এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৯

0
2098

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

রুহি নাস্তা করে বের হলো অরুণীদের ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।বাসার নিচে নেমে কোনো রিকশা অটো না পেয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলো।অনেক্ক্ষণ দাড়ানোর পর রুহির সামনে একটা গাড়ি থামলো।পুলিশের গাড়ি।গাড়ি থেকে প্রিয়ম রুহির সামনে নেমে বলল”আরে আপনি!কোথাও যাচ্ছেন নাকি?”

“হ্যা,বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবো।কিন্তু অটো বা রিকশা পাচ্ছি না।”

“ও,আচ্ছা।কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে নামিয়ে দিতে পারি।”

“কিন্তু আপনি তো থানায় যাবেন।”

“হ্যাঁ তাও ঠিক।আচ্ছা আপনি যাবেন কোথায়?”

“কাজী নজরুল কলেজের সামনে।ওখানেই আমার বান্ধবী পড়ে।”

“ওও।তাহলে তো হলোই।আমি ওই রোড দিয়েই যাবো।তাহলে চলুন আপনাকে নামিয়ে দেই।”

অটো বা রিকশা না পাওয়ায় রুহি আর আপত্তি না করে গাড়িতে উঠে বসলো।প্রিয়মও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
———————
আকাশ নাতাশার কেবিনে এসে দেখলো নাতাশা একটা পেশেন্টের সাথে কথা বলছে।আকাশকে দেখে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।আকাশ কেবিনের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।পাঁচ মিনিট পরে পেশেন্ট বের হতেই আকাশ ভেতরে গিয়ে রেগে বলল”হোয়াট হ্যাপেন্ড নাতাশা?ফোন ধরছো না কেন?কাল থেকে কতোবার কল করেছি হিসেব আছে?”

“হ্যাঁ তো আমি কি করবো?আমার ইচ্ছে হয় নি তাই আমি রিসিভ করি নি।” নাতাশা কফি খেতে খেতে জবাব দিলো।

নাতাশার উত্তরে আকাশ আরো রেগে গেলো।নাতাশার টেবিলের ওপর বাড়ি দিয়ে বলল”মানে কি নাতাশা?এমন করছো কেন?”

“করবো না কেন সেটাও বলো।তোমাকে বলেছিলাম যে ওই রুহি মেয়েটার বাচ্চাটা যেনো না বাঁচে কিন্তু তুমি কিচ্ছু করতে পারো নি।উল্টো জিডি খেয়ে এসেছো।এখন বাচ্চাটার কিছু হলেই তোমাকে আগে জেলে পুরবে।আর এইদিকে তুমি এখোনো মেয়েটাকে ডিভোর্স দিচ্ছো না।কেনো?

শেষ কথাটা নাতাশা চিল্লিয়ে বলল।আকাশ নাতাশার কাছে এসে ওর হাত ধরে বলল” আজই আমি উকিলের সাথে কথা বলবো।খুব শীঘ্রই ডিভোর্স হয়ে যাবে।তারপর আমরা বিয়ে করে নিলেই ও আর বাচ্চা দিয়ে কিছু করতে পারবে না।”

আকাশের কথা শুনে নাতাশা মৃদু হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।আকাশও নাতাশাকে বাহুতে আবদ্ধ করলো।কিছুক্ষণ পর নাতাশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে।আজকে অফিস থেকে ফেরার সময় উকিলের সাথে দেখা করে কথা বলে যাবে।
———————
অরুণী বাস থেকে নেমে সোজা হাটতে লাগলো।পিছনে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।কেমন যেনো লজ্জায় ঘিরে ধরেছে তাকে।একটু আগের বাসের মধ্যে ঘটা ঘটনাগুলো বারবার চোখের সামবে ভাসছে।

আর দিকে অরুণী পিছন পিছন প্রণয়ও আসছে।আজকে প্রণয়ের অনেক খুশী লাগছে।ভাবতেই পারে নি এমন একটা মুহুর্ত কখনো আসবে।প্রণয় বাবার একমাত্র ছেলে।বাবা অনেক বড়ো শিল্পপতি।প্রণয়ের নিজেরই গাড়ি আছে সে প্রতিদিন নিজের গাড়ি করেই ভার্সিটিতে আসে কিন্তু আজ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ায় অগত্যা বাসেই উঠতে হলো।বাসে উঠে দমবন্ধ অবস্থা ছিলো।কিন্তু হঠাৎ অরুণীর আগমনে দমবন্ধ ভাবটা কেটে খুশীর দোলা দিতে লাগলো মনে।অরুণী যতবার ওর বুকের ওপর পড়ছিলো ততবারই যেনো হার্টবিট মিস হয়েছিলো।আর যখন একবারে বুকের মধ্যে চুপটি করে ছিলো তখন প্রণয় মনে মনে বলছিলো”এই পথ যদি না শেষ তবে, কেমন হবে তুমি বলোতো।”
প্রণয় মনেপ্রাণে চাইছিলো যেনো অরুণী সারাজীবনের জন্য ওর বুকের মধ্যেই থেকে যায়।

হাটতে অরুণী ক্লাস ঢুকতে যাবে এই সময়ে পিছন থেকে প্রণয় বলল”ক্লাস শেষেও কি বাস দিয়ে যাও?”

“না বয়ফ্রেন্ডের হেলিকপ্টারে চড়ে যাই।” এটা বলেই ক্লাসে ঢুকে গেলো।

অরুণীর জবাব শুনে প্রণয়ের আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।সবটা সময় অরুণী এমনই করে।একটা কথা জিগ্যেস করলে সোজা ভাবে উত্তর না দিয়ে ত্যাড়ামি করে উত্তর দিবে।এমন করে কি মজা যে পায়!আকাশ বিড়বিড় করতে করতে নিজের ক্লাসের দিকে চললো।ক্লাস গিয়ে বসতেই ফারদিন বলল”কি রে মামা আজকে এতো লেট কেন?”

“আরে আর বলিস না।গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো তাই বাসে করে আসতে হলো।”

প্রণয়ের কথা শুনে ফারদিন চমকে বলল”কিহ!তুই বাসে আসছিস।বিশ্বাস হচ্ছে না।”

প্রণয় বিরক্তির স্বরে বলল”বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে?আসতেই পারি।আচ্ছা শোন তুর্য,মিনহা,সাথী ওরা কই?”

“তুর্য চারুকলা ভবনে গেছে ওর গফের সাথে দেখা করতে।আর মিনহা এখনো আসে নাই।সাথী আজকে আসবে না।”

“ও!আচ্ছা।”
প্রণয়ের কথা শেষ হতে না হতেই ফারদিন বলল”দোস্ত তোর শার্টের বোতামে এতোবড় চুল কেনো?”

ফারদিনের কথায় প্রণয় ভ্রু কুচকে বলল”কই?”

ফারদিন প্রণয়ের শার্টের বোতাম থেকে চুলটা নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বলল”এই যে দেখ।”

চুলটা দেখে প্রণয়ের মনে পড়লো বাসের ঘটনা।তখন মনে হয় চুলটা রয়ে গেছে।কিন্তু এখন ফারদিনকে কি বলবে?ওরে বললেই সাথী,মিনহা,তুর্য ওরাও জেনে যাবে তারপর ইচ্ছামতো মজা নিবে।তাই প্রণয় আমতা আমতা করতে করতে বলল”আরে ওইটা কিছু না।বাতাসে হয়তো উড়ে চলে আসছে।”

ফারদিন প্রণয়ের দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলল”সত্যি বল শালা।”

প্রণয় কিছু বলার আগেই মিনহা এসে ওদের পাশে বসে বলল”কি নিয়ে কথা বলছিস রে?”

প্রণয় কিছু বলার আগেই ফারদিন বলল”দোস্ত শোন প্রণয়ের শার্টে মেয়েদের চুল পাইছি।কিন্তু শালায় মিথ্যা বলে।বলে কি না বাতাসে উড়ে আসছে।”

ফারদিনের কথা শুনে মিনহা বলল”কি রে প্রণয় বল এই কেমনে আসলো তোর শার্টে?”

“আরে আমি সত্যি….” প্রণয় এতটুকু বলতেই ফারদিন বলল”অরুণীর কসম করে বল এটা কিভাবে আসছে তুই জানিস না।”

ফারদিনের কথা শুনে প্রণয় রেগে গেলো।এতটুকু একটা কথার জন্য অরুণীর কসম কাটতে হবে কেন?প্রণয় ওদের কিছু না বলে হনহন করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রণয় বেরিয়ে যেতেই মিনহা বলল”এইটা কি ঠিক হলো বল? প্রণয় কতোটা পসেসিভ অরুণীর জন্য এটা আমরা জানি।তোর এইভাবে বলাটা উচিত হয় নি।ওর কথাটা খারাপ লেগেছে।”

“আসলেই,বুঝতে পারি নি।এমন হবে।”

“প্রণয় সব সময়ই এমন করে।ওর সাথে কোনো কিছু হলেই ও আমাদের আগে নাচাবে তারপর বলবে।সহজে কোনো কথা বলতে দেখছিস ওরে?”

“হুম।আচ্ছা চল ওর কাছে যাই।শালার রাগ ভাঙাই।”
————————-
প্রিয়ম রুহিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।রুহি পার্স থেকে ফোন বের করে অরুণীকে কল করলো।রুহির কল পেয়ে অরুণী ম্যাসেজে লিখলো”ক্যান্টিনে একটু বস।ক্লাসে আছি।”

রুহি ‘আচ্ছা’ লিখে ভেতরে গিয়ে ক্যান্টিনে বসলো।

প্রায় দশমিনিট পর অরুণী ক্লাস শেষ করে ব্যাগ নিয়ে ক্যান্টিনে চলে আসলো।আজকে আর ক্লাস করার নিয়ত নেই অরুণীর।ক্যান্টিনে এসে রুহির সামনে বসে বলল”কফি খাবি?”

“হুম খাওয়া যায়।”

অরুণী দুইকাপ কফি অর্ডার দিয়ে রুহিকে বলল”আসতে সমস্যা হয় নাই তো?”

“না,এসিপি প্রিয়মের গাড়িতে এসেছি।”

অরুণী ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো”কেনো?”

“আরে,রিকশা বা অটো কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না আর উনিও এখান দিয়েই যাচ্ছিলেন।তো আমাকে বললেন পৌঁছে দিবেন।রিকশা,অটো না পাওয়ায় আমিও মানা করি নি।ওনার সাথেই আসলাম।উনি আমাকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়েছিলেন।আচ্ছা তুই আমাকে ডাকলি কেনো?”

“একটা বিষয়ে কথা বলবো সেইজন্য।”

“আচ্ছা বল।”
রুহি কথা শেষ করতেই কফি চলে এলো।অরুণী কফিতে চুমুক দিয়ে বলল”আমি ভাবছি তুই আবার স্টাডি টা শুরু করলে কেমন হয়?নিজের স্টাডি কমপ্লিট করে নে।”

রুহি মলিন গলায় বলল”না রে।আমাকে দিয়া আর হবে না।তিনবছর আগেই তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম।”

“তোকে দিয়েই হবে।তিনবছর আগে ছেড়েছিস তো কি হয়েছে।আবার ধরবি।নিজের ইচ্ছেগুলো পূরণ করবি।স্বাধীনভাবে চলবি।নিজের বাচ্চাকে নিজের মতো মানুষ করবি।ধর,আঙ্কেল আন্টি একসময় থাকলো না তখন তুই কি করবি?কার কাছে হাত পাতবি?তাই এখনি বলছি নিজের লাইফটা গুছিয়ে নে।”

বাস্তবিকই অরুণীর কথায় যুক্তি আছে।রুহিও বুঝতে পেরেছে।রুহি বলল”কিন্তু এখন কি অনার্স শেষ করা যাবে?তিনবছর ধরে তো লেখাপড়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।”

“সম্পর্ক গড়ে নিবি।আর আজকে গিয়ে তোর কলেজে গিয়ে ইন্টারের সার্টিফিকেট তুলবি।মেট্রিকের সার্টিফিকেট আর প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রগুলো গুছিয়ে নিবি।কাল ভার্সিটিতে এসে এপ্লাই করে যাবি।তোর রেজাল্ট ভালো তাই চান্স পেয়ে যাবি।”

“আচ্ছা।ঠিকাছে।”

তারপর ওরা আরো কিছুক্ষণ প্রয়োজনীয় কথা বার্তা বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়লো সার্টিফিকেট তুলতে।
—————————–
প্রণয় আর ওর বন্ধুরা ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে।একটু আগেই প্রণয় আজকে বাসের ঘটনা ওর বন্ধুদের বলে দিয়েছে।আজও অরুণী প্রণয়কে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।মেয়েটা সবসময় এমনই করে।তুর্য প্রণয়ের কাধে হাত দিয়ে বলল”দোস্ত একটা কাজ করতে পারিস।”

প্রণয় তুর্যের দিকে তাকিয়ে বলল”কি?”

“তুই তোর আব্বু আম্মুকে সবটা বলে দে।আর আঙ্কেল আন্টিকে বল অরুণীদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে।তাহলেই তো হয়।ওর বাবা মা মেনে নিলেই তো ও আর কিছু করতে পারবে না।আর একবার বিয়ে হয়ে গেলেই ও তোকে ভালোবাসতে বাধ্য।”

তুর্যের কথায় সবাই সায় দিলেও প্রণয় মুচকি হেসে বলল”না রে ভালোবাসাটা জোর করে হয় না।আব্বু আম্মু প্রস্তাব নিয়ে গেলে ওর বাবা মা যদি মেনে যায় তাহলে বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে হয়তো অরুণী বিয়ে করে নিবে।কিন্তু আমাকে ভালোবাসবে না।নিয়ম করে আমার খেয়াল করবে,আমার চাহিদা মেটাবে কিন্তু ভালোবাসবে না।আর একটা সময় এসব কিছুতে অভস্ত্যতা চলে আসবে কিন্তু ভালোবাসবে না।ভালোবাসাটা বাধ্যবাধকতায় নেই।এটা মন থেকেই হয়।আমি ওর অভস্ত্যতা হতে চাই না আমি ওর ভালোবাসা হতে চাই।আমি চাই ও যেনো আমার জন্য যা কিছুই করুক না কেনো মন থেকে ভালোবেসে করে।আমি সেদিন বাবা মা কে জানাবো যেদিন ও নিজে আমাকে বলবে ‘প্রণয় আমি তোমার প্রণয়িনী হতে চাই।’

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন}

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে