এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-১৮+১৯

0
480

#এই_ভালো_এই_খারাপ(১৮)
#Jannat_prema

ড্রয়িং রুমে, ভোর, আদিল, নায়েলি বেগম ও আলিফা সবাই মিলে গল্প করছে। পুরুষরা কেউ এখনো আসেনি। ভোর আড়চোখে একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো৷ রাত দশটা বেজে আসলো বলে। অথচ আবদ্ধ এখনো আসছে না। কথার এক ফাঁকে নায়েলি বেগম বলে উঠলো,

” হ্যাঁ রে ভোর! তোরা কি দুইজনে মানে তুই আর আবদ্ধ এখনো তুই করে কথা বলিস?

সবাই উৎসুক হয়ে তাকালো। ভোর লাজুক হাসলো। কপোলে হালকা লাল আভা ফুটে আছে। পাশ থেকে আলিফা বললো,

” বলো না ভোর। ”

ভোর কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পিছনে থেকে কেউ ব’লে উঠলো,

” সে তো তুমি করে বলতে বলতে মুখের ফেনা তুলে ফেলছে মা। তুই কি আর মুখ দিয়ে বের হবে। ”

সবাই পিছনে তাকালো। আবদ্ধ শার্টের উপরের বোতাম দুটো খুলে এগিয়ে আসলো৷ লাজুকলতার ন্যায় দাড়িয়ে থাকা ভোরের দিকে তাকালো। নায়েলি বেগম বললেন,

” ঠিকই তো আছে স্বামিকে তুই করে বলে নাকি৷ তুই ভোরকে তুই তোকারি করে কথা বলিস ? ”

আবদ্ধ সবার সামনে ভোরের হাত ধরে উপরে যেতে যেতে মায়ের প্রশ্নের জবাব হিসেবে বললো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ! ঠিকই শিখিয়েছ। তবে তোমার বউমাকে এতো তুমি করে বলতে পারবো না। এখন ওকে আমার লাগবে। তাই নিয়ে গেলাম৷ তোমরা আড্ডা দাও। ”

আবদ্ধর কাজে ভোরের সারা শরীরে যেনো লজ্জারা ঘিরে ধরলো৷ পিছনে থাকা আলিফা খিলখিল করে হেসে উঠলে তাতে যেনো দ্বিগুণ লজ্জা পেলো ভোর৷ এভাবে বলার কি আছে! নির্লজ্জ কোথাকার! তার বুঝি লজ্জা লাগে না৷ মা এখন কি মনে করবে? ভোর আবদ্ধর উপর খানিকটা বিরক্ত হলো বলে। রুমে আসতেই ভোরের হাত ছেড়ে দরজা লাগিয়ে পিছনে তাকাতেই কপাল কুঁচকালো। ভোর কোমড়ে দু হাত রেখে তার দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে আছে। আবদ্ধ মুচকি হেসে ভোরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের প্রসস্ত বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে আবদ্ধ বললো,

” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? তোর এমন নজরে আমার সব যে এলোমেলো হয়ে যায়। ”

ভিতরে ভিতরে লজ্জা পেলেও উপরে তা প্রকাশ করলো না ভোর। আবদ্ধর বুকের উপর দু’হাতে রেখে মিছে রাগ দেখিয়ে বললো,

” ঢং! নিচে সবার সামনে লজ্জা দিয়ে কি মজা পেলে?”

আবদ্ধ ভোরের কথায় বললো,

” তোর এতো লজ্জা কোথা থেকে আসে বলতো? তোর লজ্জাতো ভাংতে হবে দেখছি। কি আজকে রাতেই লজ্জা ভাঙ্গার টেকনিক শুরু করে দেয়? ”

অতি লজ্জায় কান গরম হয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে যেনো৷ কপোলের লাল আভাটুকু ফর্সা চেহারায় গাঢ় হলো। কান লাল হয়ে আছে৷ আবদ্ধর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো৷ আবদ্ধ ছাড়লো না। কোমড় জড়িয়ে ধরা হাত দুটোর বাঁধন যেনো শক্ত হলো। এমন পেশিবহুল হাতের সাথে ভোরের চিকন চাকন হাত কিছুতেই পেরে উঠবে না। আবদ্ধ হাসলো ভোরের দিকে তাকিয়ে। নিজের বুকের সাথে ভোরের মাথাটা মিশিয়ে ব’লে উঠলো,

” আমার সকল ক্লান্তির অবসান তুই। আমার সকল অশান্তির প্রশান্তি তুই। আমার সকল চিন্তার সমাধান তুই। এই যে লজ্জায় তোর গালে লাল আভা ফুটে উঠেছে সেগুলো আমার নামে হোক। ভালোবাসি আমার হৃদয়ের রানি। ”

ভোর মুগ্ধ হয়ে শুনলো আবদ্ধর বলা প্রতিটা শব্দ। রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে গেলো ভালোলাগার অনুভুতি। আবদ্ধর বুকে মাথা রেখে আরামে চোখ বুঝলো৷ আহা! স্বামীর বক্ষে এতো শান্তি কেনো। ভোর কিছু বললো না৷ এভাবেই দুজনের সন্নিকটে পার হলো কিছুক্ষণ। ভোর মাথা উঠিয়ে আবদ্ধর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

” আজকে কেমন ক্লান্ত লাগছে তোমাকে! ”

আবদ্ধ ভোরকে ছেড়ে বিছানায় বসলো। ভোর ফ্যানের ভোল্টেজ বাড়িয়ে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। আবদ্ধ পানিটুকু খেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। ভোর ফের বললো,

” বললে না যে, কিছু কি হয়েছে আজকে? ”

চট করে আবদ্ধর প্রেমার কথা মনে পড়ে গেলো। বিরক্তিতে ললাটে ভাঁজ ফেলে বললো,

” আজকে জুনিয়র কয়েকটা ডাক্তার এসেছিলো। তাদের মধ্যে একটা মেয়ে পুরোটা সময় কেমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো। এতো বিরক্ত লেগেছিলো, ইচ্ছে করছিলো গালে এক ঘা লাগিয়ে দেই। ”

“মেয়েটার নাম কি। ”

আবদ্ধ ভোরের প্রশ্নের উত্তর দিলো না। ভোরকে হেচকা টানে নিজের পাশে বসিয়ে নিজে ভোরের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো৷ ভোরের হাতটা নিজের চুলের উপর রেখে বললো,

” এতো জানা লাগবে না৷ এখন মাথার চুলটা একটু টেনে দে। ”

ভোর চুল টানছে ঠিক তবে দমলো না। ইচ্ছে হচ্ছে ওই মেয়েটাকে গিয়ে দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে আসতে৷ কত বড় অসভ্য তার বরের দিকে নজর দেয়। যদি কখোনো সামনে পায় তাহলে সে কি করবে নিজেও জানে না। ভোর রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,

” হ্যাঁ!হ্যাঁ! এখন তো আমার জানার দরকার নেই। তুমি জানলেই হবে৷ মেয়েটা নিশ্চয় খুব সুন্দর, স্মার্ট? লাইন মারার ধান্দায় আছো! ”

আবদ্ধ পুরো বেকুব বনে গেলো৷ এই মেয়েটা কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে। একটু আগেই তো পতি সেবা করলো৷ এর মাঝেই চটে গেলো। ভোরের এই ভালো এই খারাপ স্বভাবটা আবদ্ধ এখনো বুঝে উঠতে পারে না। আবদ্ধ ভোরের হাত টেনে চুমু খেয়ে বলে,

” কে সুন্দর আর কে অসুন্দর আমার কাছে সেটা ম্যাটার করে না। আমার কাছে আমার ভোরপাখিই সব৷ যে আমার হৃদ স্পন্দনে মিশে আছে। আমার হৃদয়ের প্রতিটা বিট তোর নামে। সেখানে তুই ব্যাতিত না কেউ হস্তক্ষেপ করতে পেরেছে আর না পারবে৷ তাই অযথা এতো কিছু না ভেবে নিজের জামাইর উপর ধ্যান দে। ”

ভোর প্রশান্তির শ্বাস ফেললো। আবদ্ধ আবারো প্রমাণ করে দিলো সে ভোরকে কতটা ভালোবাসে। ভোর হাসলো। তৃপ্তির হাসি, কিছু পাওয়ার আনন্দ যেনো।

.

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত একটি শহর হলো চট্টগ্রাম। যেখানে পাহাড় সহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মণ্ডিত একটা শহর। ভোর মুগ্ধ হয়ে রাতের আধারে চাঁদের আলোতে তাকিয়ে আছে অদূরে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলোর দিকে। আবদ্ধর বারান্দা থেকে পাহাড়গুলো একদম পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়। আবদ্ধ ফ্রেশ হয়ে রুমে ভোরকে খুজলো পেলো না। বেলকনিতে তাকালো৷ ভোরের সবুজ রঙের ওড়নাটা উড়ছে৷ হাতের তোয়ালেটা রেখে এগিয়ে গেলো ভোরের নিকট। বাতাসের তাড়নায় ভোরের খোলা চুলগুলো উড়ছে । চাঁদের কিরণটা সোজা ভোরের মুখে এসে যেনো পড়েছে। আবদ্ধ সম্মোহনী চাহনীতে ভোরকে পিছন থেকে আগলে ধরলো। ভোরের ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে ভোরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো পাহাড়ের দিকে৷ ভোর কেঁপে উঠলো। ঘাড় বাঁকিয়ে আবদ্ধকে এক পলক দেখতে চাইলো, পারলো না। আবদ্ধর থুতনি ঘাড়ের কাছে থাকায়। হুট করে আবদ্ধ ব’লে উঠলো,

” চাঁদের কিরণে জ্বলজ্বল করা মুখটা যেনো দ্বিগুণ মায়াবী দেখায়৷
সেখানে থমকে যাই আমি, থমকে যায় আমার হৃদয়।
সারাজীবন চেয়ে থাকার বাসনা জাগে অন্তস্থলে,
অথচ সেই মায়াবী রমণী জানতে পারলো না কেউ একজন তাকে চোখে হারাচ্ছে। ”

ভোর বিমোহিত নেত্রে ঘুড়ে দাড়ালো আবদ্ধর দিকে৷ বুকটা ধ্বক করে উঠলো ভোরের। কি ধারালো সে চাহনি, কি প্রখর নেশালো দৃষ্টি। কেঁপে উঠলো ভোর৷ তিরতির করে কেঁপে উঠা অধর জোড়া নেড়ে ভোর বলে উঠলো,

” এএভাবে চচেয়ে আছো কেনো? ”

আবদ্ধ তাকালো ভোরের তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে। মাঝের এক ইঞ্চি দূরত্বটা ঘুচিয়ে মিশে গেলো ভোরের সাথে৷ কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

” আমি তোকে চাই ভোর৷ সম্পূর্ণ নিজের করে। তোর ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই। ভালোবাসবি আমাকে? ”

ভোর চোখ বন্ধ করে তপ্ত শ্বাস ফেললো। ক্রমশ নিশ্বাস ভারি ঠেকছে দু’জনার। আবদ্ধর এমন আকুতিতে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷ কন্ঠস্বর যেনো রোধ হয়ে আছে৷ সেও চায় তাদের সম্পর্কটা পূর্নতা পাক৷ তবে তার ভিষণ লজ্জা লাগছে। সায় জানানোর জন্য আবদ্ধর পিঠ আগলে জড়িয়ে ধরে মাথা ঠেকালো বুকে। চোখ বন্ধ করে হালকা করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই আবদ্ধ চট করে ভোরকে পাজাঁ কোলে তুলে রুমে আসতে আসতে আসতে বললো,

” আজকে তোকে লজ্জা ভাঙ্গার টেকনিক শিখিয়ে দিবো। কি বলিস? ”

” যাহ! বেয়াদব। ”

লজ্জায় ভোর নেতিয়ে গেছে। চোখ তুলতেও যেনো কুন্ঠা বোধ করছে৷ আবদ্ধ হাসলো। চট করে ভোরের লজ্জায় রাঙা গালে চুমু খেয়ে বললো,

” আমার চেরি ফল। ”

.

সকালের আজকে কোনো কিছুতেই মন বসছে না৷ বারবার খালি আদিলের কথা মনে পড়ছে৷ নিজের বাম হাতের দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে আদিলের ছোঁয়া এখনো লেগে আছে। ছেলেটা তখন কিভাবে অধিকার দেখিয়ে বললো, শী ইজ মা’ই গার্লফ্রেন্ড। অনলি মা’ইন।

সকাল নিজ অজান্তেই হেসে ফেললো৷ পাশে থাকা শ্রাবন্তি বেগম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,

” নিজে নিজে হাসছিস কেনো? আজকে কিছু করেছিস ভার্সিটিতে? ”

থতমত খেয়ে মায়ের দিকে তাকালো সকাল৷ ভুলেই গেছিলো মায়ের সামনে বসে আছে। ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,

” তুমি এমন করে বলতে পারলে? আমি খুবই ভদ্র মেয়ে তোমার। ”

” জানি আমি। তুই কত ভালো মেয়ে।”

সকাল ঠোঁট উল্টালো৷ মা এভাবে তাকে বলতে পারলো৷ সকাল রাগ করে ড্রয়িং রুম থেকে উঠে রুমে আসতেই হাতের মুঠোফোন বেজে উঠল। ‘ ঝগড়ুটে লোক ‘ নামটা দেখে হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো৷ লোকটা হঠাৎ ফোন দিলো কেনো তাকে। সেদিনের মতো অপদস্ত করতে কল দেয়নি তো?

চলবে!

#এই_ভালো_এই_খারাপ (১৯)
#Jannat_prema

” আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন? ”

আদিল কপাল বাকিয়ে ফোনের দিকে তাকালো৷ ঠিকই তো আছে সকালকেই তো কল দিয়েছে সে। তার মানে মেয়েটা তাকে না চিনার ভাণ করছে। আদিল চুলগুলোকে পিছনের দিকে ঠেলে ট্রাউজারের পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

” তোমার অনলি ওয়ান বয়ফ্রেন্ড বলছি। ”

সকাল বিছানায় আরাম করে বসলো৷ আদিলের কথায় আজকে রাগ না করে মুচকি হাসলো। আদিলকে না চিনার আবারো ভাণ করে বললো,

” তো কত নাম্বার বয়ফ্রেন্ড? তিন নাকি চার নাম্বার? ”

আদিল টাস্কি খেলো সকালের কথায়। মেয়েটা কি তার সাথে মশকরা করছে! অজানা কারণেই সকালের কথায় রাগ হলো আদিলের। জোড়ে শ্বাস ফেলে ব’লে উঠলো,

” তোমার লাইফে জাস্ট একটাই প্রেমিক পুরুষ আছে। আর সেই প্রেমিকটা হলো মিস্টার নুবায়ের আদিল। ”

সকাল অবাক হলো আদিলের কথায়। ছেলেটা,বিষয়টাকে এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে কল্পনায় আনেনি। সকাল আদিলকে বলে উঠলো,

” ওহ হ্যালো! মিস্টার নুবায়ের আদিল, এখানে এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। আমাকে জাস্ট একটা টাস্ক দেওয়া হয়েছিলো। আমি শুধু সেটাই করেছি। আর আপনি কি না সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন। ”

আদিল কানে মোবাইল ফোনটা নিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

” এখন তো বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলবেই৷ তুমি কি মনে করেছো, আমি কিছু বুঝি না? সেই ভাইয়ার বিয়ের দিন থেকে দেখে আসছি তুমি আড় চোখে কত বার আমার দিকে তাকিয়েছো। তোমার ওমন দৃষ্টির মানে আমি বুঝিনি ভাবছো? আর আজকে তো হাতেনাতে সুযোগ পেয়ে আমাকে প্রপোজ করে বসলে। তোমার মতলব তো সুবিধাজনক নয় সকাল। তাই বলছি সব কিছু সুবিধাজনক করতে হলে আমার উপর ধ্যান দাও। ”

ওষ্ঠ জোড়া আলাদা হয়ে গেলো সকালের। আদিলের বলা একেকটি শব্দ যেনো তার মাথায় তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে। কথাগুলোকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় এই ছেলে। কিভাবে কথা প্যাচঁনো যায় আদিলর সাথে থাকলেই শিখে যেতো।

” আমি কখোনো আপনাকে আড় চোখে দেখিনি।আপনাকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখার মতোও কিছু নেই। আর সকাল কোনো ছেলের দিকে কখোনো আড় চোখে তাকায়ও না৷ ”

কথাটা বলে শান্ত হলো সকাল৷ আদিল হাসলো, যেনো কিছু একটা পাওয়ার আশায়। ওই অবস্থাতেই বলে উঠলো,

” এই যে এখন থেকে আগামী যত দিন, রাত আসবে তুমি ভাববে। না চাইতেও তোমার ভাবনায় আমি থাকবো, থাকবে আমার বিচরণ, থাকবে আমার অদৃশ্য পদধূলি আমার অস্তিত্ব! আমাকে ফাঁসিয়েছো যেমন, তোমাকেও ফাঁসতে হবে। আদিল নামক এক মানবের মায়ায়। ”

কল কাটার টুট টুট আওয়াজ হতেই থ বনে বসে থাকা সকাল কান থেকে ফোন নামালো৷ আদিল কি বললো এসব? কেনো বললো? নিজের বুকের বাম পাশে হাত রাখলো সকাল। ধুক – ধুক আওয়াজটা স্বাভাবিক থেকে একটু বেশি জোরেই হচ্ছে। নিশ্বাসটা হালকা ভারি ঠেকছে। তাহলে কি সকাল খুব শীঘ্রই আদিলের বলা সেই মায়া নামক অনুভূতিতে ফাঁসতে যাচ্ছে?

.

প্রেমার রুমে এসে ভ্রু কুচকালো নাঈমা৷ বিছানার উপর পা দুটে ক্রস স্টাইলে রেখে শুয়ে ফোন টিপছে আর হাসছে প্রেমা। মেয়েটা কি দেখে এভাবে মুচকি মুচকি হাসছে। নাইমা পা টিপে টিপে প্রেমার কাছে এসে ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো। ফোনে জ্বলজ্বল করছে আবদ্ধর সাদা শার্ট পড়া একটা ছবি। প্রেমা ততক্ষণে বিরক্ত নিয়ে নাঈমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিয়েছে। চোখে মুুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে বললো,

” এভাবে ফোন টান দিয়ে নেওয়ার অভ্যাসটা কবে যাবে তোর, নামু? ”

নাঈমা প্রেমার কথায় ধ্যান দিলো না। নাঈমা বিস্মিত হয়ে প্রেমার পাশে বসে বললো,

” তুই আবদ্ধ স্যারের ছবি পেলি কই? ”

দুই অধর চওড়া করে হাসলো প্রেমা। নাঈমা দেখলো সেই হাসি। কি সুন্দর টোল পড়া হাসি মেয়েটার। অথচ মেয়েটা ভুল পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রেমা আবদ্ধর ছবিটা জুম করে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাঈমার উদ্দেশ্যে বললো,

” তুই আসলেই অনেকটা বোকা হয়ে আছিস নামু। অবশ্যই আবদ্ধ স্যারের ছবিটা আমি উনার ফেসবুক আইডিতে গিয়ে পেয়েছি। নামু দেখ আবদ্ধ স্যারের না না তুই দেখা লাগবে না৷ আমিই দেখি উনার ধারালো দুটো চোখ৷ যেই দুটো চোখে তাকালেই খালি মুগ্ধতা খুজে পাওয়া যায়। উনার ওই দুটি চোখের মায়ায় আমি আটকে যাই, হারিয়ে যাই। বুঝলি? ”

নাঈমা হা করে প্রেমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে এতো অনুভূতি পাচ্ছে কই? যে ভাবে আবদ্ধ স্যারের প্রতি আসক্ত হচ্ছে, যদি জানে আবদ্ধ স্যার বিবাহিত তখন? তখন নিশ্চয় মেয়েটা কষ্ট পাবে। প্রবল ভাবে হৃদয় ভাঙ্গবে। নাঈমার গলা ধরে আসছে৷ প্রেমার কষ্টের কথা ভাবলে তার কান্না পাচ্ছে। নাঈমা নিজেকে বুঝালো, প্রেমার অনুভূতি প্রবল আকার ধারণ করার আগেই ওকে বলতে হবে৷ আবদ্ধ স্যারের লাইফে একজন আছে। তিনি বিবাহিত। নাঈমা মনে মনে কথা সাজালো৷ নাঈমার সাজানো গোছানো কথাগুলো বলতে দিলো না প্রেমা। তার আগেই নাঈমার হাত ধরে টেনে নিচে যেতে যেতে ,

” ওহ নো! ভুলেই গিয়েছিলাম পাপা ডেকেছিলো। বললো কথা বলবে। এতোক্ষণে নিশ্চয় পাপা এসে গেছে। রাত তো আর কম হলো না। ”

” আমার কথাটুকু তো শুন! ”

” পরে শুনবো। এখন নিচে চল। ”

নাঈমা অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে আছে প্রেমার দিকে। আজকেও কথাটুকু বলা হলো না তার।

.

শরমে চোখ মুখ কুঁচকে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছে ভোর৷ আবদ্ধ এখনো তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে৷ এতো সকাল সকাল ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করায় ভোর খানিকটা রেগে ছিলো আবদ্ধর উপর। গোসল করে বের হয়ে এসে পাতলা কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ানো ছেলেটার দিকে তাকালো৷ আবদ্ধ চুলে চিরুনি চালিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে হেয়ার ড্রায়ারটা নেওয়ার সময় ভোর আচমকা বলে উঠলো,

” তোমার জন্য এখন আমাকে এতো সকাল সকাল ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হয়েছে। ”

হেয়ার ড্রায়ারটা নিয়ে আবদ্ধ ভোরের দিকে তাকালো৷ গলা অব্দি কম্বল গায়ে দিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে ভোর।

” রাতে তো ঠিকই আমার ভালোবাসায় উতলা হয়েছিলি৷ ভালোবাসা গ্রহণ করার আগে মনে ছিলো না, সকালে তোকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে?”

আবদ্ধর লাগামহীন কথাটা শ্রবণ হতেই লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠলো ভোরের। শরমে চোখ মুখ কুঁচকে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো৷

” কম্বলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আয়। তুই তো আবার লজ্জাবতী। আমি চাই না আপি বা মা তোর ভিজা চুল দেখে লুকিয়ে হাসুক। ”

ভোর কম্বল সরিয়ে আবদ্ধর দিকে পিঠ দিয়ে বসলো। বলে উঠলো,

” হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানোর কি দরকার? এমনিতেই শুকিয়ে যেতো। ”

ভোরের চুলগুলো যত্ন করে শুকোতে শুকোতে আবদ্ধ বললো,

” তোর সকল, লজ্জা, আনন্দ, দূঃখ, বিষন্ন, রাগ সব কিছু দেখার অধিকার শুধু আমার। আমি মন ভোরে দেখবো৷ তুই যেনো ভিজা চুল নিয়ে সবার সামনে লজ্জা না পাস তাই ভিজা চুলগুলো শুকিয়ে দিচ্ছি। ”

আবদ্ধর কথায় ভোর প্রশান্তির হাসি হাসলো। ছেলেটা এতো ভালোবাসে কেনো তাকে? এ ভালোবাসাটা চিরস্থায়ী হবে তো? ফাটল ধরবে না তো কখোনো?

আবদ্ধ ঘুমে বিভোর। ভোরের চোখে আর ঘুম আসছে না৷ একবার ঘুম ভাঙ্গলে কি আর সহজে দু চোখের পাতায় ঘুম আসে? ভোর একবার ভাবলো আবদ্ধকে বিরক্ত করবে৷ পরে সেটা বাতিল করে আবদ্ধর বুকের মাঝে মুখ গুজে শুয়ে ছিলো৷ আবদ্ধ ভোরেকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমের মাঝেই কপালে চুমু খেয়ে আবারও ঘুমালো। আবদ্ধের কাজে হাসলো। বালিশ হাতড়িয়ে নিজের মোবাইল ফোনটা নিয়ে হতাশ হলো ভোর। ভাবলো একটু ভিডিও দেখে সময় কাটাবে। ছয়টা বাজলে না হয় উঠে যাবে। কিন্তু ফোনে তো চার্জই নেই। পরক্ষণেই মাথায় আসলো আবদ্ধর মোবাইল ফোন থেকে দেখবে। যেই ভাবা সেই কাজ৷ কিন্তু আবদ্ধের ফোনে যে এমন কিছু দেখবে আশা করেনি।

রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে ভোর। বারবার রিপিট করে লিখাটা দু ঠোঁট নেড়ে আওড়াতে লাগলো,

” আপনার ওই দুই চোখের মায়ায় হারিয়ে যাচ্ছি। ডুবে যাচ্ছি এক অতল সাগরের গহীনে। যেখান থেকে আপনি নামক হৃদয় হরণ পুরুষটা আমার এই নিষ্পাপ মনটাকে উদ্ধার করতে পারে। ”

আবদ্ধর সাদা শার্ট পড়া ছবিটাতে কেউ একজন কমেন্ট করেছে৷ অবশ্যই এটা একটা মেয়ের কমেন্ট। পুরো অন্তস্তল শুদ্ধ জ্বলে উঠলো ভোরের। রাগে নাক লাল হয়ে আছে। ভোর মেয়েটার আইডির নাম চেক করলো। নামটা কয়েকবার উচ্চারণ করলো। মোবাইলটা পাশে আছাড় মেরে দাঁত খিঁচে বললো,

” জান্নাত প্রেমা তুমি যেই হওনা কেনো! তোমার এমন প্রেমময় কবিতাটা বলার জন্য আমি তোমার ঠোঁটটা বাকিয়ে দিতাম। ”

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে