর নেই।
অনন্যা একটা গাড়ির সামনে থমকে দাঁড়ায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায় সেখানেও পাশাপাশি দাঁড়ানো দুটো গাড়ি সামনে অতিক্রম করতে গিয়ে বাধাঁ পেয়ে থামানো অবস্থায়। ঠিক বাম পাশের গাড়ির ড্রাইভার গলা উচিঁয়ে মুখ ভেটকিয়ে বললো,
” রাস্তাটা কি গেরামের খোলা মাঠ! যেইন্দা খুশি হেইন্দা দৌড়াবার লাগছে! সামনে থেকে হরেন নইলে এক্কেরে উপ্রে তুইলা দিমু।”
সব গাড়ি থেকেই বিরক্তভরা হর্ণের শব্দ আসতেছে।
অনন্যা ভয়ার্ত চোখে পেছনে তাকায়। রাস্তায় জ্যাম বেজে যাওয়ার উপক্রম। চোখ মুখ কুচকে স্বগতোক্তির সুরে অনন্যা বললো,
” তোর সময় থমকে গেলেও পৃথিবীতো আর থমকে যাবে না।”
হাটতে হাটতে কখন যে মাঝরাস্তায় এসে পড়েছিলো একদমই খেয়াল ছিলো না।
অনন্যা সামনের গাড়ির কাছে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তার একটু পরেই চেঁচামেচির শব্দে পেছনে ফিরতে বাধ্য হয়।

” কি বললি উপ্রে তুইলা দিবি? এত বড় বুকের কলিজা। দে উপ্রে তুইল্যা দে।” অঙ্কন ড্রাইভারের কলার ধরে গাড়ি থেকে হিড়হিড় করে টেনে বের করে বাঁম গালে সজোরে ঘুষি বসিয়ে দেয়। ড্রাইভার ঝোঁক সামলাতে না পেরে গাড়ির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যে গাড়ির ভেতর থাকা সমস্ত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। রীতিমতো একটা গোলমাল বেজে যায়। অঙ্কন আবার হাত উঠাতে উদ্যত হতেই পেছন থেকে কয়েকজন মানুষ তার হাত ধরে আঁটকায়। ড্রাইভার এতোক্ষন মার খেয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলেও এবার সেও হাত উঠাতে চলে আসলো। তাকেও লোকজন ধরে বেধে আটকালে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
” নিজের বউকে কন্ট্রোল করতে পারে না আর বালডা আইছে মাইনসের গায়ে হাত তুলতে। খানকির পোলা আমার গায়ে হাত তুলা!!”

অঙ্কনের মাথার দু’পাশের রগ দপদপ করছে। রাগে অন্ধ হয়ে অঙ্কন ফোন করতে করতে বললো,
” অসভ্য! ইতর তোর মতো ড্রাইভারদের জেলে যাওয়া উচিৎ। দেখ আমি কি করি। এক্ষুনি পুলিশকে ফোন করছি।”

” কর তোর বাপের কাছেই ফোনটা আগে কর।”
এই কথা শুনে অঙ্কন সব লোকজনকে শক্তির জোরে ছাড়িয়ে রাগে অন্ধ হয়ে ড্রাইভারকে ধরে ইচ্ছেমতো পেটাতে লাগলো।
অবস্থা তখন পরিস্থিতির বাইরে অনন্যার বোধ হয় এইবার হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা শোভন নয়। ভীড় ঠ্যালে অঙ্কনের কাছে ছুটে যায়। হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়াসে। সাথে রাস্তার লোকজনও যোগ দেয়৷ সবাই মিলে ড্রাইভারকে অঙ্কনের কাছ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়াসে। রগচটা অঙ্কনের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছিলো। ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনন্যার হ্যাঁচকা টানে ভীড় ঠ্যালে বের হতে বাধ্য হলেও রাগটা বিন্দুমাত্র কমেনি বরং তীর তীর করে বাড়ছে। ইচ্ছে করছে অনন্যার গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারতে।

” পাগল হয়ে গেছো? রাস্তাঘাটে থার্ড ক্লাস মানুষের মতো মারামারি করছো? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে! বলেনি তো! এত গায়ে লাগছে কেন? ”
অঙ্কন হতভম্ব হয়ে অনন্যার গালে ঠাস করে চড় মারে। অনন্যা স্তব্ধ হয়ে অন্য এক অঙ্কনকে দেখতে লাগলো।
” আমার সাথে যেতে যদি এতই আপত্তি তখন নাচতে নাচতে কেন এসেছিলে! এতগুলো মানুষের সামনে রাস্তায় সিনক্রিয়েট করার সময়
তোমার মনে ছিলোনা। তখন তোমার মনে হয়নি তুমি আমাকে কি পরিমাণ পেরেশানিতে রেখেছিলে। অনন্যা আমি মানুষ, আমার সহ্য ক্ষমতা বলেও একটা কথা আছে।”

অনন্যা পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসা চিবুকে হাত রেখে দু’চোখের জল আটকাতে পারলো না। চারপাশটা তখন ঝাপসা লাগছিলো।
এই ঘটনার কিঞ্চিৎ পরে অনন্যা নিজেকে অঙ্কনের কোলে আবিষ্কার করে। অনন্যা নিদারুণ বিতৃষ্ণায় হাত পা ছুড়তে থাকে। অনন্যার ব্যার্থ চেষ্টায় অঙ্কনের গলায় বারবার নখের আচড় লাগলেও অঙ্কন বিন্দুমাত্র রিএক্ট না করে বললো,
” আমি যখন সাথে নিয়েসেছি তখন বাসায় পৌছে দেয়ার দায়িত্বটাও কেবল আমার! যতই আপত্তি থাকুক না কেন এই বিষয়ে কোন কম্প্রোমাইজ আমি করবো না।” অঙ্কন চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
গাড়িতে বসাতেই রাগে ফুঁসতে ফু্ঁসতে অনন্যা হাতের রিং খুলে অঙ্কনের দিকে ছুড়ে মারতে উদ্যত হতেই অঙ্কন অব্যার্থ হাতে ধরে ফেলে৷ এরপর অনন্যার হাত খামচে ধরে শক্ত হাতে জোর খাটিয়ে অঙ্কন রিংটা স্বস্থানে পড়িয়ে দেয়।
” আমার পরিবার বড় আশা করে সসম্মানে তোমাকে এই রিংটা পড়িয়েছে৷ তোমার যদি এটা নিতেই এতোই অসম্মতি থাকে তবে সবার সামনে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দিও। প্লিজ এইভাবে ছুড়ে মেরে এই রিংটাকে অপমান করোনা৷ আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকেই ছুড়ে মারছো?”

” অপমান! তোমার মনে হয়না তুমি আমাকে অপমান করেছো?” অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে বললো।

” নাহ্ আমি তোমাকে কোন অপমান করিনি। আর প্লিজ স্টপ দিজ ননসেন্স! আমি তোমার মুখ থেকে আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।”
অনন্যা কিছুক্ষন অঙ্কনের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একরাশ ঘৃণায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
অঙ্কন নিশ্চুপভাবে ড্রাইভ করতে লাগলো। এভাবে অনন্যাদের বাসার সামনেও এসে পৌছায় কিন্তু অনন্যার কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। অঙ্কন চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝুঁকিয়ে আনে। অনন্যা একদম শান্ত হয়ে কেদেঁ কেটে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে গেছে। বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠলো। ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে। খুব খারাপ হাই লেভেলের স্টুপিড । নিজেকে ইচ্ছেমতো গাল দিলেও হয়তো আজকের ভুলগুলো শুধরানোর নয়! একটা দীর্ঘ শ্বাস পিছলিয়ে পড়লো। পকেট থেকে প্লাটিনামের সেই স্পেশাল রিংটা বের করে একবার সামনে ধরলো। যার মিডলের জ্বলজ্বলে পাথর ক্ষনে ক্ষনে উজ্বল হয়ে প্রকাশ করছে ১০০ টি ভাষায় ভালোবাসি কথাটা। যেটা কিছুদিন পূর্বেই এবরোড থেকে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনানো হয়েছে। অঙ্কনের খুব ইচ্ছে করছিলো এটা একবার অনন্যাকে পরাতে কিন্তু সেটা বোধ হয় আর সম্ভব নয়।
রিংটা সস্থানে রেখে দিয়ে ফের অনন্যাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরে। অনন্যা তখনো ঘুমিয়ে কাদা। কাজের বুয়া সদর দরজা খুলে দিতেই অঙ্কন ইশারায় অনন্যার ঘর দেখিয়ে দিতে বলে। অনন্যাকে কোলে রেখেই সে বালিশ ঠিক করে সাবধানে শুইয়ে দেয়। অঙ্কন উঠতে গিয়েও উঠতে পারেনা ঘুমের ঘোরে অনন্যা হাত জড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিবিড়ভাবে তাকিয়ে থেকে কপালের অবিন্যস্ত চুলগুলো সরিয়ে দেয়। হুট করেই কি জানি কি ভেবে অঙ্কন কপালে চুমো দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
” আ’ম গিভিং মাই টুডে ফর য়্যুর বেটার টুমরো। ”

চলবে…

রেগুলার পাঠকরা রেসপন্স করবেন কেমন!

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে