এর বেশি ভালবাসা যায় না পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
1508

<<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>>

পর্ব::(১৩) শেষ পর্ব

Written::Ar limat

দইদিন ধরে ফোনটা অফ করে রাখছে রাজ।ভার্সিটিতেও আসে না।কারো সাথে যোগাযোগ ও করেনা ।রনি আর আকাশ ও অনেকবার ট্রাই করেছে বাট কোন কাজ হয়নি।
আজ অনেক দিন পর রনি আর তিশা খুব ক্লোজ হয়ে বসে আছে।
-এই তুমি অভিনয় করতে গিয়ে আবার রাজের প্রেমে পড়ে যাওনি তো??(রনি)
-হুম রাজ এতো ভাল একটা ছেলে,,,,,
নম্র ভদ্র কত কিউট হ্যান্ডসাম ওকে তো আমি ভালবেসে ফেলেছি।।(তিশা)
-কিহ,,,,, তাহলে আমার কি হবে??
তোমার কি হবে,,,,,, তুমি আরেকজনকে খুজে ভালবেসে নাও।।কথাগুলো বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তিশা।
উদ্দেশ্য রনিকে ক্ষ্যাপানো।
তিশা দেখতে চাই পাগলটা ওকে কত ভালবাসে।।
-এই তুমি এ সব কি বলছো ??মাথা ঠিক আছে তোমার।
হুম,,, আমিতো জানি মাথা আমার ঠিকই আছে।।
-দেখো তিশা এসব আজগুবি কথাবার্তা আমার কিন্তু একবারেই ভাল লাগছে না।।
-হুম এ জন্যই তো বললাম অন্য আরেকজন কে খুজে নাও তাহলে ভাল লাগবে।।
ধুর,,,,,,, আর একমুহুর্ত এখানে থাকব না।বলেই উঠে যেতে লাগল রনি।
বাট এক ঝটকায় হাতটা ধরে রনিকে বসিয়ে দিল তিশা।
-ওই আমাকে একা রেখে কই যাও??
কেন তুমি বললে রাজকে ভালবেসে ফেলেছ তাহলে ওর নিয়েই থাকো আমি এখানে কি করব।।
–হা হা হা একটা হাসি দিল তিশা।
-কি হাসতেছ কেন??
-হুম অনেক মজা পেলাম তাই।
-এতে মজার কি আছে??
-আরে একটু খাটিয়ে দেখব না আমার পাগলটা আমাকে কতটা ভালবাসে।।
ওহ এই কথা……..
তো কেমন দেখলে মহারাণী???
হুম চলবে।
-আর হ্যা বাড়িতে তোমার আমার ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছি।সবাই মেনেও নিয়েছে।
সত্যি……….. …..
হুম সত্যি আর কাল তোমার বাসা থেকে তোমার আব্বু আম্মু কে আমার বাসায় যেতে বলেছে।জানিয়ে দিও বাড়িতে।
সত্যি………………..
বলেই রনি জড়িয়ে ধরল তিশা কে।
ওই…….
ছাড়ো বলছি…………………..
আররে…. তুমি আর আমিই তো প্রবলেম কি আছে।।
হুম আছে গো অনেক প্রবলেম আছে।।এসবের জন্য বিয়ের পর সারাজীবন বাকি আছে।।তখন দেখা যাবে কতটা ভালবাসো।।
ওকে যথাআজ্ঞা মহারানী বলেই ছেড়ে দিল।।
আজ তিন দিন হয়ে গেল রাজের কোন খবর নেই।
এখনো ফোনের সুইসড অফ,,,,,,,,,,,,;;
এ দিকে রিয়াও পাগলপ্রায়।আজ কয়দিন খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই ঠিকমতো হয়নি মেয়েটার ।
-যাকে আজ পর্যন্ত কোন ইমোশনই দুর্বল করতে পারেনি আজ রাজের জন্য
সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেছে।।
মায়ের চোখ এড়ালো না মেয়ের এমন পরিবর্তন।
এত শক্ত একটা মেয়ে কেন এমন হয়ে গেল কিছুই বুঝতেছে না রিয়ার মা।।
রিয়া বিকালে বেলকোনিতে আনমনা হয়ে বসে আছে।।
পিছন থেকে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ……
-কি হয়েছে রে তোর মা ,,,,,,,,,এই কদিন বড্ড অস্বাভাবিক লাগছে তোর।।
আমাকে বল কি হয়েছে তোর,,,,,,,,,,,
রিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না রিয়া।
উঠে মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলল।
আজ যে খুব কষ্ট হইতেছে ওর।আজ মাকে সব খুলে বলল রিয়া।মাও বুঝতে পারল তাহলে আসল কাহিনী এই।
আগেও কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল রিয়ার মা।রাজের এ বাড়িতে একবারেই আসাটা বন্ধ করে দেয়ার কারনে।
যে ছেলে একসময় এ বাড়িতে এসে সবাইকে জালিয়ে মারত।
আজ হাজার বলেও ওকে এ বাড়িতে নিয়ে আসা যায় না।।
ঠিক আছে আমিই ওর বাবার সাথে কথা বলছি ।
বলল রিয়ার মা,,,,,,,,,,,,,,,,,, ,,,,,,
নাহ মা তোমাকে কিছুই বলতে হবেনা আসলে দোষ তো আমারই ছিল।
রিয়ার মাও বেশি জোরাজোরি করল না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আরো একবার ট্রাই করল রিয়া।
-হ্যা আজ রিং বাজতেছে রাজের মোবাইলে।
সস্তির নিঃশাস ফেলল মেয়েটি।আজ যেভাবেই হোক রাজকে ইমপ্রেস করতেই হবে।।
হ্যালো কে,,,,,,,,,,,
কেমন আছো রাজ …..
তুমি আবারো কল দিয়েছো ।এই মেয়ে কি পেয়েছো কি তুমি।।
আমাকে আর কত জালাবে হুম।সামান্যতম লজ্জা নাই তোমার ।বেহায়া মেয়ে কোথাকার ।আমাকে কি একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে না।কি চাও কি তুমি বলতো।খুব ঝাঝালো কন্ঠে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল রাজ।।
রিয়া আর সইতে পারল না যেন বিষের মত লাগলো রাজের কথাগুলো।
আস্তে করে লাইনটা কেটে দিল রিয়া।
পুরা পৃথিবীই যেন তার কাছে বড়ই বিষাক্ত মনে হচ্ছে।
রাজ কথা গুলা বলার পরে ওর নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগল।
রাগের মাথায় কিসব বলে ফেলল।এতগুলা কথ বলা তার মোটেও ঠিক হয়নি ।বড়ই অপরাধবোধ হইতেছে নিজের কাছে।।
আবার ভাবল না ঠিকই আছে এখন বুঝুক কেমন ডা লাগে।।
আজ তিনদিন পর রাজ কলেজ আসল।।
রনি আর আকাশ দেখে কিরে সালা কি হয়েছে তোর আজ তিনদিন তোর কোন খোজ নাই।।
এমনিতেই একটু অফ মুডে ছিলাম তাই আরকি।।
-রিয়ার সাথে কথা হয়েছে ????
-হুম হয়েছে তবে কথা সব আজ আমিই বলেছি।
মানে ,,,,, ,,,,,,,,,,,,,
এরপর সকালের ঘটনা সব খুলে বলল ওদেরকে রাজ।
কিহ,,,,,,, তুই এটা কি করলি রাজ??
কেন কি হয়েছে,,,,,,,,,
আসলে সেদিন রিয়া আর নেহালের বিষয়টা আমাদের ভুল বোঝাবুঝি ছিল।।
এরপর,,,,,,,,,,,,,,,,,, সব খুলে বলল রনি।।

কথাগুলা শুনে বিশাল একটা শকড খেলো রাজ।
এটা কি করল সে ।খুব খারাপ লাগতেছে রাজের।না আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।।
হঠাৎ করেই রাজের ফোন বেজে উঠলো।
হ্যালো আম্মু,,,,,,,,,
রাজ কোথায় তুই ???????
আম্মু আমিতো ক্যাম্পাসে কেন কি হয়েছে???
জলদি মানারাত হাসপাতালে চলে আয়।
হাসপাতালে……….কেন কার কি হয়েছে।।
রিয়া স্লিপিং পিল খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিল এখন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।।
কিহ,,,,,,,,,,,কি বলছ এসব…….
হুম জলদি আয় আমরাও আসছি।
রাজের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।রাজ যেন পাথর বনে গেছে।
কিরে কি হয়েছে রে রাজ??(রনি )
রাজ কিছুই বলতে পারছে না শুধু বলল চল হাসপাতালে যেতে হবে।
একটা সি এন জি নিয়ে তিন জনই হাসপাতালে পৌছল।
হাসপাতালে গিয়েই দেখে রিয়ার মা বাবা বাহিরে দাড়ানো।
রাজ যেতেই রিয়ার মা রাজের দিকে কেমন একটা অভিমানী দৃষ্টিতে তাকালো।
তারপরও রাজ জিজ্ঞাসা করলো মামী রিয়া কই??
ভিতরে ওয়াশ করা হইতেছে ওকে।
রাজ চুপটি মেরে বসে পড়ল কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়ে গেল।এমনটা তো ও চায়নি।এমন হবে সে ভাবিওনি।
আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে রাজের।
একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে এল সবাই ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলো
রিয়ার কি অবস্হা।
রাজ একপাশে দাড়িয়ে আছে।
হুম,,,,,,ওয়াশ করা হয়ে গেছে এখন ঝুকি মুক্ত চাইলে দেখা করতে পারেন আপনারা।
কথাটা শুনে যেন প্রান ফিরে পেল রাজ।
থ্যাংক ইউ ডক্টর বলল রিয়ার বাবা।
সবাই রিয়াকে দেখতে ভিতরে চলে গেছে শুধু রাজ এখনো বাহিরে দাড়িয়ে আছে।
এই মুখ নিয়ে কিভাবে তার কাছে যাবে বুঝতেছে না রাজ।
আজ এ দুর্ঘটনার জন্য তো একমাত্র সেই দায়ী।
সবাই দেখে বের হয়ে আসলো। রিয়ার মা দেখল রাজ এখনো মাথা নিচু করে বাহিরে দাড়িয়ে আছে।
আস্তে আস্তে রিয়ার মা রাজের কাছে গেল।
কিরে রাজ,,,,রিয়াকে দেখবি না ও তো তোর জন্যই অপেক্ষা করছে।
তুইতো বলেছিলি আমার জামাই হবি আমাকে শাশুড়ি বানাবি তাহলে এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন??
যা ভিতরে যা।মামির কথায় সম্বিত ফিরে পেল রাজ।।
চোখ মুছতে মুছতে রিয়ার বেডের দিকে আগালো ।মনে ভয় কাজ করছে প্রচুর।না জানি কি হয়।
নাহ আজ যে ভাবেই হোক এর একটা এন্ড চায়।(মনে মনে বলল রাজ)

রাজ রিয়ার বেডের কাছে গেল রাজকে দেখেই রিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
তবুও আজ হাল ছাড়া যাবে না।রিয়ার পাশে বসল রাজ।
প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আসলে এমন হবে আমি বুঝতে পারে নি রিয়া জানু ।
আমিতো তোমাকে অনেক ভালবাসি ।শুধু একটু বোঝাতে চেয়েছিলাম অবহেলার কষ্ট কতটা নির্মম ।বাট এমনটা হবে আমি ভাবিনি ।প্লীজ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
রিয়া অঝোর ধারায় কাদতেছে অন্যদিকে ফিরে।।
নাহ এভাবে হবে না,,,,,রাজ এবার রিয়ার খুব কাছে গেল আলতো করে রিয়ার দুই চোয়াল ধরে তার দিকে ফিরালো।অঝোরে পানি পড়ছে রিয়ার হরিণী আখিযুগোল দিয়ে।আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিল রিয়ার গন্ডদেশ দিয়ে বয়ে বেয়ে পড়া অশ্রুসজল।।
রিয়া আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।আস্তে করে উঠে রাজকে জড়িয়ে ধরল।
রাজ আর কি করবে চাঁদ তো আজ হাতের মুঠোয়।দেরি নাকরে সেও রিয়াকে বাহুডোরে আবদ্ধ করলো।
খুব শক্ত করে ধরে আছে দুজন দুজনকে।যেন একজন আরেকজনের মাঝে প্রবিষ্ট হবে।দুজনের অস্তিত্ব যেন হয়ে এক হয়ে যাবে ।যেন অন্যজগতের উপস্হিতি পেয়েছে দুজনেই।এ বাধন যেন আর ছিন্ন হওয়ার নয়।।সত্যিই এর বেশি ভালবাসা যায় না।।
তাদের মিলায়াতন যেন ঐ গানেরই ব্যাক্ত ,,,,,,,,,,

<<<<<<<তুমি ব্ন্ধু আমার জীবনে ............. তুমি বন্ধু আমার মরনে................. <<<<<তুমি আমার আমি তোমার চিরদিনের বাঁধন ভুলোনা.........আমাকে..............ভুলোনা।। এইযে পাঠকবন্ধুরা!!ওদের দিকে তাকিয়ে কি দেখেন।চোখ বন্ধ করেন।ওদেরটা আজ কমপ্লিট হয়ে গেল। এখন আপনাদের টা কিভাবে সেটেল করবেন সেই চিন্তা করেন।। আর হ্যা ওদের তো অনেক কষ্টে আমিই মিলিয়ে দিলাম ।এখন বিয়ের দায়িত্বটা না হয় আপনারাই নেন।তবে রনি আর আকাশকে অবশ্যই সাথে রাখবেন।কারন এ বেচারা দুজন অনেক কষ্ট করেছে অবশ্য তিশাকেও বলেন কারন সেও কম যায়নি। আর যদি মন চায় দাওয়াতটা আমি বেচারাকেও একটু দিয়েন কষ্ট তো আর কম করলাম না।কেমন???????????? শুভেচ্ছান্তে........................... Ar Limat

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে