গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৭

0
238

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_7
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ম্যানিলা দৌড়ে ছুটে এসে অনুরাগকে আলিঙ্গন করে। মিহি কন্ঠে বলে,”আমাকে ভুলে গেলে এনি? আমাকে না জানিয়েই এভাবে এনগেজমেন্ট করে নিচ্ছ।”

অনুরাগ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মান্যতার দিকে তাকায়। মান্যতা কিচ্ছু বুঝতে না পেরে থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে। অনুরাগ ম্যানিলাকে বলে,”তুমি আসবে আগে জানালে না তো! নিউইয়র্ক থেকে কবে ফিরলে?”

“আজকেই ফিরলাম। এসেই সোজা তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এখানে চলে এলাম। এখানে এসে তো আমিই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।”

কথাটা বলেই অনুরাগকে ছেড়ে দেয় ম্যানিলা। অনুরাগ স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। যদিও বিদেশে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা৷ এভাবে ছেলে-মেয়ে বন্ধুরা একে অপরকে আলিঙ্গন করতেই পারে। কিন্তু মান্যতা ব্যাপারটাকে কেমন ভাবে নেয় সেটা নিয়েই ধন্দে ছিল অনুরাগ। তাই কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মান্যতার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,”ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ম্যানিলা। ও নিউইয়র্কে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে। ও অনেক ব্যস্ত মানুষ তো তাই ওকে আমি এ ব্যাপারে কিছু জানাই নি৷ ভেবেছিলাম বিয়ের ইনভিটেইশন কার্ড একবারে ধরিয়ে দেব কিন্তু….”

“কিন্তু আমি আগেই চলে এলাম অনুরাগ। যাইহোক, এখন যখন আমি এসে গেছি তখন আর কোন সমস্যা হবে না। তোমরা এনগেজমেন্ট কান্টিনিউ করো।”

অনুরাগ মান্যতার হাতে এনগেজমেন্ট রিং পড়িয়ে দেয়। বাইরে নিজেকে হাসিখুশি প্রকাশ করলেও এই দৃশ্য দেখে ম্যানিলার অর্ন্তদহন শুরু হয়৷ সে দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে। মনে মনে বলে,”আমি ছাড়া তুমি আর কারো হবে না অনুরাগ কারো না। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি, অনেক নিচে নেমেছি। এবার নাহয় আরো নিচে নামব!”

~~~
মহিউদ্দিন ও রাহেলা বেগমের মধ্যে বচসা লেগে গেছে। বিতর্কের কারণ ম্যানিলা। মহিউদ্দিন বলে চলেছেন,”তোমার বোনের ছেলের ঐ বান্ধবীকে আমার মোটেই সুবিধার লাগছে না। এইজন্য আমি এই বিয়েতে রাজি হতে চাইনি। আমার তো এখন অনুরাগের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। তুমি না ওর খুব প্রশংসা করো যে বিদেশে থেকেও নিজের সংস্কৃতি ভোলে নি তাহলে এসব কি? এভাবে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরল তাও আবার এনগেজমেন্টের দিন।”

“তুমি ভুল ভাবছ। অনুরাগ মোটেই ঐ মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে নি। ঐ মেয়েটাই তো…তাছাড়া এখানে এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তো আর বাংলাদেশ নয়।”

“ঠিক আছে, তুমি যখন আমার কথায় কোন গুরুত্ব দিচ্ছ না তখন নিজের যা ভালো মনে হয় করো। কিন্তু আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, পরবর্তীতে যদি আমাদের মেয়েকে কোনভাবে এসবের জন্য সাফার করতে হয় তাহলে আমি কিন্তু তোমায় ছেড়ে কথা বলব না।”

~~~~~
মান্যতা কানে হেডফোন লাগিয়ে ভিনচেঞ্জোর গান শুনছিল। এমন সময় তার রুমে আসে অনুরাগ। সে এসেই বলে,”মান্যতা আমি আর ম্যানিলা আজ একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি তুমিও চলো আমাদের সাথে।”

মান্যতা কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বলে,”কি বললেন?”

অনুরাগ আবারো নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করে। মান্যতা উত্তরে বলে,”আপনারা যান ঘুরে আসুন। আমি যেতে ইচ্ছুক নই।”

অনুরাগ তবুও জোর করতে থাকে। কারণ সে চায়না ম্যানিলাকে নিয়ে মান্যতার মনে কোন সন্দেহ তৈরি হোক। অনুরাগের জেদের কাছে অবশেষে নতি স্বীকার করে নেয় মান্যতা। যেতে রাজি হয় অনুরাগ ও ম্যানিলার সাথে।

ম্যানিলা বাইরে দাঁড়িয়ে অনুরাগের জন্য অপেক্ষা করছিল। অনুরাগকে মান্যতার সাথে আসতে দেখে ভীষণ রেগে যায় ম্যানিলা। বিড়বিড় করে বলে,”উফ, এই ঝামেলাটা আবার কেন এসেছে! এই ঝামেলাকে আমায় দূর করতে হবে। নাহলে আমি অনুরাগকে কিছুতেই পাবো না।”

অনুরাগ ম্যানিলার সামনে এসে বলে,”মান্যতাও যাবে আমাদের সাথে।”

ম্যানিলা জোরপূর্বক হেসে বলে,”ভালোই তো। ও আমাদের সাথে রোম শহর ঘুরে দেখুক।”

`~~
তিনজনে মিলে রোমের কলোসিয়ামে এসে হাজির হয়৷ মান্যতার এসবে তেমন আগ্রহ নেই তাই সে চুপচাপ ছিল। অনুরাগকে বেশ আগ্রহী দেখাচ্ছিল৷ অন্যদিকে ম্যানিলার মনে জ্বলছিল আ*গুন। সে শুধু মান্যতাকে কিভাবে তাদের মাঝ থেকে দূর করা যায় সেটাই ভাবছিল।

কলোসিয়াম ঘোরা শেষ করে তারা সবাই গাড়িতে করে রওনা দেয়। মাঝপথে একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে নামে তারা৷ অনুরাগের একটা জরুরি ফোনকল আসলে সে কথা বলতে একটু বাইরে যায়। এই মুহুর্তে ম্যানিলা মান্যতাকে জিজ্ঞেস করে,”বলো কি খাবে? আমি অর্ডার করে দিচ্ছি।”

“যা ইচ্ছা অর্ডার করুন। শুধু দেখবেন তাতে যেত চিংড়ি না থাকে। আসলে আমার চিংড়ি মাছে এলার্জি। এটা খেলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।”

ম্যানিলা যেন নিজের হাতে অস্ত্র পেয়ে যায়। মনে মনে বলে,”তাহলে তো তোমার খারাপ অবস্থা করার ব্যবস্থাই করতে হবে।”

ম্যানিলা একজন ওয়েটারকে দেখে এমন খাবার অর্ডার দেয় যেটা চিংড়ি দিয়ে বানানো। কিন্তু চিংড়িটা এমন ভাবে সুপ্ত অবস্থায় থাকে যে বোঝার উপায় নেই। তন্মধ্যে অনুরাগও চলে আসে। ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায়। সবাই খাওয়া শুরু করে। মান্যতাও খেতে শুরু করে। ম্যানিলা কাউন্টডাউন শুরু করে দেয়,”১,২,৩”

তার কাউন্টডাউন শেষ হতে না হতেই মান্যতা কাশতে শুরু করে। অতঃপর হাত চুলকাতে শুরু করে দেয়। অনুরাগ মান্যতার দিকে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”কি হয়েছে? কোন সমস্যা? এই নাও পানি খাও।”

মান্যতা পানিটা খেয়ে নেয়৷ কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি হয় না। কাশতে কাশতে তার শ্বাসকষ্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অনুরাগ এসব দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ম্যানিলাও উদ্বিগ্ন হওয়ার নাটক করে বলে,”আমার মনে হয় ওর কোন সমস্যা হয়েছে। তুই ওকে জলদি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।”

অনুরাগ মান্যতাকে নিয়ে গাড়িতে তোলে। ম্যানিলাও যায় তার সাথে হাসপাতালে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মান্যতাকে। ডাক্তার মান্যতাকে চেক করে বলে,”ওনার তো ভয়াবহ রকমের এলার্জি হয়েছে। উনি অনেক ঝুঁকির মধ্যে আছেন এখন।”

অনুরাগ ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে খুশির ঝলক দেখা যায় ম্যানিলার মুখে। ম্যানিলা মনে মনে বলতে থাকে,”তুমি মরে যাও মান্যতা। মরে গিয়ে আমার আর অনুরাগের মধ্যে থেকে চলে যাও। অনুরাগের পাশে অন্য কাউকে যে আমার সহ্য হয়না। এর আগেও একজনকে সরিয়েছি। এবার নাহয় তোমাকে সরালাম।”

~~~~~~
চিকিৎসার পর মান্যতা এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। তার জ্ঞানও ফিরেছে। এই ঘটনার কথা পৌঁছে গেছে অনুরাগ ও ম্যানিলার কাছেও। দুজনেই ছুটে এসেছে। দুজনই ভীষণ উদ্বিগ্ন তবে তার উদ্বিগ্নতার কারণ ভিন্ন। অনুরাগ মান্যতার অবস্থা জানতে ছুটে আসছে আর ম্যানিলা নিজের কুকীর্তি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। ম্যানিলা সেখানে এসেই হাতজোড় করে বলতে প্রার্থনা করে বলতে লাগল,”গড, তুমি দেখো। এই মেয়ে আবার না সব সত্য বলে দেয়। তাহলে তো আমি অনুরাগের চোখে ছোট হয়ে যাব।”

~~~~~~“““““~~~~~~~
মান্যতার সাথে কথা বলে অনুরাগ বাইরে এসে ম্যানিলার মুখোমুখি হয়। ম্যানিলা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেও শান্ত থাকে। অনুরাগ ম্যানিলাকে বলে,”তোমাকে নাকি মান্যতা বলেছিল যে ওর চিংড়িতে এলার্জি। তারপরেও তুমি চিংড়ি মেশানো খাবার অর্ডার করলে কেন?”

“অনুরাগ…আমি…বিশ্বাস করো আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি অন্য খাবার অর্ডার করেছিলাম। ওরাই হয়তো ভুল করে দিয়েছে।”

“কাম ডাউন ম্যানিলা। আমি জানি, তুমি এমন কিছু করবে না। আমি তোমায় বিশ্বাস করি৷ তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ড, তুমি কেন আমার উডবি ওয়াইফের ক্ষতি চাইবে।”

ম্যানিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আর মনে মনে বলে,”আমি জানি তুমি আমায় অন্ধের মতো বিশ্বাস করো অনুরাগ। তাহলে আমায় ভালোবাসা কেন? তুমি আমায় ভালো বাসলে তো আমায় এত নিচে নামতে হতো না। তবে কোন ব্যাপার না। আমি তোমাকে নিজের করে নেবোই। আর সেটা খুব শীঘ্রই। এবার সরাতে পারিনি তো কি হয়েছে খুব শীঘ্রই আমি ঐ মান্যতা নামের গারবেজকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দেব।”

To be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে