এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১১

0
2107

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

পুরো ঘরের জিনিসগুলো উল্টাপাল্টা হয়ে আছে।হাতের ফোনটাও আছড়ে ভেঙে ফেলেছে প্রণয়।রাগে মাথার রগগুলো দপদপ করছে।এখন মাথাটা ঠান্ডা করা প্রয়োজন।প্রণয় টাওয়াল আর একটা থ্রি কোয়ার্টার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
———————-
অনেক্ক্ষণ ধরে প্রণয়ের কল আর না আসায় অরুণী ভাবলো হয়তো বিরক্ত হয়ে ফোন দিচ্ছে না।না দেওয়াই ভালো।অরুণী ফোনটা হাতে নিয়ে রুহিকে কল দিলো।রুহি কল রিসিভ করতেই বলল”কি করিস?”

“চা খাই।তুই?”

“পড়তে বসেছিলাম।অনেক্ক্ষণ পড়ে তোকে কল করলাম।শোন কাল সকাল ৯.০০ টার সময় ভার্সিটিতে চলে আসিস।তারপর তোর এপ্লাইটা করে দিবো।”

“আচ্ছা।আসবো।”

“আর শোন একটা খুশীর খবর আছে।”

“কি?”

“গেস কর আগে।”

রুহি একটু ভেবে বলল”কোথাও ঘুরতে যাচ্ছিস?”

“না।”

“তাহলে?”

“আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।কাল বোধহয় দেখতে আসবে।”

“বাহ!ছেলের ফটো দে।”

“আমি নিজেই তো দেখি নাই।আমার কাছে ফটোও নাই।কালকে আসুক তখন দেখিস।শোন আমরা ভার্সিটিতে গিয়ে এপ্লাইটা করেই চলে আসবো।”

“আচ্ছা।আমি কিন্তু অনেক এক্সাইটেড।”রুহি হেসে বলল।

রুহির কথা শুনে অরুণীও হাসলো।তারপর দুজনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
——————
মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে অনেক্ক্ষণ জেরা করার পরও কোনো ক্লু পাওয়া গেলো না।আর মেয়েটার তেমন কোনো শত্রুও নেই।তবে মেয়েটাকে মারার উদ্দেশ্য কি?

প্রিয়ম এগুলো ভাবতে ভাবতেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।আজকে একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরছে সে।একটু আগে পায়েল চৌধুরী বলেছেন আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে।মায়ের কথা রাখতেই আজ তাড়াতাড়ি ফেরা।বাসায় পৌঁছে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখলো বাবা মা একসাথে বসে তারজন্য অপেক্ষা করছে।প্রিয়ম মুচকি হেসে তাদের সামনের সোফায় বসে বলল” কি ব্যাপার রাহাত চৌধুরী আর পায়েল চৌধুরী একসাথে বসে কি ভাবছে?”

প্রিয়মের কথা শুনে ওর মা বসা থেকে উঠে গিয়ে প্রিয়মের কান মলে বলল”আমরা তোর বিয়ের কথা ভাবছি।কাল মেয়ে দেখতে যাবো।”

“ধূর মা।এখনি বিয়ে করবো না।”

“কেনো প্রিয়ম?কি সমস্যা বিয়ে করতে?” রাহাত চৌধুরী বললেন।

“আসলে বাবা এতো তাড়াতাড়ি প্যারা খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

প্রিয়মের কথা শুনে রাহাত চৌধুরী ঠোঁট টিপে হাসলো।আর পায়েল চৌধুরী প্রিয়মের দিকে চোখ পাকিয়ে বলল”বাপ ছেলে দুটোই বদ।যা আমি আর কিছু বলবো না।”
এটা বলে পায়েল চৌধুরী নিজের রুমের দিকে যেতে নিলেই প্রিয়ম দ্রুত এসে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল”ও মাই ডার্লিং রাগ করে না।আচ্ছা ঠিকাছে কালকে মেয়ে দেখতে যাবো।এবার খুশী?”

পায়েল চৌধুরী আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলেন না।ছেলের দিকে ঘুরে কপালে একটা চুমু দিলো।মায়ের আর ছেলের কান্ড দেখে রাহাত চৌধুরী বললেন”মা ছেলে একরকম। দুটোই আহ্লাদী।”

পায়েল চৌধুরী ভাব নিয়ে বলল”তো কি বাপ ছেলে একরকম হবে নাকি?”

“হ্যাঁ সেইজন্যই আমার দল ভারী করতে হবে।আর কয়েকদিনের মধ্যে বউ আসলে আমার দলও ভারী হবে।” রাহাত চৌধুরী বললেন।

“দেখা যাবে।” এটা বলে পায়েল চৌধুরী রাহাত চৌধুরীকে ভেংচি কাটলেন।
আর প্রিয়ম নিশ্চুপে বাবা মায়ের খুনসুটি দেখতে লাগলো।
————————
রুহি সকালে নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির জন্য।ভার্সিটিতে পৌঁছে রুহি অরুণীকে কল দিতেই ও বলল পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে।রুহি ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।অরুণী আসতে আসতে এখানেই অপেক্ষা করবে।

প্রণয় সারারাত ঘুমায় নি।মেজাজ প্রচুর গরম হয়ে রয়েছে।রাগে মাথার রগ দপদপ করছে।কিন্তু তবুও আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।এতোদিন কিছু বলে নি তাই যাচ্ছেতাই করবে নাকি।কতো বড়ো সাহস মুখের ওপর বলে দেয় যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।এতো সহজ!আমিও দেখি কি করে ও অন্য কাউকে বিয়ে করে।

এগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতেই প্রণয় ভার্সিটিতে ঢুকলো।ভার্সিটিতে ঢুকে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।এক কাপ কফি খেতে খেতে অরুণীর অপেক্ষা করতে লাগলো।হঠাৎ সামনের টেবিলে রুহিকে দেখে মনে হলো মেয়েটাকে আগে কোথাও মনে হয় দেখেছে।কিন্তু কোথায়?মনে পড়ছে না।

কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়লো এই মেয়েটাকেই অরুণীর সাথে দেখেছে সে।মেয়েটা এখানে কি করে?কারো জন্য কি অপেক্ষা করছে।আচ্ছা ওর কাছে অরুণীর বিষয়ে কিছু জিগ্যেস করলে ও কি কিছু বলবে?এগুলো ভাবতে ভাবতে প্রণয় গিয়ে রুহির টেবিলের সামনে দাড়িয়ে বলল”এক্সকিউজ মি মিস।আমি কি এখানে বসতে পারি।”

রুহি প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলল”জ্বি বসুন।”

প্রণয় অনুমতি পেয়ে বসে পড়লো।তারপর কিছুটা সংকোচ নিয়ে জিগ্যেস করলো”আপনি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?”

“জ্বি,আমার বান্ধবীর জন্য।”

রুহির কথা শুনে প্রণয় মনে মনে বলল’হয়তো অরুণীর জন্য অপেক্ষা করছে।আচ্ছা জিগ্যেস করে ফেলি।’

“ও আচ্ছা। আপনি কি অরুণীর জন্য অপেক্ষা করছেন?”

“জ্বী কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?”

“মনে হলো তাই আর কি।আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?”

“জ্বী করুন।”

“অরুণীর কি বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরুণী এসে বলল”চল।”

রুহি অরুণীকে দেখে দাড়িয়ে গেলো।সাথে প্রণয়ও দাড়ালো।অরুণী প্রণয়কে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে চেয়ে রইলো।রুহি আর অরুণী চলে যেতে নিলেই প্রণয় বলল”অরুণী তোমার সাথে কথা আছে।”

“আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।আর আপনার কথা শোনার মতো সময়ও নেই।”

প্রণয় খপ করে অরুণীর হাত ধরে বলল”শুনতে হবে কথা।এতোদিন যা ইচ্ছে করছো?কিছু বলি নি।কিন্তু আজ চুপ থাকতে পারবো না।কি শুরু করছো তুমি?”

“হাত ছাড়ুন।পাব্লিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করবেন না।”

“অবশ্যই করবো।আমার কথার উত্তর না পেলে আরো ভয়াবহ কিছু ঘটবে।মাইন্ড ইট।”

অবস্থা বেগতিক দেখে অরুণী বলল”ঠিকাছে।আমি অফিসরুম থেকে আসছি।এখানে অপেক্ষা করুন।”

প্রণয় অরুণীর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”এখানেই আছি।”

অরুণী প্রণয়ের দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে।ওর সাথে রুহিও বের হলো।রুহির মাথায় কিছু ঢুকছে না।হচ্ছেটা কি?রুহি ভ্রু কুঁচকে অরুণীকে জিগ্যেস করলো”কাহিনী কি রে অরু?”

“আরে আর বলিস না।ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে আমার পিছনে পড়ে আছে।বারবার রিজেক্ট করেছি কিন্তু আস্ত একটা বেহায়া!কাল বলেছিলাম যে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই এমন করছে।”

“ওও,এইজন্যই তুই আসার কিছুক্ষণ আগে আমার সামনে এসে বসেছিলো আর তোর বিষয়ে জিগ্যেস করছিলো।”

“তুই কি কিছু বলেছিলি?”

“বলতে পারলাম কই?তার আগেই তুই চলে আসলি।”

“যাক ভালোই হলো।”
দুজনে কথা বলতে বলতে অফিস রুমে আসলো।তারপর এপ্লাই করে বেরিয়ে আসলো।পাঁচদিন পরই রেজাল্ট দিবে।অফিস রুম থেকে বেরিয়ে অরুণী বলল”রুহি তুই গিয়ে রেডি হয়ে আমার বাসায় চলে আয়।আর আমি ওই পাগলকে কিছু কথা শুনিয়ে আসি।”

“আচ্ছা।”

তারপর রুহি বেরিয়ে গেলো আর অরুণী ক্যান্টিনে চলে গেলো।প্রণয়ে সামনে গিয়ে বসলো।তারপর বলল”জ্বি বলুন কি বলবেন?”

“এইগুলোর মানে কি?”

“বিয়ের বয়স হয়েছে। বাবা মা চাইছে বিয়ে দিতে।তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম।”

“তাহলে আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম নেই?”

“আচ্ছা আমি কি কখনো আপনাকে ইঙ্গিত দিয়েছি অথবা ইশরায় বুঝিয়েছি যে আমি আপনাকে পছন্দ করি বা অন্যকিছু।সবসময় আমি ইগনোর করেছি।ভালোবাসাটা আপনার একতরফা ছিলো।আমার আপনার প্রতি কখনোই ফিলিংস ছিলো না।তবুও আপনার বাড়াবাড়িগুলো আপনি থামান নি।যাইহোক ভালো থাকবেন।আসি।”

এটা বলেই অরুণী উঠে চলে যেতে নিলেই প্রণয় ধরা গলায় বলল”ভালো থাকো।নতুন জীবনে সুখী হও।”

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে