খুশনূর পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
1992

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-৭(শেষ পর্ব)

খুশনূর চোখ খুলতেই দেখতে পেলো অর্ধ নগ্ন কিছু লোককে তার দিকে এগিয়ে আসচ্ছে। সে ঘাবড়ে গেল। পিছিয়ে যেতে লাগলো সে। তার মুখশ্রী ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের হলো তকর মাথার উপর জ্বলজ্বল করছে হলদে লাইট। খুশনূর ভয়ে জমে আছে। তার চোখ দিয়ে আশেপাশে তার আপন মানুষকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু ভেসে উঠলো চোখে পাতায় আপন মানুষ গুলো তো নেই! হারিয়ে গেছে সবাই এক রাতেই, অন্ধকার কালো রাতেই। খুশনূরের চোখের কার্ণিষ ঘেসে জল গড়িয়ে পড়লো। সে দু চোখ খিঁচে বন্ধ করে আবার চাইলো। লোক গুলো তার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে। খুশনূরের গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহকে স্বরণ করে যাচ্ছে।

একটি লোক এগিয়ে এলো। খুশনূরে স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে লাগলো। খুশনূর চিৎকার করে উঠলো। হাত-পা বাঁধা ছুটতে পাড়ছে না। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার যেন মরণ হয়। সে আর বাঁচতে চায় না। মরে যেতে চায়। এ যে কঠিন শাস্তি!!

লোকদের অত্যচার বেড়েই চলছে। ঘন্টা খানেক পর খুশনূর নেতিয়ে পরে। লোক গুলো দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনি খট করে দরজা দিয়ে কেউ প্রবেশ করে। খুশনূর তার ঘোলাটে দৃষ্টিতে পা দুটি দেখতে ফেলো। আলোর কাছে আসতেই লোকটি মুখ দেখে ঘৃণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তাতে ভ্রুক্ষেপ হলো না সামনের ব্যক্তিটির। সে হাতে ইশরা করতেই অর্ধ নগ্ন লোক গুলো বের হয়ে গেলো। সেই ব্যাক্তিটি তখন বলে উঠলো,,

—“কেমন লাগচ্ছে খুশনূর! এ জাহান্নামে? ”

খুশনূর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। লোকটি হোহো করে হেসে বলল,,

—” এতো কিছুর পর তেজ কমেনি তোর। কি ভেবেছিলি? আমার আসল চেহার ফাস করবি আর আমি আঙ্গুল চুসবো? হা হা হা, মোটেও না। উম হুম! যেভাবে নিবেদিতা, আর অঞ্জলিকে শেষ করেছি? সেভাবে তোকেও করবো।”

খুশনূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,,

—” উনাদের তো এক্সিডেন্টে মারা গেছিলো তার মানে…!”

সমিত হাসলো ঘর কাঁপানো হাসি। খুশনূর বিস্মিত। এত খারাপ কিভাবে হতে পারে মানুষ।খুশনূর কেঁদে দিলো। বলল,,

—” কেন তাদের মারলেন? এ হিংস্র, শয়তান আপনি!”

সমিতে মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। খুশনূর সামনে হাটু গেরে বসলো। বলল,,

—” নয়তো আদালতে আমি দোষী সাব্যস্ত করে দিতো।আর তা আমি কখনো হতে দিবো না।”

—” আপনি মেঘাকে মেরেছেন। আর যাই হোক, যত ই ধামাচাপা দিন না কেন.. সত্য কখনো চাঁপা পড়বে না।”

সমিত হাসলো,,

—” তা কে বলবে সত্য? তুই??

খুশনূর বলল,,

—” হে আমি বলবো সবাইকে বলবো। আপনার চরিত্র সকলের সামনে আবার আনবো!”

—” এবার আর সেই সুযোগ দিচ্ছি না তোমাকে! ধাড়ালো ছুঁড়ি গুঁজে দিলো খুশনূরের গলায়।তখনি বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসে। সমিত ভ্রু কুুঁচকে যায়। সে বের হয়ে দেখবে সেই মুহূর্তে শুদ্ধ দরজা ভেঙ্গে ঢুকে৷ তার সাথে পুলিশ। সমিত ভয় পেয়ে যায়। কিছু বলবে বা করবে তার আগেই ধরে নিয়ে যায় তাকে। খুশনূর শুদ্ধকে দেখে প্রান ফিরে পায় কান্না করতে লাগে সে। অঞ্জলি আর নিবেদিতা মরার পর থেকেই শুদ্ধ আর তার মা তাকে দেখেছে। কতটা কেয়ার করেছে প্রতি খনে খনে। শুদ্ধ খুশনূরের হাত খুলে দিলো। খুশনূর আবেগে আপ্লূত হয়ে জড়িয়ে ধরলো শুদ্ধকে। শুদ্ধ শরীর কেমন করে উঠলো। সারা শরীরের অনুভূতির নতুন রং লেগে গেলো। খুশনূর জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো শুদ্ধর বুকে। শুদ্ধ তাকে পাঁজো কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল সেখান থেকে।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে খুশনূর। দূরে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের সাথে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে শুদ্ধ। খুশনূর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে তাকে। বিয়ের এক মাস চলছে তাদের। কখনো এভাবে তাকায়নি শুদ্ধর দিক। ছেলেটি সুন্দর, সুদর্শন। তার পার্সোনালিটি অালাদা। শুদ্ধের সম্পর্কে শুরু থেকে ভুল ধারণা জম্মে খুশনূরের তাইতো চেয়েও তাকাতো না। কিন্তু কি থেকে কি হলো। জানা নেই!

এক পলক পিছনের স্মৃতি গুলো ভেবে নিলো সে।

প্রথমে তার বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। অঞ্জলি তাকে আপন করে নিলো। কাজে গিয়ে দেখা পেলো নিবেদিতার সাথে সে বোনের মত দায়িত্ব পালন করলো। কাজ শেষে ফেরার পথে এক দূর্ঘটনায় ফেরেস্তা হয়ে এলো শুদ্ধ। ঘটনা চক্রে খুশনূর কোথা থেকে কোথায় চলে এলো। ডাঃ সমিতের চরিত্র সকলের সামনে আসার পর অঞ্জলি কেশ করে তার নামে। নিবেদিতা কেঁদে কুটে ঘর বন্দি। এভাবে ১৫ দিন কেঁটে যায়। এক তিন রাতে অঞ্জলি এসে বলে,,

—” আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। তোমার কোনো আপত্তি আচ্ছে?”

খুশনূর সেদিন কিছু বলেনি চুপ তরে মাথা কাত করে সম্মতি দিয়েছিলো। তারপর দিন হুট করেই বিয়ে হয়ে গেলো। ছেলেকে সে চিন্ত না জানত না বাসর রাতে শুদ্ধকে তার বর হিসেবে দেখে আকাশ থেকে পরে যেন। শুদ্ধও কম চমকায়নি!

সেদিন রাত থেকেই বৌবাহিক সম্পর্ক দূর, দুজন আরো দূরে দূরে চলে যায়। তবুও কেমন একটি মায়া কাজ করতে লাগে দুজনের মাঝে। দিন চলতে লাগলো। এর মাঝে খবর এলো অঞ্জলি আর নিবেদিতা আর নেই। ভেঙ্গে পরে খুশনূর, সে সময় থেকেই শুদ্ধ আর খুশনূরের দূরত্ব আরো কিছুটা কমে যায়। বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় তাদের মাঝে।

একদিন বিকেলে শুদ্ধ এসে খুশনূরকে ঘুরতে নিয়ে যায়। হাইওয়ের সামনে এসে বাইতে তেল ভরবে তখন খুশনূর প্রকৃতির ডাকে সাড়া পেয়ে টয়েলেটে যায়। টয়েলেট থেকে বের হতেই খুশনূরকে কিছু লোক কিডন্যাপ করে সমিতের আস্থানায় নিয়ে আসে।

খুশনূর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো এটুক বয়সে কত কি দেখে ফেললো সে। চোখ বুজলো খুশনূর ভেসে উঠলো শুদ্ধের মুখখানি। তখন অনুভব করলো কেউ তার হাতে স্পর্শ করেছে। খুশনূর মিহি চোখে তাকালো। শুদ্ধ বলল,,

—” এখন কেমন ফিল করছো?”

খুশনূর চোখে ইশারায় বুঝালো ভালো। শুদ্ধ আরেকটু ঝুঁকে এলো। খুশনূরের কঁপালে চুমু একে বলল,,

—” ভয় পেও না। আমি আছি তোমার পাশে!”

কথাটি তীরের মতো বিঁধল খুশনূরের। এটিতো চাইছিলো সে! ভরসা করা মতো হাত। পেয়ে গেল সে। এবার বুঝি হবে তাদের একি সাথে পথ চলা…!

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে