এই প্রেম তোমাকে দিলাম পর্ব-১৫+১৬

0
1910

#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_১৫
#আফিয়া_আফরিন

ফারজানা বেগম আর তানিশা অনেকক্ষণ ধরে তিথি রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। তিথি কোন সাড়া শব্দ করছে না।
হঠাৎ অনেকক্ষণ পরেই তানিশার চোখে পরলো, তিথির রুমের দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথে আঁতকে উঠলো তানিশা। একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে ফারজানা বেগমকে ডেকে নিয়ে এলো। দিশেহারা অবস্থা হয়ে গেলো তাদের। দুজনে মিলে অনবরত তিথির রুমের দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো রেসপন্স পাচ্ছে না।
বাসায় এই মুহূর্তে কোন ছেলেমানুষ ও নাই। এমন শক্তপোক্ত দরজা তাদের পক্ষে ভাঙা সম্ভবও নয়।

তানিশা বললো, “কাকুকে ফোন দেই কাকি?”

“না মা, তোর কাকুর হার্টের সমস্যা আছে, তিথির এমন অবস্থায় কথা শুনলে ভালো মন্দ যদি কিছু একটা হয়ে যায়।”

তানিশা এই মুহূর্তে কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। অনবরত দরজা ধাক্কিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।

হঠাৎ করে বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো মাথায় এলো আকাশের নামটা।
হ্যাঁ, আকাশ কে ফোন করা যেতে পারে।

আকাশকে ফোন করতে কিছুক্ষণের মধ্যে সে এসে পড়লো।
এখানকার পরিস্থিতি দেখে সে হতবাক হয়ে গেলো। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আলগা হলে আপনি দরজা খুলে গেলো।

তিথির নিথর দেহ পড়ে আছে মেঝেতে। হাত থেকে সমানে রক্ত ঝরছে।

তিথির এই অবস্থা দেখে তার মায়ের ক্রমেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়।
আকাশ এগিয়ে যায় তিথি পালস চেক করার জন্য।

পালস ঠিকঠাক আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

আকাশ তিথিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে, তানিশাকে বললো,
“আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তুমি আন্টিকে সামলে এসো।”

তিথিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ফারজানা বেগম ইতিমধ্যে কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন। মনসুর সাহেব কেও খবর দেওয়া হয়েছে।

ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ” মপেশেন্টের কন্ডিশন একদম ভালো না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে বর্তমানে বাচা মরার মাঝখানে অবস্থান করছে। দ্রুত রক্ত লাগবে।”

অনেক খোঁজাখুঁজির পর রক্তের ব্যবস্থা করা হলো।
ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারদের সেই একই কথা, “পেশেন্টের কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয়!”
.
.
বর্তমানে সবাই উপস্থিত আছে হাসপাতালে। বিধ্বস্ত চেহারা একেক জনের। আয়াশ ও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই ওর মাথায় ঢুকতেছে না? মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর বুকের ভেতরের একটা অংশ বের করে নিলো, মুহূর্তেই।
এই মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে সে বাঁচবে কি করে?
.
.
.
অবশেষে ডাক্তারদের দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার প্রচেষ্টার পরে তিথির জ্ঞান ফিরে এলো।

তিথির মার সাথে সাথে গিয়ে দিদি থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।
“কেন এমন করলি মা? আমাদের এত কষ্ট কেন দিলি?”

তিথি কিছু বলতে পারলো না, অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে রইলো। সে তো এই মানুষগুলোকে ভুল বুঝেছিল। সামান্য একটা ভুল বোঝার জন্য কত বড় পাপ করতে যাচ্ছিলো!
এই মানুষগুলো তাকে কত ভালোবাসে, আর সে কিনা?

মনসুর সাহেব মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন, খুব কঠিন ভঙ্গিতে।
তিনি শান্ত গলায় বললেন, “তুই যে কখনো এই কাজটা করবি তিথি, আমি দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করি নাই। আমাদের কথা একবার ভাবলিও না। কার না কার জন্য মরতে বসলি? আমাদের ভালবাসার দামই রইল না কোন!”

তিথি করুন চোখে তাকালো তার বাবার দিকে। তার চোখ মুখ বিবর্ণ, রক্তশুন্য!
নার্স এসে বললো, “আপনারা দয়া করে এই রুমটা খালি করে দিন। কাল পেশেন্টকে রিলিজ করে দেওয়া হবে তখন যা বলার বলবেন।
এখন সবাই বাইরে যান, উনি মোটামুটি সুস্থ।”
.
.
রাত সাড়ে দশটার পর এক এক করে সবাই হাসপাতাল থেকে বিদায় নিলো। মনসুর সাহেবের অবস্থা খারাপ দেখে ফারজানা বেগম একপ্রকার বাধ্যবাধকতার সাথে বিদায় নিলেন।

তানিশা তাকে আশ্বস্ত করে বললো, “আমি আছি কাকি
তাছাড়া ডাক্তার নার্স তো আছেই, আপুর কোন সমস্যা হবে না।”
তানিশা জোর করে পাঠিয়ে দিল সবাইকে। এমনকি আকাশও থাকতে চেয়েছিল তাকেও জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে।

আয়াশের কি একটা জরুরী কাজ এসে গিয়েছিল তাই সে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গিয়েছে। তিথির জ্ঞান ফেরার পর থেকে একবারও দেখা হয় নাই।
.
.
রাত বারোটা বেজে পার হয়েছে। তানিশা প্রচুর ক্লান্ত ছিল তাই কেবিনের বাইরে ব্রেঞ্চে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

তিথির প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু ক্লান্তিতে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। এত ঘুম আধো জাগরণের মাঝামাঝিতে পড়েছে।

চোখটা লেগেই এসেছিল। হঠাৎ করে কপালে কারো হাতে পরশ পেয়ে তড়াক করে চোখ মেললো।
আবছা আলোয় সামনে থাকা মানুষটির অবয়বে বুঝলো, এটা আয়াশ!
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। তিথি শোয়া থেকে উঠে বসলো।

কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “আপনি!”

আয়াশ সাথে সাথেই উত্তর দিল না। এক ধ্যানে কিছুক্ষণ তিথির মুখ পানে অপলক চেয়ে রইলো।
তিথির হাতের ব্যান্ডেজ এর জায়গাটিতে নিজের হাত রাখলো। তারপর ওর দুই হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, “কেন এমন করলে তিথি?”

আয়াশের কন্ঠে কি একটা ছিল! তিথির ভিতর উথাল পাথাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হলো।
বারবার মনে হচ্ছে, এই মানুষটাকে ভালবাসতে পারলে জীবনটা সার্থক হতো। না পাওয়ার দুঃখটা সারা জীবনের মতো ঘুঁচে যেতো। এই মুহূর্তে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে একবার।
তিথি পারলো না আয়াশের প্রশ্নের উত্তর দিতে। শুধু চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো আয়াশের হাতের উপর।

আয়াশ উঠে দাঁড়িয়ে খুব সন্তর্পণে তিথির দুই চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো, “আসছি আমি।”
আয়াশ বেরিয়ে গেল। সে যে এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না, থাকাটা সম্ভব ও নয়। যার বুকের ভিতর ও যে প্রলঙ্ককারী ঝড়ের উন্মাদনা শুরু হয়েছে। সেই ঝড়ের অবসান হবে একমাত্র তিথির মাধ্যমে।
তিথিকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারলেই এই ঝড়ের উন্মাদনা কমবে।

.
.
তিথি আয়াশের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। এই মানুষটা কি অনুভূতিহীন? কেন তিথির অনুভূতিগুলো সে বোঝেনা?
.
.
.
সকালে তিথিকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। সে এখন আগের তুলনায় মোটামুটি সুস্থ আছে।
অরিন সব ঘটনা শোনা মাত্রই তিথিকে বেশ কয়েকটা ধমকানি দিয়ে দিয়েছে, এবং শেষে জানিয়েছে সে খুব শীঘ্রই ঢাকা ফিরবে।
.
.
.
অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর আয়াশ আজকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদিত্যকে আর এভাবে ছাড়া যায় না, সে সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। এরপরও তাকে ছেড়ে দিলে, সে তিথির জীবন টাকে নড়ক করে ছাড়বে।
আয়াশ যাই করুক তাতেই সাহায্য লাগবে আকাশের। কারণ সে আদিত্যকে চেনে না, আদিত্য কোথায় থাকে সেটাও জানে না?
তাই আয়াশ এবং আকাশ একটা পরিকল্পনা সাজালো।

প্লান অনুযায়ী তারা বিকাল বেলা চলে এলো আদিত্যর ক্লাবে। সুযোগ মতো আদিত্যকে একা পেয়ে গেল।
তারা দেখলো আদিত্যে চেয়ারে বসে উল্টো দিক ফিরে মোবাইল টিপছে।
আয়াশকে কিছু করতে হলো না, আকাশ সাথে সাথে গিয়ে আদিত্যকে উঠে দাঁড় করিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরলো।
এরূপ ঘটনার আকস্মিকতায় আদিত্য হতম্বিবল হয়ে গেলো। সে অবাক বিষ্ময় চেয়ে রইলো সামনে আগত দুটি মানুষের দিকে।
.
.
.
চলবে……

#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_১৬ ( বোনাস পর্ব )
#আফিয়া_আফরিন

আদিত্য আকাশকে আগে থেকেই চিনতো। তাই তাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এসব কি হচ্ছে আকাশ? ফাজলামি করতেছো আমার সাথে?”

আকাশ আদিত্য শার্টের কলার ছেড়ে দিলো। তারপর পাশে পড়ে থাকা একটা মোটা দড়ি দিয়ে আদিত্যকে চেয়ারের সাথে হুড়মুড় করে বেঁধে ফেললো।
আদিত্য কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।

আকাশকে ধমকে বললো, “কি হচ্ছে কি আকাশ?”
তারপর আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো, “ইনি কে?”

আয়াশ সামনে এগিয়ে এসে বললো, “আমাকে চিনতে কি খুব কষ্ট হচ্ছে?”

“কে আপনি?” মুখ শক্ত করে বলল আদিত্য।

“ঐতো মনে নাই সেদিন রাতে কথা হল তিথির ফোন থেকে!”

মনে পড়তেই আদিত্য মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, “ওও তুমি তাহলে সেই তিথির নতুন নাগর! ওত রাতে একটা মেয়ের____”

আদিত্যর মুখ থেকে পুরো কথা বের হবার আগেই আকাশ ধুম করে একটা ঘুসি দিয়ে বসলো আদিত্যর মাথায়। আদিত্য ব্যাথায় সামান্য চিৎকার করে উঠলো।

“আর একটা বাজে কথাও বলবেন না। আপনাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলি আদিত্য ভাই। নিজের সম্মানটুকু শেষ করে আর নিজেকে নিচে নামায়েন না!”

“কি চাও তোমরা?” শক্ত কণ্ঠে বললো আদিত্য।

আয়াশ উত্তর দিলো, “তেমন কিছু না। জাস্ট একটু বোঝাপড়া। তিথির ব্যাপারে।”

“তিথির ব্যাপারে আমার সাথে কি বোঝাপড়া করবে তোমরা?” বেশ অবাক হয়ে বলল আদিত্য।
“বোঝাপড়ার কি আর শেষ আছে ভাই? আপনাকে বলছিলাম না, তিথির সাথে লাগতে যাবেন না। কিন্তু না, আপনি তো বারণ শুনলেন না। এখন দেখেন কি হয়!”

“তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তোমাদের সাহস কিভাবে হয় আমাকে হুমকি দেওয়ার? তোমরা জানো, আমি কে?”

আয়াশ কিছুটা আদিত্যর দিকে ঝুঁকে এসে বললো, “হ্যাঁ জানি আমরা, আপনি কে! শুধু জানিই, মানিনা!”

তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল দুই ভাইয়ের মুখে।
আদিত্য বললো, “যা করছো ঠিক করছো না তোমরা। এর মাশুল দিতেই হবে তোমাদেরকে না, তিথিকে!”

আয়াশ পাশে বসে শান্ত কণ্ঠে বললো, “কেন বলেন তো? আমরা যেটা করছি তার মাসুল কাপুরুষের মতো তিথির থেকে কেন আদায় করবেন।”

“আমার সাথে লাগতে আসার ফল ভালো হবে না, বলে দিচ্ছি। এর শাস্তি তোমরা পাবে।”

আয়াশ হেসে বললো, “কোথায় আমরা লাগতে আসলাম? আপনিই তো প্রথমে শুরু করলেন। আপনি যেহেতু এত কিছু করে ফেললেন, আমরা কি শুধু বসে বসে দেখব, এটা তো হবে না। কাপুরুষ তো নই!”

আদিত্য রাগে ফুঁসছে।
বললো, “আমার হাতের বাঁধন টা খুলে দাও আগে!”

“আমাদের দুজনের সাথে আপনি একা পারবেন না ভাই। তার চেয়ে বরং চুপচাপ বসে থাকেন, আমরা এখন কাজের কথায় আসি।”

“কি কাজ?”

“এই যে তিথিকে ডিস্টার্ব করা ছেড়ে দেন।”

“আমি কি ছাড়বো বা কাকে ছাড়বো, কাকে ধরবো সেটা কি তোমরা ঠিক করে দিবে?”

“আপনি কাকে ছাড়বেন, কাকে ধরবেন সেই ব্যাপারে আমাদের কোন হেডেক নেই। কিন্তু তিথির ব্যাপার টা তো আমাদেরকেই দেখতে হবে।”

“আমি তিথিকে ভালোবাসি!”

আকাশ বললো, “ভালোবাসেন, সেটা ওকে ছাড়ার সময় মনে ছিল না?”

“দেখো আকাশ, আমি কি করবো না কি করবো না, সেটা তোমরা বলে দেওয়ার কেউ না। আমি যেভাবে যা ইচ্ছে হয় করবো।”

আয়াশ হেসে বললো, “তা আপনি যা খুশি করতেই পারেন। ইভেন তিথির সাথেও এতদিন ধরে অনেক কিছু করেছেন। আপনাকে কেউ কিছু বলে নাই। কিন্তু, সবকিছু যখন সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তখন আপনাকে কিভাবে ছেড়ে দেই বলেন তো?
শুধুমাত্র আপনার জন্য, আপনার ভিত্তিহীন মিথ্যা অপবাদের জন্য তিথি গিয়েছিল আত্মহত্যা করতে। এতকিছুর পরও আপনাকে ছেড়ে দিলে কেমন দেখায় বলেন?”

এ কথা শুনে আদিত্য বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। সে জানতো না এই কথা।
কোনমতে মুখ থেকে কথা বের করে বললো, “তিথি কোথায় আছে এখন?”

তিথি কোথায় আছে, কিভাবে আছে, কেমন আছে তা আপনার না জানলেও চলবে। জাস্ট মনে রাখবেন, তিথিকে থেকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বললে বা কিছু করলে তার ফল কখনোই ভালো হবে না।”

আদিত্য বিরক্তিতে আশেপাশে তাকালো। বললো, “আমি তিথিকে ভালোবাসি!”
“ওকে ভালোবাসার কথা ভুলেও মুখে আনবেন না, মিস্টার আদিত্য। তিথিকে ভালোবাসার যোগ্যতা আপনার নেই, বিন্দু পরিমাণও নেই! আচ্ছা যাই হোক, আপনার সাথে বোঝাপড়া শেষ। মূল কথা তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো বলেন তো?”

আয়াশের এহেন কথায় আদিত্য ভ্রু কুচঁকে বললো, “কোথায়?”

আয়াশ হেসে বললো, “এরপর যদি কখনো তিথির ক্ষতি করার কথা মাথায় আনেন, তাহলে আপনি ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে থাকেন বা সাত আসমানের উপরে; পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বের করে নিয়ে এমন শিক্ষা দিবো, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মনে রাখবেন।”

আকাশ এসে আদিত্যর হাতের বাঁধন গুলো খুলতে খুলতে বললো, “তিথি আমার ছোট বোন। বোনের জন্য ভাই যা খুশি করতে পারে, বুঝলেন মিস্টার আদিত্য ভাইয়া। আসি আজকে ভালো থাকবেন।”
তারপর এক পলক থেমে আদিত্যর কপালের সাইডে হাত রেখে বললো, “সো সরি ভাইয়া, এখানে ঘুসি মারার জন্য!”

বিদায় নিয়ে দুজন ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো।

.
.
তিথি এখন মোটামুটি সুস্থ আছে, কিন্তু মনটা বিষাদে ভরে আছে। দুনিয়ার কিছুই তার ভালো লাগে না। নিজেকে বন্দী করে রাখে। সেদিন তার বাবার কথাটা খুব করে বুকে লেগেছে।
ঐদিনের পর থেকে তিথি আর মনসুর সাহেবের মুখোমুখি হয় নাই।
আসলে তার ভিতর এক ধরণের সংকীর্ণতা কাজ করছে। কীভাবে বাবার মুখোমুখি হবে?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বের হলো। ড্রইংরুমে যেতেই বাবাকে দেখতে পেলো।
ভয়ে ভয়ে গিয়ে পাশে বসলো। মনসুর সাহেব আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন।
কিছু বলতে গিয়েও বারবার মুখে কথা আটকে আসছে।

কিছুক্ষণ বাদে মনসুর সাহেব নিজেই বললেন, “কিছু বলবে?”

“আমার সাথে কথা বলছো না কেন?”

“কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না তোমার সাথে!”

তিথি বাবার হাত ধরে বললো, “প্লিজ বাবা, এমন করো না। আর তুমি আমাকে এভাবে তুমি করে কেন বলছো? মনে হচ্ছে কত দূরে সরিয়ে দিচ্ছো?”

“কেউ তোমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে না। তুমি নিজেই দূরে সরে যেতে চাচ্ছ!”

“আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। আর কখনো এমন কিছু করবো না। কিন্তু, এভাবে দূরে সরিয়ে রেখো না, প্লিজ!”

মনসুর সাহেব জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।
বললেন, “আর এমন কাজ কখনো করিস না মা। তুই ছাড়া আমাদের আর কি আছে, বলতো?”

তিথি হেসে বললো, “এখন অনেক শান্তি লাগছে। তোমার মত করে ফের কথা বলছো।”

দুজনেই সমস্বরে হেসে উঠলো। ফারজানা বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের কাহিনী দেখছি আর মিটিমিটি হাসছেন।
.
.
.
পরদিন সন্ধ্যার পর দেখা করলো আয়াশের সাথে। ঠিক দেখা করলো বলা চলে না, হঠাৎ দেখা হল।
তানিশা আর আকাশ একসাথে বের হলো।
তিথি বাড়ি ফিরে যেতে চাচ্ছিলো, বাধ সাধলো আয়াশ।
বললো, “চলো, ঘুরে আসি।”

“কোথায় যাবেন?”

“এইতো আশেপাশেই।”

“আচ্ছা চলেন।”

দুজন বাইকে করে একটা খোলা মাঠের প্রান্তরে এলো। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় জায়গাটা কে আরো বেশি মায়াবী লাগছে!
আয়াশ মুহুর্তের মধ্যে অনেক কিছু ভেবে ফেললো। তিথির হাত চেপে ধরলো।

আয়াশ বলবে বলবে করেও অনেক কথা মুখে এসে আটকে যাচ্ছে। তিথি এই সেই বহুত কথা বলছে। কোন কথাই আয়াশের কর্ণপাত করছে না।
দুইজন মাঠের প্রান্তর ধরে অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছে।ছায়াময় মানব মানবী।

আয়াশ হাঁটতে হাঁটতেই বললো, “আচ্ছা তিথি, নীলাঞ্জনারাই় কি প্রথম প্রেম হয় সব সময়?”

তিথি থমকালো। আয়াশের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,”নাহ, আপনি যাকে ভালোবাসবেন সেই হবে আপনার নীলাঞ্জনা। প্রথম, দ্বিতীয় প্রেম বলতে কিছুই হয় না”

আয়াশ তিথিকে নিজের দিকে ঘোড়ালো, চোখে চোখ রাখল।
“তাহলে বল তুমি কিসের আমার নীলাঞ্জনা হবে? যার তরে অবসন্ন দিনগুলোকে রঙিন ভাবে কাটাতে পারবো।”

মুহূর্তেই তিথির চোখের কোনে পানি জমে গেলো।
কিছু বলার অবকাশ পেল না। অস্থির লাগছে খুব। আচ্ছা, সব কথা কি মুখে বলে দিতে হয়? মনের কথা কি মন দিয়ে বোঝা যায় না!
আয়াশ নিজেই তো একদিন বলেছিল, মনের কথাগুলো মন দিয়ে বুঝে নিতে হয়।
আয়াশ কি তবে পারবে না তিথির অব্যক্ত কথাগুলো বুঝে নিতে?
আয়াশ তিথির মুখটাকে দুই হাতের আজলায় নিয়ে এলো। পলকহীনভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বুকে জড়িয়ে নিলো। হ্যাঁ, সে বুঝতে সক্ষম হয়েছে পৃথিবীর অব্যক্ত কথাগুলো!
তিথিও আয়াশকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেললো। এতদিনের জমানো সব কষ্ট গুলো বরফের ন্যায় গলতে শুরু করলো।

এই খোলা প্রান্তরে সূচনা হলো আরেক জোড়া প্রেম কাহিনীর!
.
.
.
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে