কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১১

0
368

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১

হাতে থাকা কলমটা দিয়ে, পত্রিকার জব অফার গুলো মার্ক করতে ব্যাস্ত ইরহা। কোনমতে একটা জব পেলে হয়।এমন সময় নওশাবার কান্নার আওয়াজ কানে আসল।ইরহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে শান্ত করে। বসার রুমে আসলো। ফরিদা বেগম বললেন, খাবার খেয়েনে। সারাদিন ধরে মনে হয় কিছু মুখে তুলিস নি।

“মা লাবু কই?
‘পড়তে বসছে।
‘তুমি খাবার রেডি করো আমি লাবুকে নিয়ে আসছি।

‘বইয়ের মধ্যে মোবাইল রেখে চ্যাটিং করতে ব্যাস্ত লাবিবা৷ মনযোগ এতো গভীর কেউ পিছেনে এসে দাঁড়িয়েছে সে খবর নেই।
‘ইরহা শান্ত স্বরে বললো,কিরে এসব কতদিন ধরে চলছে? ছেলেটা কে?
‘হঠাৎ ইরহার কথা শুনে লাবিবা হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,কই আপু কি চলছে?
‘লাবু মিথ্যে বলবি না। সত্যিটা কি বল।
‘কলেজ ফ্রেন্ড।
‘আচ্ছা কলেজ ফ্রেন্ডকে, ‘বাবু আই লাভ ইউ বলে! এই নিয়ম তো জানা ছিলো না।
‘মজা করে বলছি। তুমি সিরিয়াস কেন হচ্ছ।
‘তা এমন মজা কবে দেখে করছিস।

ফরিদা বেগম বলেন,কিরে তোরা দুই বোনে কি এতো কথা বলিস! সারারাত পরে আছে আগে খেয়ে তারপর গল্প করিস।

খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে ব্যাস্ত। লাবিবা ব্যাস্ত কি মিথ্যে বলে কাটানো যায় কথাটা সেটা ভেবে।
লবুর প্রেমিক রাতুল৷ ভার্সিটিরর প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট। ছয়মাস ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক।কিন্তু রাতুল এখনি সবাইকে ব্যাপারটা জানাতে মানা করেছে।
ইরহা আড়চোখে কয়েকবার লাবিবার দিকে তাকালো।

খাবার শেষ যে যার রুমে।
নাদিম নিজের শরীরটা বেডে এলিয়ে দিয়ে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবছে।
নিশাত নাদিমের কাছে বসে নিজের হাত নাদিমের মাথায় রাখলো। নাদিমের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,আজ তোমাকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।
‘হুম কাজের চাপ বেশি ইদানীং। তুমি কিছু বলবে নিশি!
‘আমি একটু বাবার বাড়িতে যাবো দুই তিনদিনের জন্য।
“আচ্ছা একস্ট্রা আদর করার এই কাহিনি। এবার বুঝতে পারলাম। বেশ তো আমি তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো। আগামীকাল অফিস থেকে একটু আগে বের হবো৷
‘শুনো না৷ আগে শুনবা তো আমার কথা।
” বলো তোমার কথা না শুনলে কার কথা শুনবো!
“আমার কিছু টাকা লাগবে?
” যত টাকা লাগে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নিও।
নিশাতের হাত থেমে গেলো। আমি জানতাম তুমি এ কথাই বলবা, দুই বছর ধরে বিয়ে হইছে তুমি কখনো, মাস শেষে টাকা আমার হাতে না দিয়ে মায়ের হাতে তুলে দাও। কেন আমি কি তোমার কেউ না! বান্ধবীরা বলে আমাদের হ্যাসবেন্ডরা এক, এক পয়সার হিসেব দেয় আমাকে। মাস শেষ স্যালারিটা তাদের হাতে তুলে দেয়। তোমাকে বিয়ে করাই ভুল হয়েছে। মায়ের আঁচলের তলের ছেলেরা বউ প্রেমী হতে পারে না।
“তোমাকে কি আমি ভালোবাসি না!তোমার কোন ইচ্ছে কি আমি অপূর্ণ রাখি?
” শুধু ওই সব ভালোবাসায় কাজ হয় না। থাক বাদ দাও আমার কোন কথার মূল্য তোমার কাছে আছে নাকি?
“অবশ্যই আছে। এই পুরো পৃথিবীতে তিনজন নারীর কথার দাম আমার কাছে সবচেয়ে বেশি।
” বউ আর মা,বোন এক হলো?
“নাহহ তা কেন হবে! তবে এই তিনজন নারীই আমার কাছে দামী। তুমি স্ত্রী হিসেবে আমার প্রিয়তমা। আমার বোনরা আমার কাছে প্রিন্সেস আমার মা আমার জান্নাত। আর ভবিষ্যতে আমার মেয়ে হলে, সে হবে রহমত।
” নিশাত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,আচ্ছা বাদ দাও আমার ঘুম আসছে আমি ঘুমাবো।
“নদিম নিশাতের অভিমান বুঝতে পেরে,নিশাতের হাত ধরে নিজের একদম কাছে বসিয়ে বলে,নিশাত আমি তোমাকে ভালোবাসি।মা,বোনের ভালোবাসা ভিন্ন আর তোমার ভালোবাসা ভিন্ন। তুমি ছাড়া কিন্তু আমি অপূর্ণ অর্ধাঙ্গিনী মানে তো বোঝ?তাহলে কেন অভিমান করো।
” আমার মনে হয় তুমি আমার চেয়ে তোমার বোন আর মা’কে বেশি ভালোবাসো।
“তা কেন হতে যাবে! বউয়ের ভালোবাসা ভিন্ন আর সেদিক থেকে তোমাকে আমি পরিপূর্ণ ভালোবাসি রাগী বউ।
” যদি কখন মা,বোন বউয়ের মধ্য থেকে কাউকে বাদ দিতে হয়, তখন কাকে বাদ দিবে?
“কখন এমন পরিস্থিতি আসতেই দেবো না। আমার জীবনে তোমাদের সবাইকে চাই। আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের কাউকে ছাড়বো না। নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবো।


ইরহা ঘুমায়নি এখনো। রাত গভীর চারপাশে নিরবতা ভেদ করে কিছু আওয়াজ কানে আসছে৷ বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে দূর আকাশে মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকা তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটা বিপরীত পাশে। নয়তো দৃষ্টি চাঁদের পানে থাকতো।
‘দুঃখের রাত দীর্ঘ হয়,এটা ইরহা শুনেছিল। কিন্তু সত্যি যে দীর্ঘ হয় সেটা টের পাচ্ছে এখন।
ইরহা তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,যারা রাত টাকে ঘুমিয়ে কাটাতে পারে, তাদের চেয়ে সুখী মানুষ হয়তো পৃথিবীতে নেই! আর যারা তোদের মত মিটি মিটি জ্বলতে থাকে ভিতরে থাকা ক্ষতের কারণে, তারা জানে রাত কত বড় অভিশাপ তাদের জন্য।
” ঘুম না আসা রাত জানে, দুঃখগুলো কতটা গভীর।
জীবন মনে হয় দুঃখগুলোর হিসেব রেখে আবার তা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেয়? যে আমাকে ভালোবেসে পাগলেরমত চাইলো, তারে দুঃখ দিয়া এতো সুখের ঘর বানাইলাম। তাও ঠুনকো ঝড়ে ভেঙে গেলো? আচ্ছা কি স্বাদ এই বিষাদের? কি-ই বা রং এই কষ্টের। না দেখা যায় না ছোঁয়া যায়! তবুও হৃদয় পুরে যায়।

রবিন আর লামার মধ্যে তুমুল ঝগড়াঝাটি শুরু হয়েছে।সাথে অকাথ্য ভাষায় গা’লী তো আছেই। শেফালী বেগম থামাতে না পেরে ড্রয়িংরুমে এসে একটা চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কি করবেন কাকে ডাকবেন?ঢাকা শহরে যে যার ফ্লাটে নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। হুটহাট সিঁড়িতে দেখা হলে কুশল বিনিময় এতোটুকুই। নয়তো এক ফ্লাটে খু’ন হলেও অপর ফ্লাটের মানুষ টেরও পায় না।
শুধু মাত্র দেয়ালের পার্থক্যে তাদের দুরুত্ব শত মাইলের চেয়ে বেশি। এই রাতে কাকে ডেকে আনবেন? কিন্তু কাউকে একটা তো খবর দিয়ে আনতেই হবে। নয়তো খারাপ কিছু যদি হয়ে যায়?
নিজের হাতে থাকা মুঠোফোন থেকে। সজল লেখা নাম্বারে কল করলো৷ তিনবার রিং হয়ে কেটে যাওয়ার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। শেফালী বেগম ভূমিকা ছাড়াই বললেন, বাবা তুমি একটু তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসো।
‘কি হইছে আন্টি?
“বাবা তুমি আসো আসলে দেখতে পারবা। আসো একটু কষ্ট করে।
সজল পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে৷ শার্ট পরে দ্রুত বের হয়ে আসলো।
এসে দেখে রবিন লামাকে প্রচুর আঘাত করেছে। লামার নখের আঁচড়ে রবিনেরও বেশ ক্ষত হয়েছে। এদেরকে ছাড়িয়ে দিতেই। লামা নিজের পার্স নিয়ে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় চিৎকার করে বলে,তোরে যদি জেলের ভাত না খাওয়াই আমার নাম লামা না। তোর এতো সহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস।

সজল এগিয়ে এসে বলে,ভাবি মাথা ঠান্ডা করেন। সংসারে এমন টুকটাক ঝামেলা হয়।আবার ঠিক হয়ে যাবে। গেটের ভিতরে এসে দরজা বন্ধ করে কথা বলি। মানুষ শুনলে কি বলবে? বাড়ির মালিকের এমন করলে ভাড়াটিয়ারা কি করবে?তাছাড়া আপনার সম্মানটা কোথায় নামবে?
” সম্মান!শরীরে আঘাত পরলে আর সম্মানের কথা মনে থাকে। ওরে আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
“তুই কার সাথে কথা বলছিস!রাস্তার মেয়েরা সম্মানের কি বুঝবে?থার্ড ক্লাস মেয়েদের আবার সম্মান? এদের কাজই আজ এই ডালে কাল ওই ডালে।
” লামা একটা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে, পিরিত করার সময় মনে ছিলো না! তখন ছিলাম মধুর চাক, আর এখন মধু পোকা! কথাগুলে গলা ছেড়ে বলছে।
‘শেফালী বেগম লামার হাত ধরে বলে,মা’স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, সেটা নিজেরা বসে মিটিয়ে নাও। এভাবে সংসারের কথা বইরে নিও না।
লামা কিছু বলবে, তার আগে রবিন বলে, আমি আর ওর সাথে একদিন ও সংসার করবো না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে