ক্যাকটাস ? পর্ব ০৭

0
2077

ক্যাকটাস ?
Writer Taniya Sheikh -Tanishq
পর্ব ০৭

নীরার শয্যাশায়ী হওয়ার কথা শোনার পর থেকেই চটেছে আঞ্জু। এই নীরা এ বাড়ি আসার পর অব্দি অসুস্থ। এমন শুয়ারা কেন সে? তারাও তো বউ হয়ে এসেছে এ বাড়ি। একটা বাড়ির বউ হয়ে ঠিকে যাওয়া এতো সহজ? আঞ্জু জীবনে প্লেটটা পর্যন্ত ধুয়ে খেত না। এ বাড়ি এসে তাকে রান্না ঘর মোছা সব করতে হয়েছে। তাই কী সে ওমন রোগা পটকা হয়ে দিনরাত বিছানায় পড়ে থাকত নাকি? আফনাফের কর্মকাণ্ডে বেজায় নাখোশ আঞ্জু। বাপটা যেমন মেয়ে মানুষ দেখলে ছোক ছোক করত। ছেলেটাও ওমন করে। ওকিন্নি ফকিন্নি বাছে না। যারে পায় হামলায়া পড়ে। পড়ছে তো পড়ছে বউ করার কী দরকার? এই মেয়ের কিছুই আঞ্জুর পছন্দ না। বিয়ে হয়েছে অথচ তার ছেলের প্রতি বিন্দুমাত্র মোহাব্বত দেখে নি সে। সারাদিন মুখটা আঁধার করে রাখে। স্বামীরা হাজার বদ হোক সেটা সয়েই চলতে হবে। চলতে চলতে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সংসার ধর্মে ধৈর্য্য হচ্ছে খুঁটি। ধৈর্য্যের বালাই নেই আবার একটুর থেকে একটু হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে মরছে৷ এই মেয়ে কে আঞ্জু বউ করে রাখা যাবে না। আহনাফকে কানপড়া টানপড়া যা দেওয়ার দিয়ে জলদি বিদায় করতে হবে। এমন রোগা শরীরের বউ সংসারের জন্য অলক্ষুণে। অলক্ষুণে বউ ঘরে পুষে সংসারের অমঙ্গল করবে এমন বোকা আঞ্জু না। সবচেয়ে ভালো হয় এ যাত্রায় নীরা মরে গেলে। ভালোই ভালোই আপদ বিদায় হলে আঞ্জু ফকির খাওয়াবে বলে মানত করে।

রাফসানের রুমে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে জানালার বাইরের বৃষ্টি উপভোগ করছিল মেহের। আটাশ বছরের জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে যেমন তেমনি কেড়েও নিয়েছে। আজ সে সফল সাংবাদিক। তাছাড়া টুকিটাকি লেখালেখিও করে সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে৷ শারমিন বলছিল একটা উপন্যাস লিখতে এবার৷ উপন্যাসের জন্য কাহিনি ভাবছে তারপর থেকেই৷ বান্ধবী এবং রুমমেট শারমিনের কথা মনে পড়তেই সোজা হয়ে বসে মেহের। রাফসানের সাথে আড্ডায় মেতে সে আসল উদ্দেশ্যেই ভুলে বশেছিল এতোক্ষন। এই বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে তো নীরা। তাকে তো খুঁজতে হবে আমাকে। না জানি মেয়েটা কী অবস্থায় আছে! শারমিনকে দেওয়া কথা আমাকে যে রাখতেই হবে। মেহের চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলে। উঠে দাঁড়াতেই রাফসান রুমে ঢোকে।

” সরি এতোক্ষন তোমাকে একলা বসিয়ে রেখেছি।” রাফসান মৃদু হেসে বললো

” ইটস ওকে।”

মেহেরকে চিন্তামগ্ন দেখে এগিয়ে এলো রাফসান। ভ্রুকুটি করে বললো,

” এনিথিং রঙ মেহের?”

” উমম। ভাবছি বলব কি না? তুমি তো এখন দূরের কেউ না। আরিফের ফ্রেন্ডস মানেই আমার ফ্রেন্ডস তাছাড়া তুমি মানুষটা খুব ভালো।”

” এতো কম সময়ে ভালোর সার্টিফিকেট দিয়ে দিলে যে? মানুষকে চেনা কী এতোই সহজ?”

” একদম না৷ মানুষ আকাশের মতো। ক্ষণে ক্ষনে বদলায়। আকাশ পূর্বাভাস দিলেও মানুষ তেমনটা দেয় না। নিষ্ঠুরভাবে বদলে যায় হঠাৎ করেই। তুমিও বদলাবে। তবে সেই বদলানোটা আমি ঠিক ধরে নেব দেখো। আর শোনো ব্যারিস্টার সাহেব, মানুষ চিনতে পারা যেমন দুরূহ ঠিক তেমনি আপন মানুষ চেনাটা মোটেও সময়সাপেক্ষ নয়। অন্তত তোমার ক্ষেত্রে তো নয়ই।” মেহের বললো

” যাক অবশেষে কোনো নারীর আপন তো হলাম৷ এই বা কম কিসের?” রাফসানের মুচকি হাসি দেখে মেহের হাসে। বলে,

” আমি কিন্তু এখনও ব্যাড লাকেই বসবাস করছি মি. ব্যারিস্টার!” রাফসানকে কথার খোঁচা দিল। রাফসান কথা ঘুরিয়ে বললো,

” আচ্ছা তাহলে তোমার বায়োডাটা টা দিয়ে যাও। দুদিনের মধ্যেই যোগ্য গুড লাক খুঁজে তোমার হাতে তুলে দেব।”

” তবুও নিজের কথা বলবেই না? কেমন নিষ্ঠুর তুমি ব্যারিস্টার। ” কপট রাগ দেখাল মেহের

” নিষ্ঠুরতার অপবাদ দিয়ে আমাকে বদনাম করো না ললনা। শেষে বউ খুঁজে পাবো না। বেচারী আমার মা বউ দেখবে বলে কতো বাসনা মনে বেঁধেছে। তোমার বদনামে তার সব বাসনা তছনছ হয়ে যাবে।” মেহের চোখ ছোট করে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে। রাফসান সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে গিয়ে বসল বিছানায়। মেহের সেখানে দাঁড়িয়ে দু’হাত ভাঁজ করে বললো,

” আন্টিকে কী বলব? তার ফিলিংস নিয়ে মজা করা হচ্ছে এখানে।”

” কী বলবে মা?”

আচমকা রাহেলা বানুর রুমে প্রবেশে মেহের রাফসান দু’জনই চোখাচোখি করে। দুটোকে চোখাচোখি করতে দেখে রাহেলা বানু ভ্রুকুটি করে ফের জিজ্ঞেস করে,

” কী হলো বললে না আমাকে কী বলবে?”

” তোমার বউ খোঁজার মিশন নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে।” মেহেরকে ইতস্তত করতে দেখে রাফসান জবাব দিল

” ওহ! আর বলিস না রে মা ওর বিয়ের কথা। এতো মেয়ে দেখালাম তবুও ওর পছন্দ হয় না। আল্লাহ জানে মৃত্যুর আগে ওর বিয়েটা দেখে যেতে পারব কিনা।” হাপিত্যেশ করতে করতে রাফসানের পাশে বসে রাহেলা বানু। মেহের রাফসানকে এক চোখ টিপে মা ছেলের মাঝে বসে পড়ে। রাহেলা বানুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

” ডোন্ট ওয়ারি আন্টি। এতোদিন আপনি একা যা পারেন নি এখন আমরা দুজনে মিলে তা সম্ভব করবোই করব কী বলেন?

” আমার আর বলা না বলা রে মা। ঐ তো মন থেকে রাজি হয় না।”

” ব্যাপার কী রাজি হও না কেন বিয়েতে? সেক্সুয়াল প্রবলেম টবলেম আছে নাকি? থাকলে বলো? কলিকাতা হারবাল অর্ডার করি। এক ফাইলই যথেষ্ট। ” রাফসানের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ঠোঁট টিপে হাসে মেহের। রাফসান শকড হয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। তা দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথার উপক্রম মেহেরের। রাহেলা বানু অবাক চোখে দেখছে ছেলে এবং ছেলের হবু বউকে। এই মেয়েকেই তিনি ছেলের বউ বানিয়ে দম ছাড়বেন বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন। তাতে দুনিয়া উলোট পালোট করা লাগলে তাও করবেন। এমন খোশ মেজাজি একটা বউমা পেলে তার ঘর আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। রাহেলা বানু দিবাস্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলেন ওদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে।

নিজেকে সামলে নিয়ে চাপা স্বরে বলে,

” এখন কিছু বললেই তো বলবে পুরুষ জাতের চরিত্রে দোষ আছে। তোমাদের বেলায় তো সাত খুন মাফ। মেয়ে বলে কথা হুমম।”
রাফসানের কথার ইঙ্গিত বুঝে লজ্জা পায় মেহের। সে ছেলেদের সাথে উঠাবসা করতে করতে ভুলেই গিয়েছিল সব কথা সব জায়গায় এবং সবার জন্য না। প্রসঙ্গে এড়াতে মুখ নিচু করে বললো,

” তুমি ব্যারিস্টার ভারি বেরসিক। যাও কথা নেই তোমার সাথে।” রাফসানে দিকে ভেংচি কেটে রাহেলার কাঁধে মাথা রাখে মেহের। রাফসান উঠে জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। রাহেলা পরম আদরে মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলের নজর পর্যবেক্ষণ করে। তার ছেলে মেহেরকে দেখেই মুচকি হাসছে। রাহেলা পুনরায় হাজারটা স্বপ্ন বোনে মেহের এবং রাফসানকে স্বামী স্ত্রী জ্ঞান করে।

তিনজনে গল্প করার এক ফাঁকে রাহেলা মলিন মুখে বললো,

” আমার ননদ দুঃখ করছিল তোমাকে তেমন আদর আপ্যায়ন করতে পারল না বলে। বলি কী আজ রাতটা থেকে যাও। কাল কাজের মেয়েটা বোধকরি সুস্থ হয়ে যাবে৷ মেয়েটার হাতের রান্না দারুন বুঝেছ? কাল বরং পিঠা পুলি বানাতে বলব।”

” না থাক আন্টি। আমি নেক্সট টাইম চিটাগং গেলে সেখানেই কিছু দিন বেরিয়ে আসব। অফিশিয়াল কাজে মাঝে মধ্যে ঐদিকটাই যাওয়া হয়। এবার না হয় আপনাদের উদ্দেশ্য করেই যাব।”

” তা তো যাবে অবশ্যই। কিন্তু তোমাকে তেমন আদর যত্ন করতে পারলাম না আজ। এই নীরার অসুখ হওয়ার আর সময় পেল না।” রাহেলা মুখ কালো করে বললো।

নীরা, নামটা শোনামাত্রই মেহের চমকিত হয়ে তাকায় রাহেলার দিকে। বিস্মিত হয়ে বলে,

” নীরা কে আন্টি?”

” কে আবার? এই বাড়ির কাজের মেয়ে।”

” ও কী গতমাস থেকে এখানে আছে?”

” তাই তো বললো আঞ্জু। কেন বলো তো?” মেহেরের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে রাহেলা বানুর সাথে সাথে রাফসানেরও কৌতূহল জন্মে। মেহের কোনোদিক খেয়াল না করে মোবাইলে অন করে। ঘরময় পায়চারি করছে মোবাইল কানে নিয়ে। প্রচন্ড অস্থির দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে তাকে। যাকে মোবাইল করেছে সম্ভবত তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাফসান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

” কী হয়েছে মেহের?”

মেহের মোবাইল কান থেকে নামিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় রাফসানের দিকে। অস্থিরতা কিছুতেই কমছে না তার। রাফসানকে কী করে বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। এদিকে রাফসান এবং রাহেলা বানু তাকে অস্থির হতে দেখে চিন্তিত। মেহের ঠোঁট সরু করে শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। পুরোপুরি শান্ত না হতে পারলেও, সে থেমে থেমে সব খুলে বলে রাফসান এবং রাহেলা বানুকে। সব শুনে রাফসান থমকে যায় একেবারে। রাহেলা সুর টেনে বলে,

” তাই তো সেদিন ওমন করে জবাব দিল আমাকে মেয়েটা। আহারে বেচারী। আমার তো সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল ওর বিষয়ে। এই আঞ্জুর ছেলেটা এতো হাড়ে বজ্জাত! তা এখন কী করতে চাও তুমি? ”

” আন্টি আমি বনানী থেকে এখানে এসেছি শুধুমাত্র নীরাকে উদ্ধার করবো বলে। ওর আপন খালাত বোন আমার রুমমেট প্লাস বান্ধবী। ঐ আমাকে বলেছে নীরার বিষয়ে। খুব কাঁদছিল বোনের জন্য আমার বান্ধবীটা। আন্টি প্লীজ আমাকে হেল্প করুন। নিয়ে চলুন ওর কাছে।”

” আমি! আমি কিভাবে,,,!” রাহেলা কথা সম্পূর্ণ না করেই রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসানের যেন কোন হুশজ্ঞান নেই এই ক্ষণে। ভুল ধারণা পোষন করে কিসব ভেবেছিল সে মেয়েটি সম্পর্কে। কতো মন্দ কথায় না মনে মনে বলেছিল। সত্য যে এতোটা বিভৎস হবে কে জানত? রাফসান যাকে না দেখেই যার কষ্টে কষ্ট অনুভব করছিল সে যে এই নীরায়! নীরা তার চোখের সম্মুখে অত্যাচারিত হলো, নিগৃহীত হলো আর সে কিনা ছিঃ। রাফসান অনুতপ্তের দহনে জ্বলছে। তারই আপনজন দ্বারা কোনো মেয়ে ধর্ষিত। প্রতিনিয়ত তাকে সয়তে হচ্ছে অমানুষিক যন্ত্রণা। লজ্জা হলো আহনাফের কাজিন হওয়ায় আজ রাফসানের।দৃষ্টি জানালার বাইরে রেখে থমথমে গলায় মেহের কে বললো,

” তুমি যা চাও তাই হবে মেহের। নীরা যদি তোমার সাথে যেতে চায় অবশ্যই যাবে। আমি সে ব্যবস্থা করে দেব৷ চলো!”

” কিন্তু বাবু,,,”

” তুমি কী কিছু বলতে চাও মা? যা খুশি বলো আমি মেনে নেব। শুধু এই কাজে আমাকে বাঁধা দিও না মা। লজ্জায় আমার শিরনত হয়ে যাচ্ছে। এই লজ্জা কেন পেলাম আমি মা? কেন আহনাফের পাপ আমাকে লজ্জিত করল? অবশ্য আমারও তো কিছু দোষ আছে। আমিও দোষী নীরার কাছে। আজ সব দোষের বিচার হবে। কঠিন বিচার।মেহের! ”

রাফসানের কঠিন দৃষ্টি, কঠিন গলার স্বর উপেক্ষা করার সাহস রাহেলা বানুর হলো না৷ তিনি দমে গেলেন। রাফসান কালবিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো রুম ছেড়ে। পিছু পিছু মেহের এবং রাহেলা বানুও। আঞ্জু বসার ঘরে বসে পা তুলে টিভি দেখছিল। রাফসান সহ বাকি দুজনকে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতে দেখে সোজা হয়ে বসলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার সময় না দিয়ে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল রাফসান, মেহের। আঞ্জু ভ্রুকুঞ্চিত করে রাহেলা দিকে তাকিয়ে রইল। রাহেলা ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তার কাছে। আঞ্জুর কেমন কেমন যেন লাগছে এদের চোখের চাহনী। মনে খুট করে খোঁচা লাগল কেন যেন। রাহেলা যতো এগোচ্ছে ততোই তার উদ্বেগ বাড়ছে।

রাফসান জরিনা খালার রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। ভেতরে ঢুকে মেয়েটির মুখোমুখি হতে তার খুব বেশি অস্বস্তি লাগছে। অপরাধবোধ খুব করে ধরেছে তাকে। মেহের রাফসানের নিরব, নিশ্চলতার কিছু একটা কারণ আন্দাজ করে ভেতরে ঢুকে গেল। নীরা দুহাতে পেট চেপে শুয়ে ছিল জবুথবু ভঙ্গিতে। মেহের ছুটে গিয়ে শিওরে বসল। মৃদু স্বরে ডাকল,

” নীরু!”

নীরা পেট এবং মাথার যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে দাঁত কামড়ে পড়েছিল বিছানায়। নীরু ডাকটা বহুদিন পর শুনে সচকিত হয়ে ঘার ফিরাল সে। যাকে দেখার আশা প্রায় নিভেই গিয়েছিল অবশেষে সে এসেছে তার কাছে। নীরার শুষ্ক, পাংশু চোখজোড়া অশ্রুটলমল হয়ে উঠল। বহুকষ্টে বললো,

” মেহের আপু তুমি এসেছ?” দু’হাতে ভর দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল সে। মেহেরকে দু’চোখ ভরে দেখে গলা জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“তুমি এসেছ মেহের আপু? শারমিন আপু বলেছিল তুমি এসে নিয়ে যাবে আমাকে। তুমি কেন এলে না মেহের আপু? আমার তো সব শেষ। এরা আমাকে মৃত্যুর আগে আর ছাড়বে না। আমাকে বাঁচাও আপু। আমাকে বাঁচাও!”

মেহেরের কন্ঠ রোধ হয়ে গেল। একটা শব্দও সে বের করতে পারলো না গলা দিয়ে। দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে নীরাকে। কিন্তু পারছে না। অসাড় অসাড় লাগছে সবকিছু। এই নীরাকে খুঁজবে বলে তো সে আসেনি? এই নীরা তার চেনা নীরা নয়! এ যে অর্ধমৃত এক মেয়ে। তার একটু হেলায় নীরা আজ অর্ধমৃত। কেন আরও আগে এলো না সে? কেন? মেহের কাঁদছে। নীরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। কাঁদছে দু’জন তবে বাইরে দাঁড়ানো মানুষটা শুধু একজনের কান্নায় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে। শূন্য আসমানে চেয়ে ভেতরটা পুড়াচ্ছে না দেখা রমণীর দুঃখের আগুনে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে