গল্পের_নামঃউড়ন্ত(পর্ব-২)

0
929

গল্পের_নামঃউড়ন্ত(পর্ব-২)
লেখাঃসানজিদা

কলেজের পিছনে দিঘির পাশের ব্রেঞ্চে বসে আছে জয়। কতো স্মৃতি এখানে। আনান্দিতার সাথে প্রতি সপ্তাহে এখানেই দেখা হতো তার।সেই ক্লাস সিক্স থেকে পরিচয় তাদের। প্রথম যেদিন ওদের দেখা হলো তখন ক্লাস সিক্সের ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছিলো।আকাশি ফ্রক পরা আনান্দিতাকে দেখে জয়ের মনে কিছু তো হয়েছিলো। তারপর ধীরেধীরে কখন কিভাবে দুজন এক হয়ে গেলো, তা তাদের নিজেদেরও অজানা। যেদিন জয় স্কুল থেকে বিদায় নিলো, সেদিন বুঝেছিল সে আনু নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে।পিচ্চি আনুও সেদিন কেমন মরা কান্না করছিলো। ভাবতেই জয়ের ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা গেলো। ইশ্,তখনের সময়টাই ভালো ছিলো। কেন বড় হলি আনু?আজ বড় না হলে তো তোকে হারাতে হতো না।
-তুমি না বাসায় যাবা বললা? তাহলে এখানে কি করছো?
-তুমি? তুমি এখানে এলে কেমনে? তোমার তো এই জায়গা চেনার কথা নয়, তাহলে?
– এটা ভালো, প্রশ্ন করলাম আমি।আর তুমি উত্তর তো দিলেই না,উল্টো প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসেছো।
-হেয়ালি রাখো রিয়া,এখানে কিভাবে এলে তাই বলো।তোমাকে তো বাসায় যেতে বললাম, তাহলে এখানে কেন?
-উফফ,তোমাকে দেখে আমার কেমন যেন টেনসড লাগছিলো। তাই পিছু নিয়ে চলে আসছি।আর তুমি চিন্তায় এতো বিভর ছিলা যে আমাকে দেখোই নাই।
-ওহ,আচ্ছা চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।সন্ধা হয়ে আসলো, দেরি হয়ে যাবে। আর শুনো,এরপর এমন আর করবা না।
-যাবনা,যাব দেখে তো পিছু নিয়ে আসিনি।আমি জানতে চাই কি লুকাচ্ছো তুমি?কি নিয়ে তুমি এতো আপসেট? আমি এর আগেও খেয়াল করেছি, তুমি মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে যাও।কেন? দেখো আমি তোমাকে ভালবাসি।আমি চাই তুমি ভালো থাকো।তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগছেনা।প্লিজ বলো.
-বললাম তো কিছু না। আর তোমাকে কতবার বলবো, ভুলে যাও আমাকে।আমি তোমাকে ভালবাসতে পারবো না।আমারা বন্ধু,এছাড়া তোমার সাথে আর কোন সম্পর্কে জরানো আমার পক্ষে সম্ভব না।কেন বুঝনা তুমি? কেন শুধু শুধু যেচে কষ্ট পাচ্ছো???
-আমি তো তোমাকে বলি নি , তুমি আমাকে ভালবাসো।আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ভালবাসতে হবে না,কিন্তু তোমাকে ভালবাসার অধিকার কেরে নিও না।আমি তোমাকে ভালবেসেই বাকি জিবন খুব ভালো থাকবো।
-জিবন এতো সহজ নয়।এসব হেয়ালি রেখে নিজেকে নিয়ে ভাবো। তুমি জানো, শুভ তোমাকে ভালবাসে,তুমি ওকে একটা সুযোগ দাও।ওকে নিয়ে নিজের জীবন টা গুছিয়ে নাও। এখন চলো..
-বললাম না যাবো না? তুমি আজ সব বলবে।কেন আমাকে ভালবাসবে না তা বলবে।তোমার লাইফে কেও থাকলে তাও বলবে।তোমার ভালো খারাপ সব বলবে।নাহলে আমি কোথাও যাবো না।এই আমি বসলাম.
-এসব কি হচ্ছে রিয়া? আজান দিচ্ছে, উঠো!
-নাহ্
-ঠিক আছে সব বলবো, তবে শর্ত আছে।সব শোনার পর আর তুমি আমাকে নিয়ে ভাববে না। শুভ কে সুযোগ দিবে,ওকে নিয়ে ভাববে।আর হ্যা, আমার জন্য তোমার চোখে দয়া বা কান্না দেখতে চাই না।এবার বলো,শর্ত মানতে রাজি আছো?
-জয়,আমি তুমি ছাড়া অন্য কাওকে চাই না। পারবো না আমি কাওকে সুযোগ দিতে।তবে হ্যা আজকের পর তোমার সামনে আর কখনো ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাড়াবো না।নিজের জীবন টা গুছিয়ে নিবো,নিজেকে সবসময় ভালো রাখবো। আর হ্যা, আমি সব শোনার পর কান্না করবো না,যাই হোক না কেন।প্রমিজ।
-আমি ক্লাস এইটে থাকতে আনান্দিতার সাথে আমার দেখা হয়। আকাশি রং এর ফ্রক,এক ঝুটি।পিচ্চি পরি যেনো দিক ভুলে পৃথিবী তে নেমে এসেছিলো। সেদিন থেকে এই পিচ্চি কে না দেখলে আমার দিন খুব খারাপ যেতো। এভাবেই কখন যেন এই পিচ্চিই আমার সব হয়ে গেছিলো। আমার বসন্তের মাতাল হাওয়া ছিলো সে।সবার জন্য বসন্ত বছরে একবার এলেও,আনু আমার জন্য নিজেই এক বসন্ত ছিলো। জানো রিয়া, ওর খুব ইচ্ছে ছিলো লক্ষ লক্ষ তারার মাঝে নিজেও একটি তারা হতে।ওর নাকি আকাশের তারাগুলো দেখে খুব হিংসা হতো। ওরা কতো উজ্জ্বল, আনুর নাকি ওদের মতো উজ্জ্বল হতে ইচ্ছে হতো। পাগলি টাকে কতবার বলেছি, তুমি ওই তারার থেকেও বেশি উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ। কে শুনে কার কথা, ও ঠিক তারা হয়েছে।আমার কথা শুনেনি,ওর ইচ্ছেটাই পুরন করেছে।একবারও বুঝে নি ও তারা হলে আমি যে একা হয়ে যাবো। এখানেই আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো। আমার জন্মদিন ছিলো সেদিন,পিচ্চিটা গিন্নির মতো আমার জন্য রান্না করে এনেছিল।খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলাম
,সেদিনি হয়তো শেষ তৃপ্তি করে খেয়েছি।
-আনান্দিতার কি হয়েছিলো?
-আনুকে বাঁচতে দেয় নি ওরা।আজ থেকে ২বছর আগের কথা,সেদিন আমাকে খাইয়ে আনু বললো তাকে বাসায় দিয়ে আসতে।আমি ওকে নিয়ে বের হবো এমন সময় রনি (আমার ক্লাস ফ্রেন্ড) এসে বললো আমাদের নাকি এলাকার বড়ভাই সামি ডাকছে,কলেজের পাশের গলিতে
আছে। আমি যেতে চাইনি।বললাম আমাদের কেন ডাকবে? আর গেলে আমি যাচ্ছি,আনু কে বাসায় দিয়ে আসি।১০ মিনিট লাগবে..
এমন সময় সামির তিনজন চ্যালা এসে হাজির হলো।আমাদের নানা রকম বুঝিয়ে সামির কাছে নিয়ে গেলো, এক প্রকার জোর করেই। আমি আনু কে বার বার বলেছিলাম। তুমি চলে যাও,কিছু বললে আমি সামলে নিবো।মেয়েটা আমার কথা শুনলো না। ওরা সবাই আমার পিচ্চিকে শেষ করে দিলো,আমি কিচ্ছু করতে পারি নি।বাঁচাতে পারিনি আমার পিচ্চিকে।ও তারা হয়ে গেলো, আমাকে একদম একা করে চলে গেলো।
আমি ওদের ছাড়বোনা রিয়া।আমার আনুর প্রতিশোধ আমি নিবোই!
রনি কে আর ওই তিন চ্যালা কে শেষ করেছি,এবার সামির পালা।শুধু ওর জন্যই আমি এই ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি, ওকে মরতেই হবে।ওকে মেরে আমি আমার আনুর কাছে যাবো,ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। জানও, আমারও না আজকাল তারা হতে খুব ইচ্ছা করে।
.
.
রিয়ার চোখ দিয়ে কখন অশ্রু ঝরা শুরু হয়েছে,সে নিজেও জানে না।সে যে কথা দিয়েছে জয়ের সামনে কান্না করবে না।তাই জয়ের কথা শেষ হতেই সে নিস্বব্দে চলে যায়।সে চাইলে বলতে পারতো, এসব প্রতিশোধ নেওয়া বন্ধ করে জয়কে সুন্দর একটা জীবন কাটাতে।কিন্তু না,তা সে বলবে না।তাহলে যে আনুর কাছে সেও দোষী হয়ে যাবে। তাছাড়া সামিদের মতো কীট বেঁচে থেকে সমাজের অকল্যাণ ছাড়া আর কিছুই না!
.
.

ব্রেকিং নিউজঃকমলাপুরে কলেজের দিঘির পাশে উক্ত এলাকার ফিরোজ আহমেদের একমাত্র ছেলে সামি আহমেদের নৃশংস ভাবে খুন।

সমাপ্ত
(বিঃদ্রঃগল্পটা প্রথম পর্বেই শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অনেকের কথা আর নিজেরও মনে হলো, বড় বেশি খাপছাড়া হয়ে গেছে।তাই দ্বিতীয় পর্ব লিখলাম। হয়তো তেমন গুছিয়ে লিখতে পারিনি।আসলে কখনো এমন গল্প লেখা হয় নি,কবিতা আর দুই একটা ছোট গল্পই লিখেছি শুধু। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে