একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৭

0
1987

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

নাস্তা খেয়েই মৌ আর রুশান বের হবে সিনথিয়া খালার বাসা থেকে।আজই ওরা ফিরবে।রুশান চেয়েছিলো একা আসতে কিন্তু শিরিন ফোন দিয়ে বলল মৌ কেও নিয়ে আসতে।তাই আর কি করার এখন মৌ কেও নিয়ে ফিরতে হবে।এমনিতেও এই মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে না!তারওপর কালরাতে কি জঘন্য কথা বলেছে।মনে পড়লে এখনো বমি আসতে নেয়।সেইজন্য আজ নাস্তাও খায় নি।সিনথিয়া বেগম আর শারমিন অনেক করে বলেছিলো কিন্তু রুশান নানারকম ছুতো ধরে খায় নি।

মৌ এর খাওয়া শেষে শারমিন আর সিনথিয়া খালার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে দাড়ালো।রুশান আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে খুব রেগে আছে তাই আজ আর রিকশা নেয় নি।শিক্ষা দেওয়ার জন্য হাটিয়ে নিব।ওর তো সমস্যা নেই কারণ এই রোডে সপ্তাহে তিনদিন আসা পড়ে।একটা এডমিশন কোচিংএ পড়ানোর জন্য।আর বেশিরভাগ সময়ই হেঁটে আসে।

মৌ ওর পাশাপাশি এস দাড়াতেই রুশান রুক্ষ দৃষ্টিতে একবার চেয়ে তারপর বলল,’আজকে রিকশা নেই হেঁটে যেতে হবে।’

‘আচ্ছা।’এটা বলেই মৌ হাঁটতে শুরু করলো।একটু পিছনে রুশানও আসছে।মৌ হাঁটতে হাঁটতেই ভাবছিলো রুশানকে সরি বলা উচিত।কাল রাতে রেগে গিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে ফেলেছে।কিন্তু সরি কিভাবে বলবে!এর আগে কাউকে সরি বলা হয় নি।তাই এক্সপিরিয়েন্সও নেই।কিন্তু বলা উচিত!ধূর একটা সরিই তো!বলেই দিই।এগুলো ভাবতে ভাবতেই মৌ পিছনে ফিরে রুশানের দিকে তাকালো।রুশানও ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো কিন্তু চোখে চোখ পড়তেই আকাশ,বাতাস,মাটি,পানির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মৌ একবুক সংকোচ নিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,’একটু শুনবেন?’

রুশান একটু এগিয়ে এসে দায়সারা ভাবে বলল,’কি?’

‘সরি।’একটানে এই শব্দটা বলে এখন মৌ এর শান্তি লাগছে।কিন্তু রুশান হালকা ভ্রু নাচিয়ে বলল,’কেনো?’

‘ওই যে কাল রাতে আপনাকে ওইসব বলেছি তাই।’

‘ওহ!আপনার আবার অনুশোচনাও আছে!’
রুশানের এহেন খোঁচা মূলক কথা শুনেও মৌ কিছু বলল না।কারণ কথায় কথা বাড়ে।শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।রুশান পুনরায় আবার বলল,’আচ্ছা আমিও সরি।আমারও ওসব বলা ঠিক হয় নি।আর আমরা এই টপিক এখানেই ক্লোজ করে দেই।কি বলেন?’

‘আপনিই কিন্তু আগে শুরু করছিলেন।শিহানকে কিন্তু আপনিই বলছিলেন।শুধু শিহান কেনো সবাইকেই বলে বেড়াচ্ছিলেন।’

‘আমি সবাইকে বলি নি।শুধু শিহান আর ভাবিকে বলছি।’

‘যাইহোক বলছেন তো!’

‘আচ্ছা এগেইন সরি বাট আমরা আর এই টপিক নিয়ে কোনো কথা বলবো না।’

‘আচ্ছা কিন্তু শিহান যে আমাকে হাগু খালামণি ডাকে সেটা?’

‘আমি ওকে আজকে মানা করে দিবো।ও আমার ভিষণ ভক্ত।যা বলি তাই করে।’

‘ওহ!তাহলে তো হলোই।’

‘হুম।আচ্ছা ফ্রেন্ড হতে পারি?’রুশান একবার বাজিয়ে দেখার জন্য বলল।নিশ্চিত না করে দিবে এটাই ওর বিশ্বাস।কিন্তু রুশানের বিশ্বাস ভেঙে গেলো মৌ এর উত্তরে।সে বলল,’হ্যাঁ হওয়া যায়।যদিও আপনি বড়ো তবুও সমস্যা নেই।’

‘আচ্ছা।তাহলে তুমি করে বলি?’এইবার রুশান মনে মনে ভাবছে মৌ হ্যাঁ বলবে কিন্তু এবার রুশানকে ভুল কর মৌ বলল,’নাহ!আপনিটাই ঠিক আছে।তুমিটা একটু বেশি হয়ে যায়।তবে আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।’

‘ঠিকাছে ।আচ্ছা তুমি কোন গ্রুপের?’

‘আর্টসের।’

‘ওহ!আমি সাইন্সের।এবার ইন্জিনিয়ারিং শেষবর্ষে আছি।তোমার এইম কি?’

‘মা’কে মুক্ত করা।’

রুশান একটু কৌতুহলী হয়ে বলল,’মানে?’

‘মানে হলো আমার মা একটা জেলখানায় পড়ে আছে।আমি ওনাকে মুক্ত করে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাই।এটাই আমার এইম।’

‘কিসের জেলখানা?কিসের মুক্তি?বুঝতে পারছি না আমি।’

‘শিরিন আপু বলে নি আপনাকে?’

‘না।ভাবি তো বলল তুমি এখানে কয়েকদিন থাকবে।সেইজন্য আনতে যেতে হবে।’

‘ওহ!আচ্ছা আমিই বলছি।আমার বাবা অনেক আগেই মারা যায়।তখন মামারা জোর করে মা’কে আবার বিয়ে দেয়।এবং আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মদখোর।প্রতিরাতে গাঁজা খেয়ে এসে মা’কে প্রচন্ড মারে।আর আমার মার তো আছেই।উটকো ঝামলা যে!একটু বড় হবার পর আমার সৎ চাচাতো ভাই রাশেদ।ওই যে আমাকে আনার সময় যাকে দেখলেন সে!তার আমার ওপর নজর পড়ে যায়।আমাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু আমি,মা কখনোই চাইতাম না।মায়ের প্রচেষ্টায় কষ্ট করে ইন্টার পর্যন্ত পড়েছি।তারপর ওদের অত্যাচারে আর পড়তে পারি নি।একবছর ড্রপ দিয়েছি।ভেবেছি পরিণতি খুব খারাপ আমার কিন্তু তিনদিন আগে মা বলল আমাকে পালিয়ে যেতে কারণ ওই রাশেদের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে।এবং শিগগিরই বিয়ে হবে তখন আর কেউই আটকাতে পারবো না তাই মা আমাকে পালিয়ে যেতে বললেন।এরপর তো আপনি জানেনই।’
কথা শেষ করে মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রুশান সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,’তোমার এখন খুব ভালো করে পড়া উচিত।নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য।’

‘হ্যাঁ কিন্তু আমি কোনো দিকদিশা পাচ্ছি না।এডমিশনের কোনো বইও নেই আমার কাছে।শুধু বোর্ড বইগুলো এনেছি।কোনো কোচিং এ করতে পারছি না।আর মাত্র দুইমাস বাকি।আমি ভিষণ হতাশ!জানি না পারবো কি না!’

‘পারবে!ধৈর্য ধরো।আমি তোমার এডমিশনের বইয়ের ব্যবস্থা করে দিবো আর আমি যে ভর্তিকোচিং এ পড়াই সেখানে আর্টসও পড়ানোও হয়।কাল নিয়ে যাবো আমি।এখন শুধু তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।যে স্বপ্ন দেখেছো সেটা বাস্তব করতে হবে।নিজের মা’কে মুক্ত করতে হবে।পারবে?’

মৌ রুশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’পারবো আমি।’

‘গুড।আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই তোমার এডমিশনের কিছু বই কালেক্ট করে দিবো।এর আগে তুমি মেইন বইগুলো পড়ে নিও।’

‘আচ্ছা।’
বলেই মৌ কেঁদে ফেললো।রুশান মৌ এর চোখের পানি আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,’কেঁদো না।এই পানি গুলো জমিয়ে রাখো।যেদিন সাফল্য আসবে সেদিন মন ভরে কাঁদবে।’

মৌ চোখের পানি মুছে ফেললো দুহাত দিয়ে।তারপর ভরা গলায় বলল,’আমি সত্যিই কখনো ভাবি নি আমি এতো সাপোর্ট পাবো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’

‘ধন্যবাদে আমার পোষাবে না।’

‘তাহলে কি দিয়ে পোষাবে?’

‘যেদিন তুমি সফল হবে আমি সেদিনই চাইবো।ওটা তোলা রইলো’

‘আচ্ছা।’

বাসায় পৌঁছে মৌ রুশানের কথামতো বোর্ডবইগুলো নিয়ে বসলো।আর রুশান নাস্তা খেয়ে টিউশনি করাতে গেলো।এখন নাস্তা খেতে সমস্যা হয় নি।সব তো মিটেই গেলো।তবে ভালো লাগছে এমন একটা মেয়ের উপকার করতে পেরে।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শিহানকে দেখলো মৌ এর রুমে যেতে তাই ওকে ডাক দিলো।ছোট চাচার ডাক শুনে শিহান সোজা চাচার কাছে চলে এলো।রুশান শিহানের গাল টেনে বলল,’কোথায় যাচ্ছো শিহান?’

‘হাগু খালামণির রুমে।’

‘না বাবা উনি তোমার হাগু খালামণি না।উনি তোমার মিষ্টি খালামণি।’

‘কি বলো তো?’

‘মিষ্টি খালামণি।’

‘হ্যাঁ।এখন থেকে এটাই বলবে।ওক চাচ্চু?’

‘ওকে।’
তারপর শিহান মৌ এর ঘরে গেলো আর রুশান বেরিয়ে গেলো টিউশনি করাতে।
————
এদিকে রুমান বাসায় সবাইকে ইফরার কতা জানিয়েছে।সবাই রাজি হয়েছে শুধু রুহান বাদে।রুহান বলেছে মেয়ে দেখে তারপর বলবে। আজ সন্ধ্যায় ইফরাকে দেখতে ওরা ইফরাদের বাড়ি যাবে।

মেয়েকে দেখতো আসবে শুনে ইফরার মাও মেহমান সমাদর করার জন্য তোড়জোড় শুরু করলেন।ইফরা বারবার তাগাদা দিতে লাগলেন পার্লারে যাওয়ার জন্য।কিন্তু ইফরা এ নিয়ে বেশ বিরক্ত।কেনো দেখতো আসলে পার্লারে যেতে হবে।এমনে পছন্দ হলে হবে না হালে নাই।এতো সঙ সাজার কি দরকার!

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে