কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৪

0
1825

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:____4

এই ইডিয়েট মেয়ে সবসময় পাকামি ছাড়া আর কিছুই পারোনা তাইনা।সামান্য কমন সেন্সটুকুও নেই। স্টুপিড
বলেই আমার দিকে এগোতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।
যা দেখে পুনরায় আত্মাটা কেঁপে উঠল আমার।ইশ এখন নিজের বোকামির জন্য এখন নিজেই পস্তাচ্ছি!!

এইরে আজ আর তোর রোক্ষে নেই অয়ত্রি।আজ এই এলিয়েনটা তোকে খেয়েই ফেলবে।তোর সব রক্ত চুষে খাবে।প্রণয় ভাইয়ার চোখ দেখেই তা বুঝতে পারছি!!আল্লাহ বাঁচাও আমায়। মনে মনে বলছি।

কিছুটা কাছে আসতেই ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।ভয়ে একদম সিটিয়ে গেছি যাকে বলে।এই বুঝি ঠাসসস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়!!!

প্রণয় ভাইয়া আমার অনেকটা কাছেই এসেছে তা আমি তার পারফিউম এর ঘ্রাণে বুঝতে পেরেছি।প্রণয় ভাইয়া যে পারফিউমটা ইউস করে সেটা আমার খুব পছন্দের একটা পারফিউম।

কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম।চোখ খুলে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তিনি আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।তার চাহনিতে আমার কেমন জানি অসস্থি হচ্ছে।তাই একটু কাশির অভিনয় করে নড়েচড়ে বসলাম। আমার কাশির শব্দে ঘোর কাটলো প্রণয় ভাইয়ার। তিনি আবারো

আমার দিকে একটু এগিয়ে এলেন যা দেখে আবারো আত্তাটা লাফিয়ে দিয়ে।মনে হয় এবার সেই কাঙ্ক্ষিত সময় এসে গেছে।এবার নিশ্চিত আমার গালে দু-তিনটে চড় পরবেই।কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রামাণিত করে আমার সিটের পাশে থাকা সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো।তার নিজের জায়গায় গিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করলো।

ক্ষনে ক্ষনে আমাকে অবাক করে দিচ্ছে এই প্রণয় ভাইয়া।তার এসব আচরণে খুবই হতবাক আমি।আগেরকার প্রণয় ভাইয়া আর এখনকার প্রণয় ভাইয়ার চরিত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি। মনে মনে এসব ভাবছি আমি।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা–

কোচিং শেষএ গেটের সামনে আসতেই প্রণয় ভাইয়ার গাড়িটা দেখতে পাই।আর অবাকও হই অনেক।কারণ প্রণয় ভাইয়া যে আমাকে নিতে এসেছে!!

এই এলিয়েনটা দেখি সারাক্ষণ আমায় পিছু নিতে থাকে।আর বেশ প্যারাও দেয়।আর পারছিনা বাবাহ।এর জ্বালায় জিবনটা অংরা ছাই হয়ে যাচ্ছে। কোথায় এখন লাইফটা ইনজয় করবো।তা না এখন এলিয়েন এর জন্য লাইফটাই টানাটানি পড়ে গেছে।এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

আমায় দেখে গাড়িতে বসতে বললো প্রণয় ভাইয়া।
গাড়িতে উঠে বসলাম।গাড়িতে বসেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম।

গাড়ি স্টাডি দিতেই সামনে দিকে হঠাৎ ঝুকে পড়লাম।মাথায় একটু ব্যাথাও পেয়েছি।কপালে হাত রেখে ঠোঁট কামড়ে মাথা তুলে প্রণয় ভাইয়ার দিকে চোখ গেলো আমার।

তার পরেরটা তো আপনারা জানেন ওই!!

একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে যার ফলে পুরো প্রকৃতির রুপ আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।গাছের পাতাগুলো চকচকে সবুজ হয়ে গেছে।বৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া খুব পরিষ্কার হয়ে গেছে।কিন্তু এখনো কালো মেঘের ভেলা ভাসছে আকাশের বুক জুড়ে।

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।চুলগুলো অবাধ্য হয়ে বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে।মুখের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো গুলো খুব বিরক্ত করছে আমায়।তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বারবার কানের পিঠে গুজে দিচ্ছি চুলগুলো। ইশ খুব ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে ছুটে বেড়াতে।এইরকম একটা পরিবেশে আপনাআপনিই মনটা শান্তিতে ছেঁয়ে যায়। খুব বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে।

বৃষ্টি আমার অন্যতম দূর্বলতা।
এইসময় বাড়িতে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজতাম।বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসবেই।কিন্তু তবুও বৃষ্টিতে ভিজবোই।এর জন্য খালামনি কতবার আমায় কান ধরিয়ে একপায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো তার কোনো হিসাব নেই!! এখন তো এই এলিয়েনটার জন্যও বৃষ্টিতে ভিজতে পারবোনা।কিন্তু তবুও চেষ্টা করবো।

এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। প্রণয় ভাইয়াকে রেখেই দৌড়ে বাড়িতে ধুকে পড়লাম।
ডাইনিংরুমে খালামনিকে দেখে সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বলে ঘরে চলে গেলাম।

ঘরে ঢুকেই ওয়াশরুম ডুকে পড়লাম।ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই দরজার সামনে পুষিকে দেখতে পড়লাম। হাটু গেরে পুষিকে কোলে নিলাম।বেচারি হয়তো আমায় খুব মিস করেছে।এতক্ষন হয়তো সারাঘর দাফিয়ে বেড়িয়েছে। আমাকে দেখতে না পেয়ে।

পুষিকে কিছুক্ষণ আদর করে রুমে রেখে নিচে গেলাম।
খুব খিদে পেয়েছে। তাই আর দেরি না করে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে ডাইনিং এ প্রণয় ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।চেয়ারে বসে ফোন টিপছে আর আপেল খাচ্ছে
আমি ওসব তোয়াক্কা না করে।চেয়ার টেনে খেতে বসলাম।প্রণয় ভাইয়া আমাকে আড়চোখে একবার দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো। আমি খাওয়া শেষ করে উপরে গেলাম।

__ঘরে গিয়ে বিছানায় সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকে লগইন করলাম।লগইন করার সাথে সাথে আহানের পিক দেখতে পেলাম। পিকটা দেখেই আবার বড়সর একটা ক্রাশ খেলাম।আকাশি কালার পাঞ্জাবিতে আহানকে অপরূপ লাগছে।ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা মিষ্টি হাসিটা হৃদয়ে কম্পন তুলে দেয় আমার। সেটা যে কেন তা আমি জানিনা!!!

আহানকে জাস্ট আমার ভালো লাগে।আমি সেই ভালোলাগাটাকে ভালোলাগা হিসেবেই ধরে রেখেছি।তার বেশি তাকে নিয়ে কিছুই ভাবিনা আমি। তার সাথে আমার দুএকদিন ওই দেখা হয়েছে।তার বেশি হয়নি।
যেহেতু আহান একজন প্রফেশনাল মডেল তাই সে বাড়িতে খুব কমই থাকে।ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ থাকেন।

আজও আহানের প্রোফাইলে ঘুরে এলাম।তার সব পিক গুলোই ফাস্ট ওয়াও।মেয়েরা তো কমেন্ট বক্স এসে হুরাহুরি শুরু করে দেয়। বাট আমি তার পিক শুধু একটা কমেন্ট ওই করি।তা হলো নাইচ এ ছাড়া কোনো কমেন্ট ওই আমি করিনা বা করতেও চাইনা। কারণ মানুষ আমাকে ছ্যাছড়া ভাবুক তা আমি চাইনা।

ফেসবুকে ভিডিও গান দেখছিলাম শুয়ে শুয়ে তখনি মনে পড়লো কোচিং এর দেওয়া হোমওয়ার্ক এখনো বাকি তাই পড়তে বসলাম।

প্রায় ৪ টায় পড়ার টেবিল থেকে উঠলাম। কোমরটা ব্যাথা করছে।আমি আবার বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারিনা। তাই ব্যালকানিতে গেলাম।

আকাশটা অনেক মেঘ করেছে।কিছুক্ষণের মধ্যই বৃষ্টি শুরু হবে মনে হয়। বিকেল চারটা বাজে বাট বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ৬ টা বাজে।

ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে বাইরের মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।

হঠাৎ করে ঝুম বৃষ্টি নামলো আকাশের বুক চিরে।সাথে সাথে আমার মনটাও নেচে উঠলো।বৃষ্টি দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিনা।মনটা আকুপাকু করছে বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু সমস্যা একটাই সেটা হলো প্রণয় ভাইয়া সে যদি দেখে নেয় আমি এই অবেলায় বৃষ্টিতে ভিজছি তাহলে মাথায় তুলে আছার মারবে।কিন্তু এই বৃষ্টি দেখে নিজেকে আমি কোনো মতেই আটকাতে পারবোনা। তাই চুপ করে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।

ছাদের দরজাটা খুলেই লাফিয়ে ছাদে উঠলাম।আশে পাশের বাড়ির ছাদ গুলো দেখে নিলাম কেউ আছে কিনা।নাহ কেউ নেই আপাদত। তাই মনের সুখে দু হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।ইশ কি যে ভালো লাগছে তা বলে বোঝাতে পারবো না।

বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুয়ে দিচ্ছে আমার মুখ চোখ তার সাথে অশান্ত চঞ্চল হৃদয়টাকেও।

হঠাৎ পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।কেউ মনে হয় আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। এটা ভাবতেই একটা শুকনো ধোক গিললাম। আস্তে আস্তে পিছনে ঘুরলাম।
পিছন ঘুরতেই প্রণয় ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।
তিনি আমার দিকে কেমন যেন অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছেন।তার চোখে কৌতুহল ও দেখতে পেলাম বাট সেটা কি জন্য সেটা জানিনা।

হঠাৎ চোখ পড়ল প্রণয় ভাইয়ার ঠোঁটের দিকে।হালকা গোলাপি ঠোঁট গুলোকে বৃষ্টির পানি ছুঁইয়ে দিচ্ছে।হালকা হালকা থেমে ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠছে।চোখের পাতাগুলো পাখির মতোন ডানা ঝাপটাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।যা আমার হৃদয়ে এক আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি করছে।

প্রণয় চেয়ে আছে অয়ত্রির দিকে।বৃষ্টির ফোটা ফোটা বিন্দু বিন্দু মুক্তর ন্যায় পানি গুলো অয়ত্রির কপাল বেয়ে চোখ স্পর্ষ করছে।চোখ থেকে পানি গুলো গোলাপি ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিচ্ছে অচিরেই। কি ভয়ঙ্কর অপরূপ লাগছে মেয়েটাকে। প্রণয় হার্ডবিড লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে। কখন যানিনা সে হার্ডফেল করে বসে।

হঠাৎ বজ্রাআঘাতে চমকে গিয়ে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরলাম।কেঁপে উঠলো প্রণয় ভাইয়া।
বিদ্যুতচমকানো তে খুব ভয় পাই আমি।এটা আমার অন্যতম শত্রু নিরর্ধায় তা বলতে পারি।

এখনো প্রণয়কে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কেঁপে যাচ্ছি। প্রণয়ের ভাইয়ার হুশ থাকায় তিনি আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।

সেই মহূর্তে আমার কোনো হুশ ছিলোনা।যখন হুশ এলো___

ইশ ছিছিছি এটা আমি কি করলাম।আমি কিনা প্রণয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। না জানি তিনি আমাকে কি ভাবছেন।আসলে তুই একটা বুদ্ধু অয়ত্রি।জ্বিভের কোণে কামড়ে মনে মনে বললাম কথা গুলো।

কিরে এই অসময় বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন???কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো প্রণয় ভাইয়া।

আআ আসলে ভাইয়া ছাদে কাপড় চোপড় তুলতে এসে ভিভি ভিজে গেছি।তোতলাতে তোতলাতে বললাম।

প্রণয় ভাইয়া আর কিছুনা বলে আমার হাত ধরে ছাদ থেকে নামতে লাগলেন।আর এদিকে আমার ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। যদি খালামনি জানতে পারে আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি তাহলে তো আমার রক্ষে থাকবেনা।কিন্তু তার আগে প্রণয় ভাইয়ার হাত থেকে আমার বাঁচতে হবে!!!

👉continue 👈💯

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে