এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২১

0
1793

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২১
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪০
,
,
মনে মনে বারংবার ভালোবাসিতো বললেও মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারতাম না….. কেদে কেদে চোখ ভাসিয়ে বারবার আল্লাহ কে ডাকতাম আর বলতাম ওনাকে ক্যান অসুস্থ করে দিলে… ক্যান….. এই ফোলা ফোলা চোখ গুলা নিয়ে যখন ওনার সামনে যেতাম ওনি তাকিয়ে থাকতেন….. ওনার তাকানোতে খুব লজ্জা পেতাম খুব….. জ্বর হবার পর থেকে ওনাকে রাতে খাইয়ে দেবার ভার টা আম্মু আমার উপর দিলেন….. ভালোবাসি জানা স্বত্তেও কেন জানি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যেতাম……… ওনিও কেমন করে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকতো আর মুচকি মুচকি হাসতো…. ইচ্ছে করতো থুতনি পর্যন্ত ঘুমটা টেনে দেই মুখের উপর…… কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না…… মাঝে মধ্যে আমাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে ওনি খুব জোরে হাসতেন…… আর তখন ওনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেই খুব জোরে দুই গাল টেনে লাল করে দিতেন….
,
,
,
দুদিনের মাথায় মাঝরাতে জ্বর টা যেন মাথা গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে……এতো রাতে জ্বর দেখে মাথায় সব উদ্ভট খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে….. আমার কাদোকাদো মুখটা দেখে কিছুটা জোর করেই টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো….. তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলেন…… ওনার গায়ের তাপটা তখন আমার বোধগম্য…… ওনার নিশ্বাস টা যেন আমার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে……
,
,
,
——— আচ্ছা আমি মারা গেলে কি খুব কষ্ট হবে তোমার!!???
,
,
এমন সময় এই কথা টাকে বড্ড বেমানান লাগছিলো….. বুকের ভেতর টা একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে যেনো…. ওনার দিকে ঘুরে বসে চোখে চোখ রেখেই কেদে কেদে বলে দিলাম….
,
,
,
——— ভালোবাসিতো….. ক্যানো এসব বলেন……
,
,
ওনি মুচকি হেসে আমার কপালে চুমু খেলেন….. তারপর খুব করে জড়িয়ে ধরলেন…… অন্যদিনের জড়িয়ে ধরাটা যেনো আজকের থেকে ব্যাপক ভিন্ন….. কেমন সুখ সুখ লাগছে সারা গায়ে….. ওভাবে জড়িয়ে ধরেই আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন….. শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর হাত রেখে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন…… ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় সেদিন জেনেছিলাম আমি…… জ্বরের ঘোরে লোকটা যে উন্মাদনায় মত্ত ছিলো তা বেশ বুঝতে পারছিলাম…… ঘামে লেপ্টে যাওয়া নগ্ন লোমশ বুকটার ধুকপুকানির শব্দটাতেও কেমন সুখ লেগে যাচ্ছে…..সেদিন থেকে ওনি নামক মানুষ টাকে ভেতর থেকে সাদাফ নামে ডাকতে শুরু করলাম….. সাদাফ…… আমার ভালোবাসার আরেক নাম…. আমার স্বামী….৷ যাকে আমি বৈধ ভাবে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছি…..
,
,
,
সারারাত না ঘুমানো স্বত্তেও ভোরে আমার চোখে ঘুম নামলো না……কিন্তু মানুষটা দিব্যি আমায় বুকে আগলে রেখে কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে…… রাতের ঘোর টা এখনো আমার চোখেই রয়ে গেছে…… ওনার বুকে থুতনি ঠেকিয়ে খুব সন্তর্পণে দেখে যাচ্ছি ওনাকে….. কেনো যেনো একটুও ভয় করছে না….. বরং ভেবে খুশি হচ্ছিলাম এই মানুষ টা আমার জীবন সঙ্গী…… আমি ওনার সহধর্মিণী……. আজকাল ভাবনা গুলো ও খুব প্রাশান্তিদায়ক মনে হয়…..এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই ওনার থেকে সরে আসলাম….. জ্বর আছে কি না দেখার জন্য কপালে হাত রাখতেই… হাত খানা কপাল থেকে টেনে নিয়ে নিজের দুহাতের মাঝে রেখে তাতে মাথা রেখে বেশ আরাম করে শুয়ে পড়লেন…..
,
,
,
——— রাতে একটুও ঘুমাতে পারি নাই বউ….. যন্ত্রণা করে না…. আসো তুমিও ঘুমাও ঘুম পাড়িয়ে দেই…..
,
,
ওনার এই কথা শুনে বেশ হাসি পেলো…. ঘুমের মধ্যেই বাচ্চাদের মতন করে হাত বাড়িয়ে আছে…. আরো মিনিট দশেক ওনার গা ঘেষে থেকে উঠে পড়লাম…… কিন্তু বিছানা থেকে নামতেই কোমড় থেকে সারা পা যেন ব্যাথায় অবশ হয়ে আসছে….. কোন রকমে নিজেকে টেনে নিয়ে ঢুকে পড়লাম বাথরুমে…… গোছল সেরে বের হতেই দেখি ওনি বিছানা গুছিয়ে উঠে বসেছে…..
,
,
,
——–বিয়ের পর সক্কাল সক্কাল গোছলের মানে টা বুঝলে তো!!! এতো দিন তো নানির কথা মুখস্থ করেছো….. যাই আমার এতোদিনের সত্যিকারের ফরজ গোছল টা সেরে আসি….
,
,
,
বলেই আমায় চোখ মেরে বাথরুমে ঢুকে গেলেন….. এদিকে আমার অবস্থা কাহিল….. একেতো ব্যাথায় কোমড়ের ধার ছিড়ে যাচ্ছে তার উপর ঘুম….. যেখানে বসছি সেখানেই ঘুমে ঢুলছি…..সকালে খাবার সারার পড়েই ওনি আবারো চেচিয়ে ডাকতে শুরু করলেন…… সবেমাত্র হাত ধুয়ে টেবিল গোছাতে বসেছিলাম….. কিন্তু ওনার ডাক শুনে আম্মু আমায় রুমে পাঠিয়ে দিলেন….. রুমে ঢুকতেই আমায় টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলেন……
,
,
,
——— ঘুম চোখে বউটাকে তো বড্ড মিষ্টি লাগে….. কিন্তু চোখ গুলা এমন লাগছে কেনো!!! দেখিতো বলেই আমার চোখ টেনে বিজ্ঞ ডাক্তারের মতো দেখতে শুরু করে দিলেন…… তারপর খুব গম্ভীর মুখ করে বলছেন ——— হুম….. ভাইটামিনের যথেষ্ট ঘাটতি আছে……
,
,
ওনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম…… কি বলছে এইসব…… আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই ওনার এতো সব নাটকের মূল কাহিনি বের হয়ে গেলো….. হাত দিয়ে যাতে বাধা দিতে না পারি সেজন্য দুহাত আগেভাগেই আটকে রেখেছেন….. পাক্কা সাত মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে শয়তানের মতোন করে মিটি হেসে যাচ্ছে….. আমি রাগে ফোস ফোস করছি দেখে একদম ঘর কাপিয়ে হাসি ধরলেন…… তারপর পানির গ্লাস টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে টেবলেটের পাতা থেকে টেবলেট খসিয়ে হাতে দিলেন……..
,
,
,
——— খেয়ে নাও…. ব্যাথা কমে যাবে….. আর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও আমি আম্মুকে বলে দেব কিছু একটা……
,
,
,
শুয়েছি সবেমাত্র মুখ হাত ধুয়ে….. অমনি আম্মু আমায় ডাকতে ডাকতে রুমে চলে এলেন…..
,
,
,
——— টুকি…. টুকি শোননা!!!
,
,
——— আম্মু তুলি ঘুমিয়েছে একটু…. সারারাত ঘুমাতে পারে নি তো….
,
,
——— সারারাত ঘুমাতে পারে নি!! কিন্তু কেনো!!
,
,
——— মাঝরাতে জ্বর টা আবার উঠেছিল তো… অই আরকি…
,
,
——— আমায় ডাকলি না কেনো!! ও তো ছোট মানুষ…. এখন নিশ্চয়ই শরীর খারাপ লাগছে…..
,
,
——— নাহ আম্মু ঘুমিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে….
,
,
——— আয়াচ্ছা থাক ঘুমোক….. হ্যারে… তুই কোথাও যাবি!!
,
,
——— নাতো!!
,
,
——— তাহলে এমন কলার অব্দি বোতাম লাগিয়ে শার্ট পড়েছিস কেনো!!
,
,
——— ইয়ে মানে….
,
,
——— দেখি জ্বর আসছে নাকি!! নাহ তো…..
,
,
,
আমি পাশ ফিরে শুয়ে শুয়ে শুধু মজা নিচ্ছি…… এবার বুঝুক মজা…. সবসময় আমায় নিয়ে ইয়ার্কি….. বেশ হয়েছে….. আমার কি!! আমি ঘুমোই….

,
,

,
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে