এক শহর ভালোবাসা পর্ব-০১

0
7261

এক_শহর_ভালোবাসা
সুরাইয়া_নাজিফা
সূচনা_পর্ব

১.
যাকে এতোদিন নিজের বোনের স্বামীর নজরে দেখতাম তাকে কখনো নিজের স্বামীর নজরে দেখতে হবে সেটা কল্পনাই করিনি।বধূ বেশে বসে আছি ঠিকই কিন্তু ভয় লাগছে আরশ ভাইয়ার কথা ভেবে।এটা যে ইমোশনালফুল সত্যি সত্যি সুইসাইড না করে নেয়। ভাবতেই মাথাটা চক্কোর দিয়ে উঠলো।

হঠাৎ চারদিকে হইচই পড়ে গেল স্মৃতি আপু পালিয়ে গেছে।এটা শুনার পর আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম কারণ আমাদের প্লানিংয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনো কথাই ছিল না। তাহলে আপু পালালো কেনো?আমার এখনও মনে পড়ে যেদিন বিয়ে ভাঙার জন্য শেষবার আরশ ভাইয়ার সাথে দেখা করেছিলাম,

“কি হলো শালীসাহেবা কিছু তো বলো?আমি কিন্তু এখন টেনশনে হার্ট এট্যাক করব। ”
“ভাবছি।”
আমি এখনও নিজের চিন্তায় বিভোর ছিলাম আর টেনশনে নখ কামড়াচ্ছিলাম।আরশ ভাইয়া আবার বললো,
“আর কতক্ষণ? ”
এইবার মাথাটা চটে গেল তাই চিৎকার করেই বলে উঠলাম,
“এতো যদি পারো তাহলে তুমি ভাবো না আমাকে কেনো ডেকেছো। একেই নিজের চিন্তায় নিজে মরছি তার উপর তোমাদের ঝামেলা। ”
আরশ ভাইয়া এইবার নরম গলায় বললো,
“আহা আমার লক্ষ্মী বোনু এতো রাগ করতে আছে আমার বিষয়টাও একটু বোঝার চেষ্টা করো। ”
“হুম বুঝছি বলেই বসে আছি তোমাদের সাথে।আমাকে ভাবার সময় দেও। ”
কিছুক্ষন ভাবার পরই আমি চিৎকার করে উঠলাম,
“ইয়েস আইডিয়া পেয়েছি।”
আপু আর আরশ ভাইয়া একসাথেই বলে উঠল,
“কি?”
“পরিবারের সবাইকে সবটা বলে দি তারপর যা হবার হবে। ”
আরশ ভাইয়া বললো,
“নো ওয়ে সোহা। স্মৃতি আর আমার সম্পর্কের কথা জানলে কেউ মানবে না কারণ সবাই স্মৃতিকে ভাইয়ার জন্য চয়েজ করেছে সেখানে আমি কিভাবে বলব?”
আরশ ভাইয়ার সুর টেনে আপুও বললো,
“আরশ ঠিক বলেছে। তাছাড়া আব্বুকে তো চিনিসই। আব্বু কখনো প্রেম সমর্থন করে না। এটা জানলে হয়তো আমি আর আরশকে কখনো পাবোই না অন্যকিছু ভাব। ”
এদের দুজনের কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে গেলাম আর বিরক্তির সাথেই বললাম,
“তাহলে তোমরাই ভালো কিছু ভেবে বের করো। তবে হ্যাঁ এতে যেন দুই পরিবারের সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকে সেটাও মাথায় রেখো।কি আছে কোনো প্লান? ”

আরশ ভাইয়া আর স্মৃতি আপু একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুজনেই এক সাথে “না ” সূচক মাথা নাড়ালো।

“বেশ তাহলে আমি যেটা বললাম সেটাই হবে। ”
“কি হবে জানি না। তবে আমি যদি স্মৃতিকে না পাই তাহলে আমি সুইসাইড করব। ”

ব্যাস কথা এতটুকুই হয়েছিল। তাহলে আজ কেন এমন করল? এসব ভাবতে ভাবতেই আবার খবর পেলাম আমার বর পালিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আপু আর আরশ ভাইয়া একই সাথে পালিয়েছে। এজন্যই আপু সকাল থেকে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গোছগাছ করছিলো।আর আমি জিজ্ঞেস করতেই বলেছিল ঐ বাড়ি যাবে তাই সব গুছিয়ে নিচ্ছে। তখন আপুকে এতো স্বাভাবিক দেখে খটকা লেগেছিল।তারপর সাজার জন্য আমি যেই পার্লারে গেলাম সেটাতে না গিয়ে অন্য পার্লারে গিয়েছিলো যাতে তার পালাতে সুবিধা হয়।উফ ভাবতেই পারছি না যেই মানুষটা তাদের প্রেমে এতো হেল্প করল তাকে একবার জানালোও না যে তারা পালাচ্ছে। তখনই আমার মোবাইলের মেসেজ টোনটা বেজে উঠল। ফোন হাতে নিতেই স্ক্রিনে এলো,

“আমাকে মাফ করে দিস সোহা কোনো উপায় না পেয়ে পালাতে বাধ্য হলাম। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম বাবাকে সব কথা খুলে বলার কিন্তু যখনই কিছু বলতে যাই আমার গলা শুকিয়ে যায়। তুই তো জানিস বাবার রাগ। আর আরশকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। তাই চললাম।আমি ঠিক জানি আজকে হয়তো বাবা আমার উপর রাগ করে থাকবে তবে একদিন না একদিন ঠিকই মেনে নেবে। বাসার সবার দিকে খেয়াল রাখিস। আমি জানি তুই পারবি। লাভ ইউ সোনা। ”

মেসেজটা পড়েই আমার লুঙ্গী ডান্স দিতে ইচ্ছা করছিল। কারণ এই জবরদস্তির সম্পর্ক থেকে তো রেহাই পেলাম।নাহলে চারটা জীবন নষ্ট হতো। অন্যদিকে পরিবারের কথা ভেবে খারাপও লাগছিলো।এমনটা না করে সত্যিটা সবাইকে বলে দিলেই ভালো হতো। আমি নিচে নেমে এলাম। বিয়ে বাড়ির সব সানাই বন্ধ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের কানাকানি শুরু হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই বাবা আমার দিকে ছলছল চোখে তাকালো। বাবার এমন চেহারা দেখে আমার হৃদয়ে ধক করে উঠল। আমার বাবা অনেক রাগি আর শক্ত মানুষ। উনাকে কখনো আমি এমন রূপে দেখি নি তাই আমার এতক্ষনের খুশিটা চোখের পানিতে রূপান্তরিত হয়ে গেল। নিজেদের ভালো করতে পরিবারকে কষ্ট দিয়ে দিলাম না তো?

তখনই ইমতিয়াজ আঙ্কেল বলে উঠলেন,
“দেখ ভাই যা হওয়ার হয়ে গেছে আমাদের দুই পরিবারের সম্মানই নষ্ট হয়েছে। আর বাকি যে সম্মানটা আছে সেটা বাঁচাতে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আমার বাবা অবাক হয়ে বললেন,
“কি সিদ্ধান্ত? ”
“সোহাকে আমি শানের বউ করে নিতে চাই। ”
কথাটা শুনে বাবা কি করবেন জানি না তবে আমার দম আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। শেষ পর্যন্ত এই অহংকারী, বদমেজাজি, উল্লুককে আমায় বিয়ে করতে হবে। ঠিক শুনলাম তো কানে?এই হনুমানকে বিয়ে করা আর নিজের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলানো দুইটাই সেম কাজ।

তখন আমার বাবা জনাব নজরুল ইসলাম আমার মতামতের কথা একবারও জিজ্ঞেস না করে নিজেদের সম্মান বাঁচানোর জন্য আমার শ্বশুর মশাইয়ের কথায় সাঁই দিলেন। উপস্থিত একটা মানুষও আমার কথাটা জানতে চায়নি যে আমি কি চাই? সবাই সবার সম্মানের কথাটাই ভাবল। এখন তো মনে হয় স্মৃতি আপুই ঠিক করেছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। অবশেষে বাড়ির সবার সম্মানের কথা চিন্তা করেই আমি কবুল বলেই ফেললাম আর সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বললো।

বিদায়ের সময় সবাইকে ধরেই অনেক কাঁদলাম। কেন জানি আজ খুব কষ্ট হচ্ছে। আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“একদম ওই বাড়িতে গিয়ে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকিস। কেউ যেনো কখনো তোর ব্যবহারে আমাদের উপর আঙ্গুল তুলতে না পারে। ওই বাড়ির সবার মন জুগিয়ে চলবি। ”

তারপর শান ভাইয়ার হাতে আব্বু আমার হাত দিয়ে বললো,
“শান আমার ছোট মেয়েটা আমার অনেক আদরের। অনেক সময় অনেক কিছুই বুঝতে পারে না ওকে তুমি তোমার মতো করে গড়ে নিও। ওর খেয়াল রেখো। ”

শান ভাইয়াও বাবার হাতের উপর অন্য হাত রেখে আশ্বস্ত করলেন।অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম তখনই ওনার চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলাম। এরপর আমাদের গাড়ি চললো আমার নতুন গন্তব্যে।

অবশেষে সব ঝামেলা শেষ করে বসে আছি বাসরঘর নামক বাঘের খাঁচায়।এখানে বসিয়েই সব ভাবীরা আমাকে জ্ঞান দিতে আরম্ভ করল।ভুমিকা ভাবী শানের বড় ভাবী বললো,
“শোনো সোহা আমার দেবর কিন্তু একটু আনরোমান্টিক টাইপের তাই আজকে রাতে সব তোমাকেই করতে হবে। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“মমমানে।কি করব? ”
আমার কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল,
“মানে বুঝনা। মেয়ে দেখি একেবারেই বাচ্চা। আরে কেউ ওকে বুঝা। ”
বলে সবাই আবারও হাসতে লাগল আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি তখন ভূমিকা আপু আমার কানে কানে একটা কথা বলতেই লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। ছি ছি! কি বলে এসব এরা। এতক্ষন এমনিতে ভয়ে মরছিলাম। এখন আরো ভয় করছে। না না শান ভাইয়া কখনো আমার সাথে এসব করবে না। এরপর সবাই আমার সাথে আরো কিছুক্ষন দুষ্টমি করে চলে গেল।

তখন থেকে অপেক্ষা করছি কখন শান ভাইয়া আসবে আর আমার গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলবে। এমনিতে এতক্ষন তারা যা বললো তার উপরে কালকে বিকালের ঘটনাটা মনে পড়লে আরো বেশী ভয় করছে। কালকে বিকালেই ঐ হনুমানটাকে আমি ঠেলে পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম। এখন যদি সে তখনের প্রতিশোধ নেয়। ভাবতেই গা কাঁটা দিয়ে উঠল। আরিয়ান আরেফিন শান যে কি জিনিস সেটা এই কয়দিনে আমি হারে হারে টের পেয়েছি।

আমি সুরাইয়া নাজিফা সোহা বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।যতো রকমের ফাজলামি,বাঁদরামি, শয়তানি আছে সব কিছুই আমার সাথে যায়। একদম উড়নচণ্ডী যাকে বলে। আর স্মৃতি আপু ছিলো একদম নম্র,ভদ্র,লক্ষ্মী একটা মেয়ে। আমার আর আপু স্বভাব ছিলো একদম উত্তর আর দক্ষিণের মতো। সবসময় আমি কোনো দোষ করলেই স্মৃতি আপুর একমাত্র ফরজ কাজ ছিল আমার দোষ ত্রুটি গুলো ডেকে আমাকে বাঁচানো। সেখানে আপুই আমাকে এভাবে সাগরে ফেলে চলে যাবে সেটা ভাবতেও পারিনি।

শান আর আরশ,আর সাম্য ভাইয়া হলো তিন ভাই।সাম্য ভাইয়া সবার বড় উনার বউয়ের নাম ভূমিকা । শান ভাইয়ার বাবা আর আমার বাবা দুজনেই খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।আরশ ভাইয়া ছিলো আমার বড় বোনের বয়ফ্রেন্ড।তাদের প্রেমের একমাত্র স্বাক্ষী ছিলাম আমি। তাদের দেখা করানো, প্রেমপত্র আদান-প্রদান, কথা বলিয়ে দেওয়া সবই আমি করতাম।কারন আমার পরিবারে প্রেম সমর্থন করত না। তবে তাদের সাহায্যর জন্য অবশ্য ঘুষ ও নিতাম। বেশ ভালোই চলছিলো। কিন্তু কিছুদিন আগেই হঠাৎ বাবা এসে বললেন তিনি আমাদের দুই বোনের জন্যই বিয়ে ঠিক করেছেন। যদিও আমার সমস্যা ছিল না। কিন্তু আপুর মাথায় বাজ ঠিকই পড়ল।কারণ আপু আরশ ভাইয়াকে ভালোবাসত। কিন্তু একই বাজ যে আমার মাথায় পড়বে সেটা ভাবতে পারিনি। যখন জানতে পারলাম আরশ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে।শান ভাইয়ার আব্বু ইমতিয়াজ আক্কেল আর আমার বাবা তাদের বন্ধুত্ব অটুট রাখতে তাদের দুই ছেলের জন্য আমাদের দুই বোনকে পছন্দ করেছে। মানে বড় জনের জন্য বড় মেয়ে আর ছোট জনের জন্য ছোট মেয়ে।

হঠাৎ ক্যাঁচক্যাঁচ করে দরজা খোলার আওয়াজ হতেই আমি আরেকটু জড়ো-সড়ো হয়ে বসলাম। এক হাত দিয়ে শাড়ী চেঁপে ধরলাম অন্যহাত দিয়ে নিজের নখ কামড়াতে লাগলাম। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আর আকাশ -পাতাল ভাবনা ভাবতে থাকলাম। ভাবনার মাঝখানে পাশে থাকা ফুলদানিটা ভাঙ্গার আওয়াজ কানে এলো। আমি তখনই সেদিকে তাকালাম। ফুলদানিটা দুইটুকরা হয়ে পড়ে আছে। শান ভাইয়া আমার দিকে তেড়ে এসে আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে আমাকে মেঝেতে ছুড়ে মারল।আমার হাতটা ভাঙা ফুলদানির কাঁচের সাথে লেগে কিছুটা কেঁটে গেল। শান ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললো,

“লিসেন তোমার জায়গাটা এখানেই যেখানে এখন তুমি আছো। কোনো দিনও আমার বেডে আসার চেষ্টাও করবে না। কারণ সেই অধিকারটা তুমি কখনোই পাবে না। তোমাকে শুধু বাবার কথা রাখতে বিয়ে করেছি। তোমাকে বিয়ে করেছি এজন্য তোমার দায়িত্ব আমি নেবো। এর বেশী আশা তুমি কখনো আমার থেকে করো না।তাছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। ”

শান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অসস্তি হলো। যতোই হোক হাজবেন্ড তো। কিন্তু মনের অনুভুতিটা পাত্তা না দিয়ে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

“শুনুন মিষ্টার আরিয়ান আরেফিন শান আপনার কি মনে হয় আমি আপনার কাছ থেকে কিছু আশা করি?আমিও শুধু পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিয়েটা করেছি।আর আমারও বয়ফ্রেন্ড আছে। ”

আমার কথা শুনে শান ভাইয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“গায়ে হলুদের দিন যে হাতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে ওইটাই না তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড। ”

শান ভাইয়া কথাটা বলতেই আমি চমকে উঠলাম” উনি জানল কেমনে। ”

“আই নো দ্যাট।
সেদিন কি প্লান করছিলে পালিয়ে যাওয়ার কথা? তাহলে কেন যাওনি। তুমিও চলে যেতে নিজের বোনের মতো তাহলে তোমার মতো একটা নাটকবাজ মেয়েকে আমায় বিয়ে করতো হতো না।”

শান ভাইয়ার কথাটা শুনে আমার ইগোতে লাগলো। কি ভাবেন উনি নিজেকে? আমি রেগে বললাম,

“এই শুভ কাজটা তো আপনিও করতে পারতেন।আমি নাহলে আমার কথা বলতে পারিনি বাবাকে আপনি বলে দিতে আপনার কথা। তখন বলেন নি কেন?এখন আমি খারাপ আর আপনি ভালো তাই না? আপনি যদি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে থাকতেন তাহলে আজকে আমাকেও আপনার মতো বদমেজাজি, খচ্চর,অহংকারী,অসহ্যকর লোককে বিয়ে করতে হতো না। ”

কথাগুলো বলেই আমি জিভ কাটলাম সর্বনাশ কার সামনে কি বলে দিলাম। মনের কথাগুলো মুখে আশাটা কি খুব জরুরী ছিল। এখন তোর কি হবে সোহা। আমি এমনই রাগ উঠলে আর সামনে পিছনের কোনো কথাই ভাবি না যা মনে আসে বলে দি।শান ভাইয়া আমার কাঁটা হাতটাই শক্ত করে ধরে আমাকে তার একদম কাছে টেনে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো ,

“কি বললে তুমি?তোমাদের দুই বোনের জন্য না কম সাফার করছি না তারপরও আমার সম্পর্কে এমন কথা বলার সাহস পাও কি করে?”

কাঁটা হাতের যন্ত্রণায় না চাইতেও মুখ থেকে “উফ” শব্দটা বের হয়েই গেল। আমার চোখ থেকে পানি গড়াতে দেখেই শান ভাইয়া একবার আমার হাতের দিকে তাকালো সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তাই উনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলো। আর আমার থেকে একটু দূরে সরে বললো,

“এই অসহ্যকর লোককেই এখন থেকে সারাজীবন তোমায় সহ্য করতে হবে তার জন্য তৈরী হয়ে যাও। ওয়েলকাম টু হেল মিস নো নো মিসেস সোহা। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। উনার কথা আমি বিন্দু মাত্রও অবাক হইনি কারণ এটা আমি আগেই জানতাম উনার সাথে বিয়ে হওয়া মানে আমার জীবন নরকের চেয়ে কিছু কম হবে না।

কিছুক্ষন পরেই আমার পায়ের কাছে একটা ফার্স্ট এইড বক্স এসে পড়ল,
“যেখানে কেটেছে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে নিও।আর আমি মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে দিয়েছি ইচ্ছা হলে বেডের ওপাশে এসে সুতে পারো। ”

কথাটা বলেই বেডের একপাশে শুয়ে পড়ল। আর আমি গিয়ে সোফায় বসলাম।হাতের দিকে একবার তাকালাম অনেকটা ক্ষত হয়ে গেছে তবে মনে মনে বললাম,

“লাগাবো না হাতে কোনো ব্যান্ডেজ। দেখি কি হয়। হনুমান একটা নিজে ব্যাথা দিয়ে এখন উনার ভালোবাসা উতলে পড়ছে। যতোসব আলগা পিরিত। ”
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে