গল্পের নাম প্রেমের শুরু পর্ব-১১+১২

0
1030

#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১১
ইলহাম দরজা খুলে দেখলো তানভীর আর ওর মা রাহেলা খাতুন দাড়িয়ে আছেন আর তাদের সাথে হেমন্তির পরিবারও আছে।ইলহাম তাদের কে সালাম দিয়ে ভিতরে আসতে বললো কেয়া হেমন্তির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছো আপু?
হেমন্তি আলতো হেসে বললো,
~ভালো আছি রে তুই কেমন আছিস?
কেয়া বললো,
~ভালো।
কেয়া হেমন্তির ছেড়ে দিয়ে হিয়ার পাশে বসে বললো,
~Good news টা কিন্তু বিনা মিষ্টিতে পেয়েছি এই কথাটা আমি ভুলবোনা।
ফারুক কেয়ার কথা শুনে বললো,
~চিন্তা করোনা সবকিছু শুদে আসলে পরিশোধ করে দিবো একবার পুঁচকোটা এসে নিক।
কেয়া বললো,
~মনে থাকে যেন।
হিয়া বললো,
~হেমন্তি বললো তোমার বিয়ের সব শপিং হয়ে গেছে আমাকে দেখাও তো মোবাইলে ছবি আছে তো?
কেয়া পার্স থেকে মোবাইল বের করে বললো,
~আছে তোমাকে দেখানোর জন্যই ছবি তুলেছি।
ফারুক তানভীরের পাশে বসে বললো,
~আর কী খবর হবু বউয়ের সাথে দিন কেমন কাটছে?
ফারুকের কথা শুনে তানভীর লজ্জা পেয়ে বললো,
~ভালোই কাটছে।
ফারুক বললো,
~কেয়া তোমার থেকে বেশী তো তানভীর লজ্জা পায়।
ফারুকের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে পুরো বাসাটা আমেজে ভরপুর হিয়ার অনেক ভালো লাগছে সবাইকে একসাথে পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে গেছে।ইরিনা বেগম হেনন্তিকে সাহায্য করছেন টেবিলে খাবার সাজাতে রাহেলা খাতুন তাদের সাথে দাড়িয়ে আছেন।রাহেলা খাতুন হেমন্তির উদ্দেশ্যে বললেন,
~হেমন্তি,তোমরা কী ভেবেছো বাচ্চার ব্যাপারে?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে হেমন্তির মুখটা কালো হয়ে বাচ্চা কী করে নিবে এখন?ইলহামই তো দূরে চলে যাচ্ছে এসময় এসব ভাবাই যাবেনা।হেমন্তি হাসার চেষ্টা করে বললো,
~আল্লাহর যখন ইচ্ছা তখনই নতুন মেহমান চলে আসবে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~হেমন্তি,হিয়ার বাচ্চার পর পরই তুইও বাচ্চার জন্য চেষ্টা শুরু করে দিস বেশি দেরি ভালো না।
হেমন্তি কিছু না বলে মলিন মুখে একটা হাসি দিয়ে কাজ করতে লাগলো।সোফার ঘরে সবাই ব্যস্ত আড্ডা দিতে ইলহাম সবার সাথে কথা বলছে হঠাৎ তার মনে হলো উপহারের কথা।সে রুমে গিয়ে কার্বাড খুলে দুটো শপিং ব্যাগ বের করে সোফার ঘরে চলে আসলো।হিয়ার কাছে গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,
~দেখ তো তোর সাইজের চুড়ি কিনা?
বলেই সে কেয়ার কাছে গিয়ে একটা ব্যাগ দিয়ে বললো,
~তোমার জন্য ব্রেসলেট এনেছি।
দুজনই মহা উৎসাহে নিজেদের উপহার বের করে দেখলো কেয়া ব্রেসলেট দেখে অনেক খুশী হলো।হিয়া চুড়িগুলো বের করতেই ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো কীভাবে ইলহাম তার টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে চুড়ি কিনে আনতো।আর নিজ হাতে পরিয়ে দিয়ে বলতো,
~তোর খালি হাতগুলো আমার ভালো লাগেনা সবসময় চুড়ি পরে থাকবি।
আর মহা আনন্দে হিয়া সেই চুড়ি গুলো পরতো কারণ তার চুড়ি অনেক পছন্দের।হিয়ার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে তা দেখে ইলহাম ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~তোর কী খারাপ লাগছে?
হিয়া আঙুল দিয়ে চোখের পাখি মুছে বললো,
~ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো।
হিয়ার কথা শুনে ইলহাম চুড়িগুলো নিয়ে নিজ হাতে তাকে চুড়ি পরিয়া দিলো।হিয়া ইলহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
~তুই তো আমার ছোট তবুও সব দায়িত্ব বড়দের মতো পালন করিস।
ইলহাম বললো,
~৫মিনিটের বড় তুই আমার এতে কী হয়েছে?একই দিনে হয়েছে আমরা।
ভাই-বোনের ভালোবাসা দেখে সবাই আবেগে আপ্লুতো হয়ে গেলো ইমরান খান মনে মনে বললেন,
~আমি একটা সঠিক পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিতে পেরেছি এতো ভালোবাসা এই পরিবারে যে আমার মেয়েটাও ভালোবাসায় ভরপুর রয়েছে।
হেমন্তি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~খাবার রেডি আছে আসুন আপনারা বসে পরুন।
সবাই ডাইনিং রুমে চলে আসলো কয়েকজনের জায়গা না হওয়াতে কেয়া,তানভীর, হেমন্তি আর ইলহাম একস্ট্রা চেয়ার নিয়ে বসে পরলো।

____♥_____

ইরিনা বেগম সবাইকে খাবার সার্ভ করছে খাবারের পাশাপাশি সবাই আড্ডাও দিচ্ছে।ইলহাম হেমন্তির কানের কাছে এসে বললো,
~খাবারের পর আমি সবাইকে বলে দিবো।
হেমন্তি বললো,
~যেটা আপনি ভালো বুঝেন।
তানভীর আর কেয়া একসাথে বসে খাচ্ছে তা দেখে হিয়া মজা করে বললো,
~দুই নতুন পাখি একসাথে বসেছে দেখছি।
হিয়ার কথা শুনে তানভীর চেয়ার ছেড়ে উঠে ইলহামেট পাশে বসে পরলো তা দেখে হিয়া বললো,
~কেয়া লজ্জাবতী বর তোমার।
কেয়া তানভীরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~আসলেই লজ্জাবতী।
সবার খাওয়ার পর হেমন্তি আর ইরিনা বেগম সব গুছিয়ে সোফার রুমে এসে সবার জন্য আনা আইসক্রিম এক এক করে সবাইকে দিয়ে দিলো।সবাই আরামসে আইসক্রিম ইলহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~আমার কথা আছে সবার সাথে।
সবাই আইসক্রিম খাওয়া রেখে ইলহামের দিকে তাকালো ইলহাম একবার হেমন্তির দিকে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
~অনেক জরুরি কথা বলতে যাচ্ছি আমার উচিত ছিল এই ব্যাপারে আপনাদের সাথে আগে ডিসকাস করা।কিন্তু সময় ছিল না তাই আমি নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
হিয়া ইলহামের কথা শুনে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?
ইলহাম ঢোক গিলে বললো,
~আমি ২মাসের জন্য থাইল্যান্ড যাচ্ছি অফিসের কাজে।
ইলহামের কথা শুনে উপস্থিত সবাই শকড হয়ে গেলো এতো আনন্দের মাঝে যে এতো বড় আঘাত লুকিয়ে ছিল তা কারোরই জানা ছিলনা।ইমরান খান বললেন,
~এতো বড় ব্যাপার আমাদের জানানোর প্রয়োজনবোধ করলেনা।
ইলহাম বললো,
~বাবা,আমি জানি জানানোটা জরুরি ছিল কিন্তু সময় তো কম আর এতে আমার প্রোমোশনও জড়িয়ে আছে।
ইমরান খান বললেন,
~ঠিক আছে কাজের জন্য যাচ্ছো তাই বাঁধা দিবোনা কিন্তু কেয়ার বিয়ে পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছো না।
ইলহাম বললো,
~কেয়ার বিয়ের ২দিন পরই আমি চলো যাবো।
হিয়া এখনও চুপ করে আছে হেমন্তি তার পাশে বসে হাতে হাত রেখে বললো,
~আপু কিছু তো বলো।
হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি কোনোদিন চাইবোনা আমার ভাই পিছিয়ে থাকুল কারো থেকে সে এতো বড় অফার পেয়েছে এটা খুশীর কথা।কিন্তু দূরে চলে যাবে তাই কষ্ট পাচ্ছি আর সবচেয়ে বড় কথা তোমায় রেখে যাচ্ছে।
ইলহামের দিকে তাকিয়ে হিয়া বললো,
~ইলহাম আমি জানিনা তুই আমার সিদ্ধান্তে খুশী হবি কিনা কিন্তু হেমন্তি তোর যাওয়ার পর এই বাসায় একা থাকবেনা।ওর জন্য দুটো বাড়ির দরজা খোলা আছে
একটা আমার বাড়ি আরেকটা ওর বাবার বাড়ি।
হিয়ার কথা শুনে হেমন্তি হিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আপু তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসা।
হিয়া বললো,
~তোমাকে আমি নিজে দেখে পছন্দ করে এনেছি এবাসায় কারণ তোমার চোখে আলাদা এক মায়া আছে।আমি চাই তুমি সবসময় হাসি-খুশী থাকো।
ফারুক বললো,
~সব জমা দেওয়া শেষ?
ইলহাম বললো,
~হ্যা ভাইয়া দুদিনের মধ্যে সব কিছু এসে পরবে।
ফারুক বললো,
~চলো আমরা একটু রাস্তা থেকে ঘুরে আসি তানভীর তুমিও চলো।
তারা তিনজন বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসলো ইলহাম বললো,
~কিছু বলবেন ভাইয়া?
ফারুক বললো,
~দেখো ২মাস বড় একটা সময় আর হেমন্তির থেকে তুমি এতো দূর কখনোই থাকোনি।আর তোমাদের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
ফারুকের কথা শুনে ইলহাম বললো,
~আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?
ফারুক তানভীরের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তানভীর তুমি কেয়াকে এখন বুঝতে শুরু করেছো অবশ্যই তুমি জানো কেয়ার পছন্দের রঙ্গটা কী?
তানভীর বললো,
~সবুজ।
ফারুক বললো,
~এটা জানতে তোমার কয়দিন লেগেছে?
তানভীর বললো,
~ফোনে যেদিন প্রথম কথা বলেছিলাম সেদিনই জেনে নিয়েছিলাম।
এখন ফারুক জিজ্ঞেস করলো ইলামকে,
~তুমি কবে জেনেছো হেমন্তির পছন্দের রঙ্গ?
ইলহাম বললো,
~বিয়ের ৪মাসের মাথায়।
ফারুক বললো,
~ইলহাম দূরে যাচ্ছো কিন্তু নিজের মনটাকে হেমন্তির কাছে রেখে যাও যাতে তোমাকে সে না ভুলে যায় নিজের জড়তার পাশাপাশি ওর জড়তাও কাটিয়ে ফেলো।এটা তোমার জন্য ভালো হবে তানভীর লজ্জা পেলেও কেয়ার সবকিছু খেয়াল রাখে তাও কতো কম সময়ে আর তুমি কতো পিছিয়ে আছো।এসব ব্যাপারে স্বামীরাই এগিয়ে আসবে স্ত্রীরা লজ্জায় এসব বলবেনা।

____♥_____

ইলহাম ফারুকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বললো,
~আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কী বলছেন?আমাকে কাজের পাশাপাশি হেমন্তির সাথে যোগাযোগটা ঠিক রাখতে হবে।ওর ছোটখাটো ব্যাপারেও সেখান থেকে নজর রাখতে হবে।
ফারুক বললো,
~হ্যা তুমি ঠিক বুঝেছো একবারের জন্যও যাতে হেমন্তির এ ফিলিংটা না আসে যে তুমি তাকে ভুলে গেছো।
তানভীর বললো,
~আমি তো এতো খেয়াল রাখি তবুও কেয়া বলে আমি তাকে ভুলে যাই এটার কোনো সমাধান আছে।
তানভীরের কথা শুনে ইলহাম আর ফারুক মুখ টিপে হেসে বললো,
~এটার কোনে সমাধান নেই।
ইলহাম বললো,
~হেমন্তি অনেক চাপা স্বভাবের অনেক কথাই নিজের মনে রেখে দেয়।
ফারুক বললো,
~তাই তোমাকে আগে বাড়তে হবে অন্য দেশেও থাকলেও ওর প্রতি আলাদা টান বজায় রাখবে।
ইলহাম ফারুককে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে সঠিক উপদেশ দেওয়ার জন্য।
ফারুক বললো,
~তাহলে এখন বাসায় যাওয়া যাক।
তারা তিনজনই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ইলহাম সন্ধ্যার নাস্তা একেবারে কিনে নিয়ে তাদের সাথে হাঁটা ধরলো।
হিয়া হেমন্তিকে নিজের পাশে বসিয়ে বললো,
~তুমি কী খুশী ইলহামের সিদ্ধান্তে?
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~আপনি যেমন আপনার ভাইকে সাফ্যলের চুড়ান্ত পর্যায়ে দেখতে চান আমিও আমার স্বামীকে সেই পর্যায়ে দেখতে চাই।
হিয়া বললো,
~হেমন্তি,নিজেকে একা ভাববেনা কখনো আমরা সবাই তোমার কাছে আছি।ইলহামকে এখন বেশী বেশী সময় দিবে তার সাথে মনের যতো কথা আছে বলবে।আমি চাই তুমি ইলহামকে বুঝো অন্য দেশে যাচ্ছে এরমানে এই নয় যে তুমি দূরে চলে যাবে আরো কাছাকাছি চলে আসো।
হেমন্তি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো ইরিনা বেগম হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
~তুই কোনো চিন্তা করবিনা ইলহামের কাজ শেষ হলেই চলে আসবে।
রাহিলা খাতুন বললেন,
~তুমি তার পাশে থাকবে তাহলে দেখবে আরো সহজ হবে ইলহামের জন্য।
হেমন্তি বললো,
~তোমরা সবাই আমার সাথে থাকলে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সব ঠিক হলেই সে নিশ্চিন্ত হতে পারবে।

____♥_____

সন্ধ্যার নাস্তার পর সবাই চলে গেলো যার যার বাসায় রওনা দেয় হিয়া যাওয়ার আগে ইলহামকে বললো,
~কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে অবশ্যই জানাবি।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে।
সবাই চলে যাওয়ার পর হেমন্তি সব গুছিয়ে নিতে শুরু করলো ইলহাম তার সাহায্য করতে শুরু করলো।হেমন্তি তা দেখে বললো,
~আপনার এসব করতে হবে না আমি করে নিতে পারবো।
ইলহাম বললো,
~বড্ড কথা বলো তুমি আমি করছি তো।
হেমন্তি বললো,
~আর আপনি বড্ড জেদ করেন।
ইলহাম হেমন্তির হাত ধরে বললো,
~হেমন্তি, নিজের মনের কথা আমাকে জানাবে আমি যতই ব্যস্ত থাকি তোমার জন্য আমি সবসময় ফ্রী।
হেমন্তি বললো,
~আপনি মনোযোগ দিয়ে নিজ কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসেন এটাই আমার ইচ্ছা।
দিন কাটছে নিজ গতিতে কিন্তু হেমন্তির কাছে লাগছে পলকের মাঝে সময় কেটে যাচ্ছে কেয়ার বিয়ের আর ৫দিন বাকী আজ সে আর ইলহাম তার বাসায় যাবে।
সেখানেই থাকবে হিয়া আর ফারুকও তাদের সাথে যাবে কেয়ার বিয়ের দুদিন পর ইলহামও চলে যাবে এটা ভাবতেই হেমন্তির মনটা বিষাদে ভরে গেলো।
এসব ভাবছে তখনই ইলহাম এসে হেমন্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

চলবে

#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১২
ইলহাম হেমন্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কী ভাবছো আমাকে বলা যায়?
হেমন্তি বললো,
~এ কয়েকদিনে কতকিছু হয়ে গেলো তাই ভাবছি।
ইলহাম হেমন্তিকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,
~তোমার এতো ভাবতে হবে না শুধু আমার কথাই ভাবলে চলবে।
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~আপনার প্যাকিং শেষ?
ইলহাম হেমন্তির কোমড় জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~সব প্যাকিং শেষ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
হেমন্তি বললো,
~কেয়ার বিয়ের জন্য সময় পাবেন না তাই এখন সব গুছিয়ে নিয়েছেন সেটাই ভালো হয়েছে।
ইলহাম দুষ্ট হেসে বললো,
~তোমাকেও একটা ব্যাগে প্যাক করে নেই কী বলো?
হেমন্তি বললো,
~জেলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে করতে পারেন আমি তো ডাইরেক্ট বলবো এই মানুষটা আমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে।
ইলহাম হেমন্তির নাকে নাক ঘষে বললো,
~কিডন্যাপই তো করবো ২মাস পর এসে একদম তোমাকে নিয়ে উদাও হয়ে যাবো।
হেমন্তি বললো,
~কোথাও যাবো না আপনার সাথে সেই তো রেখে চলে যাচ্ছেন।
ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমাকে রেখে কী আমার যেতে মন চাইছে হেমন্তি? মন চাইছে তোমাকেও আমার সাথে নিয়ে সে দেশে উড়াল দেই।
হেমন্তি নিজেকে ইলহাম থেকে সরিয়ে বললো,
~অনেক কথা হয়েছে এখন আপুদের ফোন দিন কোথায় তারা?
হেমন্তির কথা শেষ হতেই কলিংবেল বেজে উঠলো ইলহাম বললো,
~এসে পরেছে তোমার আপু।
হেমন্তি বললো,
~আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি আসছি।
বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে সোজা দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই হিয়া আর ফারুককে দেখতে পায়।এ কয়েকদিনে হিয়ার শরীরের অবস্থা ভালোই যাচ্ছে তাই ফারুক একটু নিশ্চিন্তে থাকে।হিয়া আর ফারুককে সোফায় বসতে বলে হেমন্তি দৌড়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঠেলে হিয়া আর ফারুকের সামনে রেখে দেয়।হিয়া বললো,
~তোমার বর কোথায়?
হেমন্তি বললো,
~ফ্রেশ হতে গিয়েছে।
হিয়া বললো,
~হেমন্তি তোমার লাল শাড়িটা আমায় দিবে কেয়ার বিয়েতে তাই পরবো।
হেমন্তি বললো,
~অবশ্যই আপু এখনই নিয়ে আসছি।
ফারুক বললো,
~তোমার এতো শাড়ি আছে আবার হেমন্তির শাড়িও তোমার লাগবে।
হিয়া বললো,
~সে আপনি বুঝবেন না।
ফারুক বললো,
~মেয়ে মানুষদের কে বুঝতে পেরেছে আজ পর্যন্ত?
হিয়া ফারুকের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
~এতো বুঝে আপনার লাভ নেই।
ইলহাম ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসলো ফারুকের পাশে বসে বললো,
~কেমন আছেন ভাইয়া?
ফারুক বললো,
~ভালো।তোমার সব কাজ কমপ্লিট তো?
ইলহাম বললো,
~সব কাজ শেষ কিন্তু ছোট ছোট কিছু জিনিস রয়ে গেছে তা যাওয়ার দুদিন আগে ঠিক করে ফেলবো।
হিয়া বললো,
~তুই খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করিস তোকে তো আবার তুলে খাওয়াতে হয়।
ইলহাম বললো,
~আমি কী ছোট বাচ্চা যে তুলে খাওয়াতে হবে?
হিয়া বললো,
~তা আমাকে বলে লাভ নেই আমি তোর সব গুনই জানি।

____♥_____

সন্ধ্যার দিকে তারা রওনা দেয় হেমন্তির বাসার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ পর তারা সে বাসায় পৌছে যায় বিয়ে বাড়ির আমেজেই আলাদা। হেমন্তির নানু বাসারও সবাই এসে পরেছে হেমন্তির নানা-নানী কেউ জীবিত নেই শুধু তার এক মামা রয়েছে সেই এসেছে নিজ পরিবার সমেত।হেমন্তি তাদের দেখে অনেক খুশী হলো সে তার মামার কাছে গিয়ে বললো,
~মামা কেমন আছো?
হেমন্তির মামা বললো,
~ভালো রে মা তুই কেমন আছিস?
হেমন্তি বললো,
~ভালো আছি।মামী আর তৈয়ব কোথায়?
তৈয়ব হেমন্তির মামার ছেলে সে এবার কলেজের গন্ডিতে পা দিয়েছে।হেমন্তির মামা বললো,
~আছে কোথাও ছুটি পেয়েছে এখন হৈ হুল্লোড় করবে।
হেমন্তির মামা ইলহাম,হিয়া আর ফারুকের সাথে কুশলাদি করলো। আরফান এসেছে নিজ বউকে নিয়ে সুমনাও এসেছে হেমন্তি সুমনা ফুপির কাছে গিয়ে বললো,
~ফুপি,আরফানের ভাইয়ের বিয়েতে যেতে পারিনি এর জন্য রাগ করেছো?
সুমনা ফুপি বললেন,
~আমি সব শুনেছি তোরা যে ঝামেলায় ছিলি আর ইলহাম যে চলে যাবে।
হেমন্তি বললো,
~কোথায় তোমার ছেলের বউ?
সুমনা ফুপি একটা মেয়েকে নিয়ে আসলেন মেরুন রঙ্গের শাড়ি পরা মাথায় ঘোমটা দেওয়া একদম নববধূ লাগছে।সুমনা ফুপি বললেন,
~এই হচ্ছে রুকাইয়া আমার ছেলের বউ।
হেমন্তি রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কেমন আছো ভাবি?
রুকাইয়া বললো,
~ভালো।আপনি কেমন আছেন?
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~আমি তোমার ননদ হই তুমি করেই বলবে আর আমি ভালো আছি।
হেমন্তির কথায় রুকাইয়া মাথা দুলালো হেমন্তির রুকাইয়ার হাত ধরে সবার কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো।হেমন্তি তার মামীর সাথে দেখা করে কেয়ার রুমে চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো
কেয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তা দেখে হেমন্তও তার কাছে চলে গেলো আর বললো,
~কী হয়েছে কাঁদছিস কেন?
কেয়া বললো,
~আর কয়েকদিন পর সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো এটা ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে কী বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো?
কেয়া কান্না বন্ধ করে ড্যাবড্যাব করে হেমন্তির দিকে তাকালো হেমন্তি কেয়ার চাহনি দেখে আলতো হেসে বললো,
~এখন কেঁদে লাভ নেই বিয়ের পর বিদায়ের সময় কাঁদিস ছবিতে ভালো উঠবে।
কেয়া বললো,
~আপি তুমি মজা করছো?
হেমন্তি কেয়ার হাত ধরে বললো,
~চল সবাই বাহিরে বসে আছে আমরাও এখন তাদের সাথে বসে আড্ডা দেই।
কেয়া দুচোখ মুছে হেমন্তির সাথে রুমের বাহিরে চলে আসলো সবার সাথে বসে পরলো আড্ডা দিতে।

____♥_____

কেয়ার গায়ে হলুদের আয়োজন করা হচ্ছে বাসার ছাদেই ছোট একটা স্টেজ করা হচ্ছে তৈয়ব আর ফারুক সেটার খেয়াল রাখছে।ইলহাম আরফান বাবুর্চিখানায় ব্যস্ত আছে ইমরান খাও তাদের সাথে সব পর্যবেক্ষণ করছে।হেমন্তি,হিয়া,রুকাইয়া তিনজনই কেয়ার কাছে বসে আছে মেহেদী ডিজাইনার এসেছে তাকে মেহেদী দিতে হেমন্তি হিয়াকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে আর আড্ডা চলছে। হেমন্তি রুকাইয়াকে বললো,
~ভাবী তোমার যদি হলুদ রঙ্গের শাড়ি না থাকে তাহলে আমার কাছে আছে তুমি পরতে পারবে।
রুকাইয়া বললো,
~তোমার ভাইয়া এনে দিয়েছেন হলুদ রঙ্গের শাড়ি।
হেমন্তি বললো,
~বাহ ভাইয়া তো দেখছি ভাবীর সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখে।
হিয়া বললো,
~স্বামী স্ত্রীর মাঝে এমন ছোট ছোট খুশী থাকলে ভালোবাসা বাড়ে।
হেমন্তি বললো,
~একদম ঠিক কথা।
রুকাইয়া বললো,
~হেমন্তি,ইলহাম ভাইয়া তো চলে যাচ্ছে তোমার একা একা খারাপ লাগবেনা।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~তোমরা সবাই থাকতে একা থাকবো কেন?আমার পুরো পরিবার এখানে আছে কিন্তু ওনার কাছে তো কেউই থাকবেনা তার জন্য চিন্তা হচ্ছে।
হিয়া বললো,
~হেমন্তি এসব নিয়ে ভেবো না ইলহাম নিজেকে সামলাতে জানে ও একাই সব করতে পারবে।
হেমন্তি বললো,
~সে ভালো থাকলেই আমিও ভালো থাকবো।
সন্ধ্যার সময় সবাই তৈরি হচ্ছে হেমন্তি আগে থেকেই ইলহামের জন্য সব রেডি করে নিজে কেয়ার রুমে চলে গেলো।কেয়া পার্লারে গিয়েছে হিয়া রেডি হয়ে আগেই ছাদে গিয়ে বসে আছে ফারুক তার আশেপাশেই থাকছে।রুকাইয়া কেয়ার সাথে গেছে তাই হেমন্তি একাই রেডি হচ্ছে।ইলহামের যাতে অসুবিধা না হয় তাই হেমন্তি কেয়ার রুমে চলে এসেছে হেমন্তি শাড়িটা পরে চুলগুলো খোঁপা করে সিঁথির মাঝে টিকলিটা পরে নিলো খোঁপায় ফুলগুলো লাগিয়ে নিলো।এরপর হালকা একটু মেকআপ করে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো তখনই দরজায় কেউ টোকা দিলো হেমন্তি গেইট খুলতেই দেখতে পেলো

____♥_____

ইলহাম দাড়িয়ে আছে হেমন্তি তাকে দেখে বললো,
~কিছু লাগবে আপনার?
ইলহাম ঘরের ভিতর প্রবেশ করে বললো,
~তোমাকে চাই।
বলেই সে হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ গুজলো হেমন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আপনি কী করছেন বাসা ভর্তি মেহমান।
হেমন্তির কথার কোনো জবাব সে দিলোনা উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~একটু তোমার কাছে থাকতে দেও।
হেমন্তি বললো,
~সারাদিন পর এখন আমার কথা মনে পরেছে।
ইলহাম বললো,
~অনেক কাজ ছিল তাই আসতে পারেনি।
হেমন্তি বললো,
~বুঝেছি।
তখনই কেউ দরজায় টোকা দিলো ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিলো হেমন্তি বললো,
~কে?
বাহির থেকে কেয়া বললো,
~আপু আমি দরজা খুলো।
হেমন্তি বললো,
~তুই আমার রুমে যা আমি শাড়ি পড়ছি।
কেয়া বললো,
~এতো ভারি লেহেঙ্গা পরে আবার অন্য রুমে যাবো উফফ ভালো লাগে না।
বলেই কেয়া চলে গেলো হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এখন আপনিও যান হলুদ শুরু হয়ে যাবে।
ইলহাম বললো,
~রাতে তোমাকে দেখে নিব।
রাতে হলুদ শুরু হলো তানভীরের বাসা থেকে শুধু তার মামা এসেছেন এক এক করে সবাই কেয়াকে হলুদ ছোয়ালো সবাই খুশী কিন্তু এই খুশীর মাঝেও হেমন্তির মনটা খারাপ কারণ সময় চলছে দ্রুত গতিতে ইলহামের যাওয়ার ঘন্টাও এগিয়ে আসছে।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে