গল্পঃ কেউ একজন

0
1248

গল্পঃ কেউ একজন
লেখাঃ ফাহমিদা আঁখি

ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা দোতলা বাড়িটির পেছন দিকে শানবাঁধানো একটা পুকুর। পুকুরটা করা হয়েছে অনেকটা শখের বসে। পুকুরের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য নারিকেল গাছের সাড়ি। রোজ প্রভাতের সূর্যটা এই নারিকেল গাছগুলোর পাতার অাড়াল থেকেই উদয় হয়। অাবার সন্ধ্যার অাকাশে তা অস্ত যায়। কখনো পূর্ণিমারাতে পাতার অাড়ালে ভেসে ওঠে রুপালী চাঁদ। অাবার কখনো অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায় চারপাশ। কেমন একটা গা ছমছমে ভাব হয় তখন। অদৃশ্য ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে। একটু পরেই সন্ধ্যার ছায়া নামতে শুরু করবে এখানটাতে। তারপর জোনাক পোকারা তাদের অদ্ভুত অালো জ্বালিয়ে মায়াময় করে তুলবে সন্ধ্যাবেলাটা।

নীলরঙা শাড়ির অাঁচল বিছিয়ে সেই পুকুরের ঘাটে বসে অাছে মাধবী। অালতা রাঙা পা দুটো ডুবিয়ে রেখেছে পুকুরের টলটলা পানিতে। ওর চোখদুটো স্থির হয়ে অাছে পুকুরের ঠিক মধ্যখানে, সাঁতার কেটে বেড়ানো দুটো সোনালী রাজহাঁসের দিকে। কিন্তু মনটা যে তার বড্ড অস্থির হয়ে অাছে। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। পুকুরের পানিতে নিজের বিষণ্ণ চেহারার অবয়ব দেখলো মাধবী। কি জানি কোনো এক চাপা কষ্টের ভারে চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো পানিতে। অশ্রুতে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হলো তাতে মৃদুভাবে কাঁপতে লাগলো অবয়বখানা। ঠিক তখনি ওদের বাড়ির কাজের বুয়া চম্পাবতী ডেকে উঠলো, অাফা, অার কতক্ষণ এইহানে বইয়া থাকবেন? অান্দার হইয়া অাইতাছে। চলেন, বাড়ির ভিত্তরে চলেন। অান্দারে সাপ টাপ কামড়াইয়া দিবো তো। মুখটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে ঘাট থেকে উঠে এলো মাধবী। এতোক্ষণে চম্পাবতী খেয়াল করলো যে, মাধবী শাড়ি পরেছে। অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, অাল্লাহ! গো, অাফা দেহি শাড়ি পরছেন। কি যে সোন্দর লাগতাছে! একদম পরীর লাহান। পাঙ্খা লাগাইয়া দিলে তো অাসমানে উড়াল দিবেন। তহন অামাগো কি হইবো গো অাফা? মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও চম্পাবতীর কথায় হেসে ফেললো মাধবী। তারপর বাড়ির ভেতরে যেতে যেতে বলল, মা কোথায় বুয়া? চম্পাবতী বলল, খালাম্মা অাপনের লাইগা নতুন কি জানি রান্না করতাছে। কইলো, কয়দিন ধইরা তো অাপনি কিছু খাইতে পারতেছেননা। মুখে নাকি সোয়াদ নাই। মাধবী বিড়বিড় করে বলল, ইস! মা যদি জানতো, তার মেয়ের মনের সাধ হারিয়ে গেছে। তাইতো মুখের স্বাদ খুঁজে পায়না অনেকদিন। অার এক মুহূর্তও নিচে দাঁড়ালো না সে। একছুটে সিঁড়ি দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। চম্পাবতী ঠিক বুঝতে পারলোনা হঠাৎ মাধবীর কি হলো? তাই বোকার মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


বিছানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মাধবী। এমনটা কেন হলো? কেন হলো? খুব কি দরকার ছিলো এমনটা হওয়ার? ছিলোনা তো। সে রাতে মাধবী অার ঘর থেকে বের হলোনা। মা কতবার বলল, অায়না মাধবী, দেখ তোর জন্য নতুন একটা পদ রান্না করেছি। একটু খেয়ে দেখনা মা, কেমন হয়েছে? মাধবী মায়ের কথা শুনলোনা। ভীষণ মাথা ব্যথা করছে বলে, মাকে চলে যেতে বলল। মা মন খারাপ করে চলে গেলেন। অাচ্ছা মা কি খুব কষ্ট পেলেন? তার অাদরের মেয়ে তাকে এভাবে কষ্ট দিলো? ভাবতে পারলোনা মাধবী। সারারাত ঘুম এলোনা ওর। গভীর রাতে ঘর অন্ধকার করে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে পাগলের প্রলাপের মতো বলতে লাগলো, তোমাকে ছাড়া কি যে শূন্য শূন্য লাগে অামার, তা কি কখনো বুঝতে পারবে তুমি? তোমাকে ছাড়া চেনা ঠিকানাও এখন অচেনা লাগে। দুচোখে অবিরামভাবে বেদনার বেনোজল ভেসে যায়। তাতে পলক ফেলার সময় হয়না আমার….

শেষরাতে হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে পরিচিত সেই নামটা দেখে, অদ্ভুত এক কম্পন অনুভব করলো মাধবী। বুকে চাপা কষ্টগুলো বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো চোখ থেকে বেরুতে চাইলো। কাঁপতে কাঁপতে কলটা রিসিভ করলো সে। অপর প্রান্তে কেউ একজন বলল,

-এখনো ঘুমাওনি যে?
-মাধবীর বলতে ইচ্ছে করলো, মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কি করে বলুন তো? কিন্তু বলতে পারলোনা।
-অপর প্রান্তে সেই কেউ একজন আবারও বলল, ঘুমিয়ে যাও এবার।
-মাধবী কপট রাগ দেখিয়ে মোবাইল রেখে বসে রইলো নিশ্চুপ হয়ে।
-কিছুক্ষণ পর, আবারও স্ক্রিনে সেই নামটা ভেসে উঠলো।
-মাধবী ঝরের বেগে কলটা রিসিভ করে বলতে লাগলো, এমন কেন আপনি? এতোটা নিষ্ঠুর কেন? আমাকে কি পাগল বানিয়ে ছাড়বেন? একটু তো আমাকে বুঝা উচিত আপনার।

অপর প্রান্তে সেই কেউ একজন নিশ্চুপ হয়ে রইলো। তারপর নীরবে ফোনটা রেখে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো। ভাবছে এক জীবনে বুকের বাঁপাশ টা কি সবাইকে দেয়া যায়?

তখন সে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এক যুবক। বসন্তের আগমনী বার্তায় প্রথমবার কোনো তরুণীকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়েছিল। তারপর ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নিতে সময় লাগেনি। কিন্তু বাস্তবতা তার আসল রূপ দেখিয়ে দিলো। বাবার পছন্দের উচ্চপদস্থ পাত্রের সঙ্গে বিয়ের আসরে বসে পড়লো সেই তরুণী। প্রথম পাওয়া ভালোবাসা যতটা সুখের, প্রথম পাওয়া কষ্ট বুঝি তার চেয়েও দ্বিগুণ। এভাবেই ভালোবাসা ছেড়ে চলে গেল তাকে। সে মেনে নিলো, আসলে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। সবটায় শুধু ভালো থাকা। তারপর বহুদিন পর এই মাধবী তাকে মাধবীলতার মতো জড়িয়ে ধরলো। শত চেষ্টা করেও তাকে দূরে সরাতে পারছেনা সে। আসলে কি কখনো দূরে সরাতে চায়? চায়না বোধহয়। অতি আবেগপ্রবণ এই মেয়েটার খাঁচায় ধরা দিতে চায় তার মন। কিন্তু ভয় হয়, কখন না জানি, মেয়েটায় পাখি হয়ে খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মেয়েটার চঞ্চলতা বড্ড ভালো লাগতো তার। অজান্তেই মেয়েটার মনের মণিকোঠায় আসন পেতে বসেছে। অজানা অনুভূতির টানে মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখেছে অষ্টপ্রহর। কিন্তু পূর্ব প্রেমের পীড়া দিক শূন্য করে দিলো তাকে। নিজেকে ফিরিয়ে নিতে গিয়ে দেখলো, মাধবী ওর জীবনের সঞ্চিত সব ভালোবাসা তার তরে অর্পণ করে বসে আছে। বুঝতে পারলো, মাধবীর ভালোবাসা মাধবীলতার মতোই কোমল। তা গ্রহণ না করে ফিরে যাওয়ার উপায় তার জানা নেই।

ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। ছাদ থেকে মাধবীদের বাড়িটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। মেয়েটাকে কি খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে? তা যদি নায়ই হয়, তাহলে সে শান্তি পাচ্ছেনা কেন? মাধবীর গলার স্বরটা শোনার জন্য হঠাৎ মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো। মনে হলো, তার বুকের বাঁপাশটা শুধু এই আবেগী মেয়েটার জন্য। যার আবেগে সে ভালোবাসার এক নতুন রূপ খুঁজে পেতে চায়। আর এক মুহূর্তও দেড়ি না করে ছুটে গেল মাধবীর কাছে। মাধবী সেই শানবাঁধানো পুকুরের পাড়ে উদাসী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো একা। কারো নিঃশ্বাসের শব্দ টের পেয়ে পেছন ফিরে চাইলো।

-আরও একবার নীলরঙা সেই শাড়ি পরে আসবে আমার কাছে? বিশ্বাস করো এবার আর তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস করবোনা। সহসা এক উত্তাল সমুদ্রের মতো মাধবী আছড়ে পড়লো তার বুকে। তারপর কম্পিত কণ্ঠে বলল,
-আমাকে ভালোবাসবেন তো?
-মাধবীকে বাহুডোরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে সেই কেউ একজন বলল, তোমাকে ভালো রাখবো। আজ এবং আগামীতে……..

সমাপ্ত