গাঁইয়া_বউ – ২য়_পর্ব

0
4317

গাঁইয়া_বউ।২য়_পর্ব।
তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।

আমার ঠোঁটের হাসি নিমিষেই মিলিয়ে গেলো যখন অপূর্ব বলে উঠলো,
~ডাক্তার,আমি এখন বাচ্চা চাইনা।আপনি Abortion এর ব্যবস্থা করুন।

~এ কি বলছেন আপনি?(ডাক্তার)
~জ্বী,আমি এ বাচ্চা এখন চাইনা।(অপূর্ব)
~কিন্তু আমি চাই।(আমি)

আচ্ছা আপনারা দুজনই ভাবুন আপনারা কি করতে চান।তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিন।
আমি আসি।(ডাক্তার)

শোনো অর্না,
যেখানে আমাদের সম্পর্কেরই কোন ঠিক নেই সেখানে এই বাচ্চাকে কিভাবে আমরা এই দুনিয়ায় আনি?

~আমি আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবো।
~আমি তোমাকে আজো আমার স্ত্রী হিসেবে মানতে পারিনি।আমার কাছে তুমি সেই গাঁইয়া বউ ই।
আমি পারবো না এ সন্তানকে এক্সেপ্ট করতে।
যেখানে তোমাকেই আমি এখনো এক্সেপ্ট করতে পারিনি,সেখানে এই সন্তানকে গ্রহণ করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না।

~তাহলে আপনি কি চান?
~আমি চাই তুমি বাচ্চাটাকে Abortion করে ফেলো।আমি যদি কোন দিন তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মনে জায়গা দিতে পারি তবে তখন বাচ্চার চিন্তা করা যাবে।এখন নয়।

~এটাই আপনার শেষ কথা?
~হ্যাঁ এটাই আমার শেষ কথা।আমার সাথে থাকতে হলে এই সন্তান তুমি রাখতে পারবেনা।ভেবে দেখো এখন তুমি কি করবে।

সারা রাত ভাবলাম আমি কি করবো?স্বামীর সংসার করবো?নাকি করবো আমার সন্তানকে হত্যা?

সকাল হলো,
~অর্না অর্না।কোথায় তুমি?
সারা বাড়ী খুঁজে অপূর্ব শুধু একটা চিঠি পায়।

অপূর্ব
আমি জানি আপনার পক্ষে আমার এই গর্ভের সন্তানকে মেনে নেয়া সম্ভব না।কিন্তু আমি মা হয়ে কি করে আমার সন্তানকে হত্যা করবো বলতে পারেন?
তাই আমি এ সংসার ছেড়ে আমার সন্তানকেই বেছে নিলাম।আপনি ভালো থাকবেন।আর আমার বিশ্বাস একদিন আপনি আপনার ভুল ঠিকই বুঝতে পারবেন।আর আপনি আমার সন্তানকে মেনে নিবেন।আর একটা কথা,জানিনা কখন কিভাবে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।খুব বেশি ভালবাসি আপনাকে আমি অপূর্ব।নিজের খেয়াল রাখবেন।

ইতি
আপনার গাঁইয়া বউ।

কেটে গেলো একটা মাস।অপূর্বের কোন খবর নেই।
আমি আমার বাবার বাড়ীতে চলে আসি,
অপূর্বের মা বাবা আমার খবর নিলেও অপূর্ব আমার কোন খবর নেয়না।
অপূর্বের বাবা মা আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখেন,খোঁজ খবর নেন।
এদিকে আমার আম্মু আব্বুও আমার খুব যত্ন নিচ্ছেন।

এখানে একটা স্কুলে আমি বাচ্চাদের পড়াই।বাচ্চারা আমাকে খুব ভালবাসে।ওদের মুখ দেখেই নিজের কষ্ট গুলো কিছুটা ভুলে থাকি।
দিন যাচ্ছে,সময় চলে যাচ্ছে।

আর আমি শুধু অপেক্ষায় আছি অপূর্বের।কবে অপূর্ব আমায় একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কবে আমি কেমন আছি,

কিন্তু ও আমার কোন খবর নেয়না।

দেখতে দেখতে কত গুলো মাস কেটে যায়,
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে,
তবুও সে আসেনা।
আমার ডেলিভারি ডেইট চলে আসে।

আজ আমার সিজার হবে,
জানিনা আমি বেঁচে ফিরবো কিনা।
দেখতে পারবো কিনা আমার মেয়ের মুখ।
ও হ্যাঁ, আমার মেয়ে হবে।
কিছু দিন আগে আমার হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা হয়।তাই আল্ট্রা করা লাগে,আল্ট্রা করার পর জেনেছিলাম আমি কন্যা সন্তান জন্ম দিবো।
অনেক খুশি হয়েছিলাম আমি।
কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো,
আমার মেয়ের জীবন টাতো আবার আমার মত হবেনা?

না না,আমার মেয়েকে আমি স্মার্ট করে তুলবো,শিক্ষিত করে তুলবো।কেউ যেন ওর দিকে আঙুল তুলতে না পারে।ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন।
মা মেয়ে কত্ত খেলা করবো,ও যখন বড় হবে এক রঙের জামা পরবো।
ছোট্ট ছোট্ট ঝুটিতে কতই না অপূর্ব লাগবে আমার মেয়েটাকে।

ওর হাত ধরে আমি স্কুলে নিয়ে যাবো।
নিজে হাতে ধরে অ আ ই ঈ শিখাবো।
মেয়ে অন্তত আমার দুঃখ বুঝবে।
সব দুঃখ এক চুমুতেই দূর করে দিবে আমার।
ওর মুখের হাসির মাঝে খুঁজে নেবো আমি আমার নতুন আমিকে।

একটু পরেই আমাকে অটিতে নিবে।অপেক্ষা করছিলাম অপূর্বের।ইশ আজ অন্তত ও যদি আমাকে একটু দেখতে আসতো।ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

আর আমার মেয়েটাকেও,জানিনা কোলে নিতে পারবো কিনা আমি আমার মেয়েটাকে,
আমি আমার মেয়েটাকে অনেক ভালবাসি।ওর জন্যই তো আমি আমার সব ছেড়ে ওকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি।ওই আমার শেষ অবলম্বন।ওকে নিয়েই আমি বাঁচতে চাই বাকিটা জীবন।

ডায়েরীটায় এই পর্যন্তই লিখা ছিলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে