গ্যাংস্টার_Gangstar পর্বঃ05

0
2050

গ্যাংস্টার_Gangstar পর্বঃ05
লেখা_রওনাক_ইফাত_জিনিয়া
.

.
.
.
মাঃ কালরাতে অনেককিছু হয়েছে সব এখন বলা সম্ভবনা তবে সংক্ষেপে তোকে বলি।
কাল রাতুল যখন বাসায় আসল তখন দরজা আমিই খুলছিলাম আর ওরে দেখে এতটাই রাগ হয়েছিল অনেক কথা শুনিয়েছিলাম।ওই তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিল আর বলছিল একবার শুধু তোর সাথে দেখা করতে চায় ওর নাকি মনে হচ্ছে তুই ঠিক নেই।ওই বারবার বলছিল একবার শুধু দেখতে চায় তোর কিছু হয়নি আর কিছুনা।আমরা কিছুতেই যখন ওরে তোর সাথে দেখা করতে দিচ্ছিলামনা তখন অবশেষে ওই বলল ঠিক আছে ওই দেখা করবেনা কিন্তু আমরা কেউ যেন দেখে এসে ওরে জানাই।বাধ্য হয়ে লাবণ্যকে পাঠানো হল আর খবর এল তোর কোন সাড়া নেই আর দরজাও বন্ধ।তখন আমরাও ভয় পেয়ে গেলাম।নিরব আর তোর বাবা বাসায় ছিলনা তাই বাধ্য হয়ে রাতুলের সাহায্য নিতে হয়েছে।ওই দরজা ভাঙ্গে দেখি তুই অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে আছিস।শেষে তোকে হাসপাতালে আনা হয়।কিন্তু ডাক্তার জানায় অনেক দেরী হয়ে গেছে আনতে এখন কিছু সম্ভব না কারন হার্টবিটই পাওয়া যাচ্ছেনা।কথাগুলো শুনেই রাতুল বলল
“আমি বিশ্বাস করিনা।নীলার কিছু হতে পারেনা।আমাকে রেখে ওই কখনও যেতে পারেনা।আজ আমার নীলার কিছু হলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবনা।আমি বারবার বলেছিলাম নীলা ঠিক নেই কেউ আমার কথা শুনেনি এখন ওরকিছু হলে আমি সব শেষ করে দিব।”
ডাক্তার বলেছিল দেখুন রাতুল আমরাদের হাতে কিছু নেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।রাতুল তখন ডাক্তারে শার্টের কলার ধরে বলেছিল
“আমি আমার নীলাকে সুস্থ দেখতে চাই।কিভাবে তা আমি জানিনা ডক্টর আমি শুধু ওরে সুস্থ দেখতে চাই।আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে ওই আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা।আপনারা দয়াকরে আরেকবার চেষ্টা করে দেখুননা।আমি জানি ওর আমারে ছেড়ে যায়নি।”
তারপর ডাক্তার আবার গেল আর অনেক্ষন পরে এসে জানালো আসলে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ার জন্য হার্টবিট এতটাই slow হয়েগেছিল যে বুঝাই যাচ্ছিলনা কিন্তু মারা যায়নি আল্লাহ্ র রহমতে আমরা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি তবে শরীর খুব বেশি দূর্বল আর অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় জ্ঞান ফিরতে দেরী হবে।
তারপর থেকে ছেলেটা একমুহূর্তের জন্য সরেনি।ছেলেটা এমনিতে আর যাইহোক তোরে খুব ভালবাসে নীরা।

আমিঃ ভালবাসে না ছাই।আমার আজকের এই অবস্থার জন্যও সে দায়ী।তোমরা এত সহজে সব ভুলে গেলে?আর সে যে আমাদের মিথ্যে কাহিনী এখানেও প্রচার করেছে তা কি মা?

মাঃ কিছুই ভুলিনি তবে একথা সত্যি ছেলেটা আসলেই তোরে খুব ভালবাসে।আর ওসব রাতুল না নার্স করেছ কারন নার্স রাতুলের পূর্ব পরিচিতা আর সে ফেসবুকের ঐসব ছবি দেখে এসব বলেছে।

আমিঃ তা বুঝলাম তবে তোমরা সত্যিটা বললেনা কেন?

মাঃ বলার মত অবস্থা ছিলনা।

আমিঃ এসব কথা আমার শুনতে ভাল লাগছেনা মা।আমি একটু ঘুমাতে চাই।
.
.এরপর হাসপাতাল থেকে আমায় বাসায় আনা হল আর সাথে রাতুলও আসল।ভালই হয়ছে আমাকে বাঁচিয়ে রাতুল নায়ক হয়ে গেছে আর বাসার সবাই সব ভুলে গেছে মনে হচ্ছে।যে লোকটাকে দেখলেই আমার শরীর জ্বলে যায় এখন তাকে সবসময়ই চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে।আমি বুঝতে পারছিনা বাবা-মা সব কিভাবে ভুলে গেল।সেদিন মাকে বললাম

আমিঃ মা এই লোক আমাদের বাসায় কি করে আর তারে তোমরা কিছু বলছনা কেন?

মাঃ কি বলব?

আমিঃ মানে কি?যারজন্য আমার সুন্দর জীবনটাই শেষ বলা যায় তাকে তোমাদের কিছুই বলার নেই?তোমরা কি বুঝতে পারনা আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারিনা?

মাঃ আস্তে বল ওই বাসাতেই আছে আর আজ তোর এই অবস্থার জন্য ঐ দায়ী মানলাম কিন্তু আজ ওর জন্যেই তুই বেঁচে আছিস এটাও জেনে রাখিস আর একটা কথা এখন একমাত্র ঐ পারে সবকিছু ঠিক করে দিতে।

আমিঃ মানে কি?যে আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে এমনকি যার জন্য আমার চরিত্র নিয়েও মানুষ যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে সে কিভাবে সব ঠিক করতে পারে মা?

মাঃ হুম এখন ওই পারে সবকিছু ঠিক করতে কারন ওই যদি এখন তোরে বিয়ে করে নেয় তবেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।

আমিঃ ও আচ্ছা এখন তবে বাসায় এসব চলছে?তাইতো বলি একটা গুণ্ডা কিভাবে আমার কাছে সবসময় থাকার সাহস পাচ্ছে তারমানে তোমরা এখন তারে সত্যিই জামাই স্বীকার করে নিয়েছ?

মাঃ কাল ওর মা আসবে আর বিয়ের ব্যাপারে সব কথা স্থির হবে।দেখ ওই ছেলে হিসেবে খারাপনা আর যাই করছে তোরে খুব ভালবাসে বলেই করেছে।

আমিঃ খুব ভাল মা।সত্যিই কি আমি তোমাদের মেয়ে মা?

মাঃ এটা কেমন কথা?

আমিঃ না জানতে ইচ্ছে হল আরকি।মা সত্যিই যদি আমি তোমার মেয়ে হয়ে থাকি তবে ঐ গুণ্ডার সাথে আমার বিয়ে না দিয়ে আমাকে একটু বিষ দাও খেয়ে মরে যাই তাহলেই তোমাদের সব সমস্যা শেষ।

মাঃ নীলা আমি তোর মা তাই যা বলছি তোর ভালোর জন্যেই বলছি আর স্বীকার করছি ওই যা করেছে ঠিক করেনি কিন্তু একবার ভেবে দেখ ওই তোরে কতটা ভালবাসে?

আমিঃ আমার আর কিছুই ভাবার নেই যা বুঝার আমি বুঝে গেছি মা।তুমি এখন যেতে পারো আর দয়াকরে ঐ লোক যেন আমার রুমে না আসে।

মাঃ এটা কেমন কথা তুই অসুস্থ বলেইতো ওই তোরে দেখতে আসে?

আমিঃ আমার এখন কোন কথা শুনতে বা বলতে ভাল লাগছেনা মা দয়াকরে তুমি যাও।
.
.মা চলে গেল আমি শুধু ভাবছি সমাজকে আমি কি দোষ দিব আমার নিজের পরিবারই যেখানে আমাকে বুঝলনা?আমি মেয়ে আর মেয়ে এমন একটা বোঝা যা যতদ্রুত সম্ভব ঝেড়ে ফেলা যায় ততই ভাল তাইতো আজ আমার পরিবার তাদের বোঝা কমানোর জন্য আমাকে এমন একটা লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
মা চলে যাওয়ার পর আমি রুমের দরজা লাগিয়ে অনেক কেঁদেছি।রাত কেটে গেল নির্ঘুম।
.
.সকাল হল।আজ রাতুলের মার আসার কথা বিকেলে তারই তৈরী চলছ বাসায়।আমাকে যখন রাতুল কিডন্যাপ করে ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল তখন ওর মা গ্রামেছিল তাই দেখা হয়নি বলে আজ আমাকে দেখতে আসবেন।হা হা হা।খুব হাসি পাচ্ছে।আসলে জবাই করার আগে মানুষ যেমন দেখতে আসে ঠিক তেমনি আমাকেও আজ দেখতে আসবে।
.
.সারাটাদিন রুমেই বন্ধি ছিলাম।রাতের পর আর রুম থেকে বের হয়নি আর খাওয়াও হয়নি কিছু।যদিও মা এসে ডেকে গেছে অনেকবার কিন্তু আমার খাওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলনা।বিকেলে রাতুল এসে দরজা খুলতে বলছিল আর আমি কিছুতেই খুলছিলাম না তাই বলছিল দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকবে শেষে বাধ্য হয়ে দরজা খুলতে হল।

রাতুলঃ তুমি নাকি কাল রাত থেকে কিছুই খাওনি আর রুম থেকে বেরও হওনি?এই নেও আমি খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও।

আমিঃ কে বলেছে এসব?

রাতুলঃ আন্টি।

আমিঃ তবে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন আন্টিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন?

রাতুলঃ আমি আরকিছু জানতে চাইনা খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও।তারপর বাহিরে মা এসেছে তার কাছে যাও একবার।

আমিঃ বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে?

রাতুলঃ হুম পরশু।

আমিঃ এত দেরী কেন আর বিয়েই বা কেন করছেন?

রাতুলঃ এটা কেমন কথা?তোমাকে ভালবাসি তাই বিয়ে করছি।

আমিঃ শুধু শুধু বিয়ে করার কি দরকার যখন বিয়ে ছাড়াই সব পেতে পারেন?

রাতুলঃ মানে?

আমিঃ না বুঝারতো কিছু নেই।কষ্টকরে বিয়ে না করে আমাকে রক্ষিতা করে রাখলেইতো পারেন?

রাতুলঃ রক্ষিতা?তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে রক্ষিতা করে রাখতে চাই?আমারে তোমার এমন মনে হচ্ছে আর যদি রক্ষিতা করেই রাখার হত তবে বিয়ে কেন করছি?

আমিঃ আমিওতো তাই বলছি বিয়ে করার কি দরকার?আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন আমিতো আপনার দাস তাই যেভাবে ইচ্ছে আমাকে ব্যবহার করতে পারেন তারজন্য বিয়ের মোহর লাগানোর দরকার নেইতো।

রাতুলঃ এসব কি বলছ তুমি?তোমার কি মনে হয় তোমার শরীরের প্রতি আমার লোভ?

আমিঃ তা নয়ত কি মি.রাতুল?চিন্তা করবেন না আপনি ছেলে তাই আপনার কোন দোষ হবেনা যা দোষ সবতো আমার কারন আমি যে মেয়ে।আর সমাজে ইতিমধ্যেই আমি অনেক সম্মানিত হয়ে গেছি নতুন করে আমার আর কিছু হবেনা।তাই নিশ্চিন্তে আপনি আমাকে ব্যবহার করতে পারেন।

রাতুলঃ দয়াকরে তুমি চুপ কর নীলা।এসব আমি আর শুনতে পারছিনা।এসব কথা বলতে তোমার কি একটুও মুখে আটকাচ্ছেনা?

আমিঃ হা হা হা।সত্য কথা বলতে খারাপ লাগবে কেন?আমাকে বিয়ে করার দরকার নেই আমিতো এমনিতেই রাজি আর আমার বাবা-মাও রাজি।আসলে আমিতো এখন বোঝা তাই কাঁধ থেকে সরাতে পারলেই তারা খুশি আর আপনারও চিন্তা নেই চাইলে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।

রাতুলঃ চুপ কর নীলা নয়ত আমি এমন কিছু করে ফেলব যা তোমাকে কষ্ট দিবে আর আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা।

আমিঃ আরে আপনিতো দেখি মেয়েদের মত লজ্জ্বা পাচ্ছেন।আচ্ছা তবে আমিই শুরু করি এই নিন।দেখুন আমি কিন্তু কোন লজ্জ্বা পাচ্ছিনা আপনিও পাবেন না।এসব ব্যাপারে লজ্জ্বা পেলে চলবে?শুরু করুন…
.
.কথাটা বলেই আমি হাত দিয়ে উড়নাটা সরিয়ে একদম রাতুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।রাতুল কোন কথা বলছেনা মনে হয় স্থির হয়ে গেছে।শুধু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কথাটা পুনরায় বললাম।রাতুল এবার সাথে সাথেই আমাকে একটা চড় মারল তারপর দুটা তারপর তিনটা।কিন্তু আমি কিছুই বলিনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আর শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।আসলে কতটা কষ্টে যে আমি এই কাজ করেছি তা শুধু আমিই জানি।
.
.রাতুলের চোখ দিয়েও পানি পড়ছে কিন্তু সে কেন কাঁদছে তারতো কাঁদার কথা না?নিজের থেকে দশবছরের ছোট একটা মেয়েকে সে ভালবেসে এসব করেছে এটা সবাই বিশ্বাস করলেও আমি করিনা।বিশ্বাস করতাম যদি সে আজ আমার থেকে দশবছরের বড় না হত কারন পড়ালেখা শেষ করা একটা ছেলে কখনও এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে এসব কাজ করার কথা না।আজ যদি সে কলেজে পড়ুয়া কোন ছাত্র হত তবে বিশ্বাস করার সম্ভাবনা কিছুটা ছিল….
.
.রাতুল ফ্লোরে পড়ে থাকা উড়নাটা তুলে আমাকে ঢেকে দিল।
(চলবে)
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে