গাঁইয়া_বউ – পর্ব_৬

0
3119

গাঁইয়া_বউ।পর্ব_৬
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।

অর্না বিদায় নিয়ে অয়নের সাথে অয়নদের বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে দাঁড়াতেই অয়নের বোন এসে গেইট খোলে।
আর অর্নাকে দেখেই একটা হাসি দেয়।
আর হঠাৎ ই একটা গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়।
অর্না তাকায় সেদিকে,আর অয়ন তাকিয়ে দেখে ওর বোন জামাইর হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

-কি হলো ভাই?লাগেনি তো।(অয়ন)
-আরে না।আমি ঠিক আছি।
-আয় আয় বউ নিয়ে ভেতরে আয়(মনা)

চলো অর্না।

-অর্না এটা আমার বাবা,তোমার শশুড় মসাই।
অর্না অয়নের বাবাকে সালাম করে।
-আর এটা হচ্ছে আমার এক মাত্র বোন মনা।
মনা অর্নাকে জড়িয়ে ধরে।

আর এই হচ্ছেন আমার বোন জামাই,মিঃ অপূর্ব।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আর এই হচ্ছে আমার অর্না।আমার ভালবাসা।

-হুম তোর পছন্দ আছে বটে।
কি মিষ্টি দেখতে আমাদের অর্না।(মনা)
-দেখতে হবেনা কার পছন্দ (অয়ন)

অর্না এত ক্ষণে অপূর্বকে দেখে সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কেননা অপূর্বের আঘাতের কাছে এই শক কিছুই না।

যা অয়ন বউ মাকে ভেতরে নিয়ে যা।(বাবা)

এত ক্ষণে অপূর্বের বুকের ভেতর দাউদাউ করে যেন আগুন জ্বলছে।
এ কি দেখছে ও।অর্না কি করে অয়নের বউ হয়?এ কি করে সম্ভব?
এ কিছুতেই হতে পারেনা।
আমি হয়তো ভুল দেখছি।
না না ভুল দেখবো কি করে?ও যে আমার চিরচেনা।

অয়ন অর্নার হাত ধরে অয়নের রুমে নিয়ে যায়। অয়নের রুমটা রজনী গোলাপ গাদা ফুলে সাজানো হয়েছে।
মনা আর অপূর্ব মিলেই তাড়াতাড়ি করে এসেই রুমটা সাজিয়েছে।

অয়ন রুমে ঢুকতেই ফুলে সাজানো রুমটা দেখে অনেক টা খুশি হয়।
অর্নাকে খাটে বসিয়ে ওর হাত ধরে বলে,
-তুমি খুশি তো?
-হুম।
-জানো আজ আমি অনেক খুশি।তোমাকে যে আজ আমি আমার করে পেয়েছি।
আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি।তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।
-আপনি খুব ভালো।
-এইটাই কথা?
-হুম।

-আমার বাবা বোন ওদের,নিজের বাবা বোনের মত দেখো।আগলে রেখো এ সংসারটাকে।
-আপনার কোন চিন্তা করতে হবেনা।
-হ্যাঁ সেটা আমি জানি।আমার বউ যে খুব লক্ষী।ও নিজে থেকেই সব কিছু বুঝে।
-হয়েছে।
-আগামীকালই আমরা অনুকে নিয়ে আসবো ঠিকাছে?
-আচ্ছা।
-ওর জন্য মন খারাপ লাগছে?
-হুম।

-কালই নিয়ে আসবো ওকে।মন খারাপ করোনা।এবার চোখ বন্ধ করো।
-কেন?
-করোই না।
-আচ্ছা করলাম।

চোখ বন্ধ করার পর অয়ন অর্নাকে একটা চেইন আর আংটি পরিয়ে দেয়।

-কি এগুলো?
-তোমার বাসর ঘরের গিফট।
-পছন্দ হয়েছে?
-হুম খুব।
-অনেক রাত হয়েছে তাইনা?
-হুম।
-আমি কি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি?
-যান এখান থেকে।
-লজ্জা পেয়েছে রে আমার বউটা।
-এসো লজ্জা ভাঙিয়ে দেই।

এই বলে অয়ন অর্নার কপালে চুমু খায় ওকে ভালবেসে কাছে টেনে নেয়।

সকাল বেলা অর্না গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নীল রঙের একটা শাড়ী পরে।চোখে হালকা কাজল দেয়।হাতে নীল রঙের চুড়ি পরে।
অপূর্ব লাগছে অর্নাকে।
অর্না যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর ভেজা চুল গুলো আচড়াচ্ছে ঠিক তখনই অয়ন ঘুম থেকে জেগেই অর্নাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

-যান গোসল করে নিন।
-করবো,আগে আমার সুন্দরী বউটাকে একটু দেখি।নীল শাড়ীতে আমার বউটাকে নীল পরী লাগছে।
-একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?
-উঁহু একটু কম কম হয়ে যাচ্ছে।
-যান এবার গোসলে।
-যাচ্ছি আমার বউটা।

অয়ন ফ্রেশ হয়ে বের হলে মনা ওদের ডাকতে আসে।
-কিরে উঠেছিস তোরা?
-হ্যাঁ আপু।আপনার ভাই রেডি হচ্ছে।
-তাড়াতাড়ি চলে এসো ওকে নিয়ে।
সবাই এক সাথে নাস্তা করবো।

অর্নাকে নিয়ে অয়ন নাস্তার টেবিলে যায়।
অপূর্ব অর্নার দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্না ওর তাকানো দেখে অয়নের হাত ধরে ফেলে।

অপূর্ব চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে।

-আমি সবাইকে বেড়ে দিচ্ছি আপু।
-উঁহু,তুমি নতুন বউ।তোমার কিছু করতে হবেনা।তুমি শুধু এখন আমার ভাইকে সময় দিবে।
সংসার সামলানোর জন্য তো সারাজীবনই পড়ে থাকবে।
-মনা ঠিক বলেছে মা,তুমি আমার পাগল ছেলেটাকে দেখে রেখো।
-আচ্ছা শোন,হানিমুনে কোথায় যাবি কোন প্ল্যান করেছিস?
-না করিনিতো,ভেবে দেখ কোথায় যাবি।টিকেট করে ফেল।
-দেখি,নাস্তা করে অর্নাদের বাসায় যাবো একটু।
-এখন কেন যাবি?বিকেলেতো উনারাই আসবেন।
-নারে এখনই যেতে হবে,অর্নার খারাপ লাগছে অনুর জন্য।আর অনুও সকালেই ফোন করেছিলো।আমাকে আর অর্নাকে খুব মিস করছে।গিয়ে ওকে নিয়ে আসি।
-অনু কে?কি হয় অর্নার?
-তোদের তো বলা হয়নি,আমাদের একটা মেয়েও আছে।ওর নাম অনু।
-মেয়ে আছে মানে?
-আচ্ছা সবাইকে আমি ক্লিয়ারলিই বলি।
অর্নার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো,ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে।আর ওর একটা মেয়ে আছে।যেটা এখন আমার মেয়ে।এ বাড়ীর মেয়ে।

এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেছে।

-আমার কোন প্রবলেম নেই এতে,তোমাদের কোন প্রবলেম আছে?আমি চাই অনু আমাদের সাথে থাকুক।

-আমাদের কি প্রবলেম থাকবে?তুই যেই ডিসিশন নিবি আমরা তাতেই খুশি।
তো,ওদের ডিভোর্স টা কেন হয়েছিলো?(বাবা)
-কারণ ও গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে।গাঁইয়া বউ অই অমানুষ টার পছন্দ ছিলোনা।বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করেছিলো।আর তাই ওর সন্তানটাকেও ও পরিচয় দেয়নি।
পরে শহুরে এক স্মার্ট মেয়েকে সে বিয়ে করে নেয়।আর এভাবেই ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
-খুব ভালো করেছো অমানুষটাকে ছেড়ে দিয়ে।নইলে সারাজীবন জ্বলতে হতো বোন।

কথা গুলো শুনে অপূর্বের কাশি উঠে যায়।
-আপু উনাকে পানি দিন (অর্না)
-এই নাও পানি।তোমার আবার কি হলো?
-না কিছুনা।
-নাস্তা করে যা তাহলে দাদুভাইকে নিয়ে আয়।
-হ্যাঁ বাবা যাচ্ছি।

অপূর্ব অর্ধেক নাস্তা করেই উঠে চলে যায়।
-কি হলো চলে যাচ্ছো যে?
-খেতে ইচ্ছে করছেনা।
-আর বলোনা,মানুষটা একটু অন্য রকমই যখন যা ইচ্ছে তাই করে।তোমরা খাও আমি আসছি।দেখি ওর কিছু লাগবে কিনা।

-কি হলো?চলে এলে যে?
-এমনিই ভালো লাগছেনা।
-দেখেছো দুনিয়ায় মানুষ কত রকমের হয়।তুমি আমি একটা বাচ্চার জন্য কত হাহাকার করছি।
আর ওদিকে ওই অমানুষ টা কিভাবে একটা বাচ্চা সহ এত লক্ষী একটা মেয়ের সোনার সংসার টা ভেঙে চলে গেছে।

-বাদ দাও ওসব কথা।
মেডিসিন নিয়েছো?ডাক্তার যেই মেডিসিন গুলো খেতে দিয়েছে?
-হুম নিবো এখন।
-মেডিসিন গুলো ঠিক মত নাও।
দেখো কি হয়।
-হুম আল্লাহ্‌ ভরসা।

অয়ন আর অর্না অনুকে আনতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হবে আর অনুর ডাক।

-বাবা,আমি এসে গেছি।

অয়ন,অপূর্ব,মনা,অর্না,আর অয়নের বাবা সবাই এক সাথে দাঁড়ানো।

অনু দৌড়ে গিয়ে অয়নকে জড়িয়ে ধরে।
আমি এসে গেছি বাবা।
আমি এসে গেছি আম্মু।

-আমরা এক্ষুণি তোমায় আনতে যাচ্ছিলাম মা।
-জানো আমি তোমাদের খুব মিস করছিলাম।
-আমরাও তোমাকে খুব মিস করছিলাম আম্মু।

এই যে দেখো এটা কে।
এটা হচ্ছে তোমার দাদাভাই।
-আমার তো দাদা ভাই আছে।
-এটা তোমার আরেকটা দাদা ভাই।
-আচ্ছা,কেমন আছো দাদা ভাই?
-এইতো ভালো আছি আপু।তুমি কেমন আছো?
-আমিও ভালো আছি।
-আর এটা হচ্ছে তোমার ফুফুমা।
-এসো এসো কোলে এসো একটু।
-কেমন আছো ফুফু মা?
-আমি ভালো আছি মা।
-আর এই হচ্ছে তোমার,
-বাবা। আই মিন ফুফা বাবা।(অর্নব)
-ফুফা বাবা আবার হয় নাকি?(অয়ন)
-ফুফুমা হলে ফুফা বাবা হবেনা কেন?
-হি হি হি আচ্ছা তুমি আমার ফুফা বাবা।ভালো আছো?
-হ্যাঁ ভালো আছি।একটু কোলে আসবে আমার?
-না আমি এখন আম্মুর কোলে যাবো।

এদিকে অনুর নানা নানু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন অপূর্বের দিকে।

আর মনে মনে ভাবছেন।
যেই অশান্তি থেকে আমাদের মেয়ে মুক্ত হয়ে নতুন জীবনে পা রাখলো।
সেই অশান্তিতো আমাদের মেয়ের পিছু ছাড়লোনা।
তবে কি অর্না আবারো আঘাত পাবে?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে