ওহে প্রেয়সী ভালোবাসি পর্ব-০৫

0
1498

#ওহে প্রেয়সী ভালোবাসি
মারিয়া মীম
পর্ব ৫

আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। খুব ভালোবাসি যে তোমাকে।”

আবির আমার দুহাত ওর হাতের মাঝে নিয়ে বলল। আবিরের শেষ কথা শুনে হালকা হাসলাম আমি। সত্যি পাগল ছেলেটা। আবির আমাকে হাসতে দেখে বলল,
“হাসছো যে। হাসির কি বললাম?”
“কিছু না। এমনিতেই হাসি পেলো।”
” বাট এভাবে হেসো না গো প্রিয়। তোমার হাসিটা যে বুকে আঘাত করে। মাতোয়ারা হয়ে যাই আমি।”

আমি হালকা লজ্জা পেলাম আবিরের কথায়৷
“এতো কেন ভালোবাসো আমাকে? ”
” কোনো কারনে তো ভালোবাসি নি। ভালোবাসাটা হয়ে গিয়েছিল৷ আর সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চাই তোমায়, প্রিয়।”

আবিরের কথায় হৃদয়মাঝে একটু কষ্ট অনূভুতি হলো। আদো কোনো ভবিষ্যত আছে কি আমাদের? হুট করেই তখন প্রিয়কের কথা মনে এলো৷ কেন করলো আমার সাথে এমন? কেনই বা আবার বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়ালো আমাকে? এত এত কেন? অথচ উত্তর দেওয়ার মানুষটা নিশ্চুপ। কিন্তু কতদিন! আমাকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে আবির হাতের তুবড়ি বাজিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ নিয়ে এলো।
“কী, কোথায় হারালে?”
“ভাবছিলাম, আবির।”
“কী ভাবছ?”
“আগে কি হবে?
” এত চিন্তা করো না। যা হবে ভালোই হবে।”
“হুম। ”
“চলো তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসি৷ ”
“তার দরকার নেই। হাসি, মুনি ওরা হয়তো অপেক্ষা করছে। ”
“ঠিক আছে সাবধানে যেও। আর নিজের খেয়াল রেখো। ভেঙে পড়ো না। বি স্ট্রং।”

আবিরের কথার বিনিময়ে হালকাভাবে হাসলাম শুধু। তারপর ওখান থেকে এসে আবার ক্যাম্পাসের সামনে আসলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। হাসি, মুনি, রিয়ন আর তন্নি অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই ওরা দৌড়ে আসল আমার কাছে। হাসি মুনি আর তন্নি আমাকে জরিয়ে ধরে। রিয়ন ওদের ধমকে বলে,
“আরে ছাড় ওরে। যেমনে ধরছিস এখনি না অক্কা পায়।”
রিয়নের কথায় ওরা আমাকে ছেড়ে রিয়নকে মারতে থাকে। পাঁচ বন্ধু আমরা। আমি, মুনিয়া, হাসি, তন্নি আর রিয়ন৷ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল মুনিয়া। সবকিছুতেই ওর চঞ্চলতা বিরাজমান। নিজের নাম হাসি সে কারনেই কি জানি না, সবাইকে হাসিতে মাতিয়ে রাখে যে মেয়েটি, সে হলো হাসি। কষ্টের মাঝেও এমন কিছু বলে বসবে যা অন্যদের হাসতে বাধ্য করে। তন্নি আবার এসবের বিপরীত। সবকিছুতেই গভীর ভাবনা ওর। কোনো কিছু শুনলে বা হুট করে কিছু ঘটে গেলে তৎক্ষনাৎ কোনোরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না মেয়েটা। আগে সবকিছু নিয়ে ভাববে তারপর বুঝে শুনে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে ওর এই স্বভাবের জন্য বেশ কয়েকবার আমরা বাকিরা অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান করতে পেরেছি। আর রিয়ন! আমাদের কাছে ও হলো সংগীত শিল্পী। আমাদের রকস্টার। যার গান আমরা ব্যতীত আর একটা মেয়ে শুনেছে। মেয়েটির নাম নয়না। ভারী মিষ্টি মেয়ে। মনে মনে রিয়ন নয়নাকে পছন্দ করলেও নয়না করে কিনা জানা নেই আমাদের কারোরই।
“এই প্রিয় কই হারালি?”
মুনির কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় আমি৷ মাথা নাড়িয়ে কোথাও না বুঝাতেই তন্নি বলল,
“হ্যারে প্রিয়, তার মানে সত্যি সত্যিই কি প্রিয়ক ভাইয়া আর তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
“হুম।”
“বাট কিভাবে?”
ওদেরকে সবটা খুলে বলতেই মুনি মলিন মুখে বলল,
“তাহলে আবির ভাইয়ার কি হবে? ”
“কিছু ভাবতে পারছি না আমি। কি করবো তোরাই বল।”
“আবিরকে ভুলে যা, প্রিয়।”

তন্নির কথায় আমরা সবাই ওর দিকে তাকালাম। ও নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে আছে। আমাদের এভাবে তাকাতে দেখে বলল,
“কী এভাবে কী দেখছিস? ভুল কি বলেছি আমি?”
হাসি বলল,
“দেখ তন্নি, আমরা সবাই জানি প্রিয়ক ভাইয়া কী করেছে প্রিয়র সাথে। তারপর কিভাবে প্রিয়ক ভাইয়াকে মেনে নেবে বলতো? তার থেকে বড় কথা, প্রিয় আবিরকে ভালোবাসে। আর আবির ও।”
“সবটাই জানি আমি। কিন্তু এখন কি কিছু করার আছে? বিয়ে না হলে হয়তো কিছু করা যেত। কিন্তু এখন! আর তোর আর আবিরের ভালোবাসা! এখন যদি তুই বলিস তুই আবিরকে ভালোবাসিস তাহলে সেটা ভালোবাসা না অন্যায় হবে। বিয়ের পরে অন্য কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভালোবাসা না, পরকীয়া বলে। ভেবে দেখিস।”
“কিন্তু ওরা তো বিয়ের আগে থেকেই ভালোবাসে একে অপরকে। প্রিয়ক ভাইয়ায় সব নষ্টের মূল। ”

মুনির কথায় তন্নি আমার দিকে দৃঢ় দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলল,
“আবিরের প্রতি তোর অনুভূতি টা আসলেই ভালোবাসা নাকি শুধুই ভালোলাগা? ভেবে দেখিস তো প্রিয়।”

আমরা আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। কথা বলতে বলতে যে কখন গেইটের বাইরে এসে পড়েছি তা বুঝতে পারলাম গাড়ির হর্ণের আওয়াজে। সামনে তাকাতেই দেখলাম প্রিয়ক গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি আমাদের দিকেই। সবার দৃষ্টি প্রিয়কের দিকে পড়তেই ওরা আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে তন্নি আবারও বলল,
“যা বললাম ভেবে দেখিস প্রিয়। আর প্রিয়ক ভাইয়ার প্রতি, উনার ব্যবহারের প্রতি ও খেয়াল করিস। হয়তো অন্য কিছু ফিল করতে পারবি। বাই। সাবধানে যাস।”

ওরা চলে যেতেই প্রিয়ক এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। নিজেই গেট খুলে দেয়। সকালের মত এখনও কোনো কিছু না বলেই গাড়িতে উঠে বসি। প্রিয়ক গাড়ির ডোরলক করে নিজেও বসে ড্রাইভিং করতে থাকে। পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলি না আমি। বার দুয়েক প্রিয়ক কথা বললেও আমি তার প্রতিত্তর করিনি। তাই প্রিয়ক ও আর কোনো কথা বলে নি। তবে আমার মাথায় ঘুরছে তন্নির বলা কথাগুলো। আসলেই কি আবিরের প্রতি আমার ফিলিং ভালোলাগার? সত্যিই কি ভালোবাসি না আমি আবিরকে? প্রিয়কের দিকে কি নজর দিবো? নজর দিয়ে কি পাবো? প্রিয়কের কথা ভাবতে ভাবতেই ওর দিকে একবার দৃষ্টি চলে যায়। তার চোখে আবারও কষ্ট দেখতে পেলাম। বাট কিসের জন্য? উফফ পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। এমনিতেই এত এত প্রশ্ন তার মধ্যে আবার আরেক প্রশ্ন এসে জমা হলো। এত প্রশ্নের উত্তর কোথায়!

দুপুরের সূর্যের তেজ কিছুটা কমে আসলে সবকিছু গোছগাছ করতে শুরু করি। মামনিও হেল্প করে তাতে। যদিও গোছানোর তেমন কিছুই নেই, তবুও সময় লাগছে। বিকালের পরপরই বের হবো আমরা। আমরা বলতে আমি আর প্রিয়ক। সাথে আমাদের ছোট বার্ডটা। গন্তব্য আমাদের বাড়ি। আমার মায়ের কাছে। দুদিন সেখানেই থাকবো আমরা। সবকিছু গোছগাছ করা হলে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে নেই সবাই। আর পুনম! ওতো পাখির মত উড়তে ব্যস্ত। মামাবাড়ি যাবে সেই আনন্দে আত্মহারা। এর মাঝেই চারবার জামা পাল্টানো হয়ে গিয়েছে ওর। একেকবার একেক জামা পরে এসে দেখাচ্ছে আমাদের। আমরা যতই বলি সুন্দর লাগছে ততই যেন ওর কাছে সেটা খারাপ লাগছে। “নো। ইট’স লুকিং ব্যাড” বলে আবারও অন্য একটা ড্রেস নিয়ে আসছে। প্রতিবার একই কাজ করছে। তবুও যেন নেই কোনো বিরক্তি। আর ওর কান্ডে আমি আর মামনি হেঁসে যাচ্ছি। হাসির মাঝেই আমার দৃষ্টি যেয়ে আটকায় দরজার দিকে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ক। হুট করেই তন্নির বলা কথা মনে পড়ল। সাথে সাথেই গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকালাম প্রিয়কের দিকে। তার ঠোটের কোণে মৃদুু হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। আর তার দৃষ্টিতে বন্দি হয়ে আছি আমি। তবে আমাকে তাকাতে দেখে সে তার দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়। আমি ও আগের মত বসে থাকি। প্রিয়ক ভিতরে এসে বলল,
“হলো তোমাদের? বের হতে হবে তো। ”
“হ্যাঁ হ্যা হয়ে গিয়েছে। বাট তুই তোর এই পাজি বোনের ব্যবস্থা কর। দেখ সেই থেকে কি শুরু করেছে। ”
মামনি বলল প্রিয়কে। প্রিয়ক মামনির কথা শেষ হতেই পুনমকে কোলে তুলে নেয়। নাক টেনে বলল,
“কি হলো আমার ফ্লাওয়ারের? ”
“লুক ভাইয়া। আই আম লুকিং ব্যাড।” বলেই মুখ বানালো পুনম। পুনম ওকে টেবিলের উপর বসিয়ে বলল,
“ইউ নো? ইউ আর অ্যা ফ্লাওয়ার। আর ফ্লাওয়ার অলয়েজ লুকিং প্রীটি। ”
“ইয়েয়ে… আই ম লুকিং প্রীটি।”

বলে নেচে উঠল পুনম। প্রিয়কের দিকে ভালে করে তাকালাম আমি। তার ঠোঁটের কোণের হাসিটা আগের দিকে চওড়া হয়েছে। ভিতর থেকেই যেন হাসছে। এই হাসি মুখের মানুষটা আমার সাথে এত বড় অন্যায় করবে? ভাবতে পারছি না। না কিছুতেই করতে পারে না। খুব বড় কোন কারন আছে এমনটা করার পিছনে। যা আজই জানতে হবে আমাকে। হ্যা আজি।
.
.
চলবে..??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে