গোধূলির আলোয় পর্ব-০১

0
2390

গোধূলির_আলোয়
#পার্ট:১
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman

বাসর ঘর নামক অন্ধকার ঘরে বসে আছি আমি।বাসর ঘর মানেই চারপাশে ফুল আর আলোর রোশনাই থাকবে। কিন্তু আমারটা উল্টো।বিয়ে হওয়া অবধি থেকে বাসর ঘরে ঢোকা পর্যন্ত আমার চোখ কাপড় দিয়ে বাধা ছিলো।আব্বু-আম্মুর সম্মতিতে সব কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে সেটা আমি আজ সন্ধ্যা সময় বুঝতে পেরেছি। তারা কি করে পারলো এমন করতে?কিছুই মাথায় ডুকছে না!অন্ধকারে নিজের অস্তিত্ব যেন হারিয়ে ফেলছি আমি!অন্ধকারে আমার কান্না গুলোর শব্দ আরো ভয়ংকর লাগছে আমার কাছে।দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠি।নিজের অস্তিত্ব আজ বিলীন হয়ে যাবে এই অচেনা ব্যক্তির কাছে ভেবেই অন্ধকারে পিছিয়ে যেতে থাকি। হাতের কাছে কিছু একটা পেতেই সেটা শক্ত করে ধরে লোকটাকে মারার প্রস্তুতি নিই।দরজা খুলতেই এক ঝাক আলো রুমের মধ্যে ঠিকরে পড়ে। হুট করে আসা আলোর জন্য সাথে সাথে চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে ফেলি আমি। অনেকক্ষণ পরে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে কাওকে দেখতে না পেয়ে আবারও ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাই। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বিষ্ময়ে অবাক হয়ে যাই। হাজার হাজার ফুলে সজ্জিত সুন্দর রুমে বসে আছি।চারদিকে গোলাপ আর নানা ফুলের ছড়াছড়ি।হ্ঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে খাট থেকে নেমে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠি। আজ এতো বছর পর তাকে দেখতে পাবো তাও নিজের বাসর ঘরে ভেবেই কান্নার মাঝে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে আমার মুখে। আব্বু-আম্মু বুঝি এই সারপ্রাইজটার জন্যই এতো অভিনয় করলো।তাকে জড়িয়ে ধরেই বলি,

–‘এতো বছর কই ছিলি তুই?জানিস সেই ঘটনার পর কতো খুজেছি তোকে?এতোটা লুকিয়ে কেন ছিলিস তুই?আমার কষ্ট কি তোর উপলব্ধি হয় নি?

সে আমার বাহু ধরে তার বুকের উপর থেকে উঠিয়ে বলে,
–‘মিসেস.নীনিতা!আমাকে তাহলে মনে আছে আপনার?যাক এইটা ভেবে আমার প্রচুর হ্যাপিনেস কাজ করলো। কষ্ট করে তাহলে আমাকে আর চিনাতে হবে না আপনাকে।’
আমি তাকে আবার জড়িয়ে ধরতে গেলে সে হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বলে,
–‘মিসেস.নিনীতা জামান,আমাকে যখন মনেই রেখেছেন !তাহলে এতোটা আপ্লুত হচ্ছেন কেন?আমাকে দেখে তো আপনার সব ভেংগে চুরে বাসর ঘরটাকে জ্বালিয়ে বের হয়ে যাওয়ার কথা।’
আদ্রের কথা শুনে মূহুর্তেই কান্না থেমে গেছে আমার।আমি অবাক চোখে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।কতোটা পরিবর্তন হয়েছে তার। আমাকে আপনি করে বলছে।আমি ওর হাত ধরে বলি,
–‘এই আদ্র,আমাকে আপনি করে বলছিস কেন তুই?আমি না তোর নুনতা।’
আদ্র হা হা করে হেসে উঠে বলে,
–‘সে মরে গেছে! আজ যে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে সে হচ্ছে নিনীতা জামান ওরফে আমার এক বছরের এগ্রিমেন্টের বউ।’
আদ্রের কথা গুলোর মানে বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো আমার।মূহুর্তেই বুঝতে পেরে পায়ের নিচের মাটি গুলো যেন সরে গেছে আমার।ওর হাত দুটো আমার হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে কাপা কন্ঠে বলি,
–‘মা….মানে?আদ্র তুই আমার সাথে ফাজলামি করছিস সেই আগের মতো তাই না? এই আদ্র দেখ না…দেখ আমি তোর নুনতা।একটা মিথ্যা ভুলের শাস্তি এইভাবে আমাকে তুই দিতেই পারিস না।’
–‘একটা মিথ্যা ভুল? লাইক সিরিয়াসলি মিসেস.নীনিতা!হাসালেন আমায়।আপনার সেই মিথ্যা ভুলের জন্য আদ্র মরে গেছে।বুঝেছেন আপনি…আদ্র মরে গেছে।’আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলি,
–‘সব ভুলের ভাগিদার কিন্তু আমার একার ছিলো না!একটু সময় দিতি তাহলে আজ এতোটা ভুলের মাশুল দিতে হতো না।আর এক বছরের বউ মানে কি?আমার জীবনটাকে পুতুলের খেলাঘর পেয়েছিস তোরা?’
আদ্র আবারও হা হা করে হেসে একটা গোলাপ ফুল ছিড়ে বলে,
–‘এই ছেড়া পাপড়ি গুলো দেখেছেন?এর মতো হবে আপনার অবস্থা না পাড়বেন জোড়া লাগতে না পাড়বেন চলে যেতে।আর এই একবছর আমার কাছে রেখেই আপনাকে আপনার করা ভুলের শাস্তি হাসিমুখে গ্রহণ করাবো আমি। ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ!’

খাটের উপর ধপ করে বসে পড়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়ি আমি।এতোটা পরিবর্তন তার?আমি যে তাকে ছাড়া বেচে থেকেও মরে ছিলাম সে কি জানতো?আবারও আজ আমাকে ভেংগে গুড়িয়ে দিচ্ছে সে সেই সাত বছর আগের মতো।আব্বু-আম্মু কি করে পাড়লো আদ্রের কথা মেনে নিতে?সে দিনের করা ভুল তো আমার ছিলো
না।কতোটা সুন্দর ছিলো সেই দিনের আগের দিনগুলো। আমি কি ফিরে পাবো সেই আগের আদ্রকে? যে আদ্র আমাকে কষ্ট দিলে নিজে কষ্টে মরে যেত সে আজ শাস্তি হিসেবে এগ্রিমেন্টের বউ হিসেবে এনেছে আমায়।চোখ তুলে তাকিয়ে আদ্রকে মুচকি হাসি হাসতে দেখে আবারও আমি উঠে ওকে জড়িয়ে ধরি। আদ্র ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে হাত উচিয়ে শাসিয়ে বলে,

–‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ আমি পচ্ছন্দ করি না!ফারদার আমার কাছে আসার আগে নিজের অতীত মনে করবেন মিসেস.নিনীতা। দ্বিতীয় বার এই ভুল করলে আমি আপনাকে জ্বালিয়ে দিবো। আর আপনি জানেন আমার কথার খেলাপ আমি করি না।’আমি আদ্রের কথা শুনে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে আর একটা সুন্দর গোলাপ হাতে নিয়ে বলি,

–‘প্রত্যেকটা দিন এই সুন্দর কলি গোলাপের মতো শুদ্ধতায় ঘেরা থাকবে।আর এইটা আমার চ্যালেঞ্জ আমার আমি কে।’
.
.
.
ভোরের আলো এখনো ফুটে নি। আদ্র খাটের উপর বসে আছে। আর আমি নিচে ফ্লোরে মাথা নিচু করে কেদে যাচ্ছি।সব কেমন এলোমেলো হয়ে উঠেছে। এতোটা বছর আমি কেন বেচে ছিলাম এই নিয়ে আফসোস হচ্ছে।ওর চলে যাওয়ার পর মরে গেলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না। চলে যাওয়া মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু সামনে থেকে এই অবহেলা মেনে নিতে পারবো না। ধীর পায়ে উঠে দাড়ালাম আমি।আমাকে উঠতে দেখে আদ্র নড়েচড়ে বসে পাশে থাক মোবাইল উঠিয়ে চালানোয় মনোযোগ দিলো। আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ওর বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলাম ।বারান্দায় যেতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। পাশে থাকা চেয়ারে পারা দিয়ে বারান্দার খোলা রেলিঙে উঠে দাড়ালাম। আমার করা চ্যালেঞ্জ না হয় গোলাপের শুদ্ধতায় ঘেরা না হয়ে গোলাপের লাল রং রক্তের ছড়াছড়ি হোক……

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে