চন্দ্ররঙা প্রেম ২ পর্ব-০৫

0
1162

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ৫
#আর্শিয়া_সেহের

গুটিগুটি পায়ে গেট পর্যন্ত এলো পিহু। তনিম একহাত দূরত্ব বজায় রেখে সামনে হাঁটছে। পিহু গেটের কাছে এসেই দাঁড়িয়ে গেলো। আরিয়ান ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পিহুর দিকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দিবে।

তনিম আরিয়ানের দৃষ্টি খেয়াল করলো। পেছনে তাকিয়ে পিহুর কাঁপা কাঁপি দেখে এগিয়ে এসে পিহুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। পিহু আড়চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।তনিম একটু দম নিয়ে বললো,
-“আর কতদিন এমন ভয় পেয়ে পেয়ে পালাবেন? আপনি ভয় পান বলেই ও লাই পেয়েছে বেশি।”
পিহু অসহায় চোখে তনিমের দিকে তাকালো। তনিম চোখটা একটু বন্ধ করে ঝট করে খুলে ফেললো।
-“কিছু মনে করবেন না, প্লিজ। স্যার আপনাকে সব বিপদ থেকে উদ্ধার করতে বলে গেছে আমাকে।”
বলেই পিহুর হাত ধরে নিয়ে বাইকের কাছে চলে গেলো। পিহুর দৃষ্টি আরিয়ানের দিক থেকে সরে তনিমের দিকে পড়লো। আশ্চর্য! ও সবখানে রুশানকে দেখছে কেন? এই তনিমকেও এখন রুশান রুশান লাগছে।

-“বাইকে উঠে বসুন।”
তনিমের কথায় ধ্যান ভাঙলো পিহুর। এতক্ষণ তনিমের দিকে তাকিয়ে রুশানকে কল্পনা করেছে ভেবেই লজ্জা পেলো সে। আরিয়ানের ব্যাপারটা মুহূর্তেই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু রুশান ঘুরছে।
পিহু তনিমের কাঁধে হাত রেখে উঠে বসলো। পিহুর কর্মকান্ডে তনিম হতবাক। পিহুর হঠাৎ সাবলীল হয়ে ওঠার কারণ বুঝতে পারছে না সে।

পিহু উঠে বসতেই তনিম বাইক স্টার্ট দিলো। আরিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে তার এক চ্যালাকে বললো,
-“এই হারামজাদা কেডা?”
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বললো,
-” ভাই , গতকাল যে ছেলেটা ভাবিরে এই জায়গায় চাকরি জোগাড় করে দিলো সেই ছেলেটারই কিছু হয় এটা। ওই ছেলেটাই এর কাছে ভাবির ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব দিয়ে গেছে।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বললো,
-“যে ছেলে পিহুরে চাকরি দিছে ওই ছেলের খোঁজ লাগা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর ব্যাপারে সব জানা আমারে। ”
-“আচ্ছা ভাই।”

পনেরো মিনিটের মধ্যে পিহুদের বাড়ির সামনের মেইন রোডে এসে পৌঁছালো তনিম। পিহু তড়িঘড়ি করে বললো,
-“আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন। আর যাওয়ার দরকার নেই। ”
তনিম বাইক থামিয়ে বাধ সেধে বললো,
-“বাড়ি অবধি পৌঁছে দেই?”
পিহু বাইক থেকে নেমে বললো,
-“এলাকার মানুষ নানারকম কথা বলবে আপনাকে আমার সাথে দেখলে।বোঝেনই তো। মেয়েদেরকে হরেক রকম কথা সহ্য করতে হয়। আর বিয়ের বয়সী মেয়েদের ঝামেলা যেন একটু বেশিই।”

তনিম ভ্রু উপরে তুলে বললো,
-“ওহ আচ্ছা,এই ব্যাপার। ঠিক আছে সাবধানে থাকবেন।”
পিহু মুচকি হেঁসে বললো,
-“আপনিও সাবধানে থাকবেন। আর আজকের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।”
তনিম মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,
-“ইটস্ মাই ডিউটি,ম্যাম। যে কোনো সমস্যায় আমাকে ডাকবেন। আলাদীনের চেরাগের দৈত্যের মতো হাজির হয়ে যাবো।”
পিহু খিলখিল করে হেঁসে বাড়ির রাস্তা ধরলো। তনিম পিহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। কানে বাজছে পিহুর ফেলে যাওয়া হাঁসির ঝংকার।

-“কি খাবে, পুনম? কফি নাকি অন্য কিছু?”
পুনম রুশানের হাত চেপে ধরে বললো,
-“চলো না আজ টং দোকানে গিয়ে চা খাই।”
রুশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“পাগল‌ হয়ে গেছো? এমনিতেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। এখন ভার্সিটির বাইরে গিয়ে চা খেতে হবে না।”
পুনম গাল ফুলালো। সে পণ করেছে,চা ছাড়া কিছু খাবে না এখন।
রুশান হতাশ হয়ে আবির আর ইয়াদকে বলে পুনমকে নিয়ে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো।

রুশান বাইকের কাছে যেতেই পুনম বললো,
-“হেঁটে চলো না। এমন আবহাওয়ায় হাঁটতে ভাল্লাগে।”
রুশান এগিয়ে এসে বললো,
-“সত্যি করে বলো ,তোমার মতলব কি? চা খাওয়া নাকি বৃষ্টিতে ভেজা?”
পুনম দাঁত বের করে হিহি করে হেঁসে বললো,
-“দু’টোই। এখন চলো। ”
রুশানও পুনমের সাথে পা মেলানো শুরু করলো।

-“এখানেই আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো,তাইনা?”
পুনমের কথায় রুশান ফোন থেকে চোখ তুললো। বিস্তৃর্ণ একটি মাঠ। এই মাঠেই বছর খানেক আগে পুনমকে প্রথম দেখেছিলো রুশান।
এই ভার্সিটির এক ছেলে যশোর মেডিকেলে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে পুনমকে কিছু একটা বলেছিলো। পুনম ফুঁসতে ফুঁসতে তার মামাকে নিয়ে চলে এসেছিলো ছেলেটাকে শিক্ষা দিতে।

সেদিনের কথা মনে পরতেই রুশান ফিক করে হেঁসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,
-“আমি তোমার রাগী চেহারার প্রেমে পড়েছিলাম। অথচ দেখো,তুমি আমার সাথে রাগই করো না। কিছু হলেই শুধু ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদো।”
পুনম কপট রাগ নিয়ে বললো,
-“আমার রাগ ভাঙাতে পারবা না বলেই রাগ করি না,হুহ।”
রুশান পুনমের গাল টেনে দিয়ে বললো,
-“তুমি কি জানো? তোমাকে আমি সব রুপেই ভালোবাসি,পুনম।”
পুনম তৃপ্তির হাঁসি হাসলো।

মিনিট দশেক হাঁটার পর দু’জন একটা চায়ের দোকানে বসলো। ইতোমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। পুনম বৃষ্টিপ্রেমী। বৃষ্টিতে তার ভিজতেই হবে। সেটা যখনই হোক।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে পুনম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাতাসে উড়ে বেড়ানো ছোট্ট ছোট্ট বৃষ্টি কনার দিকে। আর রুশান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে।
পুনম রুশানের দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বললো,
-“তাড়াতাড়ি শেষ করো। এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে হাঁটবো। অন্নেক ভালো‌ লাগবে, দেখো।”
পুনমের বাচ্চামি কথায় রুশান হাঁসলো। চায়ের বিল মিটিয়ে পুনমকে নিয়ে নেমে পড়লো রাস্তায়। কুয়াশার মতো ছোট্ট কনাগুলো রুশানের চুলে বেঁধে থেকে যাচ্ছে। পুনম মাঝে মাঝে রুশানের চুলে হাত দিয়ে ঝেড়ে দিচ্ছে।

পুনম রুশানের এক হাত জড়িয়ে নিয়ে হেঁটে চলছে।‌ এই দুনিয়ার কোনো কিছুর খোঁজই যেন নেই তার। রুশান আস্তে করে ডেকে বললো,
-“পুনম?”
পুনম আগের মতো একই তালে হেঁটে চলেছে। সে ছোট করে বললো,
-“হু।”
-“কাল থেকে ঠিক মতো ক্লাস করবা। পড়াশোনায় কনসেনট্রেট করো। তোমার বাড়ির লোকের কানে এসব গেলে কি হবে বুঝতে পারছো? এমনিতেও তোমাকে নিয়ে তাদের অনেক সমস্যা। এগুলো একটু মাথায় রেখো।”
রুশানের হাত জড়িয়ে রাখা পুনমের হাতটা ঢিলা হয়ে গেলো। এতোক্ষণের সেই চটপটে ভাবটা সরে গেলো। পুনম সতর্ক ভাবে বললো,
-“হ্যাঁ ঠিক বলেছো। কাল থেকে ঠিক মতো‌ পড়াশোনা করবো। তুমি প্লিজ আমার সাথে আর এমন করবা না।”

রুশান পিহুকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুশানের ফোন বাজলো।‌ রুশান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো স্ক্রিনে রাফিনের নাম জ্বলজ্বল করছে। হঠাৎ রাফিনের ফোন দেওয়ার কারন খুঁজে পেলো না রুশান। পুনমকে একটু অপেক্ষা করতে বলে সাইডে গিয়ে কল রিসিভ করলো ।
-“হ্যালো স্যার,গুড নূন ।”
-“গুড না‌ ব্যাড নূন সেটা বুঝতে পারছি না, রুশান।”
রুশান ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কেন স্যার? কি হয়েছে?”
-“চট্টগ্রামে আজকেও চারটা বাচ্চা হারিয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে দু’টো করে বাচ্চা হারাচ্ছে। তোমাকে কি করতে পাঠিয়েছিলাম ওখানে?”
-“স্যার, আমি তো সবাইকে তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। ”
-“কেমন বুঝিয়েছো তুমি? কেমন? একই এরিয়া থেকে চারটা বাচ্চা গায়েব। বেশিরভাগ বাচ্চাই গায়েব হচ্ছে বস্তি থেকে। বস্তিতে জন্মেছে বলে কি ওরা নিরাপত্তা পাবে না?”

রুশান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
-“কোন এরিয়া থেকে হারিয়েছে স্যার? কে আছে ওই এরিয়ার দায়িত্বে?”
-“হেলাল উদ্দিন।”
রুশান সতর্ক ভাবে দাড়িয়ে পড়লো।‌ তার মানে ওর ধারণা কিছুটা হলেও ঠিক।
রুশান দম টেনে নিয়ে বললো,
-“আমি দেখছি স্যার। খুব শীঘ্রই পালের গোদা কে ধরবো।”
-“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,রুশান।দোয়া করি দ্রুত সফল হও। ”
-“থ্যাংকস স্যার।”
রুশান কল কেটে পুনমের দিকে এগিয়ে গেলো। একটা রিকশা ডেকে পুনমকে তুলে দিয়ে বললো,
-“আমার একটু কাজ আছে ,পুনম। তুমি হোস্টেলে চলে যাও। আর কাল থেকে পড়াশোনায় মন দিয়ো।”
পুনম শুধু মাথা কাত করলো।

পুনমের রিকশা চোখের আড়াল‌ হতেই রুশান তনিমকে কল করলো। তনিম তখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। রিংটোনের শব্দে চোখ হালকা মেলে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,
-“হ্যালো, কে বলছেন?”
রুশান একটু জোরে বললো,
-“আমি বলছি তনিম। কি করছো তুমি?”
রুশানের কন্ঠস্বর পেয়ে তনিম ঝট করে চোখ মেললো। নাম্বারে চোখ বুলিয়ে সাথে সাথে বিছানায় উঠে বসে পড়লো। সিরিয়াস কন্ঠে বললো,
-“জ..জ্বি স্যার বলুন।”
রুশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“তোমাকে আমি কি বলে এসেছি আর তুমি কি করছো? কাজ কাম রেখে ওখানে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো?”

তনিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বুঝতে পারলো‌ রুশানের মেজাজ খারাপ। কন্ঠে যথেষ্ট নমনীয়তা ঢেলে প্রশ্ন করলো,
-“কি হয়েছে স্যার? আপনি রেগে আছেন কেন? আমি কোনো ভুল করেছি?”
রুশান রাস্তায় পায়চারি করতে করতে বললো,
-“তোমাকে আমি হেলাল উদ্দিনের উপর নজর রাখতে বলেছিলাম ,তনিম। আজও ওই এরিয়া থেকে চারটা বাচ্চা উধাও হয়েছে। আমার উপর কতটা প্রেশার আসতেছে তুমি বুঝতে পারতেছো? হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া?”

তনিম মুখ লটকে বললো,
-“সরি স্যার। কিন্তু হেলাল উদ্দিনের উপর নজর রেখেছি আমি। সে তো শ্বশুর বাড়িতে আছে। এজন্যই আমি তার দিকে আর খেয়াল করিনি।”
রুশান পায়চারি থামিয়ে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর বললো,
-“এর মানে তোমার উপর ওরা নজর রাখছে। তোমার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ওরা ওদের কাজ করছে।”
তনিম খানিক সময় চুপ থেকে বললো,
-“তাহলে অন্য লোক লাগাই? আমাকে যেহেতু চিনেই ফেলেছে।”
-“হুম সেটাই ঠিক হবে।
আচ্ছা বিজয় হালদারের কি খবর? তার ভেতর থেকে কোনো তথ্য বের হলো?”

তনিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আপনাকে মারার জন্য ওকে বিশ লক্ষ টাকা দিয়েছে কেউ একজন। ও তাকে চেনেনা। পাঁচ লক্ষ টাকা আগে পাঠিয়েছে আর পনেরো লক্ষ পরে পাঠাবে বলেছে। ওই লোকটার সাথে হালদার সাহেবের শুধু ফোনেই দু’বার কথা হয়েছে। এর বেশি কোনো তথ্য সে দিতে পারে নি।”

রুশান কান থেকে ফোন নামালো। বিজয় হালদারের সাথে এই কেসের কোনো সম্পর্ক নেই। সে শুধুমাত্র টাকা পেয়ে খুন করতে এসেছিলো। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হেলাল উদ্দিন এই কেসে জড়িত এটা সে শিওর। খুব দ্রুতই এই কেসের ইতি টানতে হবে। নাহলে‌ হারিয়ে যাবে আরো কতকগুলো মাসুম শিশু।

রুশান ফোন পকেটে রেখে ব্যাস্ত পায়ে ক্যান্টিনের দিকে গেলো। আবিরের সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে এখন।

-“আরে, সিন্থু আপুউউ। কেমন আছো?”
শান্তর কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরলো‌ সিন্থিয়া‌। মুচকি হেঁসে বললো,
-“ভালো আছি রে । তুই কেমন আছিস?”
-“এইতো ভালো‌ আছি। তুমি হঠাৎ এই স্কুলে এসেছো কেন?”
সিন্থিয়া সামনে ইশারা করে মাহিম-সিনিমকে দেখিয়ে বললো,
-“ওদেরকে এখানে ভর্তি করবো।”
-“কেন ? ওদেরকে না অন্য স্কুলে ভর্তি করেছিলে?”
-“হ্যাঁ কিন্তু ওই স্কুলের টিচাররা খুব একটা আন্তরিক না। বাচ্চাদেরকে শাসনের পাশাপাশি মমতাও দিতে হয় সেটা হয়তো উনারা জানেন না।
গতকাল রুমঝুম সাঁঝকে এখানে ভর্তি করে বাড়িতে গিয়ে আমাকে ফোন করেছিলো। বললো ওদের দুজনকেও এখানে ভর্তি করতে। এখানকার টিচাররা নাকি বাচ্চাদের সাথে বেশ মিশুক।”

শান্ত হেঁসে বললো,
-“এখানের টিচাররা সত্যিই অনেক ভালো। ভাবি ঠিকই বলেছে। তুমি ওদের এখানেই ভর্তি করে দাও।”
-“তোর মেহেদী ভাইয়া আসছে। এলেই ভর্তি করিয়ে দিবো।”
সিন্থিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে শান্তর চোখ গেলো মাঠের অপর পাশে। উর্বিন্তা একটা ছেলের সাথে হেঁসে কথা বলতে বলতে হাঁটছে।
শান্ত সেটা দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো। কই তার সাথে তো উর্বিন্তা এমন হেঁসে হেঁসে কথা বলে না।
শান্ত সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
-” থাকো সিন্থিয়া আপু,আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”

মাহিম আর সিনিমের কাছে এগুতে গিয়েও থেমে গেলো। উল্টো হাঁটতে হাঁটতে বললো,
-“তোদের আর এখন‌ আদর করবো না। এই স্কুলেই তো আসবি। পরে কখনো আদর করে দেবো। এখন টাইম নেই আমার।”
বলেই ভোঁ দৌড় দিলো। সিন্থিয়া শান্তর দৌড় দেখে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলো।
তারপর মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো, ‘পাগল ছেলে একটা।”

সিনিম চুপ করে বসে আছে। মাহিম বাঁদরের মতো লাফালাফি করছে। সিন্থিয়া মাহিমের পেছনে হাঁটতে হাঁটতে কাহিল। মাহিম লাফাতে লাফাতে বেশ দূরে চলে গেছে। সিন্থিয়া মাহিমকে বকতে বকতে ওর পিছু পিছু গেলো। সিঁড়ির কাছে গিয়ে মাহিমের হাত ধরে চোখ পাকিয়ে বললো,
-“ভাই কেমন চুপচাপ বসে আছে দেখেছো? তুমি এমন লাফালাফি করছো কেন? শান্ত হয়ে বসবে চলো।”
মাহিম আঙুলের ইশারায় গেটের দিকে দেখিয়ে বললো,
-“পাপা।”

সিন্থিয়া তাকিয়ে দেখলো মেহেদী আসছে। মেহেদীকে দেখেই সিন্থিয়ার রাগ উঠে গেলো। সেই একঘন্টা ধরে বসে আছে ছেলে দু’টোকে নিয়ে।
মেহেদী সিন্থিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“সরি, সরি। রাগ করো না সিন্থু। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস করানোর ছিলো।ওদেরও তো পরীক্ষা আছে,বুঝো না?”
সিন্থিয়া মেহেদীর দিকে তাকালো। ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। সিন্থিয়ার মায়া লাগলো। নরম কন্ঠে বললো,
-“ঠিক আছে। চলো এখন। ”
মেহেদী মাহিমকে কোলে নিয়ে বললো,
-“সিনিম কোথায়?”
সিন্থিয়া বললো,
-“সামনেই বসে আছে। চলো।”

সিন্থিয়া আর মেহেদী ভেতরে এলো। সিনিম যেখানে বসে ছিলো সে জায়গা ফাঁকা। সিন্থিয়ার বুক কেঁপে উঠলো ক্ষণিকের জন্য। সিনিম তো এখানেই বসে ছিলো । কোথায় গেলো?

চলবে……..

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে