গোধূলির নিমন্ত্রণ পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
764

“গোধূলির নিমন্ত্রণ”
নূরজাহান আক্তার আলো
[০৫] (অন্তিম পার্ট)

আদিত্য ভ্রুঁ কুঁচকে ফোনে টাইপ করতে ব্যস্ত। ফোনের মধ্যে চলছে এক অঘোষিত যুদ্ধ তাও তার মায়ের সঙ্গে। মেধা ঘুমে মগ্ন এই সুযোগেই আদিত্য জরুরি কাজটা সেরে নিচ্ছে। মন মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে তার। শুধু মেধা নয় তার মা’ও আজকাল ছেলেমানুষী শুরু করেছে। মেধাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে উনি রেগে গেছেন। উনার একটাই কথা মেধা বাসা গেলে উনি থাকবেন না। হয় গলায় ফাঁ/সি দিবে নয়তো বাসা ছেড়ে চলে যাবেন। এই মুহূর্তে একজনকে বেছে নিতে হবে বউ নতুবা মাকে। আদিত্য ভাবতেও পারে নি তার মা এই কথা বলবে।এমন তো না যে সে বেকার বউয়ের খরচ টানতে পারবে না। বউকে আলাদা বাসায় রাখতে পারবে না।
আল্লাহ তাকে যথেষ্ট সামর্থ্য দান করেছেন। তাই বলে টাকা আছে বলে যে বউকে আলাদা রাখবে এমন মন মানসিকতা তার নেই। সবাইকেই তার প্রয়োজন। সেদিন রাতে ওইরকম ঘটনা ঘটার পর থেকে সে তার মাকে যথেষ্ট বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। মেধার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিল।কিন্তু তিনি রাজি হোন নি বরং মেধার মাকে
রাস্তায় দেখে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেছেন। একথা সে পরে শুনেছে। আসল কথা হচ্ছে, দুই পরিবারের জন্য আরো বড় চমক অপেক্ষা করছে। তারা যখন জানবে সেদিন ছাদে মেধা তার বিয়ে করা বরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, সে বৈধ সম্পর্কের সুত্র ধরে একটা ছেলের সঙ্গে মধ্যরাতে একা দেখা করার সাহস জুগিয়েছিল। সমস্ত ভয়কে পেছনে ঠেলে প্রশান্তি খুঁজতে বরের কাঁধে মাথা রেখেছিল। মাত্র চারজন জানে তাদের বিয়ের কথা। কাজি অফিসে গিয়ে তারা বিয়ে করেছিল।আর সেই তিনজন হচ্ছেন আদিত্যের বাবা, ছোট ভাই আমান আর সাব্বির। বর্তমানে জানে আদিত্যের মা ও মেধার বাবা মা। এভাবে বিয়ের করার কথা শুনে আদিত্যের মায়ের রাগ সপ্তম আকাশে। উনার কথা, যে মেয়ে একা একা
পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারে সেই মেয়ে ভালো হতেই পারে না। এমনিতেই উনি মেধাকে দেখতে পারেন না। তার উপরে এত বড় স্পৃহা উনার ছেলেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়েও করে নিয়েছে। উনার থেকে আদিত্যকে কেঁড়ে নিচ্ছে, পর করে দিচ্ছে। অথচ একটাবার বোঝার চেষ্টা করলেন না এখানে মেধা নয় উনার ছেলেই জোর করে বিয়ে করেছিল।
হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে সাক্ষী জোগাড় করে বিয়ে সম্পর্ন্ন করেছে। কারণ তার মনে হয়েছিল সম্পর্কের একটা খুঁটি দরকার। আর শক্ত খুঁটিটা হচ্ছে বিয়ে। ছাদে যখন সবাই কত কথা বলেছিল আদিত্য সত্যটা সবাইকে জানাতে চাচ্ছিল। কিন্তু মেধা ইশারা করে বারণ করে। তার মতে তার বাবা মা এত আঘাত একেবারে সহ্য করতে পারবে না। আর কিছুদিন পরেই নাহয় জানাবে।
কিন্তু মেধা ঢাকায় যাওয়ার পরপরই মেধাকে না জানিয়ে সে মেধার বাবা মাকে সত্যিতা জানিয়ে দেয়।আর অনুরোধ করে
একথা যেন মেধা না জানে নয়তো আপসেট হয়ে পড়বে। সে
দূরে আছে, ভালো মন্দ কিছু একটা ভেবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করে বসলে হিতে বিপরীত হবে। প্রথমে মেধার বাবা মা ভেঙে পড়ে আদিত্যকে কথা শুনিয়েছে, অপমান করেছে।সে কিছু মনে করে নি বরং যেচে উনাদের বাসায় গিয়েছে। ঠান্ডা মাথায় উনাদের বার বার বুঝিয়েছে। বর্তমানে উনারা মেনেও নিয়েছে আর মেধার সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিকও রেখেছে।
হল থেকে বের হওয়ার পেছনে তারই হাত আছে। কারণ এই ঝামেলার সমাধান না করা অবধি শান্তি পাচ্ছে না। দু’জন দু’জাযগায় থাকলে এর সমাধার করাও সম্ভব না। কপালে যদি থাকে তাহলে তারা পুনরায় ঢাকায় ফিরবে, একসঙ্গে থাকবেও, এক ফ্ল্যাটে, একই রুমে।

হঠাৎ স্বজোরে বাসের ঝাঁকুনিতে মেধার ঘুম’টা ভেঙে গেল। পড়ে যাওয়ার আগেই আকঁড়ে ধরল আদিত্যকে বুকের শার্ট। তবে আদিত্য ধরে নি পূর্বের মতো চোখজোড়া বন্ধ করেসিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তবে অনুভব করছে মেধার স্পর্শ।
মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসে সে অথচ মেয়েটা তাকে প্রচন্ড কষ্ট দেয়। রাত জেগে কথা বলা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তার। যখন মেধার খোঁজ পাচ্ছিল না তখন রাতে ঘুমাতেও পারতো না ঠিকমতো। মনে হতো কী নেই, কী নেই। রাত জেগে কাজ করলে মেধা ভিডিও কলে থেকে অপলক তাকিয়ে থাকতো।
মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসত। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল,
-“এভাবে রোজ তাকিয়ে থেকে কি দেখো তুমি?”
-”আপনাকে দেখি আর ভাবি।”
-”কী ভাবো শুনি?”
-”বলবো? রাগ করবেন না কিন্তু ওকে?”
-”হুম, বলো।’
-”আপনাকে আমি প্রথম প্রথম ছ্যা/চ/ড়া ভাবতাম। বিশেষ করে যেদিন আমাকে আপনার মনের কথা জানিয়েছিলেন।”
-”মনের কথা জানালে কেউ ছ্যাচড়া হয়? যাকে ভালোবাসি তাকে জানাব না? না জানালে তুমি আমার হতে কী করে?”
-”এত মেয়ে থাকতে আমাকে কেন ভালোবাসলেন শুনি?”
-”ভালোবাসতে কারণ লাগে নাকি? কোনো কারণে ভালো লেগেছে তাই ভালোবেসেছি।”

এভাবে কত কথা হতো তাদের মাঝে। এমনও হয়েছে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেছে। কখনো কখনো মেধা ঘুমিয়ে পড়ত কথা বলতে বলতেই। তখন আদিত্য মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে থাকত মেধার মুখের পানে। তবুও তার মন ভরতো না, তৃষ্ণা মিটতো না। সত্যি বলতে আদিত্য নিজেও জানে না কেন জানি মেধার নানান পাগলামিতে সায় দিতে তার ভালো লাগত। এই যেমন রাত জেগে কথা বলা, ঝুম বৃষ্টিতে হাতে হাত রেখে হাঁটা, কলেজ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে ঘুরতে যাওয়া, হঠাৎ করে দেখা করার আবদার করা, কথা না বলে ভিডিও কলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা, ইত্যাদি।আদিত্যের
বয়স অনুযায়ী এসব মানানসই না হলেও তার ভালো লাগে, আর ভালো লাগার বিশেষ কারণ ওর প্রিয় মানুষটার মুখের হাসি। এসব ভাবনার ছেদ ঘটল পুনরায় বাস ব্রেক করাতে।
এবার বাসের অনেকে খুব বিরক্ত হয়ে ড্রাইভারকে বকাবকি করতে লাগল। বাচ্চা, বুড়ো, আছে বাসে। এভাবে ব্রেক কষে
কেউ? বকা শুনে ড্রাইভার ঠিকভাবে বাস চালাতে লাগল।
মেধা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে সিটে বসে আড়চোখে একবার আদিত্যের দিকে তাকাল। চোখাচোখি হওয়াতে সে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে তাকাল। সেটা দেখে আদিত্য হাসল।
কিন্তু কেন জানি ক্ষণিকেই তার হাসি মিলিয়ে গেল। তখন থমথমে কন্ঠে বলল,
-‘ঢাকায় গিয়েছিলে আমার অনুমতি নিয়েছিলে?”
-‘আপনার অনুমতি নিবো কেন, কে আপনি?’
-‘জানো না কে আমি? মনে করিয়ে দিতে হবে? এখনই মনে করাব নাকি বাসায় যাওয়া অবধি অপেক্ষা করবে?’
-‘অসভ্যের মতো কথা বলছেন কেন? আমি আপনার কেউ না, বুঝেছেন? কেউ না।’
-‘ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙো না আমার নয়তো…!’

একথা শুনে মেধা নিশ্চুপ হয়ে শক্ত করে হাত মুঠ করে বসে রইল। পুরো মুখে কান্নার ছাপ। চোখে কোণে অশ্রু বিন্দু। সে
কান্না আঁটকানোর বৃর্থা চেষ্টা করছে দেখে আদিত্যই বলল,

-‘ভালোবাসি বলেই ছাড় দেই। তারমানে এই না বার বার ছাড় পাবে। তুমি ছোট, বয়স অল্প, তবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নও।
কাঁদছো কেন তুমি? আমি বকেছি তোমাকে? সেদিন রাতে আমি বলেছিলাম দেখা করতে? আমি বিল্ডিংয়ের সবাইকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম ছাদে? নাকি ভয় পেয়ে তোমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলাম, প্রত্যাখান করেছিলাম? কোনোটাই করি নি তবে তুমি কেন যোগাযোগ বন্ধ করলে? কেন এত কষ্ট করে তোমাকে খুঁজে পেতে হলো, বলো, বলো আমায়? কেন এত হয়রান করলে আমাকে? কোন অপরাধে করলে?”
-‘ঠিক, আপনিই পরিকল্পনা করেই আমাকে সবার সামনে
খারাপ করেছেন! সেদিন সবাইকে জানিয়ে পরে ছাদে এসে
নিজে সাধু সেজেছেন। আমাকে পছন্দ নয় একথা জানালেই হতো এত অভিনয়ের প্রয়োজন ছিল।”
-‘বাসভর্তি মানুষ আছে বলে বেঁচে গেলে নয়তো থাপ্পড়ে ফাজলামি করা বুঝিয়ে দিতাম।’
-‘পারেন তো শুধু তাই করতে। আমি তো নিজে থেকে এসব বলি নি। ওই পুলিশ আঙ্কেলের বউ নিজে একথা বলে গেছে। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছে আপনি সব ভাড়াটিয়ার মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। তারপর ওইসব মেয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে টাকা হাতিয়ে নিজে ব্যবসা শুরু করেছেন। অসৎ পথের টাকা বিধায় প্রথমবার ব্যবসাতে লস হয়েছে। আর সেদিন ছাদে যা হয়েছে সবটা আপনার পরিকল্পিত।’
-‘একথা শুনে বিশ্বাস করে যোগাযোগ বন্ধ করে ঢাকা চলে গেলে? বাহ্!’
-‘নাহ্!’
-‘তবে?’
-‘আপনার মা বলেছিল আপনার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে। যদি আমার বাবার রক্ত আমার শরীরে থাকে তাহলে যেন ভুলেও যোগাযোগ না করি। আর আমারও মনে হয়েছে আপনার পরীক্ষা নিতে তাই…।’
মেধার কথা শুনে আদিত্য রাগে দুঃখে কোনো কথায় বলতে পারল না। দু’জনে নিশ্চুপ হয়ে পুরো জার্নিটা সমাপ্ত করলো।
পরেরদিন সকালে বাস থেকে নেমে মেধা তার বাসার দিকে যেতে গেলে আদিত্য আঁটকে দিলো। আমানের আনা গাড়ির দরজা খুলে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো মেধাকে। সে কিছু বলতে গেলে কোনো কথা শুনলো না আদিত্য। তারপর তারা বাসায় গেলে আদিত্যের পা চোটপাট শুরু করলেন। মেধাকে এখানে থাকতে দিবে না মানে দিবেই না। তখন আদিত্য তার হাতের ব্যাগ রেখে ওর মায়ের রুমে গিয়ে একটা ওড়না খুঁজে এনে দেখিয়ে বলল,
-‘এই যে ওড়না, ওই যে সিলিং ফ্যান আর এই জলজ্যান্ত আমি। এখন তোমরা বলো তোমরা ঝামেলা মিটাবে নাকি আমি সুইসাইড করবো? আমার কারণে যত সমস্যা তাই না?আমি তোমাদের একজনকে বেঁছে নিতে পারব না, আমার তোমাদের দু’জনকেই চাই। তোমরা যখন এক বাসাতে এক সাথে থাকতেই পারবে না তখন নাহয় আমিই ম/রে যায়।’
আদিত্যের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হতবাক। ততক্ষণে সে ওড়না হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিয়েছে। তার কথা এবং কর্মকান্ড বুঝতে সময় লাগল উপস্থিত সকলের। যখন বুঝলেন তখন দরজা ধাক্কানো শুরু করে দিয়েছে কিন্তু আদিত্যের সাড়াশব্দ নাই। মেধা, আদিত্যের মা বাবা, আমান সকলে ডাকছে কিন্তু কারো কথার জবাব দিচ্ছে না আদিত্য।
একপর্যায়ে আদিত্যের মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মেধাকে মেনে নিবে, মেয়ের মতো করে দেখে শুনে রাখবেন, ভীষণ ভালোবাসবেন। আর কখনো তাকে অপমান করবে না তার
নামে বিচার দিবে না। উনার কথা শুনে মেধাও ওয়াদা করে বলল সে ভালো পুত্রবধু হয়ে দেখাবে। আর কখনো শাশুড়ির
সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না। একথা শুনে খট করে একটা শব্দ করে আদিত্য দরজা খুললো। কেবল গোসল সেরে বের হয়েছে বিধায় ভেজা চুল মুছছে। ওকে এভাবে দেখে আমান সহ আদিত্যের বাবা হো হো করে হেসে উঠল। আসলে এটা তাদের পরিকল্পনা ছিল। যাতে মেধা এবং আদিত্যের মাকে শা/য়ে/স্তা করা যায়। ছেলের অভিনয় দেখে উনি শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন। তখন আদিত্য তার মাকে জড়িয়ে ধরে
সুন্দর করে বুঝিয়ে বলল,

-‘তোমার ছেলে ছিলাম, আছি আর তাই’ই থাকব। মা মায়ের জায়গায় আর বউ বউয়ের জায়গায়।তোমরা দু’জন আমার কলিজায় স্থান দেওয়া মানুষ। তোমরা কেন বুঝো না তোমরা ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। একটা মেয়ে যেমন স্বামী সন্তান ছাড়া পরিপূর্ণ হয় না। তেমনি একজন পুরুষ মানুষও মা এবং বউকে ছাড়া জীবনটা গুছাতে পারে না। সে পুরুষও অপূর্ণ থেকে যায়। তোমাদের দু’জনকেই আমার প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন। আম্মু প্লিজ, মেধার ভুলভ্রান্তিগুলো মার্জনা করে ওকে কাছে টেনে নাও না? আমার জন্য নাও, আমার মুখে হাসি ফুটাতে অন্তত নাও। তোমার ছেলের ভালো থাকা তার মধ্যে বিদ্যামান। তোমার ছেলে মেধাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে। আম্মু সে আমার বাঁচার কারণ, ভালো থাকার কারণ।’

ক্ষণিকের জন্য আদিত্যকে হারানোর ভয়ে উনার বুক কেঁপে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল উনার কারণে উনার ছেলে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, তিনি জানেন আদিত্য প্রচন্ড রাগী, জেদী। সেদিন মেধারা বাসায় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেও আর বাসায় ফিরে নি। এতদিন নিজের ফ্ল্যাটে একা থাকত। উনি এতবার বলে কেঁদে ব্ল্যাকমেইল করেও ফেরাতে পারেন নি। আজ বাসায় ফিরলো তাও মেধাকে নিয়েই। এত সুন্দর করে বুঝিয়েও যখন কাজ হলো তখন আদিত্য হাল ছেড়ে দিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেধার ব্যাগ হাতে ধরার আগেই ওর মা বললেন মেধার বাবা মাকে খবর দিতে। উনি যেন এখনই এখানে এসে উপস্থিত হোন। তারপর আদিত্যের বাবা মেধার বাবাকে কল করে বিনয়ীভাবে এখানে আসতে বললেন।সেই
সঙ্গে এটাও জানালেন মেধা এখানেই আছে। ততক্ষণে মেধা প্রমাণসহ চারতলার পুলিশের বউটা ফোনে তাকে কী বলতো না বলতো সব দেখাল আদিত্যকে।আদিত্য পুরো বিল্ডিংয়ের
সবাইকে ডেকে নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করলো। এটাও বুঝিয়ে দিলো মেধা তার জীবনে প্রথম মেয়ে যাকে সে ভীষণ ভালোবাসে। এসব ঝামেলা শেষ করে মেধাকে নিয়ে বাসায় ঢুকে দেখে মেধার বাবা মা বসে আছেন।ততক্ষণে বড়রা বসে
নিজেদের ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে অনুষ্ঠানের ডেট ঠিকঠাক করছিল। কিন্তু বাঁধ সাধল আদিত্য নিজেই। অনুষ্ঠান করবে না সে। কোনোভাবেই তাকে বোঝানো গেল না দেখে বড়রা আজই আবার কাজি ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। পুনরায় তারা বাঁধা পড়ল বৈধ বাঁধনে। মেধা তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ক্ষমাও চাইল। উনারাও সুখের মুহূর্তে মনের রাগ ঝাল ভুলে মেয়েকে ক্ষমা করে মনভরে দোয়া করলো।
তারপর আগামীকালক উনাদের বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে অশ্রুভেজা চোখ আর মুখে হাসি নিয়ে বিদায় নিলেন।
সময় গড়াল, বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যাও হলো। সন্ধ্যার নিকষ কালো আঁধার ধীরে আরো গাঢ় হতে থাকল। আদিত্য এখন বাসায় নেই। সাব্বির এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে গেছে। মেধা শাশুড়ির কথামতো গেলাপী রঙা শাড়ি পরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আচমকা এক স্পর্শে তার দেহ ও মনে কাঁপন সৃষ্টি করল। তখন কেউ ফিসফিস করে বলল,
-‘কারো অপেক্ষায় ছিলে?’
-‘কই নাতো।’
-‘সত্যি? তাহলে আবার চলে যাই?’
-‘এ্যাই না।’
-‘হাহা হা। ওহ্ আর একটা কথা, মামা কল করেছিল।’
-‘স্যার? ওহ আচ্ছা তা কি বললেন?’
-‘পরশুদিন ঢাকায় ফিরতে হবে। তুমি এক কাজ করো এখানে কিছুদিন থাকো কিছুপরে এসে নিয়ে যাবো।’
-‘না, আমিও যাবো।’
-‘কেন?’
-‘কারণ একা ছাড়ছি না আর আপনাকে।’
-‘ পূর্বেও একা ছেড়ে যাবে না বলেও চলে গিয়েছিলে।’
-‘কারণ আমি জানতাম আপনি ঠিক আমার কাছে পৌঁছে যাবেন। আমাকে আপনার করে নিবেন। সারাজীবনের কথা ভেবে কিছুদিন কষ্ট দিয়েছি এজন্যই কষ্টের সুমিষ্ঠ হলো তাই না?’
-‘বাসে কী যেন বলেছিলে আমি তোমার কেউ না। আসলেই কেউ কী না সেটাই এখন বুঝাতে হবে তাই তো?’

একথা শুনে মেধা না সূচক মাথা নাড়িয়ে পিছু সরতে লাগল। আর ওকে সরতে দেখে আদিত্যও হেসে তার দিকেই এগিয়ে যেতে থাকল। একটা সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মেধা সরতে পারলো না। আদিত্য সামনে থাকায় পালানোর পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে আদিত্যের বুকেই মুখ লুকালো সে। তা দেখে আদিত্য শক্ত বাঁধনে বেঁধে নিলো তার মনপরীকে, প্রাণের প্রাণেশ্বরীকে। সঙ্গে মিটিমিটি হেসে তার কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার উষ্ণ পরশ।

~সমাপ্ত~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে