এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১২

0
1904

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_১২
লেখনিতে: চৈত্র রায়

২৫
,
,
,
পরীক্ষা শেষ হবার পাঁচদিনের মাথায় বিয়ে হবার দরুন পড়াশোনা আর করা হয় নি……এদিকে কলেজে ও বেশ লম্বা ছুটি চলছে…..কিন্তু এর মধ্যেই যম ঠাকুর আমায় পড়ার ঘর দেখিয়ে দিলেন…… তবে আম্মু বাধ সাধলেন এতে…. একেবারে কলেজ খুলার পরই যেনো পড়াশোনা শুরু করি এও বলে গেলেন……
,
,
,
——— আম্মু তুমি বুঝতে পারছো না…. এখন তো আগের মতো সময় ও নেই সিলেবাস কমপ্লিট করা মুশকিল হয়ে যাবে ওর জন্য…. তাছাড়া এখন আর কাজটাই বা কি যে ওকে তুমি এভাবে লাই দিচ্ছো…..
,
,
——— সিলেবাস কমপ্লিট হবে না কেন!!! তুই আছিস তাহলে কিসের জন্য!!! এই কয় দিন একটু রেস্টে থাকুক….. বিয়ের ধকল টা কি কম নাকি…..সাথে ফুলি খাকা ও সায় দিলেন…. ব্যাস
,
,
———তোমাদের আর কিচ্ছু বলার নাই….যা খুশি তা করো…. এই মাথা মোটা টা যখন ফেল মারবে তখন আমি মসজিদে মিষ্টি বিলোবো দেখে নিয়ো…. আমার মাথার পিছনে চটি মেরে….
,
,
——— এই তোর সাহস তো কম না তুই আমার সামনে ওকে মারছিস!!!!! বাবু তোকে আদর করি বলে ভাবিস না আমি শাষণ করা ভুলে গেছি…..আর কক্ষনো যাতে এমন না দেখি….
,
,
,
ব্যাস অনুমতি পেয়ে গেলাম….. উফফফ গা টাই ফুরফুরা হয়ে গেলো…. বিয়ে আর অসুস্থতার আনন্দ টা এখন একেবারে খুব ভালো করে পাচ্ছি….. আগে জানলে তো কবেই বিয়ে করে নিতাম….. আহহহহ কতো শান্তি….. কিন্তু আমার শান্তি আর যম ঠাকুর বেশিক্ষণ টিকতে দেয় না….. একটু পরেই চিল্লিয়ে ডাকা শুরু করে দেয় ………
,
,
,
——— কি ব্যাপার গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছো কেন!!! লাগেজ তিনটা এখনো আগের মতোই পড়ে আছে…. এগুলো গোছাচ্ছো না কেন!!
,
,
——— আসলে আম্মু বলেছিলেন গোছিয়ে দিবেন….
,
,
——— নিজের কাজ নিজের করা জানতে হয় তুলি….. আম্মুর বয়স হয়েছে….. ওনাকে দিয়ে ফারদার আর এসব করাবা না…. ইভেন ফুলি খালাকে দিয়ে ও না….আমি লাগেজ বিছানার উপর তুলে দিচ্ছি তুমি একে একে আমার হাতে কাপড় গুলো দেবে ঠিক আছে….
,
,
,
অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলাম….. যম ঠাকুরের যা রাগ দেখা গেলো না করার জন্য আমার মাথা চিবাতে বসে গেছেন…… কিন্তু এখানে তো আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ও আছে কিভাবে কি করবো…… এদিকে ওনি ওনার জামা কাপড় গোছিয়ে আমাকে কাপড় রাখার জায়গা করে দিলেন…..
,
,
,
——— কি হলো দাও…
,
,
,
মা ফেরার সময় গিফটের সব শাড়ি দিয়ে দিয়েছেন…… তারপর এই বাড়ি এসেও অনেক গুলো শাড়ি পেয়েছি….. আম্মু দিয়েছে, বড় আপু দিয়েছেন…. মেঝো ভাবি ও দিয়েছেন…… আলমিড়ার এক তাক অলরেডি ভর্তি হয়ে গেছে শাড়ি দিয়েই….. আরেক তাকে শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ…… শেষ পর্যন্ত কিছু কাপড় ওনার কাপড়ের পাশে রেখেছেন……
,
,
——— বাকি কাপড় গুলো তুমি গোছাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি…..
,
,
ওনার কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম….. হয়তো আমার অস্বস্তি তার চোখে পড়েছিলো সেদিন….. তবে যম ঠাকুর তাকে মেনে নিতে, এই সম্পর্ক টাকে মনে ধারণ করতে অনেক ছাড় দিয়েছেন অনেক এফোর্ট দিয়েছেন যা আমি আজ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি…… দিনকাল বেশ কাটছে….. আম্মুর সাথে আর ফুলি খালার সাথে….. তার সাথে যম ঠাকুর তো আছেন ই……..জ্বিনের ভয়ে রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না….. তাছাড়া ওনি বাসায় না থাকলে আমি আম্মুর রুমেই শুয়ে বসে থাকি….. ওনি প্রতিদিন বাসায় ফিরে রুম থেকে চেচিয়ে চেচিয়ে ডাকবেন জল দেবার বাহানায়….. আজকাল কেন জানি ওনার এই চেচিয়ে চেচিয়ে আমার নাম ধরে ডাকাটাকে খুব ভালো লাগে….. নিজেকে কেমন যেনো গিন্নি গিন্নি লাগে…..একদিন তো আমার সাথে খুব রেগে গেলেন রুমে থাকি না কেন”!! কেন বারবার আমাকে তার ডাকতে হয়…. চুপ করে ছিলাম সেদিন…..৷ মুখের রা টা ও কাটি নি…. কি বলবো!! আপনার রুমে ভূত আছে…. আমার এই রুমে আসতে ভয় করে…. বললেই সেরেছে….. কিলিয়ে আমাকেই ভূত বানিয়ে দিবেন….. যা রাগ বাবা….
,
,
,
ডাক্তার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বয়ান দেবার পর থেকেই সকালে সেদ্ধ দুইটা হাসের ডিম আর রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ হয়েছে আমার খাবারের তালিকায়…… টেবিলে খাবার নিয়ে তালবাহানা করি বলে আম্মু রোজ সকালে খাবার পর ফুলি খালাকে দিয়ে ডিম রুম পাঠিয়ে দেন….. যম ঠাকুর তখন যমের মতন এই ডিম আমাকে জ্বিনের ভয় দেখিয়ে গেলান…. রাতেও সেইম কাহিনি……. খেতে না চাইলেই বলবে….. জ্বিনটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে…. কেউ যখন আমার কথা শুনে না…. তখন সে খুব রাগ করে….. আর রাত বেরাতে রুমের মধ্যে বড়সড় পা ফেলে হাটে আর চেচামেচি করে….. নয়তো বলবে….. গায়ের যা চিকন চিকন হাড্ডি আমার তো তোমার উপর হাত পা রাখতেই ভয় করে না জানি আবার ভেঙে যায়…..আমি চুপচাপ শুনি আর দুধ গেলি….. সুযোগ পেলে আয়নায় নিজেকে দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি……
,
,
,
রাতে একেবারেই ঘুম হচ্ছে না…… কোনমতে চোখ বুঝে পড়ে থাকা যাকে বলে…… এদিকে যম ঠাকুর রোজ আমাকে পেচিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছেন…… সারা রাত একটু ও নাড়তে পারি না….. সকালে উঠে হাতেপায়ে প্রচন্ড ব্যাথা হয়….. আজকাল ভয়টাও যেনো বড্ড বেড়েছে….. রাতে রুমের লাইট অফ করতে দেই না….. মাঝেমধ্যে ওনি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলে আমিও দরজার বাইরে দারিয়ে থাকি…… প্রায় রাতেই ওনি আমার মাথায় বিলি কেটে দিয়ে ঘুমাতে সাহায্য করেন কিন্তু ঘুম আমার চোখে নামে না….. সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ওনার বলা কথা গুলো বাজে….. সারাদিন ঝিমুতে থাকি….. চোখের নিচের কালি দিনকে দিন গাঢ়ো হয়েই চলেছে…… আজকাল আর যম ঠাকুর আমাকে ভয় দেখিয়ে কোন কিছু করান না….. সারাক্ষণ দেখি কিছু একটা নিয়ে টেনশনে থাকে…..
,
,
,
এর মধ্যে একদিন যশোর থেকে বড় আপুর শ্বাশুড়ি ফোন দিয়েছেন…… আপু নাকি সিড়ি থেকে পড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছেন……আম্মু তো কান্নাকাটি করে অস্থির…… শেষ পর্যন্ত ওনি ফুলি খালাকে নিয়ে গাড়ি করে যশোর রউনা দিলেন….. সাথে ওনিও যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার জন্যই রয়ে গেছেন তাছাড়া আম্মুও রাজি হচ্ছে না….আম্মুরা যেদিন গেলেন সেদিন ওনি আর বাইরে যান নি….. সারা বাড়িতে যেনো কেমন একটা গোমট ভাব চলে এসেছে….. একটা গা ছমছমে ভাব…… সারাদিন ভয়ে যম ঠাকুরের পেছন পেছন ই ছিলাম…….. বিকাল থেকেই হাত-পা ব্যাথা করছিলো বেশ…..ওনি স্টাডি রুমে গিয়ে ফাইল পত্র নাড়ছিলেন….. আর আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম……. কেন যেনো আজকে ড্রয়িং রুমে বসে ও ভয় করছে…… বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি….. মনে হচ্ছে পেছনে কেউ আছে….. এসব ভাবতে ভাবতেই একেবারে ঘামিয়ে যচ্ছি….. দুই চার মিনিট পর দেখলাম ওনি দুইটা ফাইল নিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন ………… কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বলতেই পারবো না….. ঘুম ভাঙলো ওনার ডাকে….. ভালো করে তাকিয়ে দেখি সোফায় ই আছি এখনো….. মাথার নিচে বালিশ দেওয়া….. ওনি ফাইল পত্র গুছিয়ে উঠে পড়লেন…. ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি দশটা বেজে গেছে…… গা ট বেশ ভাড়ি ভাড়ি লাগছে….. কোমড়ের দিকের শীড়দাড়া একেবারে টান হয়ে ব্যাথা করছে….. বেসিন থেকে পানি মুখে চোখে ছিটিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়েয় মুছে নিলাম…… রুমের দরজা টা ও দেখতে কেন যেনো ইচ্ছে করছে না….. খাবার সব গরম করে….ওনাকে ডেকে এসে প্লেটে সব খাবার তুলে দিয়ে নিজেও বসে পড়লাম…..কিন্তু খাওয়া আর গলা দিয়ে নামছে না…..চারটে ভাত ডাল দিয়ে মুখে গুজে ওঠে পড়লাম…… সব কিছু গুছিয়ে….. ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই দেখলাম যম ঠাকুর দুধ নিয়ে হাজির….. কিছু বলার আগেই নিজের হাতে দুধের গ্লাসটা মুখে তুলে দিলেন…… কেনো যেনো মানুষটাকে আজকাল বড্ড আপন মনে হয়….
,
,
,
২৬
,
,
,
রাতে ঘুম ভেঙে গেলো প্রচন্ড পেট ব্যাথায়…… ব্যাথাটা খুব পরিচিত….. তারিখ মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়লো পিরিয়ড সাইকেল মিস করছি প্রায় সপ্তাহখানেক….. তলপেটের ব্যাথা টা আস্তে আস্তে যেনো প্রতি জয়েন্টে জয়েন্টে গেড়ে বসছে…..পেটের উপর ওনার হাত টাকে কয়েক মণ ভারি মনে হচ্ছে…… সারা গা অসার হয়ে আসছে….. প্রতি বারই এতো ব্যাথা….. মা কে বড্ড মনে পড়ছে….. আমার গোঙানির আওয়াজ শুনে ওনার ঘুম ভেঙে গেলো….. আমাকে পেট চেপে গোঙাতে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে উঠে বসলো……. পিরিয়ডের ব্যাপারটা বুঝতে ওনার খুব বেশি সময় লাগলো না…. আলমিরা থেকে কাপড় নিয়ে আমাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলেন ফ্রেশ হবার জন্য….. ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি ওনি নতুন বেডশিট পাতছেন….. ব্যাপার টা দেখে বেশ লজ্জা পেলাম…… রাতেই কেন হলো…. দিনে ও হতে পারতো….. লজ্জায় কোন ভাবেই ওনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না….. ভোরের পাখির ডাক শুনা যাচ্ছে বাইরে….. ভোর কি হয়ে গেছে তাহলে!! ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম চারটে পঞ্চাশ বাজে……
,
,
,
যম ঠাকুর হুট করে এসে আমার চুলের ভাজ থেকে গামছা টা খুলে দিলো……
,
,
,
——— ভেজা গামছা চুলে বেশি সময় রাখতে নেই…. মাথা ব্যাথা হয়….. এখন একটু ঘুমিয়ে পড়ো….. আর এটা নরমাল…. এ নিয়ে এতো লজ্জা পাবার কিছু নেই….কিছু লাগলে আমাকে ডেকো…. বলেই আমাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশেই শুয়ে পরলেন….
,
,
,
প্রতিবারই পিরিয়ডের সময় টাতে জ্বর জ্বর ভাব,অরুচি সহ হাত পা ব্যাথার নানা উপসর্গ দেখা দেয়….. প্রথম তিনদিন তো ভালো কথাকেও চিরতা মনে হয়….. কতো চিল্লাচিল্লি করতাম মায়ের সাথে….. মা চুপচাপ সহ্য করতেন….. উল্টো এটা সেটা মুখের কাছে এনে ধরতেন…… সকালের ঘুমটা ভাঙলো মাকে স্বপ্নে দেখেই….. পাশে তাকিয়ে দেখি যম ঠাকুর নেই….. রুমের দরজা হা করে খোলা…… ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতেই দেখি ওনি রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন….. বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে…..আকাশ এখনো কালো হয়ে আছে….. কাল বৈশাখি ঝড়ের পূর্বাভাস…. ওনি আমাকে চোখের ইশারায় ওনার পেছনে আসতে বলে আমাদের রুমের বারান্দায় চলে এলেন….. বারান্দায় তারের পেচানো দুটো মোড়া আর একটা ছোট গোল টেবিল ছিলো….. আমি রীতিমতো অবাক বনে গেলাম ছোট্ট টেবিলটার উপরে একটা প্লেটে খাবার সাজানো….. সেদ্ধ ডিম…. ছেকা পাউরুটি,কলা,মিস্টি বিস্কুট আর টোস্ট…. পাশে একটা পানির গ্লাস…..
,
,
,
——— তুলি জলের জার টা নিচে রাখো তো…. টেবিলে জায়গা হচ্ছে না……
,
,
,
জলের জার টা নামিয়ে রাখতেই ওনি একটা চায়ের কাপ আমার দিকে রেখে আরেকটা নিজের দিকে রাখলেন…… আদা চা দেখেই মুখের ভাব ভঙ্গি পালটে গেলো….. গরম গরম দুধ চা খাবার ইচ্ছা ছিলো প্রচন্ড….. কি আর করার এইটা তো আর আমার বাড়ি না…. তবে বাসায় হলে এতোক্ষণে সুফিয়া খালা বেশ কিছু শুনে ফেলতেন……
,
,
,
——— গরম গরম চা টা শেষ করো তুলি….পেট ব্যাথা অনেকটা কমে যাবে….
,
,
চা শেষ করার পর একে একে পাউরুটি হাসের ডিম সবই ঠুসে ঠুসে খাওয়ালেন আমায়….. সাথে নিজেও খেলেন….. হাসের ডিমের আস্টে গন্ধে গা গুলাচ্ছে….. যতবারই বলেছি খাবো না…. ততোবারই বলছে
,
,
,
——— এই সময় কতটা ব্লাড লস হয় কোন ধারণা আছে….. মাথা ঘুরিয়ে তো পড়ে যাবে শেষে….. তাই হাই প্রোটিন মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট….. হারিয়াপ….
,
,
,
ওনার একেকটা কথা শুনে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি….. যতই এই ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে যাচ্ছি ততই ওনি খোলামেলা ভাবে প্রসঙটা টেনে আনছেন…… খাবার শেষ হবার পর আমি একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই প্লেট কাপ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম…….. সিংকে যখন থালা বাসন ধুতে ব্যাস্ত তখন যম ঠাকুর পানির গ্লাস হাতে আমার পাশে এসে দাড়ালেন…….
,
,
——— পানি না খেয়ে চলে এলে কেনো!!! এই বাজে অভ্যাস টা যেনো আর না দেখি আমি…. হাত ধুতে হবে না….. আমি খাইয়ে দিচ্ছি….
,
,
,
বাসন ধুয়া শেষ করে রুমে ঢুকার সময় কলিং বেল টা বেজে উঠলো….. দরজা খুলতেই দেখলাম একজন মহিলা দারিয়ে আছেন…… গতকাল ফুলি খালাই ওনাকে ঠিক করে দিয়ে গেছেন রান্না করার জন্য…..ওনাকে রান্না ঘরের সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে রুমে চলে এলাম….. রুমের দরজার নব ঘুড়াতেই মনে হলো কেউ হ্যাচকা টানে টেনে নিলো ভেতরে আমাকে….. আচমকা এমন হওয়ায় ভয়ে আমার চোখ নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেছে….. একজো হাত যখন আমার কোমড়ে আবিষ্কার করলাম ঠিক তখনি চোখটা খুলে গেলো আপনা আপনি….. কপালে মুখে গরম নিশ্বাস পড়ছে ক্রমাগত…… এতো স্বচ্ছতা যম ঠাকুরের চোখে আজই যেনো প্রথম টের পেলাম…… বেশ লম্বা হওয়ায় ঘাড় উঁচিয়ে ওনাকে দেখতে হচ্ছে…..নিজেকে ঠাহর করতেই দেখলাম হাত দুখানা ওনার বুকে খুব সাবলিল ভাবে রাখা….. ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু যম ঠাকুর ছাড়লো না…. তিনি আরো পাকাপোক্ত করে আমার কোমড় আগলে ধরলো…… কপালের উপর থেকে আধ ভেজা চুলের গোছাটা কানের পিঠে গুজে দিতে দিতে বললেন…..
,
,
,
——— এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন!!! আমাকেই এতো লজ্জা!! অবিশ্বাস্য হলেও একটা কথা কিন্তু সত্যি তুলি…. তোমার সব কিছু…. ছোট থেকে ছোট কথা গুলো ও জানার রাইট আছে আমার…. ঠিক তো!!!
,
,
আমি মাথা নিচু করেই মাথা নাড়লাম…..
,
,
——— আচ্ছা কাল রাতে যদি আমার ঘুম না ভাঙতো তাহলে তো এতো লজ্জা পেতে না…. তাই না!!! তুমি যেই ব্যাপারটার জন্য এতো লজ্জা পাচ্ছো সেই ব্যাপার টা আমি ক্লাস নাইন থেকেই আমার পাঠ্য বইয়ে পড়ে আসছি….এই ব্যাপারে জানার জন্য আমি প্রথম কাকে প্রশ্ন করেছি জানো!!! মাকে….. মা কিন্তু আমাকে সাবলীল ভাবেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন…… মেয়েদের কিভাবে রেসপেক্ট করতে হয় সেই শিক্ষা টা কিন্তু আমি আমার মায়ের কাছেই পেয়েছি…..এরপর হায়ার স্টাডির জন্য ইউনিভার্সিটি তে আসা….. সেখানে অনেক মেডিকেল ক্যাম্পিং করেছি….. সেই সুবাদে অনেক ট্রেনিং ও পেয়েছি….. এবং আমি হলফ করে বলতে পারি পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতনতা তোমার থেকে আমার ই বেশি জানা…..আর সেই তুমি আমাকেই লজ্জা পাচ্ছো!!!
,
,
,
হায় হায় ওনি বলে কি এইসব….. ওনার প্রতি টা কথাই যেনো লজ্জা হয়ে আমার উপর বর্ষিত হচ্ছে….কাচোমুচো করে ওনার থেকে সরে যাবার চেষ্টা করতেই ওনি একেবারে দম বন্ধ হয়ে যাবে এমন ভাবে চেপে ধরলেন……
,
,
,
——— এই মেয়ে এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন…. লজ্জা পেতে পেতে তো তোমরা এটাকে ট্যাবু বানিয়ে ফেলেছো….. অথচ মানব জীবনের সূচনা কিন্তু তোমাদের এই সো কল্ড লজ্জা থেকে….. এরপর থেকে কিন্তু আমার কাছ থেকে আর লুকানোর চেষ্টা করবে না…..বলেই আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে নাকটা টেনে দিলেন …..
,
,
,
সেদিন ও সারাদিন ওনি বাসা থেকে আর কোথাও যান নি….. একটু পর পর পানি নিয়ে আসছেন নাহয় কোন ফল….. এতো দিনকার চেনা মানুষ টাকে নতুন করে আবার জানছি….. আগের সেই রাগি রাগি সাদাফ নামক মানুষ টার সাথে আজকের আমার সামনে বসা মানুষ টার কোন মিলই নেই….. বিয়ে ঠিক হবার পর যতবার ই বলেছি মাকে ওনার রাগের কথা ততোবারই মা হেয়ালি করে উড়িয়ে দিয়েছেন আর বলেছেন টিচার হিসেবে যেমন সাদাফ খুবই ভালো তেমনি মানুষ হিসেবে সাদাফ এক কথায় অনন্য….. আসলেই অনন্য তিনি….. এতো স্বচ্ছ আর প্রাণবন্ত মানুষ টা…. সবার সাথে একদম নিজের মতন করে মিশে যায়….. বাবা তো আজকাল সাদাফ নাম শুনেই দুই ঢোক জল বেশি খায়…..
,
,
,
সন্ধ্যার দিকে ওনার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বেরুতে বললে উনি কোন হেয়ালি না করেই বলে দিলেন….. নারে আমার বউটা অসুস্থ…. আজ আর আসবো না….. আমি তখন সোফাতে হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছিলাম….. ওনার এই কথা শুনে আবার ও মনে হলো এক বালতি লজ্জার মধ্যে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি…. তবে ওনার সেই আমার বউ কথা টা খুব মনে ধরেছিলো আমার….. আসলেইতো আমি ওনার বউ…. সাদাফের বউ……
,
,
,
বের হবে না বলেও সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ওনি লুঙ্গি পড়েই কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো বলেই বেরিয়ে গেলেন…. এদিকে আমার অবস্থা খারাপ ভয়ে…. রুমের দরজা লক করে…. ড্রয়িং রুমে ফুল ভলিউমে টিভি অন করে রেখেছি…. সমানে পায়চারি করছি তো কখনোই দরজার সামনে গিয়ে দারিয়ে আছি….. পাক্কা পয়ত্রিশ মিনিট পর ওনি ফিরে এলেন…..দরজা খুলার পরই সিগারেটের গন্ধটা সবার আগে নাকে লাগলো….. ও তার মানে ব্যাটা খচ্চর যম ঠাকুর সিগারেটের হাওয়া গেলার জন্য আমারে জ্বিনের কাছে রেখে গেছে…..এএএএ সাদাফ মানুষ হিসাবে অনন্য…. দেখে যাও তোমাদের অনন্য মানব জনাব সাদাফ মিয়া সিগারেট খায়….
,
,
,
রাতে আর কোমড় ব্যাথার জন্য বিছানা ছেড়ে দাড়াতে পারিনি…..কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলাম….. ওনি নিজেই খাবার গরম করে প্লেটে করে রুমে নিয়ে এসে আমাকে বেশ কয়েকবার ডাকলেন….. খাবার কোন ইচ্ছে ছিলোনা বলে আর খাই নি…. ওনিও তাই বেশি জোর করলেন না….. সেখানে বসেই নিজের খাওয়া শেষ করে….. আমাকে একগ্লাস দুধ খাওয়ালেন নাছড়বান্দা হয়ে…..সে রাতে আর আমার উপর হাত পা রাখে নি….. তবে বেশ গা ঘেষে শুইয়ে ছিলেন…… সকালে ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে নামতেই নুপুরের ঝমঝম আওয়াজ স্পষ্ট শুনলাম….. যম ঠাকুর তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন….. মনের ভুল ভেবে সামনে এগুতেই আবার শুনলাম….. আশেপাশে তাকাতে তাকাতে যখন নিজের পায়ের দিকে চোখ পড়লো তখন নিজেই ভয়ে আধমরা হয়ে গেলাম……
,
,
,
আমার পায়ে নূপুর কোত্থেকে এলো…… আমি তো পড়িই নি….. তাহলে কি জ্বিন টা আবার….. এবার হাউমাউ করেই কান্না জুড়ে দিলাম….. বিছানার পাশে মেঝেতে বসে….. যম ঠাকুরের ঘুম ততক্ষণে ভেঙে গেছে….. ওনি একপ্রকার পরিমরি করেই আমার কাছে ছুটে এলেন….
,
,
——— এইইইইই তুলি… কি হয়েছে এভাবে কাদছো কেন”!! কষ্ট হচ্ছে!! কি হয়েছে বলবে তো!!
,
,
——— আয়ায়ায়ামি এএএএখানেএএএ আর্রর থাকবোওঅঅঅঅ না…. আমি বাড়ি চলে যাবো…..
,
,
——— কি বলছো কি সক্কাল সক্কাল আবোলতাবোল….
,
,
——— ওই জ্বিন টা আবার এসেছে…. আমার পায়ে নূপুর…. এই দেখুন….. আমি আর এখানে থাকবো না…. রোজ রোজ ভয়ে ভয়ে আমার থাকতে ভালো লাগছে না…. বলেই আবার কান্না শুরু দিলাম…..
,
,
,
ওনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরলেন…….
,
,
——— তুলি…….এই ঘরে কোন জ্বিন নেই….. নূপুর টা আমিই তোমাকে পড়িয়ে দিয়েছি কাল রাতে….৷ তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে টের পাওনি….
,
,
,
,
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে