কাঠগোলাপ পর্ব ১৩

0
1720

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব তেরো

?

“সাইন ইট!!” ধ্রুভ কড়া আওয়াজে বললো।।

রাহি একবার ধ্রুভের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তার হাতে থাকা কাগজের দিকে,কি বলবে সে বুঝতে পারছে না..চোখ দিয়ে অঝোরে তার পানি পরছে,আরেকবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে তার কোন উপায় নেয়।।

“ডোন্ট ক্রাই মীরা!!আই প্রমিস,আজকের পর থেকে কোন কষ্ট দিব না তোমাকে!!তোমাকে নিয়ে চলে যাবো আমার দুনিয়াতে!!” ধ্রুভ বললো রাহির মুখের দিকে এগিয়ে এসে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

ধ্রুভ রাহিকে কথাগুলো বলার পর,বের হয়ে যায়..রাহি ওখানে চেয়ারে বসে থাকে..আধাঘন্টা পর ধ্রুভ আসলো ঘরের মধ্যে সাথে কিছু হাতে নিয়ে,রাহির দিকে এগিয়ে আসলো..তার সামনে চেয়ার টেনে বসলো।।

“সো মীরা নাও আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ মাই কন্ডিশনস!!” ধ্রভ ঠান্ডা গলায় বললো।।

রাহির ভেতরটা অজানা কু ডাকে বারবার কড়া নাড়ছে,তার কানকে সে স্থির রাখতে পারছে না..সে চাচ্ছে না ধ্রুভ এমন কিছু বলুক যার কারনে সে বাধা পরে যায় সবখান থেকে।।

“১.তোমাকে এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করতে হবে”
“২.বিয়ের পর তোমাকে আমাকে সেই মুহূর্তে লন্ডন যেতে হবে”
“৩.আমি যা বলবো তোমাকে তাৎক্ষণিকভাবে মানতে হবে”
“৪.তোমার বাবাকে বেহুশ আছে, সে অবস্থায় থাকাকালীন তোমাকে যা করার করতে হবে”
“৫.তোমার বাবার সাথে দেখা করতে পারবে না কারন উনি তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে ঠেলার ফন্দি এঁটেছেন, তোমার বাবা তাই নিস্তার দিয়েছি”
“৬.এর মাঝে একটাও না মানলে তোমার বাবাকে হুশে আসতে দিবো না আমি,তোমাকে বিয়ে করাই ছাড়া আমি লন্ডন নিয়ে যাবো এখন এবং সেই মুহূর্তে”

ধ্রুভ রাহিকে তার দেয়া শর্তগুলো শুনালো,রাহি অবাক হয়ে যেয়ে রয়েছে..তার মাথার সবকিছু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে..কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না সে।।

ধ্রুভ তার দিকে পেপার এগিয়ে দিলো,তাকে ইশারায় বুঝালো এটা ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার।।

বর্তমান,

“কি হলো??সাইন করো??” ধ্রুভ বললো,রাহি কিছু বলছে না শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে মাথা নিচু করে।।

“ওলে ফাইন!!এজ ইউর উইশ মীরা!!চলো এইভাবেই!!” এই বলে ধ্রুভ রাহির হাতের বাধন খুলে দিচ্ছে।।

“আমি রাজি!!” রাহি জবাব দিলো।।

ধ্রুভের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো,রাহির দিকে পেপার এগিয়ে দিয়ে সাইন করালো..সাইন করানোর সময় রাহির ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিলো,চোখের পানি মুছে সাইন করলো..বারবার তার বাবার অচেতন মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো..রাহির সাইন করা শেষে ধ্রুভ সাইন করলো..তারপর ইসলামিক ভিত্তিতে একটা কাজি ডেকে আনলো,কাজি যখন আসছিলো তখন রাহির মুখটা পুরোটা ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো ধ্রুভ,তার মুখ কাওকে দেখতে দিবে না ধ্রুভ..রাহির শ্বাস আটকে গিয়েও ধরে রেখেছিলো,কাজিকে এক প্রকার মোটা অংকের টাকা আর ভয়ে দেখিয়ে আনতে হয়েছে..রাহির কবুল বলা শেষে,ধ্রুভ কবুল বললো..বিয়ে পড়ানো শেষ,আজ থেকে রাহির জীবন ধ্রুভের জীবনের সাথে মিশে গেল।।

কাজির বিয়ে পরানো শেষ হলে ধ্রুভ তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়,রাহির হাতের বাধন খুলে তাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিতে চায়।।

“প্লিজ আমি বাবাকে একটা কিছু বলে যেতে চায়!!আর কখনো কোনকিছু চাইবো না আপনার কাছে!!” হিচকি তুলে রাহির ধ্রুভের সাথে হাটতে গিয়ে থেমে বললো।।

“ডু ইট ফাস্ট!!” ধ্রুভ শক্ত করে জবাব দিলো।।

রাহি কোনমতে রিকুয়েষ্ট করে একটা পেন আর পেপার নিয়ে আনালো ধ্রুভের দিয়ে,তারপর লিখতে বসলো।।

প্রিয় বাবা,

তুমি যখন সজাগ হয়ে দেখবে তখন তোমার পুতুল মেয়েকে দেখতে পাবে না!!তুমি একদম চিন্তা করো না কিন্তু আমাকে দেখতে না পেয়ে..তোমার পুতুল কন্যাকে অন্য একজন তার অধীনে নিয়ে নিয়েছে বাবা!!তোমার মেয়ে এখন অন্যের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেছে!!হ্যা বাবা, সে আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে..কিন্তু দেখো আমি তোমাকে আমার চেহারা দেখিয়ে বিদায় নিয়ে যেতে পারবো না,তুমি একদম চিন্তা করো না আমি যেখানেই থাকি না কেন!!আমার নিঃশ্বাস টুকু চলাচল করলে আমি অবশ্যই আমার রাজাবাবার সাথে যোগাযোগ রাখবো..বাবা তোমার মনে আছে??একবার আমি ছোটবেলাতে দাদুবাসাতে মজার ছলে কুয়া থেকে পানি তুলতে যেয়ে কুয়ার মাঝে পরে গেছিলাম তখন পানি খেয়ে আমি ফুলে গেছিলাম কেমন,তুমি কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছিলেন??কত কষ্ট করে তুমি আমাকে সেখান থেকে তুলে,ডাক্তার তুলে এনে আমার প্রান বাচাঁনোর থ্রেট দিয়েছিলে??।।আরেকবার তোমার মনে আছে স্কুলে একটা টিচার আমাকে মারাতে তুমি ওই টিচারে গালে থাপ্পড় মেরে আমার স্কুল চেঞ্জ করেছিলে??তারপর থেকে আমি তোমার থেকে আমার সব মারের কথা লুকিয়ে রাখতাম কারন তুমি জানলে ওদের মারতে..কারন তুমি আমাকে কষ্টকে রাখতেই চাইতে না..দেখো আমি কতবড় হয়ে গেছি এখন??বিয়েও হয়ে গেছে আমার..আর ভাগ্যের কি খেলা দেখো বাবা,যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেও তোমার মতো..আমাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে,আমি তাকে ভালোবাসতে কখনো পারবো কি না জানি না কারন ভালোবাসাতে খুব কষ্ট বাবা??আমি ধোকা খেতে চাই না আর..আমার পুতুল খেলতেও ভালো লাগে না..তোমার মতো উনিও আমাকে কষ্টে দেখতে পারে না বাবা..দেখো তুমি চাইছিলে না তোমার মতো কাওকে দেখে আমার বিয়ে দিতে??দেখো তোমার মতো কারো সাথে আমার বিয়ে হয়েছে নয়তো কেও কারো শ্বশুরকে বেহুশ করে তার মেয়েকে বিয়ে করে??হ্যা উনি পাগল কিন্তু বাবা দেখো আমি ভালো থাকবো,অনেক ভালো থাকবো..তুমি তোমার বিপি র ওষুধ ঠিকমতো খাবা,বেশি চিন্তা করবানা কেমন??আসি বাবা,অনেক ত কথা হলো…নিজের খেয়াল রেখো,তোমার পুতুল কন্যা বড় হয়ে গেছে বাবা!!অনেক বড়!!।।

ইতি
তোমারই পুতুলকন্যা

রাহি চিঠিটা লিখতে লিখতে কাদঁতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,চিঠি লিখা শেষে সেটা একবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিলো রাহি..চিঠিটা বাবার পকেটে দিয়ে দিলো,তার বাবার মাথায় শেষবারের মতো হাত বুলিয়ে দিলো..এটাই হয়তো শেষ দেখা!!সে থাকতে পারবে ত??তার বাবা তাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে??বাবার দিকে শেষবার অশ্রুজলে তাকিয়ে ত্যাগ করলো রুম।।

“লিসেন?উনাকে নিয়ে সোজা উনার বাড়িতে রেখে আসবা??উনার কোন ক্ষতি না হয়,নয়তো তোমাদের শরীরের একটাও হাড় আস্ত থাকবে না!!ডাক্তার ডেকে ট্রিটমেন্ট করাবা তাৎক্ষণিকভাবে!! ” ধ্রুভ তার লোককে বললো।।

রাহি যখন নিচে নামলো চোখ মুছতে মুছতে তখন ধ্রুভের সব কথা শুনতে পেলো..ধ্রুভের রুপ দেখে সেও দ্বিধায় পরে যায় যে এক সময় এক রকম তার ক্যারেক্টর?? কিভাবে থাকবে সেই পাগল রুপে মানুষটার সাথে??তাকে যেমন পাগলের মতো ভালোবাসে,তার ধারের কাছে ঘেষ্অতে দেয় না তাকে??কি করবে সে!!

রাহিকে নামতে দেখে তার লোকগুলোকে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বিদায় দিলো ধ্রুভ,রাহির কাছে এগিয়ে এসে..রাহি গালে যে পানি গুলো জমেছে,সেই গুলো মুছে দিলো..তার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো সেই বাড়ি থেকে,গাড়িতে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।।

গাড়িতে থাকা অবস্থায় রাহি মাথা নিচু করেছিলো কিছু বলে নি,ধ্রুভ আপনমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো..এয়ারপোর্টে পৌছানোর পর রাহিকে নামানোর সময় ধ্রুভ রাহিকে ভালোভাবে ঢেকে দিলো,রাহি গাড়ি থেকে নামার পর দেখলো অনেকগুলো গার্ড দাড়িয়ে আছে হাতে বন্দুক নিয়ে,দুই পাশের সারিতে আর মাঝখানে ধ্রুভ রাহির হাত টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে..গার্ডগুলো মাথা নিচু করে আছে,রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটছে।।

অবশেষে তারা প্লেইনে উঠলো,প্লেইনে উড়াল দিলো অজানা ভিনিদেশের শহরে..রাহি শেষবারের মতো জানালার গ্লাস দিয়ে তার মাতৃভূমিটাকে ফেখে নিলো,সবাই ফেলে রেখে সে চলে যাচ্ছে অচেনা মানুষের সাথে অচেনা দেশে।।

রাহি যখন এইসব ভাবছিলো তখন ধ্রুভ তাকে টান মেরে তার বুকের মাঝে নিতল্যে আসলো,তার মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলো..রাহি নড়াচড়া করলে,ধ্রুভ আরো চেপে ধরলো,যখন সে পারলো না তখন বাধ্য হয়ে ধ্রুভের বুকে মাথা দিয়ে থাকতে হলো,আশেপাশের মানুষ কি ভাবছে কে জানে।।

“অন্যের কথা নিয়ে যেন ভাবতে না দেখি আর!!আমার কথা ভাবো শুধু!!ঘুমাও মীরা!!” ধ্রুভ রাহির মাথায় চুমু দিয়ে তাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে কথাগুলো বললো,রাহি শুধু চুপচাপ শুনলো।।

সময় চলছে আপনগতিতে,কেও কারো জন্য থেমে নেয়..সময় মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়,পরিবর্তন সবসময় সুখের হয় না।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে