কাঠগোলাপ পর্ব ১২

0
1859

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বারো

?

ধ্রুভ তার ফোনে গেইমস খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে গেছিলো,যখন তার মাথার ভেইন গুলা জানান দিচ্ছে “তোমার মীরা কে তুমি কষ্ট দিচ্ছো,উঠো?এইভাবে তুমি তাকে কষ্ট দিতে পারো না,তুমি এইভাবে তাকে কষ্ট দিলে সে তোমার থেকে চলে যাবে”।।

ধ্রুভ তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠেছে,ঘেমে নেয়ে একাকার.বিড়বিড়িয়ে করে বলছে,” আমার মীরা যেতে পারে না!!আমার মীরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতেই পারে না!!নো নো!!”।।

এইভাবে বলতে বলতে ধ্রুভ রাহির দিকে তাকালো,ওইভাবে বাধা অবস্থায় শুয়ে গেছে..ধ্রুভ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে,তার মীরাকে তার সামনে দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছে অস্থিরতা টা কিছুটা কমে এলো..আস্তে আস্তে করে বসে তারপর রাহির হাতের বাধন আলগা করে খুলে দিলো,ঘুমন্ত রাহি একটু নড়ে উঠলেও,ঘুমের তেজ বেশী থাকার কারনে সজাগ হলো,তার ঘুমন্ত মীরাকে এতো বেশি নেশাক্ত লাগছে যে পারলে এখুনি তাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় সে কিন্তু সে তার মীরাকে সময় দিয়েছে,যা সে সময়ের মধ্যে তার না হলে তার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ স্টাইলে তাকে নিজের করবে।।

“তেরে ইস্ক পে কিতনে ডুব্র হুয়ে হাম”

“পার তেরি না মান নে কি এই চাহাত,গুমহ রা কারতি হে মুঝে বহাত”

ধ্রুভ রাহিকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে তার কানে হিসহিসিয়ে বললো,রাহি ঘুমের মাঝেও কেপে উঠলো..বাধার কারনে রাহির ফর্সা হাত-পায়ে কেমন লালচে দাগ পরে গেছে,ধ্রুভ সেখানে ছোট ছোট চুমু দিলো..রাহির একটা হাত ধরে মেঝেতে বসে খাটে হেলান দিয়ে দিলো,রাহিকে দেখতে দেখতে সেও ঘুমিয়ে গেলো।।

সামনে বেহুশ হয়ে পরে আছে রুবেল,চেয়ারে বাধা অবস্থায় রাহি..চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে ধ্রুভের দিকে,ধ্রুভের চুল আউলাঝাউলা..চোখ রক্তিম বর্ন ধারন করে আছে,রাহি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে ধ্রুভকে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

রাহি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে খোলা অবস্থায় পেয়ে খুব অবাক হয়েছে,পাশে দেখে ধ্রুভ তার হাত ধরে মেঝেতে শুয়ে আসে তার হাত ধরে,রাহি আস্তে করে হাত সরিয়ে তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।।

রাহি ঘর থেকে বের হতে দেখে রুবেল তার কাছে দৌড়ে আসলো।।

“তুই ঠিক আছিস??ওই পাগল তোকে কিছু করে নিতো??” রুবেল একসাথে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।।

“বাবা আমি ঠিক আছি!!কিছু করে নি ও আমার!!” রাহি জানালো।।

“তুই পালিয়ে যা!!” রুবেল শক্তভাবে জবাব দিলো।।

“মানে??কি বলছো তুমি??” রাহি অবাক হয়ে বললো।।

“হ্যা তুই পালিয়ে যা!!আমি কোনভাবে তোকে এই লোকের সাথে বিয়ে দেয়া ত দূরে থাক,আমি ওকে আমার বাড়িতে আমার মেয়ের পাশে সহ্য করতে পারছি না!!” রুবেল জানালো।।

“কিন্তু বাবা এইভাবে কিভাবে??” রাহি বললো।।

“তোকে আমার কসম!!তুই এখান থেকে যা,চল!!” এই বলে রুবেল রাহির হাতে টাকা গুজে দিয়ে,ব্যাগে কিছু জামা ঢুকিয়ে দিয়ে রুবেল তারা চাচাতী ভাইয়ের বাড়ির পাঠানোর ব্যবস্থা করে।।

রাহিকে ট্রেনে তুলে দিয়ে রুবেল বাড়ির দিকে ফিরে যায়,বাড়ি ফিরে দেখে দরজা খুলা কিন্তু কোথাও ধ্রুভ নেয়..তিনি হন্তদন্ত হয়ে খুজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না ভাবছে আপদ নিজে থেকে চলে গেছে,এইসব ভেবে যখনি পিছু ঘুরতে যাবে তখন রুবেলের মুখ ক্লোরোফর্ম মেরে দিয়েছে।।

রুবেল ঝাপ্সা চোখে শুধু দেখলো সামনে থাকা ব্যক্তিটি রক্তিম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে,হ্যা লোকটি আর কেও নই ধ্রুভ..ধ্রুভ রুবেলকে কাধে নিয়ে গাড়িতে তুলে বসিয়ে তার লোককে একটা লোকেশনে রেখে আসতে বললো।।

ট্রেন চলছে আপনগতিতে,মাত্র পাঁচমিনিট হলো ট্রেন ছাড়া..হুট করে ট্রেন থেমে গেলো,রাহি নিজেও অবাক যে চলন্ত ট্রেইন শুরু হয়ে কিভাবে বন্ধ হয়??তখন রাহি মুখ ঢেকে মাথাটা ঢেকে দেখতে যাবে ওমনি কে তাকে হ্যাচকা টান দিয়ে কাধে তুলে নিলো..রাহি চেচামেচি করছে, যখন তার নাকে আতরের স্মেল আসলো তখনি টের পেলো সেটা আর কেও নয় ধ্রুভ!!ধ্রুভের আশেপাশের অনেক গার্ড আর সবার হাতে বন্দুক,কেও সাহস করে কিছু বলছে না।।

“কি করছেন কি ধ্রুভ??নামান আমাকে??!” রাহি চিল্লিয়ে বলছে।।

ধ্রুভ কোন কথা বলছে না,রাহিকে কাধে করে নিয়ে যেয়ে গাড়িতে ফেলে দিয়ে দরজা লক করে দিলো,রাহি এখন ভয়ে কথা বলতে পারছে না কারন ধ্রুভকে তার কাছে স্বাভাবিক লাগছে..শুকনো জীর্ন ঠোটে কেমন যেন নিজে নিজে বিড়বিড় করছে,ধ্রুভ গাড়িতে উঠে শাঁ করে পাঁচমিনিটের মধ্যে একটা দোতালা বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসলো,রাহির জান ধুকপুক করছে না জানি কি হবে এখন..নামতে না চাইলে ধ্রুভ তাকে জোর করে নামায় তখনি রাহির পায়ের নিচে কাটা ফুটে গলগল করে রক্ত বের হয় কিন্তু ব্যাথাটা চেপে ধ্রুভের কাধে তাকে থাকতে হলো।।

ধ্রুভের বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো রাহিকে কাধে করে,একটা রুমে যেয়ে যখন তাকে নামালো তখন রাহি তার বাবাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়..”বাবা”বলে চিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেলে,ধ্রুভ তাকে টান মেরে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত পা বেধে দেয়।।

“আমার বাবাকে কি করেছেন??প্লিজ ছেড়ে দেন!!আপনি যা বলবেন তাই শুনবো!আর অমান্য করবো না?পায়ে পরছি প্লিজ!!” রাহি নানা আকুতি মিনুতি করছে কিন্তু ধ্রুভ তখন তাকে চেয়ারে টাইট করে দড়ি দিয়ে বাধতে ব্যস্ত।।

“আই টোল্ড ইউ টূ নট টু এসকেপ ফ্রম মি!!বাট ইউ ডিড,নাউ বেয়ার ইট!!’ধ্রুভ শক্ত করে জবাব দিলো।।

বর্তমান,

রাহি চেয়ারে বাধা অবস্থায় আছে,তার বাবা অচেতন হয়ে সোফায় আছে..চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কিছু করার নেয় তার,আল্লাহকে মনে মনে ডাকছে..ধ্রুভ কিছুক্ষন হলো বাহিরে গেছে এখনো ফিরে নি,রাহি যে চেয়ার নিয়ে বাবার কাছে যাবে সেটাও পারছে না..হাতের রক্ত চলাচল মনে হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাবে এতো শক্ত করে বেধেছে।।

দরজা খুট করে আওয়াজ হলো,রাহি ভিজা চোখ তুলে তাকালে ধ্রুভকে দেখতে পায়…চুলগুলো হাতের মাঝে উঠাতে উঠাতে আসছে,শার্টের হাতা ফোল্ড করা,প্যান্ট ব্ল্যাক কালাফ গ্যাবাডিং..গায়ের রঙ আর রুপ মনে হচ্ছে উপচে পরছে।।

” প্লিজ বাবাকে ছাড়েন??কি করেছেন আমার বাবার সাথে??আই প্রমিস আমি আর কিছু করবো না উল্টাপাল্টা?? “রাহি চোখে জল নিয়ে বললো।।

” ডোন্ট ক্রাই মীরা!!ইউ ডু নট নিড প্রমিস মি!!আই প্রমিস দ্যাট নেক্সট টাইম ইউ উইল নট এবল টু ডু সাচে শিট থিংস!!তুমি এরকম কিছু করার আর যেন ভবিষ্যতে না পাও সেই ব্যবস্থা করছি!!”ধ্রুভ বললো।।

“প্লিজ কিছু করবেন না বাবাকে!!” রাহি আরেকটু হিচকি তুলে বলছে।।

“ডোন্ট ক্রাই!!তুমি কাঁদলে আমার এখানে খুব ব্যাথা হয়(বুকের মাঝখান আঙ্গুল দেখিয়ে)!!আমি তোমার বাবাকে কিছু করবো না কিন্তু তোমাকে আমার দেয়া শর্ত এখুনি মানতে হবে মীরা, না হলে আমি কিছু করতেও সেকেন্ড টাইম ভাববো না!!” রাহির চোখের জল মুছে দিয়ে বললো ধ্রুভ।।

“যা বলবেন তাই শুনবো!! প্লিজ!!!”রাহি চোখের কোনে আবার পানি জমলো বলতে যেয়ে।।

” আমি যা শর্ত দিব তা তোমাকে এখুনি পালন করতে হবে আর না মানলে এর থেকে নেক্সট স্টেপ কি হতে পারে আর আমি বা কি করতে পারি ভালো ধারনা আছে!!আর না মানলেও আমার প্রব নাই,আমি কি করতে পারি সেইটা না হয় দেখে নিবে!!সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম!!” ধ্রুভ উত্তর দিলো।।

“তুমাহরে দিল কো সামাঝ না ইতনা ভি মুশকিল নেহি”

“জিতনা তুমসে অর তুমাহরে লাফজো সে দুরিয়া বানানে কে লিয়া তারাপ না মুশকিল হোতা হে”

ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বলে রাহির বাম কানে চুমু দিয়ে বললো,”ইউ আর অনলি মাইন!!এন্ড ফরএভার মাইন!!”

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আমি যেন আপনাদের মন্তব্য দেখে পরের পর্ব দ্রুত লিখতে পারি..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে