কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৩

0
1987

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:___3

আজ দুইদিন ধরে প্রণয় ভাইয়ার ছায়াটাও পেরোইনা আমি!! আর আপদত দেখতেও চাইছিনা। সেদিনের ঘটনার পর থেকে ২ দিন রুম থেকে বেরোয়নি আমি!

সেদিন প্রণয় ভাইয়ার আচরণ খুবকরে বিভ্রতো করেছিলো আমায়।

কারণ সেদিন প্রায় ৫ মিনিটের মতো তার বুকের সাথে আমায় চেপে ধরে ছিলেন।আমার এমন মনে হচ্ছিল যে ওনি আমায় ছেড়ে দিলে হয়তো আমি কোথায় পালিয়ে যাবো। আমি এই ৫ মিনিটে প্রণয় ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু সফল হয়নি। তার জিম করা বডির শক্তির সাথে পেরে উঠিনি আমি।

সামনে আমার h s c exam তাই এমনিতেও আমি বাইরে বেড়োনো আড্ডা দেয়া কমিয়ে দিয়েছি।ছোট আব্বুর কড়া নিষেধাজ্ঞা পরিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িথেকে বেরোতে পারবোনা প্রয়োজন ছাড়া। এদুদিন খালামনি বা শাপলা এসে খাবার দিয়ে গেছে।আর রাত করে ছোট আব্বু আমার রুমে এসে কথাবার্তা বলে গেছে। তিনি সারাদিন প্রায় অফিসেই কাটায় শুধু শুক্রবার বাদে।তাই রাত করেই সময় পায় সবার সাথে গল্পগুজব করার।

ভোর ৬টা বাজে_____
ব্যালকানির গিরিল দুহাতে মুঠোবন্দি করে বাইরে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছিলাম কথাগুলো।তখনি পিছন থেকে পুষির ম্যাও ম্যাও ডাক শুনতে পাই।

আমি পিছন ঘুরে পুষিকে কোলে তুলে নিলাম। পুষি মুখটা কেমন যানি করে রেখেছো। হয়তো রুম থেকে বেরোতে বা বেড়াতে নিয়ে যাইনা বলে এমন করছে।
এদুদিন আমিও বেড়োইনি আর পুষিকে না বেরোতে দিয়েছি

পুষির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চোখ পড়লো কাঠগোলাপের গাছটার দিকে।খুশি মনে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। আজও ৩টা ফুল ফুটেছে। তা দেখে হৃদয়টা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো।

পুষির মাথা থেকে হাত সরিয়ে সদ্যফোঁটা কাঠগোলাপের পাপড়ি গুলো ছুঁয়ে ছুয়ে দেখলাম। মাথাটা নিচু করে পাপড়ি গুলোতে নাক ডুবিয়ে দিলাম।
কাঠগোলাপের ঘ্রান আমার তার নেশায় আসক্ত করে বরংবার।প্রায় একমিনিট ধরে পাপড়ির উপর থেকে মাথা তুলে পুষিকে ব্যালকানিতে রেখে রুমে ডুকলাম।

রুমে ডুকেই দরজার সামনে কাউকে দেখে চরম অবাক হলাম আমি।অটোমেটেকলি আমার চোখদুটো বড় বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে।

দরজার হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে প্রণয় ভাইয়া।

আমি অবাক এইজন্যই যে__ যে প্রণয় ভাইয়া এই দু-মাসে আমার রুমে আসা তো দূরের কথা তার ডান পা টা পর্যন্ত এগোইনি!!! সে আজ আমার রুমে!!! ভাবা যায় বিষয়টা!!??

__কিরে এভাবে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলি কেন??
প্রণয় ভাইয়ার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে চমকে উঠলাম আমি।

__ভূত ওই তো দেখছি আজ চোখের সামনে বলেই দুহাতে মুখ চেপে ধরেলাম আমি। একি বলে ফেললাম আমি!!!

প্রণয় ভাইয়া আমার কথা কোনো রিজেক্ট করলেন না কিন্তু আস্তে আস্তে একপা একপা করে আমার দিকে এগোতে লাগলেন!! যা দেখে আমার আত্মাটা লাফিয়ে উঠলো।

এইরে আজ আবার এলিয়েন টার সামনে ভুলভাল বকে ফেললি।আজ তোকে মাথায় নিয়ে আচার মারবে দেখিস।মনে মনে বললাম।

ভাইয়ার এগোনো দেখে আমিও একপা একপা করে পেছোতে লাগলাম। একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো আমার!!!

৩ ইঞ্চি দূরত্ব আমার আর প্রণয় ভাইয়ার। তিনি এবার ঠোঁট কামড়ে অদ্ভুত চোখে তাকালেন আমার দিকে!!

আমি তার মতলবটা বুঝার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যার্থ…

এবার প্রণয় ভাইয়া আরো একপা এগোলেন তা দেখে একটা শুকনো ধোক গিললাম আমি।

এরপর কিছুটা ঝুকে আমার মুখে সামনে আসতে লাগলেই ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম আমি।
হঠাৎ ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম।

মুখের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলেন প্রণয় ভাইয়া।যদিও আমার চোখ বন্ধ তবুও আমি এটা অনুভব কারতে পারছি।

কিছুক্ষণ পর আর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম।

প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।কেন জানিনা বুকটা ধক করে উঠলো আমার।

আমি এবার ভাইয়াকে বললাম— ভাইয়া আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন বলবেন প্লিজ?? আমার পড়ালেখা আছে।

ভাইয়া কিছুক্ষণ পর জবাব দিলো— রেডি হয়ে নিচে আয়।কোচিংয়ে যাবি।বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
তা দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি!!!

ওফফফ এই এলিয়েনটার জন্য কোথাও শান্তি নেই।
যেখানেই যাই সেখানেই প্যারা দেয় এই লোক।
কি অদ্ভূত চাহনি লোকটার!!! গিরগিটির মতো রং পাল্টায় লোকটা। সেদিনের পর থেকে তাকে অন্যরুম দেখছি যা আমার কল্পানারো বাইরে!!

এই দুই মাসে প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে একটা কথাও বলেনি প্রণয় ভাইয়া। কিন্তু ডেভিলদের মতো অত্যাচার করতে ঠিকেই পেরেছে।তাও ওই পুষির জন্য।
বা অহেতুক কথা বলার জন্য!!! তার কাছে নাকি আমার সব কথাই অহেতুক। কখনো বা অসাবধানতার কারণে তার প্রিয় পারফিউম বা ল্যাপটপ টা ভাঙ্গার কারণে।

এসব বকতে বকতে চোখ পড়লো দেয়ালে ঘরটির কাটার উপর… ৭ টা ৩০ বাজে। তাই বকবকানি বন্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম আমি।

______________________________________________

এদিকে প্রণয় রুমে পায়চারি করছে আর ভাবছে— সে কেন এভাবে হুট করে অয়ত্রির রুমে গেলো!! আর অয়ত্রিকে দেখলেই বা নিজের মধ্যে থাকেনা কেন সে!
কয়েকদিন ধরে নিজের আচরণে নিজেই অবাক সে!

সেদির রাতের আর আজকের ঘটনাটা খুব বেশি করে ভাবাচ্ছে প্রণয়কে। কিন্তু কোনো উওর ওই খুঁজে পাচ্ছেনা সে।

এসবে ভাবতে ভাবতেই পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো প্রণয়ের।তাই পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল রিসিভ করে কানে ধরলো।কিছুক্ষণ পর ওকে বলেই ফোন কেটে দিলো প্রণয়।ওপাশ থেকে কি বললো তা শোনা গেলো না।

ড্রেসিং টেবিল থেকে ঘরিটা নিয়ে পড়তে পড়তে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো প্রণয়।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ালাম।

আজ ব্লু কালারে লং টপস সাথে ব্লাক জিন্স।গলায় কালো কালারের স্কার্ফ ঝোলানো।

চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে হালকা শুকিয়ে ঝুটি করে নিলাম। মুখে পন্ডস স্নো মেখে নিলাম। চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিববাম দিয়ে আয়নার আরেকবার নিজেকে চেক করে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে নিচে গেলাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম ছোটআব্বু খালামনি প্রণয় ভাইয়া বসে আছে।তবে প্রণয় ভাইয়া শুধু বসে নেই।তিনি গিলতে ব্যাস্ত।আর খালা মনি আর ছোটআব্বু আমার অপেক্ষায় এখনো বসে আছে তা আমি ভালোকরেই জানি।

সবাইকে সালাম দিয়ে চেয়ার টেন খালামনির পাশে বসে পড়লাম।

তখনি ছোট আব্বু বলে উঠলেন— মাই লিটল প্রিন্সেস কেমন আছো??

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ছোট আব্বু।তুমি?? হেসে বললাম ছোট আব্বুকে।

ভেরি গুড। তোমার আইসিটি সাবজেক্টের জন্য একাটা কোচিং ঠিক করেছি।এই দুইমাসে তোমায় দুইবার আইসিটি সাবজেক্ট রিভেজ দেয়া লাগবে।কথা গুলো বললো ছোট আব্বু।

ছোট আব্বুর কথা শুনেই মাথাটা ঘুরে গেল। যে আইসিটি বই আমার চরম ও দ্বিতীয় নম্বর শত্রু। সেই শত্রুকেই আমার পিছনে এলিয়ে দিলো ছোট আব্বু।
আইসিটি বইটা পড়তে একদম বিরক্ত লাগে আমার।
কিন্তু কিছু করার নাই।ছোট আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই আমার। তাই মলিন হেঁসে বললাম—

হুম ঠিক করেছো ছোটআব্বু। আসলে আইসিটি বইটা আরেক বার রিভেজ দিলো ভালোই হবে।

আমার কথা শুনে প্রণয় ভাইয়া খাওয়া ছেরে মাথা তুলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে পুনরায় আবার খাওয়ায় মন দিলো।

খালামনিও আমার কথায় মুচকি হাসি দিলো।

ছোটআব্বু হেসে বললেন — হুম এবার কিন্তু তোমাকে খুব ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে।

আমি মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।

তোকে আজ প্রণয় কোচিং-এ দিয়ে আসবে বললো খালা মনি।

আমি খালা মনির কথায় বাইরে থেকে কোনো রিয়াকশন দেখালাম না। কিন্তু আমার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হবার অবস্থা।

এনমিতেই আইসিটি নামের শত্রু পিছন ধরেছে এবার এই এলিয়েনটাও এখন আমার পিছু নেবে।

খাওয়া দাওয়া শেষ এ খালামনিকে বিদায় দিয়ে প্রণয় ভাইয়ার গাড়িতে উঠলাম। প্রণয় ভাইয়ার উপর চোখ পড়তেই মুখ দিয়ে অটমেটিকলি বেড়িয়ে এলো ওয়াও।কারণ আজ প্রণয় ভাইয়াকে মাত্রাত্বিক হ্যান্ডসাম লাগছে।

কালো টি শার্ট কালো জিন্স, কালো সানগ্লাস চুল গুলো স্পাইক করা সাথে তো আছে ওনার মুডে ভরা এটিউড। পরাই মিস্টার মেসিং লাগছে আজ তাকে।
কালো টিশার্টে তাকে পুরাই হিরো হিরো লাগছে। আমি ভাবছি আজ কতজন মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেতে
পারে!!!

অবশ্য আমার প্রথম ক্রাশ কিন্তু প্রণয় ভাইয়া।প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন খুব বড়সরো একধরণের ক্রাশ খাইছিলাম। বাট আস্তে আস্তে সেই ক্রাশ আমার বাশ হয়ে উঠলো।

👉★★★continue★★★ 👈

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে