এই প্রেম তোমাকে দিলাম পর্ব-১৭+১৮

0
1756

#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_১৭
#আফিয়া_আফরিন

সরাসরি ভালোবাসি কথাটি না বলেও যে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় তার দৃষ্টান্ত বোধ হয় আয়াশ এবং তিথি।
দুইজনের কেউ কাউকে স্পষ্ট করে ডিরেক্টলি ভালোবাসি কথাটা বলে নাই। কিন্তু মন প্রাণ দিয়ে দুজনের ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

সেদিনের পর কেটে গেছে আরো বেশ কিছুদিন। তিথিয়া এবং আয়াশের সম্পর্ক মধুর থেকে মধুরতড় হচ্ছে। স্রষ্টা যেনো এই দুটি মানুষকে একে অন্যের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আমরা সাধারণত প্রেম বলতে যেই সম্পর্কটাকে বুঝি, সেই সম্পর্ক না।
.
.
ইতিমধ্যে তিথিদের ভার্সিটিতে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। পড়াশোনা নিয়ে সে খুব ব্যস্ত রয়েছে, শুধু ব্যস্ততা নেই ওই মানুষটির জন্য!
অবশ্য ব্যস্ততা থাকার কথাও নয়। যে মানুষটা নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ভালবাসতে পারে, তাকে যেকোনো কারণে ব্যস্ততা দেখানো টা নেহাত বোকামি!

তিথি পরীক্ষা শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হতেই দেখে আয়াশকে। মুখে একরাশ হাসি ফুটিয়ে তার সামনে গিয়ে বলে,
“কি ব্যাপার আপনি এখানে?”

“হ্যাঁ, তোমাকে নিতে এলাম।”

“কেন? আমি বুঝি একা যেতে পারি না।”

“তা পারো। কিন্তু, আমি তো তোমাকে একা ছাড়তে পারি না।”

“ঢং!”

“আমি কই ঢং করলাম? ঢং তো তুমি করবা।”

“হইছে। থামেন এবার।”

“যথাজ্ঞা! এসো তাহলে!”

তিথি আর কথা না বাড়িয়ে আয়াশের পিছু পিছু গিয়ে তার বাইকে উঠলো।
.
.
.
কয়েকদিন ধরে মনসুর সাহেব তিথিকে নিয়ে খুব চিন্তিত রয়েছেন। যাইহোক, মেয়ে এখন বড় হয়েছে বিয়ে-শাদী দেওয়ার একটা ব্যাপার তো আছে। অবশেষে সাত পাঁচ অনেক ভেবে তিথির জন্য একটা সম্বন্ধ দেখে ফেললেন।
তার খুব কাছের বন্ধুর ছেলে, নাম সৌরভ। বর্তমানে সে ইঞ্জিনিয়ার!

বাড়ি এসে তিনি ফারজানা বেগমকে বললেন, “বুঝলে তিথির জন্য একটা পাত্র দেখেছি। দেখতে সুন্দর, ভালো চাকরি করে।”

“কি আজব কথা! শুধু দেখতে সুন্দর আর ভালো চাকরি করে বলেই তুমি পাত্র দেখতে চলে গেলে নাকি? ছেলেরা কেমন সেটা দেখবে না?”

“আরে আমি সৌরভের কথা বলছি। আমার সেই ছোটবেলার বন্ধু মামুন, তার ছেলে।”

“ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়ছে। ওরা তো বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে অনেক আগেই।”

“হ্যাঁ, মাসখানেক আগে দেশে এসেছে। মামুন চাচ্ছে সৌরভের বিয়ে দিতে। আমি ভাবলাম তিথির সাথে যদি ওর বিয়েটা দেওয়া যায় তাহলে আমরাও নিশ্চিন্ত হলাম, আর তিথিও ভালো থাকবে।”

“আচ্ছা, যেটা ভালো বোঝো করো। কিন্তু তিথির মতামতটা নিও।”

“তা তো অবশ্যই নেব। ওর অমতে কি আর ওর বিয়ে দিবো? তবে আমার মনে হয় না ওই ‘না’ বলবে।”

“আচ্ছা, তিথি আসুক বাসায় ওর সাথে কথা বলে দেখো।”
.
.
“আপনি বললেন আমায় বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন। তা না করে এখানে কোথায় ঘুরতে নিয়ে এলেন?” মুখ বেজার করে বলল তিথি।

“আমি কি তো বলিনি আমি বাসায় নিয়ে যাবো। বলেছি আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”

“আপনি খুব পাজি!”

আয়াশ হাসলো।
.
.
বাড়ি ফিরে এসেই তিথি অবাক। তার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে, অথচ সে জানেই না।
বাবার কাছে গিয়ে বললো, “শুনলাম তোমরা নাকি আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছো?”

“হ্যাঁ, দেখছি তো। তোর কি বিয়ে শাদি করা লাগবে না?”

“করবো না বলি নাই তো।”

“তাহলে আর কোন কথা নাই? শোন, ছেলেটা অনেক ভালো। আর তুই তো তাকে চিনিস। অবশ্য অনেক ছোটবেলায় তোদের পরিচয় ছিলো।”

“কে সে?”

“সৌরভ!”

“আমার মনে নাই ঠিক। কিন্তু, আমি এই সৌরভ-টৌরভ কে বিয়ে করতে পারবো না।”

“কেন পারবি না সেটা শুনি?”

“এমনিতেই।”

“এমনিতেই কখনো কোন কারণ থাকতে পারে না। আর শোন, এই কয়দিন যা কাহিনী রটে গেল, তারপর আর এভাবে___”

“যাইহোক আমি বিয়েটা করব না।”
বলেই তিথি বাবার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো।
ঘরে এসে তিথি আয়াশ কে ফোন করলো। কিন্তু ফোন বিজি থাকায় আর কথা বলা হলো না।
.
.
.
‘শিল্প উন্নয়ন মেলা’ শুরু হয়েছে। তিথি প্রচন্ড বিরক্ত, পরীক্ষার মধ্যে মেলা শুরু হওয়ার কি খুব দরকার ছিল?
মেলা শুরু হয়েছে দুই দিন হয়েছে কিন্তু সে এখনো যেতে পারেনি।
তানিশা এবং আকাশ এর মধ্যে যেয়ে ঘুরে এসেছে। তিথির কাছে ছবি দিতেই সে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকেছে।
এ যেন কাটা গায়ে লবণের ছিটা!
.
.
অবশ্য আয়াশ গেল তাকে নিয়ে ঘুরতে। ইদানীং আয়াশ ও প্রচন্ড ব্যস্ত থাকে, ওভাবে সময় বের করা তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়।
তবুও সব ব্যস্ততাকে সাইডে রেখে তিথেকে নিয়ে ঘুরতে এলো।

অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আয়াশ তিথিকে নিয়ে এলো একটি চুরির দোকানে।
সে বললো, “কোন চুড়ি পছন্দ হয় দেখোতো।”

“আমি চুড়ি পড়ি না।”

“কেন?”

“এমনিতেই ভালো লাগেনা।”

“ভালো লাগে না কেন?”

“এরকম অবুঝের মত প্রশ্ন কেন করতেছেন?”

“আচ্ছা শোনো, ভালো লাগে না; তবে এখন থেকে লাগবে।”

আয়াশ নিজে থেকেই দোকানে গিয়ে ডজন খানেক চুরি কিনে ফেললো।
চুড়ি দেখে তিথি বললো, “আল্লাহ! আপনি এতগুলো চুরি কার জন্য কিনছেন?”

“কার জন্য আবার? তোমার জন্য।”

“বললামই তো চুরি পড়ি না।”

“আমি পরিয়ে দেই!”

তিথি আর মানা করতে পারলো না। আয়াশ তাকে একটা গাছের ছায়ার নিচে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে চুরি গুলো পরিয়ে দিলো, নিজ হাতে।

“দেখেছো, চুড়ি গুলো কি সুন্দর মানিয়েছে তোমার হাতে।”

তিথি হেসে বললো, “হুমম।”

“তাহলে বলো, এখন থেকে চুড়ি আর অপছন্দ করবে না!”

“নাহ করবো না। আপনার বুঝি চুড়ি খুব পছন্দের!”

“হ্যাঁ, ভালো লাগে।”
তিথির চুড়ি পরা হাতে আলতো করে চুমু খেলো আয়াশ।

“আপনার মতো এমন শখ আহ্লাদ কিন্তু সবার মধ্যে থাকে না।”

“কী এমন শখ করলাম আমি?”

“এইতো চুড়ি কিনে কতো যত্ন করে পড়িয়ে দিলেন।”

“ভালোবাসার মানুষের জন্য এটা খুব সামান্য ব্যাপার।”

তিথি আয়াশের এই কথা শুনে ভাবলো, তার বাসায় তার বিয়ের কথাটা আয়াশ কে বলা উচিত।
পরক্ষণেই আবার ভাবলো, বিয়ে তো আর ঠিক হয় নাই, বলার কি দরকার?

“আচ্ছা, এখন বাড়ি ফিরে যাই।”

“আচ্ছা চলো।”
.
.
.
পরদিন পরীক্ষা শেষে বাইরে বের হয়ে তিথি দেখতে পেলো আয়াশ কে। কিন্ত, ওকে উল্টো দিকের রাস্তায় যেতে দেখে অবাক হলো। তিথি ভেবেছিল, হয়তো ওকে নিতেই এসেছিলো। কিন্তু, আয়াশ উল্টো দিকে যাওয়ায় একটু অবাকই হলো।
ভেবে নিলো, হয়তো কোনো কাজে আসছে। তবুও, তিথি আয়াশের পিছু নিলো। আয়াশ আজ বাইক বাদ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।
.
.
আয়ানের যেখানে এসে পৌঁছালো, তিথি ও সেখানে এসে হতবাক হয়ে গেলো। আয়াশের এখানে আসার কারণ কী?
.
.
.

চলবে……

#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_১৮
#আফিয়া_আফরিন

ছোটখাটো বস্তি জাতীয় একটা এলাকা। আয়াশ হঠাৎ এখানে কেন এলো, সেটা ভেবে পাচ্ছে না তিথি। তিথি একটা বট গাছের আড়ালে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

ঠিক এই সময় দূর থেকেই আরো বেশ কয়েকজন ছেলেকে দেখতে পেল আয়াশের সাথে। তারা বস্তির সব মানুষের মাঝে কিছু কাপড়-চোপড় বিতরণ করছে। সেই মানুষগুলো খুশি মনে তা গ্রহণ করছে।

কাজ শেষে আয়াশের সাথে যে ছেলেগুলো ছিল তারা সবাই একে একে বিদায় নিলো। শুধুমাত্র রয়ে গেল আয়াশ। আর তিথি বটগাছের আড়ালেই দাঁড়িয়ে আছে।

তিথি নিজের দৃষ্টি আশেপাশে করতেই সামনে অর্থাৎ আয়াশ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়াশ নেই।
ওমা, ভোজবাজির মত কোথায় উধাও হয়ে গেল ছেলেটা!

হঠাৎ করে পেছনে ঘাড়ের কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল তিথি। সামনে ফিরে গগন বিধারী চিৎকার দিয়েছে নিলে আয়াশ মুখ চেপে ধরে।

“আরে আস্তে, আমি।”

তিথি আমতা আমতা করে বললো, “আপনি?”

“হ্যাঁ আমি। তুমি দেখি আমার পিছু নিয়েছো। ব্যাপার কি তিথি ম্যাডাম?”

ধরা পড়ে গিয়ে তিথি কাচুমাচু করে বললো, “আরে ধুর আমি কেন আপনার পিছু নিতে যাবো? আমি তো এই দিকে একটা কাজে এসেছিলাম, হঠাৎ আপনাকে দেখে এখানে দাঁড়ালাম।”

আয়াশ গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। বুকের উপর দুই হাত গুঁজে বললো, “ওহ তাই?”

“আপনি কি বিশ্বাস করছেন না?”

“করবো না কেন? তা এখানে কি কাজে আসা হয়েছিল ম্যাডামের?”

“এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”

“কোন বন্ধু?”

“এভাবে আসামির মতো আমায় একের পর এক প্রশ্ন কেন করতেছেন?”

আয়াশ তিথির গাল টিপে দিয়ে মিষ্টি হেসে বললো, “এইতো ধরা পড়ে গেছেন ম্যাডাম। আমি তো দেখেছি, সে ক্যাম্পাস থেকে আপনি আমায় ফলো করছেন।”

তিথি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো, “কেন দেখেছেন আপনি?”

আয়াশ স্বজোরে হাসলো।
বললো, “ভাগ্যিস দেখেছিলাম। না দেখলে বুঝি চোরের চুরি ধরা পড়তো?”

“চোর কে আর কিসের চুরি করার কথা বলছেন?”

“এইতো তুমি চোর আর চুরির জিনিসটা আমি। তুমি আমাকে চুরি করার জন্য চলে আসছো।”

“এহ বলছে আপনাকে! আচ্ছা যাই হোক আপনি এখানে কেন এসেছিলেন?”

“কাজেই এসেছিলাম। যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বাংলাদেশে আসি, তখন একটা প্রজেক্ট ছিল আমাদের এইখানে। সেই থেকে এখানকার মানুষের সাথে আলাপ। তাই তাদের মাঝে আজ কিছু কাপড়-চোপড় দেওয়া হলো।”

“ও আচ্ছা। আরো কে কে ছিলো?”

“ওরা আমার ফ্রেন্ড। একসাথেই পড়াশুনা করছি।”
তারপর চোখ তাকিয়ে বললো, “কেন কাউকে পছন্দ হলো নাকি?”

তিথি বিস্মিত কন্ঠে বললো, “নাহ।”

আয়াশ ওর ভাবভঙ্গি দেখে বললো, “বাবা তুমি দেখি সিরিয়াস হয়ে গেলে!”

“না না, এমন না। আচ্ছা আপনি কি এভাবে তাদের অভাব মিটাতে পারবেন?”

“আমি তো তাদের অভাব মিটাতে চাইনি। শুধুমাত্র একটু সাহায্য করতে চাইছি। আর মানুষের অভাব কখনো পূরণ হবার নয়। কোন অভাবই তাদের পূরণ হয় না। কিন্তু, এতোটুকু করার পর তাদের মুখে যে হাসি ফোটে তার অভাব তো পূরণ হয়, তাই না?”

তিথি মুগ্ধ চোখে আয়াশের দিকে তাকালো। নিজের কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো, “আপনার প্রতি ভালবাসাটা ২০গুণ বেড়ে গেলো।”

আয়াশ কথাটা শুনলো। এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গেল হৃদয়।

মুখে হাসি হাসি ভাব বজায় রেখে বললো,
“কি বললে?”

“কই কিছু বলি নাই তো।”

“কিছু তো একটা বলেছো।”

“নাহ বলি নাই। আচ্ছা চলেন এখন এখান থেকে।”

তিথি সামনের দিকে পা বাড়াতে গেলেই একটা কাটা পায়ে বেঁধে যায়। তিথি সাথে সাথে বসে পড়লো মাটিতে। আয়াশ তিথির পায়ে হাত দিয়ে বললো, “ওহ শীট, এতো মারাত্মক রকমের ব্যথা পেয়েছো।”

“সমস্যা নাই। আপনি হাত সরান
আমি কাঁটা বের করতেছি।”

আয়াশ তিথির কথা শুনল না
নিজেই নিজের মতো করে কাঁটা বের করার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু পায়ের মধ্যে কাঁটাটা ঢুকেছে বেকায়দায়।

তিথি বাঁধা দিয়ে বললো, “আপনি প্লিজ এভাবে পায়ে হাত দেবেন না।”

“পায়ে হাত দিলে কি হবে? মহাভারত অশুদ্ধ হবে?”

“নাহ তবে___!”

“ব্যাস, আর কথা না।”

খুব সাবধানে আয়াশ তিথির পায়ের কাঁটাটা বের করলো। তিথি উঠে দাঁড়ালো, কিন্তু হাঁটতে পারছে না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আয়াশ দেখলে, কিন্তু কিছু বললো না। আচমকা কোলে তুলে নিল তিথিকে।
হকচকিয়ে গেলো তিথি।

“ইয়া আল্লাহ! এটা রাস্তা মানুষজন দেখছে। নামান আমার প্লিজ।”

“চুপ থাকো। পা তো চলছে না, মুখ ঠিকই চলছে। তাই না?”

“আমি হাঁটতে পারবো।” দৃঢ় কন্ঠে বলল তিথি।

“দয়া করে আর কোন কথা বলো না, তিথি।”

আয়াশ ওইভাবেই তিথি কে নিয়ে রিকশায় বসালো। কিছুক্ষণের মধ্যে তিথির বাড়ির সামনে এলে, তিথি খুব সাবধানে রিকশা থেকে নেমে গেল।

নির্নিমেষ কণ্ঠে বললো, “আমি যেতে পারব এখন।”

আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললো, “ভালোবাসা নাকি বিশ গুণ বেড়ে গেল, বিশ গুন এর এক ভাগও তো দেখি প্রকাশ করতে পারো না।”

তিথি লজ্জায় আবিষ্ট হয়ে গেল। উল্টো দিক ফিরে ভেতরের দিকে দৌড়ে গেল।
.
.
.
তিথিদের বাসায় আজ সৌরভ রা বেড়াতে এসেছে। সৌরভ তার মা বাবা বোন। মূলত তারা তিথিকে দেখতেই এসেছে এবং মনসুর সাহেবের আগ্রহে তারা এখানে এসেছে।
তিথি ভেতরে ঢুকে এত মানুষ দেখে অবাক হয়ে গেল। ফারজানা বেগম তিথিকে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো, “সৌরভের বাসার সবাই তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”

তিথি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। তিথি বললো, “আমার সাথে দেখা করতে এসেছে মানে কি?”

“যা ঘরে গিয়ে কাপড়চোপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আয়।”

“মানে কি এসবের?”

“কোন মানে টানে নেই, যা তুই।”

তিথিকে একপ্রকার ঠেলে তার মা ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন।
তিথির হাত পা ক্রমেই অসাড় আসছে।

কিছুক্ষণ পর ফারজানা বেগম ফিরে এলেন একটা শাড়ি হাতে নিয়ে। শাড়িটা তিথির হাতে দিয়ে বললেন, “নে এটা পরে রেডি হয়ে নে।”

তিথি চোখে অবিশ্বাস নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে কাঠিন্য ভাব এনে বললো, “আমি এসব পারবোনা।”

“আজব তো! পারবি না কেন?”

“আপাতত বিয়ে শাদী করার ইচ্ছে নেই আমার।”

ফারজানা বেগম তিথির কথার কোন প্রতি উত্তর করলেন না। শুধু বললেন, “শাড়িটা পড়ে তাড়াতাড়ি বাইরে আয়। আমার যেন দ্বিতীয়বার এই কথাটা উল্লেখ না করা লাগে।”

তিথি ধপাশ করে বিছানায় বসে পড়লো। ফোন হাতে নিয়ে আয়াশকে ফোন করলো। পরক্ষণেই আবার ফোন কেটে দিল।
.
.
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও তিথি আসছে না দেখে ফারজানা বেগম বেশ বিরক্ত হলেন। ফারজানা বেগম ভেতরে তাকে ডাকতে যাবে এই সময় সৌরভের বোন তুরা বললো, “আমরা গিয়ে তিথির সাথে একটু দেখা করে আসি আগে।”

ফারজানা বেগম খুশি হয়ে বললেন, “আচ্ছা আসো।”

সৌরভের মা বোন-তিথির রুমে এল। দেখলো, তিথি ঠিক আগের মতই বসে আছে।

ফারজানা বেগম ধমক দিয়ে বললেন, “এত আলসে হলি কবে তুই?”

তুরা হেসে বললো, “ব্যাপার না আন্টি।”

তারা সবাই তিথির পাশে বসলো।
সৌরভের মা বললো, “আমাদের চেনা যাচ্ছে মা? সেই অনেক বছর আগে তোমাকে দেখেছি। কত বড় হয়ে গেছো, মাশাল্লাহ।”

তিথি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইল। কোন কিছুই তার কর্ণপাত হচ্ছে না। পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। সৌরভের মা আর বোন মিলে অনেক কথাই বলে যাচ্ছে।
কিন্তু তিথি বোবার মতো বসে আছে।

ক্ষণে ক্ষণেই তার দুই চোখ ভরে যাচ্ছে জলে।

সৌরভের মা বললো, “তাহলে এইবার ফাইনাল কথায় আসি।”

“কিসের ফাইনাল কথা?”

“তিথিকে আমাদের পছন্দ। আমার ছেলেরও পছন্দ হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি দিতে চাই।”
.
.
.

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে