ক্রিয়েটিভ

0
749

– আপনার মেয়েকে এই স্কুলে রাখব না আমরা”।

হেডমাষ্টারের কাছে কথাটা শোনার পর পুরোনো অস্বস্তিটা আবার টের পেল সামিয়া। আগের দুটো স্কুলও একই কথা বলেছিল। কারনটা জানা, তারপরও নিচু গলায় জিগ্গেস করল, ” কেন, স্যার?”

– আপনার মেয়ে খুব দুষ্টু। একমূহুর্ত কোথাও স্হির হয়ে বসতে পারে না। পড়াশোনায় কোন মনযোগ নেই, এমনকি কোন কিছু বোঝার ক্ষমতাও নেই, সবকিছুই নিজের মতো করে। সেদিন ড্রইং ক্লাসে কি করেছে জানেন?

– কি করেছে ? ক্ষীণকন্ঠে সামিয়া জানতে চাইল।

– ড্রয়িং টিচার ক্লাসে টিচার ওদের আঁকতে দিয়েছিল, তোমার দেখা স্রষ্টার সৃষ্টি যেকোন জিনিস। ও পেছনে চুপচাপ কিছু আঁকছিল দেখে টিচারের সন্দেহ হলো, এত চুপচাপ থাকার পাত্রী তো সে না। টিচারকে আসতে দেখে রিমঝিম ওর ড্রইংটা ঢেকে ফেলে।

টিচার জিগ্গেস করল, কি আঁকছ, রিমঝিম?

– স্রষ্টাকে আঁকছি।

– কিন্ত স্রষ্টা কেমন সেটাতো কেউ জানেনা!

– কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জানতে পারবে- রিমঝিমের উত্তর ছিল।

– এই ধরনের কথা কোন নরমাল বাচ্চা বলে না। আপনি ওকে কোন অটিস্টিক স্কুলে ভর্তি করান । হেডমাষ্টার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন!

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল সামিয়ার। রিমঝিমের এখন সাত বছর বয়েস। এরই মধ্যে তিনটা নামকরা স্কুল থেকে ওকে বের করে দিয়েছে। সবাই একই কথা বলে, ও নরমাল না। হ্যা, স্হির থাকতে পারে না সে একদন্ডও, কোন না কোন নতুন জিনিস করতেই হবে ওকে। নতুন জিনিস করাটা কি খারাপ! ঠিক করল আজই চাইল্ড সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাবে ওকে।

– ওর সমস্য কি? সাইকোলজিস্টের প্রথম প্রশ্ন।

– খুব চন্চল, অন্য মেয়েদের মতো না। সারাক্ষণ লাফালাফি, নাচানাচি। পড়ালেখায় কোন মনযোগই নেই… বলে চলল সামিয়া।

সাইকোলজিস্ট তখন রিমঝিমকে দেখছেন। টেবিলের ওপরে রাখা জিনিসগুলো দিয়ে সুন্দর একটা ঘর বানিয়ে ফেলেছে ও।

– ঠিক আছে। মাকে থামালেন তিনি।

– চলুন আমরা ওর সামনে কথাগুলো না শুনে পাশের রুমে গিয়ে শুনি।

– রিমঝিম, আমরা একটু পাশের ঘরে কথা বলছি, তুমি ততক্ষণে মিউজিক শুন। চেম্বার থেকে সামিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে সাইকোলজিস্ট তার মোবাইলে মিউজিক ছেড়ে দিলেন।

সামিয়া কিছুই বুঝছিল না। সাইকোলজিস্ট তার চেম্বারের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে সামিয়াকে ইশারা করলেন ভেতরে রিমঝিম কি করে দেখার জন্য। সামিয়াও চুপিসারে দেখা শুরু করল।

দুইজন রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই, রিমঝিম চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। হাল্কা মিউজিকের সাথে সাথে ও প্রথমে তালে তালে মাথা নাড়ছে, আস্তে আস্তে হাত পা নাড়িয়ে সুন্দর নাচা শুরু করল। কখনো তো ওকে নাচ শেখানো হয়নি! এত সুন্দর নাচে রিমঝিম! সামিয়া অবাক হয়ে ভেজানো দরজা দিয়ে দেখছে আর দেখছে।

– আপনার মেয়ে অটিস্টিক নয়। সাইকোলজিস্টের কথায় চমকে ওঠল সামিয়া।

– ও ক্রিয়েটিভ! মুভমেন্ট না করলে ও চিন্তা করতে পারে না, ও আনন্দে থাকতে পারে না। আবার ও এটাও বুঝে ও অন্যদের মতো নয়। এই দুই চিন্তা ওর ক্রিয়েটিভিটিটা ধ্বংস করে দিচ্ছে। সবাইকে পড়াশোনায় ভাল হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই, তাহলে শিল্পকলায় কাজ করবে কারা? আপনার মেয়েকে কোন নাচের স্কুলে ভর্তি করে দেন। রিমঝিম গ্লোবাল ট্যালেন্ট। একদিন দুনিয়া কাপানো ড্যান্স ডিরেক্টর হবে, যদি পরিবারের সাপোর্ট পায়।

সাইকোলজিস্টের কথা শুনতে শুনতেই সামিয়ার পুরো পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসছিল। এত আনন্দ শুধু রিমঝিমের জন্মের দিনটাতেই হয়েছিল ওর। “আমার মেয়ে নৃত্যশিল্পীই হবে”, মনে মনে তখনই সিধান্ত নিয়ে নিল সামিয়া। “যত বাধা আসুক, আমি সামলে নিব, তুই সৃষ্টি কর, মা। ”

রিমঝিম তখনো নেচে চলেছে, আপনমনে, আপন আন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে