কাঠগোলাপ পর্ব ২২

0
1698

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বাইশ

?

রাহি মেঝেতে লুটিয়ে পরে আছে,ধ্রুভের হিংস্র রক্তিম চোখ আস্তে আস্তে বরফের মতো শীতল হয়ে গেছে..সে কি করে পারলো তার মীরাকে ধাক্কা দিতে কিন্তু তার চোখের সামনে ত ক্যাথরিন ছিলো..আর ক্যাথরিন বা কোথা থেকে আসলো।।

ধ্রুভ উঠতে যাবে তার আগে তার পায়ের নিচে ছোট কিছু একটাতে পা পরাতে, পা সরিয়ে সেটা দেখতে গেলে মাইক্রোফোন জাতীয় কিছু পায়..আওয়াজটা যখন তার কানের নিচে ঘুরঘুর করছিলো তখন হাত দিয়ে এক ঝাপটা দিয়েছিলো তার বাম কানে..কিন্তু এই মিনি মাইক্রোফোন এখানে কি করছে??মাইক্রোফোনটাকে পকেটে ঢুকিয়ে,রাহির দিকে নজর গেলে তার চোখ ভিজে আসে..তাৎক্ষণিকভাবে ধ্রুভ রাহিকে কোলে তুলে নিলো।।

গাড়ির কাছে আসতে যেয়ে রাস্তাটাও ধ্রুভের মনে হচ্ছে কত লম্বা,বিপদের সময় সবকিছু দীর্ঘকাল মনে হয়..পা টাও চলছে না,রাহির মাথার রক্ত দেখে ধ্রুভের শ্বাস টাও আটকে গেছে,কোনমতে কাপা কাপা পায়ের গতিতে ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো..তাকে সিটে বসালো না,নিজের কোলে নিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো..পথটাও ফুরাচ্ছে না,রাহির দিকে তাকাতেও পারছে না..বুকের বা পাশটা কেমন চিনচিন করছে,কি করে পারলো সে তার মীরাকে এইভাবে আঘাত করতে??

মিনিট দশেক পর ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে এমারজেন্সি মেডিক্যালে পৌছালো,ধ্রুভ আসার পথে রাহিকে প্লাজো পরিয়ে দিয়েছে যেন উদাম কোনকিছু না থাকে..ধ্রুভ হসপিটালে এসে চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিয়েছে।।

নার্সরা ধ্রুভকে ভালো করে চিনে কারন ধ্রুভ প্রতি বছর এই মেডিক্যালে ডোনেট করে,ধ্রুভের চিল্লানিতে একটা লেডি ডাক্তার বেরিয়ে আসলো..তিনি বের হয়ে আসামাত্রই রাহিকে দেখে চিনে ফেলেছে,আরেকটু কাছে এসে যখন দেখলেন তখন ধ্রুভ দেখলেন।।

ধ্রুভ আর রাহিকে চিনতে পারার কারন তিনি ধ্রুভের লাস্ট ট্রিটমেন্ট করার সময় ছিলেন..রাহিকে উনি চিনেছে কারন ধ্রুভ যখন লাস্ট টাইম সেন্সলেস হয়েছিলো তখন উনাকেই ডাকা হয়েছিলো।।

“প্লিজ আমার মীরাকে দেখেন!!” ধ্রুভ হরহর করে বললো।।

“গো এন্ড গেট দ্যা লেডি ইন ক্যাবিন!!” ডাক্তার বললো।।

“ওকে ডক্টর ন্যামিয়ান!” নার্স বললো।।

রাহিকে নিয়ে অবজারভেশনে নিয়ে চলে গেলো ডাক্তার আর নার্স আর ধ্রুভ ছুটছে তাদের পিছু পিছু..রাহিকে যখন কেবিনে ইন করানো হলো তখন ঢুকতে বাধা দেয়ার পরও সে শুনে নাই,জোর করে ঢুকলো তাদের সাথে..ডাক্তার রাহির মাথার ব্লাডগুলো পরিষ্কার করছে,নার্সরা এটা সেটা দিচ্ছে..রাহির কপালের ব্লাড মুছা হলো যখন সেলাই করার সময়,ধ্রুভ চিৎকার দিয়ে উঠলো।।

“আমার মীরা এতে ব্যাথা পাবে ত?সেলাই করছেন আপনি!!ছাড়েন!” ধ্রুভ এগিয়ে আসলে ন্যামিয়ান বাধা দেয়।।

“শি গট ইনজুরড!!সেলাই করার আবশ্যক!! প্লিজ হ্যাভ সাম পেসেন্স মিস্টার ধ্রুভ!!” ন্যামিয়ান উত্তর দিলো।।

ধ্রুভ অবাক হলো এই ভেবে যে এই ডাক্তার ওর নাম জানে কিভাবে,ধ্রুভ চুপ থাকলেও রাহির কপালে কাটা সেলাই করার সময় তার পাশে ঘুরঘুর করছিলো..সেলাই করার প্রতিটা ধাপে সে আওয়াজ করছিলো মনে হচ্ছে ব্যাথাটা সে পাচ্ছে..রাহির কপালে তিনটা সেলাই পরলো..সে এখনো অজ্ঞান অবস্থায় আছে..রাহিকে রোগীদের পোষাকে চেঞ্জ করানোর সময় ধ্রুভ চেতে উঠেছিলো,নার্সকে শুধু খুন করতে বাকি রেখেছিলো..সে নিজে রাহির পোষাক চেঞ্জ করিয়ে দিলো..ধ্রুভ কেমন ছোট বাচ্চার মতো বিহেভিয়ার করছে,মনে হচ্ছে ছোটবেলাতে কারো প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে সে সবসময় সেটাকে আগলে রাখতো ঠিক তেমনি..ন্যামিয়ান এতোক্ষন সব পর্যবেক্ষণ করছিলো,ধ্রুভের বিহেভিয়ার নিয়ে আর সেই মেডিসিন নিয়ে তিনি এই দুই সপ্তাহ রিসার্চ করেছেন..আজই উনি জাপান থেকে ব্যাক করেছেম,উদ্দেশ্য ছিলো রাহির সাথে যোগাযোগ করতে যাওয়া কিন্তু তার আগে এই হাল।।

“মিস্টার ধ্রুভ?ক্যান ইউ গিভ মি সাম টাইম?” ন্যামিয়ান জিজ্ঞেস করলো।।

” রাইট নাও?” ধ্রুভ রাহির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো।।

“ইয়েস মিস্টার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!ইটস আরজেন্ট” ন্যামিয়ান উত্তর দিলো।।

ধ্রুভ শ্বাস ফেলে নার্সকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে গেলো ভালোভাবে খেয়াল রাখতে।।

ধ্রুভ আর ন্যামিয়ান কেবিন ত্যাগ করলো,তারা সেখান থেকে ন্যামিয়ানের কেবিনে গেলো..ন্যামিয়ানের কেবিনে যাওয়ার পর, ন্যামিয়ান নিজের চেয়ারে বসলে,ধ্রুভ তার সামনের চেয়ারে পা তুলে বসে..চুলগুলো উঠিয়ে নিলো তবে সে যে তার মীরার জন্য অসুস্থবোধ করছে তা তার কপালে কিঞ্চিৎ দেখা যাচ্ছে।।

“হ্যাভ সাম টি অর কফি?” ন্যামিয়ান জিজ্ঞেস করলো।।

“নাহ!!যা কথা বলার সরাসরি বলুন?!” ধ্রুভ ভাবলেশহীন উত্তর দিলো।।

“আপনি ত সহজে কাওকে টাইম দেন না??ত আজকে আমার বলার সাথে এখানে আসলেন যে?” ন্যামিয়ান স্মিত হেসে বললো।।

“এক্সাক্টলি!! আমি কাওকে সময় দেয় না!!কিন্তু এখানে আমার মীরা রিলেটেড কিছু না থাকলে অবশ্যই আপনাকেও আমার মূল্যবান সময় গুলো দিতাম না?” ধ্রুভ ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে বললো।।

“ত মিস্টার গ্রেট বিলিয়নিয়ার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ আমার কথাগুলো তাহলে শুরু করতে পারি?” ন্যামিয়ান গম্ভীরমুখে বললো।।

“কন্টিনিউ!” ধ্রুভ জবাব দিলো।।

“আপনি যে মানসিক ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল অর্থাৎ নিজের ব্রেইনের নিউরন গুলোকে কন্ট্রোল রাখতে চান সেইগুলো কি আপনি কখনো জানতে চেয়েছেন এইগুলো কিভাবে হয় বা যা মেডিসিন নেন সেই মেডিসিন গুলোর নাম নিয়ে কখনো গুগলো সার্চ করেছেন??কিংবা মেডিসিন গুলো কখনো ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছেন যে আদৌ মেডিসিন গুলো আপনার জন্য কি না?” ন্যামিয়ান এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো।।

“ওয়েল,এইসবের কখনো প্রয়োজন হয় নি!!আমার ফ্যামিলি ডক্টর আমাকে দেখে সেখানে এতো কিছু রিসার্চ করা তাকে অসম্মান করার কাতারে পরে!!” ধ্রুভ নাক ফুলিয়ে বললো।।

ধ্রুভের জবাব শুনে, ন্যামিয়ান হাসলো।।

“এতো বড় নামীদামী বিজনেসম্যান আপনি!!চারপাশে এতো গার্ড নিয়ে ঘুরেন অথচ নিজে কি মেডিসিন নেন সেটা একবারো যাচাই করবেন না?” ন্যামিয়ান হেসে জিজ্ঞেস করলো।।

“ভনিতা না করে সরাসরি বলুন!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

“আপনাকে যে মেডিসিন দেয়া হচ্ছে সেটা মাইন্ড কন্ট্রোল করার জন্য নয় উল্টো আপনাকে কন্ট্রোল করার জন্য দেয়া হচ্ছে আপনাকে!!” ন্যামিয়ান সোজা উত্তর দিলো।।

ন্যামিয়ানের এই কথা শুনে ধ্রুভের টনক করলো..কেও আশরিক আলফাজ ধ্রুভকে কন্ট্রোল করতে চায়?সত্যি অবাক করার বিষয়ত!!

“হোয়াট ডু ইউ মিন?” ধ্রুভ জিজ্ঞেস করলো।।

“আপনার মনে আচ্ছে আপনি যখন লাস্ট টাইম অজ্ঞান হোন ওষুধের কড়া গন্ধে আপনার নার্ভ গুলো সাড়া দিচ্ছিলো না আপনাকে সজাগ রাখার জন্য..আপনাতল্র ফ্যামিলি ডক্টত স্মিথ আপনাকে সেদিন ইঞ্জেকশন পুশ করতে এসে,আপনার বাড়ির পালিত কুকুর তা বাধা দিয়ে ফেলে দেয়??আর সেই ওষুধটা ভেঙ্গে যায়..আপনার ফ্যামিলি ডাক্তার কখনো ওষুধের কোনকিছু আপনার বাড়িতে রেখে যান না কিন্তু সেদিন উনি ওষুধের প্যাকেটটা ফেলে রেখে চলে যান..আপনার বাড়ির মেইড সেটা পরিষ্কার করার সময় ডাস্টবিনে ফেলে রাখে,ওষুধের কড়া গন্ধে আপনার অবস্থা ঠিক সেরকম হয় যেরকম আপনার শরীরের ওই ওষুধ প্রবেশ করলে হয়..কখনো ভেবে দেখেছেন কি কোন মেডিসিন শরীরের গেলে সেটা আপনাকে সুস্থ আর ফ্রেশ ফিল করার জায়গাতে উল্টো আপনাকে অসুস্থ করে ফেলে??” ন্যামিয়ান এতোটুক বললো।।

ধ্রুভ সমস্ত কথা শুনছে এবং মিলাচ্ছে কি কতদূর অব্দি সঠিক সেটা..আসলে তাই,মেডিসিন নেয়ার পর তার শরীর দুই তিন দিন পর্যন্ত অবশ থাকে..কিছু মনে থাকে না আর।।

“আপনি যখন বেহুশ হোন তখন আপনাত ওয়াইফ মীরা অনেকবেশি ভয় পেয়ে বসেছিলেন..উনি লন্ডনে মেবি নিউ এইজন্য কিছু চিনে তখন আপনার বাড়ির মেইড অনলাইন থেকে আমার হসপিটালের ইমার্জেন্সি নাম্বার কালেক্ট করে আমাকে কল দেয়..আমি যখন যেয়ে আপনার অবস্থা এতোটা ক্রিটিকাল আমি ততক্ষন বুঝি নি যতক্ষন আপনার মেডিসিন না দেখেছি..আপনার মেডিসিনের কিছু দ্রব আমি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছি,আর প্যাকেটটা নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছি..আপনাকে যে মেডিসিন দেয়া হচ্ছে সেটা আপনার পুরো শরীর আর আপনার মাইন্ড কন্ট্রোল করার জন্য দেয়া হচ্ছে মিস্টার ধ্রুভ..এর মেয়াদ ছয়মাস থাকে,মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তখন সে পুরোনো কিছু আস্তে আস্তে ভুলে যেতে শুরু করে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে..আপনার ক্ষেত্রেও তাই মিস্টার ধ্রুভ,আপনাকে সেদিন ইঞ্জেকশন না দেয়ার ফলে আজকে এরকম অস্বাভাবিক আচরণ করছেন..এই মেডিসিন তাদের জন্য তৈরি করা হয় যখন তাদের কেও কন্ট্রোল করতে চায়..তাদের স্বার্থ আদায় করতে চায়..এইসব কিছু আপনার ওয়াইফ জানে মিস্টার ধ্রুভ,উনি এতোদিন আমার টাচে ছিলেন উনার মেইডের মাধ্যমে..প্রথমে শুনে উনি কান্নায় ভেঙ্গে পরলে,অনেক কাকুতি মিনুতি করে আপনাকে সুস্থ করার জন্য..সে আপনাকে কতটুক ভালোবাসে কিংবা আদৌ ভালোবাসে কিনা জানা নেই আমার তবে আপনার অসুস্থতা শুনে উনি যতটা উদগ্রীব আর অস্থির হয়ে পরেছেন তাতে আমি বলতে পারি উনি আপনার মায়াতে অনেক পরেছে..মেডিসিন টা স্পেশালি জাপানে তৈরি করা হয়,এই মেডিসিন যাদের দেয়া হয় তাদের কন্ট্রোল রেখে ওদের দিয়ে সবকাজ করায়..এক সময় মেডিসিন দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে সে পাগলের মতো আচরন করবে অথবা মেডিসিনের অভাবে মারাও যেতে পারে!!” ন্যামিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে এতোগুলো কথা এক নাগাড়ে বললো।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে