এই প্রেম তোমাকে দিলাম পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
3288

#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#অন্তিম_পর্ব [প্রথম অংশ]
#আফিয়া_আফরিন

“আজ কন্যার গায়ে হলুদ___
কাল কন্যার বিয়ে____!”

মৃদু ভলিওমে সাউন্ড বক্সে গানটা বাজিয়ে দিল তানিশা।
ছাদে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে। তিথিকে সেখানে এনে বসিয়ে দেওয়া হলো। অনুষ্ঠান শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
হলুদ আর লাল পাড়ের জামদানি শাড়ি পরানো হয়েছে তাকে, সাথে কাঁচা হলুদ ফুলের গয়না।
সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে তিথি কে।
.
.
আয়াশের গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এখানে সকল কার্যক্রম শেষ হলেই তারা হলুদ নিয়ে যাবে তিথিদের বাসায়।
আকাশ ফাজলামি করে গাদা গাদা হলুদের মুখে মাখিয়ে দিচ্ছে বার বার। আয়াশ কিছু বলতে গিয়েও বলল না। থাক না, আজকের দিন টা!
.
.
আমেনা বেগুন সবাইকে নিয়ে এসেছে হবু বউমার বাড়ি, বৌমাকে তার হলুদ মাখাতে।

তিনি তিথিকে দেখা মাত্রই বলে উঠলেন, “মাশাআল্লাহ! মেয়েটাকে আমার কি সুন্দর লাগছে।”

পাশ থেকে আকাশ ফোড়ন কেটে বলল, “থাক মা, মানুষের বউয়ের দিকে নজর দিও না। তাও আবার তোমার বড় ছেলের বউ বলে কথা। নজর দিলে, সমস্যা আছে।”

আমেনা বেগম হেসে দিলেন। তিথি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো আকাশের দিকে।

একে একে সবাই তিথিকে হলুদ মাখিয়ে দিল। হলুদেও কেমন যেন আয়াশের গায়ের গন্ধ পাচ্ছে সে।
পাবেই তো, আয়াশের গায়ে ছোঁয়া হলুদ বলে কথা!
.
.
আজকে আবহাওয়া প্রচন্ড তপ্ত। আগের দিনের মতো শীতলতা নেই, রোদ অনেক।
এত ভারী সাজে প্রচন্ড গরম অনুভব করছে তিথি।

মাকে গিয়ে বলল, “মা আমি নিচে গিয়ে একটু ফ্যানের নিচে বসি।”

“আচ্ছা যা, এখন এখানে তোর কোন কাজ নেই।”

তিথি সিঁড়ি ঘরে পা বাড়াতেই পাশে থাকা চিলেকোঠার ঘর থেকে আচমকা কেউ তার হাত ধরে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে এলো।
তিথি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। যেই না চিৎকার দিতে যাবে, তখনই সামনে থাকা আগুন তো তিথির মুখ চেপে ধরল।
চোখ পিটপিট করে তাকালো তিথি।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে এখনো গাদা গাদা হলুদ লেগেই আছে।
চোখ দুটো কঠোর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো তিথির।
এই সময় আয়াশ এখানে কি করছে?

“আপনি এখানে?”

“তোমাকে দেখতে এলাম।”

“কি আজব, গতকালই তো দেখা হলো আপনার সাথে।”

“হলো তো। কিন্তু হলুদের সাজে আমার হবু বউকে কেমন লাগছে সেটা দেখতে হবে না?”

আয়াশের মুখে এই প্রথম বউ ডাকটা শুনে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করতে লাগলো তিথির ভিতর।

“আচ্ছা, তাহলে বলেন কেমন লাগছে আমার?”

আয়াশ নিজের এক হাত বুকে দিয়ে বলল, “হায় দিলে চোট লেগে গেছে! এখন কি হবে আমার?”

তিথি তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো, “যান, শুধু ফাজলামি!”

আয়াস হাসলো। বললো, “আচ্ছা শোনোই না।”

“তাড়াতাড়ি বলেন।”

“তাড়াতাড়ি কেন বলতে হবে?”

“যেকোনো মুহূর্তে আমার ডাক পড়তে পারে। তাছাড়া আপনাকে আমাকে এভাবে একসাথে দেখলে কে কি ভেবে বসবে আল্লাহই ভাল জানে।”

“কে আবার কি ভাববে? আমি তো আসছি আমার বউয়ের সাথে দেখা করতে।”

“আসছেন তো লুকিয়ে লুকিয়ে।”

“আচ্ছা। তুমি আমায় হলুদ মাখিয়ে দেবে না?”

তিথির হাতের লেগে থাকা হলুদ, তিথি আয়াশের গালে লেপ্টে দিলো।

“হইছে?”

“কিভাবে হল? আমি তোমায় হলুদ মাখিয়ে দেব না?”

“আপনি এখন এখানে হলুদ কোথায় পাবেন?”

আয়াশ কোন উত্তর দিল না। শুধুমাত্র নিজের গালটা তিথির গালের সাথে লাগিয়ে আলতো করে ঘষে দিল।
তিথি হেসে ফেললো।
বললো, “পেঁচা মুখো কোথাকার!”

“কিছু করার নাই। এই পেঁচা মুখর সাথেই এখন সারা জীবন সংসার করতে হবে!”

“আচ্ছা এখন বাড়ি ফিরে যান তবে।”

“তাড়িয়ে দিচ্ছো? ভুরু কুঁচকে বলল আয়াশ।

“ছি ছি তাড়িয়ে কেন দেব? এখন আমি নিচে যাব। এরকম শাড়ি-টারি পরে আমার বিরক্ত লাগতেছে।”

“আচ্ছা যাচ্ছি। তবে বিয়েটা একবার হয়ে গেলে কিন্তু তোমায় আমি ছাড়ছি না। একদম রাত, দিন, দুপুর, সন্ধ্যা, বিকাল বুকের সাথে মিশিয়ে রেখে দিবো।”

আয়াশ যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।
তিথি নিচে নেমে এলো। তাকে দেখে ফারজানা বেগম জিজ্ঞাসা করলেন,
“কখন থেকে খুঁজছি তোকে, কই ছিলি?”

“ওই চিলেকোঠার ঘরে ছিলাম আমি। কেন কিছু বলবে?”

“হ্যাঁ। আগে ঘরে যা গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ কর। আমি তোর ঘরে শাড়ি রেখে এসেছি। তারপর এসে খাওয়া-দাওয়া করবি।”

তিথি ‘আচ্ছা’ বলে চলে যেতে নিলে ফারজানা বেগম তিথিকে থামালেন।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “তুই কত বড় হয়ে গেছিস রে, মা। ভাবতেই অবাক লাগে কাল তোর বিয়ে। আমাদের ছেড়ে চলে যাবি তুই।”

চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে দুজনের। তিথির চোখ থেকে দু’ফোটখ পানি গড়িয়ে পড়ল।
তার মা চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, “থাক কাঁদিস না মা। ঘরে গিয়ে কাপড় পাল্টে বাবার সাথে দেখা করে আসিস। মানুষটার মন ভীষণ রকমের খারাপ।”

তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল। কাপড় পাল্টে সে বাগানে এলো। পেছন থেকে ডাক দিল, “বাবা!”

মনসুর সাহেব মাথা না ঘুরিয়ে বললেন, “আয় কাছে।”

তিথি কাছে গিয়ে বাবার পাশে চুপটি করে বসে পড়ল।
“কি ব্যাপার মুখ ধার করে কেন রেখেছিস?”

“তোমাদের মন খারাপ তাই না? আমি চলে যাবো বলে?”

মনসুর সাহেব হেসে বললেন, “না মন খারাপ হবে কেন?”

“সেটা তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”

মনসুর সাহেব হাসলেন। তিথি ফের বলল, “এখন আর রোজ নিয়ম করে তোমার মা ডাক শুনতে পারবো না। আর কোন পিছুটান ও থাকলো না।”

“মনে আছে, তুই যখন আরো ছোট ছিলি; আরোহীর বিয়ের দিন আমায় কেঁদে কেঁদে বলেছিলি ‘আমি কখনো বিয়ে করব না বাবা’।”

তিথি আর কিছু বলতে পারব না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।
.
.
.
রাত দশটার মধ্যেই তিথিকে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিলেন ফারজানা বেগম।
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে তিথি। এত তাড়াতাড়ি সে ঘুমায় না। তার মধ্যে আজকে রাতে ঘুম আসবে কিনা সন্দেহ!
প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই তার বিয়ে।
আয়াশের সাথে, ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে। মানুষটাকে একেবারেই লিখিতভাবে স্পষ্ট করে নিজের নামে দলিল করে নেওয়া যাবে।

অবশেষে ঘুম ধরা দিল রাত ২:০০ টার পর। সকালে ফারজানা বেগম তিথিকে ডাক দিলেন।
ঘুম ঘুম চোখে তিথি বলল, “পরে উঠি।”

“কিসের পড়ে উঠি? বিয়ের দিন এত ঘুমানো কিসের তোর?”

বিয়ের কথা শুনে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো তিথি। তাইতো সত্যিই তার বিয়ে আজ!

সকালের দিকে সব কার্য শেষে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল তিথি। এমন সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। দেখল আদিত্য ফোন করেছে। আদিত্যর ফোন এই দিনে পেয়ে একটু অবাক হলো তিথি।

ফোন রিসিভ করে বলল, “হ্যালো।”

“শুনলাম, আজ নাকি তোমার বিয়ে।”

তিথি হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ ঠিকই শুনেছ।”

“তুমি কি তাকে ভালোবাসো? আর সেও কি তোমাকে ভালোবাসে?”

“তোমার এই কথার উত্তর দেয়ার আগে তুমি আমায় একটা কথার উত্তর দাও?”

“কি বলো?”

“তুমি কখনো আমায় ভালবেসে ছিলে?”

“হ্যাঁ।”

আচ্ছা এখন তোমার প্রশ্নের উত্তরে আসি। তুমি বললে না, আমি তাকে ভালোবাসি কিনা? আমি যদি তাকে ভালো নাই বাসতাম তাহলে বিয়ে অব্দি পৌঁছাতাম না।
আর রইল তার কথা, হ্যাঁ সেও আমাকে ভালবাসে।”

“কিভাবে বুঝলে ও তোমাকে ভালবাসে?”

“জীবনে একটা ধাক্কা খেয়ে বুঝে গেছি কে সত্যি ভালবাসে আর কে মিথ্যে ভালোবাসে?
তবে শোন, তুমি বা আয়াশ দুজনেই আমাকে ভালবাসছো। তোমারটা অতীত হয়ে গেছে, আয়াশেরটা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। আমি আয়াশের চোখে নিজের জন্য সম্মান দেখেছি আর তোমার চোখে নিজেকে তাচ্ছিল্য হতে দেখেছি।
সত্যি কথা বলতে দুজনের মধ্যে প্রথম জনকে বর্তমানে আমি চিনি না, আর দ্বিতীয় জনকে আমি ভালোবাসি। আজীবন ভালবেসে যাব!”

কথাটা বলেই তিথি একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল।
আদিত্য চুপ করে রইল কিছুক্ষন। তারপর হেসে বলল, “আমার মত একজন নিকৃষ্ট মানুষের দোয়া রইল তোমাদের জন্য। জানি আমার দোয়া তোমাদের হয়তো কাজে লাগবে না। তবুও বলছি, সারা জীবন ভালো থেকো। ভালোবাসায় থেকো।”

তিথি মুচকি হাসলো। আজ নিজেকে বড্ড নির্ভার লাগছে।
.
.
.
তিথিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক আনা হয়েছিল। কিন্তু তিথি তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বলেছে, “আমার ইচ্ছা ছিল আমি নিজের বিয়েতে নিজেই সাজবো।
তাই এসব বিউটিশিয়ান আমার দরকার নেই।”

তিথির জেদ সম্পর্কে সকলেই অবগত। তাই কেউ কিছু বলল না।
সে নিজে বেশ ভালই সাজতে পারে, শুধুমাত্র ঝামেলা করে শাড়ি পড়তে গিয়ে।
তানিশার সাহায্য নিয়ে তিথি শাড়িটাও পড়ে ফেললো।
ঠিক ওই সময় তানিশা ঘটঘট করে তিথির অজান্তেই অগোছালো তিথির কয়েকটা ছবি তুলে নিল।

তারপর ছবিগুলো সেন্ড করলো আয়াশকে!
.
.
.
.
চলবে…….

#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#অন্তিম_পর্ব [শেষ অংশ]
#আফিয়া_আফরিন

তিথির সেই ছবিটা দেখা মাত্রই আয়াশের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। হৃদপিন্ড খুলে হাতে আসার উপক্রম।
এতো মায়াবী কেন লাগছে এই মেয়েটাকে। এই মায়ায় বার বার ডুবে মরতে রাজী আছে আয়াশ।

বিয়ের দিন নাকি সৌন্দর্য বেড়ে যায়, তিথির বেলায় ও তাই হয়েছে। স্নিগ্ধতা ঠিকরে পড়ছে যেনো।
আয়াশ ছবিটায় একটা চুমু এঁকে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা রওনা হবে তিথিদের বাড়ির উদ্দেশ্য।
তিথির থেকেও বেশি অস্থিরতা কাজ করছে আয়াশের মাঝে। কেমন জানি সব সপ্ন স্বপ্ন লাগছে। অবশেষে সত্যির ছোঁয়া পেতে যাচ্ছে স্বপ্নেরা।
.
.
.
সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ তারা তিথিদের বাড়ি এসে পৌঁছালো।
আয়াশকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে একটা ঘরে এলেন মনসুর সাহেব।
এভাবে ডেকে নিয়ে আসাতে একটু অবাক হল আয়াশ। কিন্তু, মুখে কিছু বলল না।

মনসুর সাহেব স্থিরচিত্তে বলে উঠলেন, “আমি জানি তুমি তিথি কে ভালোবাসো। ভালো যেহেতু বাসো, ভালো রাখার ক্ষমতাও তোমার আছে। তবুও, আমার একটা মাত্র মেয়ে তো বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। আমার মেয়েটাকে তুমি দেখে রেখো বাবা।”

আমার উপরে এইটুকু ভরসা রাখতে পারেন। আপনি যেভাবে তিথিকে আগলে রেখেছেন সেভাবে হয়তো আমি পারবো না। আমি চেষ্টা করব। আশা করি ও কখনো আমার কাছে কষ্টে থাকবেনা।”

মনসুর সাহেব আর কিছু বললেন না। সে জানে আয়াশের কাছে তিথি ভালো থাকবে।
.
.
সন্ধ্যার আকাশ ঘন হয়ে এসেছে। বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে এলো সেই অন্তিম মুহূর্তটি।
আকাশ বাতাস যেন প্রতিটি মুহূর্তে কানের কাছে ঝংকার দিয়ে ধ্বনি তুলছে,
‘আজ তিথি এবং আয়াশের বিয়ে!’

আয়াশের মধ্যে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে। ভাবনা-চিন্তা জমাট বেঁধে যাচ্ছে। আর তিথির চোখ বারবার খুঁজে যাচ্ছে আয়েশকে। তার প্রাণহরণকারী মানুষটা কোথায়?
.
.
আয়াশের দেখা মিলল বিয়ের আগ মুহূর্তে।
কাজী সাহেব আয়াশের সামনে কাবিননামা নিয়ে বসলেন।
তাকে কবুল বলতে বলা হলে, আয়াশ কোনরূপ দ্বিধা না করে সরাসরি বললো, “কবুল! কবুল! কবুল!”

কাজী সাহেব তিথিকে যেই না কবুল বলতে বলল, আচমকাই তিথির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। তিথি বেশ জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেললো। ভেতরটা কেমন জানি লাগছে, এ এক না জানা অনুভূতি!

তিথি দম বন্ধ থাকা অবস্থাতেই বলল, “কবুল! কবুল! কবুল!”
তারপর কাবিননামায় সাইন করলো।

সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ে সম্পর্ণ!”

তিথি লজ্জায় আশেপাশে তাকাতে পারছে না। মাথা নিচু করে বসে আছে। একবার মাথা উঠিয়ে আয়াশকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, এই অদম্য ইচ্ছেটা লজ্জার নিচে চাপা পড়ে গেল।

আকাশ আয়াশের কানে কানে গিয়ে বলল, “জিততা গেছো ভাইজান। তোমারটা তো সেটিং করেই ফেললা, এবার আমার টাও সেটিং করার দায়িত্ব তোমার।”

আয়াশ হেসে আকাশের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল, “ওকে ডান।”

তারপর আকাশ আয়াশ কে তিথির পাশে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে এলো।
আয়াশ তিথির হাতে হাত রাখল।
শিউরে উঠল তিথি।
মনে হচ্ছে, এ যেন প্রথম আয়াশের স্পর্শ!

আয়াশ তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “ওয়েলকাম, মাই দিল দিওয়ানা।”
তিথি মুচকি হাসলো।
.
.
.
এরপর শুরু হলো বিদায় পর্ব। মনসুর সাহেব বিয়ে পড়ানোর পর আর তিথির সম্মুখীন হন নাই। ফারজানা বেগম তিথিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। মেয়েটা যেন মুহূর্তে কত বড় হয়ে গেল। মাকে কেমন সান্তনা দিচ্ছে!
অবশেষে বিদায় তাকে নিতেই হল।
সকলের বুক চিরে বেরিয়ে এল এক দীর্ঘশ্বাস!
.
.
আদিত্য চলে এসেছে ঢাকা ছেড়ে রাজশাহী। ওখানে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। তিথির স্মৃতিগুলো তাহলে খুব করে পোড়াবে।
সে ভুল করেছিল, মস্ত বড় এক ভুল। ভুলের শাস্তি স্বরূপ সে তিথিকে সারা জীবনের মতো হারিয়ে ফেলল।
তিথি এখন শুধুমাত্র তার অনুশুচনায় থাকে।
প্রতিটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস অস্পষ্টভাবে ঘিরে রয়েছে তিথিকে!
.
.
.
তিথি শশুর বাড়িতে এসে যে পৌঁছেছে এক ঘন্টা হবে। আয়াশের সব কাজিনরা মিলে তিথিকে বাসর ঘরে দিয়ে এলো।
খুব সুন্দর করে ঘরটা সাজানো হয়েছে।
টকটকে লাল গোলাপের ছোঁয়া চারিদিকে।
তারা তিথিকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে গেলেও, ওরা চলে যাওয়ার পর তিথি পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
এক সময় বেলকনি থেকে গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে এলো।
আবেশে তার হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর দরজায় শব্দ পেয়ে দৌড় দিয়ে খাটের উপর বসে পড়লো তিথি।
আয়াশ এসেছে। আয়াশ কে দেখা মাত্রই সমস্ত লজ্জারা ঘিরে ধরলো তিথিকে।
আয়াশ এসে কার্বাড থেকে একটা খাম নিয়ে তিথির পাশে বসে বলল, “এটা তোমার দেনমোহরের টাকা। তোমার প্রাপ্য।”

“কিন্তু আমি কি করবো?”

“জানিনা। এটা তোমার, তুমি কি করবে সেটা তুমিই ভালো জানো।”

তিথি দুপাশে মাথা নাড়ালো।
আয়াশ ফের বলল, “যাও গিয়ে কাপড়চোপড় পাল্টে এসো। বোঝাপড়া আছে তোমার সাথে।”

“কি বোঝাপড়া?”

“একটু পর বলবো।”

তিথি বিয়ের ভারী শাড়ী গয়না পাল্টে বেগুনি রংয়ের একটা শাড়ি কোনমতে পড়ে নিল। আয় আয়াশ ও কাপড়চোপড় পাল্টে ফেলেছে।
পৃথিবীর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়াশ তাকে নিজের দিকে ফেরালো।
খুব কাছে টেনে নিয়ে কপালে ঠিক মাঝ বরাবর চুমু খেলো। তিথি লজ্জায় আয়াশের বুকে মুখ লুকালো।
বুকে মুখ রাখা অবস্থাতেই তিথি বলল, “এটাই বুঝি বোঝাপড়া ছিল!”

আয়াশ হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল। বললো, “এই দিন, এই মুহুর্তের অপেক্ষা করছিলাম আমি এতদিন। সেদিন কি প্রগাঢ় ইচ্ছা ছিল তোমার কপালে একটা চুমু দেওয়ার। কিন্তু দিতে পারি নাই। আজ খুব শান্তি শান্তি লাগছে!”

তিথি মুখ তুলে তাকালো আয়াশের দিকে। আবিষ্কার করল অজস্র ভালোবাসা। যে ভালবাসা স্বচ্ছ কাচের ন্যায় শুদ্ধ, একদম পবিত্র।
এমন ভালোবাসা তো কখনোই লুকিয়ে রাখা যায় না।

আয়াসের বুকে মাথা রেখে এভাবেই তিথি কাটিয়ে দিতে পারবে অজস্র যুগ। আর কিছু লাগবে না। ভরসার স্থান যে সে পেয়ে গিয়েছে।

গোলাপের গন্ধে মো মো করছে চারদিক। আইয়াস গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিঁড়ে গুঁজে দিল তিথির কানে।
চুলের খোপা টা খুলে ঘন চুল গুলো‌ছড়িয়ে দিল সারা পিঠ ময়।
তিথি মৃদু হেসে বলল, “গোলাপের ঘ্রাণটা খুব মিষ্টি!”

“হ্যাঁ, একদম তোমার মত।”
.
.
দুজনে মিলে আকাশে তারা গুনছে। এই স্বর্গীয় মুহূর্তের জন্য তারা সহস্র শত বছর অপেক্ষা করেছে।
তবুও অপেক্ষা করেও তো সঠিক ভালোবাসা পেয়েছে, এটাই সৌভাগ্য।

দুটি সত্তা আজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে খুব মন্দ হয় না!
.
.
আয়াশ তিথিকে বলল, “সেদিনের মতো একটু চুমু দাও তো।”

কন্ঠে এমন আকুলতায় কাল বিলম্ব করল না তিথি। আয়াশের দিকে ফিরে তার চোখ নিজের এক হাত দিয়ে ঢেকে, ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।

কিছুক্ষণ পর আয়াশ নিজ থেকেই তিথির হাতটা সরিয়ে নেয়।
তিথির চোখে চোখ রাখে। কিন্তু তিথি তার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।

আয়াশ তিথির মুখটা তুলে ঠোঁটে একটা চুমু খায়।
আয়াশ তিথির চোখে চোখ রেখে, আলতো করে তাকে জড়িয়ে ধরে স্পষ্ট গলায় গিয়ে ওঠে,
“বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিব তার সুরভী!

দিন গিয়ে রাতে লুকখবে
মুছো না গো আমার ই ছবি!

আমি মিনতি করে গেলাম
এই মন তোমাকে দিলাম!

এই প্রেম তোমাকে দিলাম
তুমি চোখের আড়াল হও!

কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম!

এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম! 💙
.
.
.
#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#সারপ্রাইজ_পর্ব
#আফিয়া_আফরিন

“কি করছেন আপনি বারবার?” তিথি ধমকে বললো আয়াশকে।

আয়াশ ভুরু কুঁচকে বললো, “কই কি করলাম?”

“আপনাকে আমি আর কতবার বললে আপনি বুঝবেন বলেন তো? বলেছি না ভেজা তোয়ালে বিছানার উপর রাখবেন না।”

“কি বললে, আবার বলো তো?”

তিথি এবার রেগে গেল।
“সরুন আপনি। কথা বলবেন না আমার সাথে।”

“যথাজ্ঞা মহারানী।”

তিথি রাগের ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
কিছুক্ষণ পর রুমে ফিরে এসে দেখল আয়াশ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। গায়ে একটা কালো রঙের টি শার্ট।

তিথি কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল, “কোথায় যাচ্ছেন এই ভর দুপুরে?”

আয়াশ উত্তর দিল না। দুই হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো।

তিথি ফের বলল, “কি হল কথা বলছেন না যে? এত সেজেগুজে কোথায় বের হচ্ছেন?”

“কে যেন একটু আগে বলেছিল আমায়, তার সাথে কথা বলতে না।”

তিথি আর কথা না বাড়িয়ে আয়াশের শার্টের কলার ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”

“কেন কি মনে হচ্ছে, কোথায় যাচ্ছি?”

“এত সেজেগুজে আপনি কোথায় যাচ্ছেন সেটা আমি কিভাবে বলবো?”

“আড্ডা মারতে যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে।”

তিথি আয়াশকে ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল, “ঘরে বউ থাকতে, বউকে একা ফেলে এখন উনি যাচ্ছেন আড্ডা মারতে। যত্তসব ন্যাকামি! তার মধ্যে আবার কালো শার্ট পড়ে এরকম করে সেজে যাচ্ছে।”

তিথি বিড়বিড় করছে, আর আয়াশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

বললো, “মনে মনে কি মন্ত্র আওড়াচ্ছো?”

“কিছু না। যেখানে যাচ্ছিলেন যান।”

তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আয়াশ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখলো তিথি সোফায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছে।

আয়াশ কছ বের হয়ে যেতে দেখে তিথি বলে উঠলো, “আর যেন কখনো ঘরে ফেরার দরকার নেই!”

আয়াশ তিথির কাছে এসে বললো, “বাসায় কিন্তু আর কেউ নাই তিথি। ভুতে আবার ভয় পাবে না তো? বলছি যে একা থাকতে পারবে?”

“আমাকে নিয়ে আপনার এত ভাবতে হবে না। আপনি এখন যান আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা মারতে। খবরদার ঘরে ঢুকবেন না।”

“আচ্ছা। তোমার তো সব কথাই শুনি আমি। এটাও শুনলাম।”

তিথি কিছু বলল না। আয়াশ দরজার বাইরে যেয়েই ফিসফিসিয়ে বললো, “তিথি ম্যাডাম, আমার বন্ধু বান্ধবের সাথেও জেলাস ফিল করেন আপনি!”
.
.
তিথির মনটা অকপটেই খারাপ হয়ে গেল। এই মানুষটা কি কিছু বোঝেনা? তিথির তো তাকে যেতে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। রাগ অভিমান কিছুই বোঝেনা? আজব মানুষ একটা!
.
.
রাত আটটা বেজে গেছে আয়াশ তাও বাড়ি ফেরে নাই। তিথি অবশ্য একটা ফোনও করে নাই। সে খাওয়া দাওয়া শেষ করে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।

সকালে চোখে মুখে রোদের আলো আছড়ে পড়তেই চোখ পিটপিট করে তাকালো তিথি।
চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো আয়াশের বুকে।
ভ্রু আপনা আপনি কুঁচকে গেল তিথির। সে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আর সেই কপালের উপর লেপটে থাকা চুলগুলো এক সাইডে সরিয়ে দিল।
ফিসফিসিয়ে বলল, “ইচ্ছা করছে চুলগুলো কেটে দেই।”

তিথি আধো ঘুমন্ত চোখে একচ্ছ নয়নে তাকিয়ে আছে মানুষটার ঘুমন্ত মুখস্তির পানে।
আচমকা আয়াশ তিথির কোমর পেচিয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো। তিথি চমকে উঠলো। যেটুকু ঘুমের ভাব ছিল চোখে, কর্পূরের মত উবে গেলো।

আয়াশ চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলল, “চুরি করে কি দেখা হচ্ছিল?”

“কিছু না। ছাড়ুন আমায়। রাতে বাড়ি কেন ফিরলেন? বন্ধু-বান্ধবের সাথে আরো আড্ডা দিতেন।”
অভিমানী কন্ঠে বলল তিথি।

“রাগ করেছো? এইতো এখন তো একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি, আর রাগ করে থেকো না প্লিজ!”
বলেই আয়াশ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিথিকে।

“রাগ করি নাই তো। ছাড়ুন এখন আমাকে, আপনার অফিস আছে না? খাওয়া দাওয়া করতে হবে না?”

“আজকে শুক্রবার! অফ ডে। এই দিন অফিসটা তোমার সাথেই আছে।” ফিচলে হাসি দিয়ে বললো আয়াশ।

“শুক্রবার বলে কি খাওয়া দাওয়া কে ও ছুটি দিয়ে দিয়েছেন?”

আয়াশ ছাড়লো তিথিকে। উঠে বসে পাশে ড্রয়ার থেকে চিকন একটা পায়েল বের করলো। মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে তিথির পায়ে খুব সন্তপর্ণে পায়েল টা পরিয়ে দিয়ে, পায়ের পাতায় আলতো করে চুমু খেলো।
শিউরে উঠল তিথি।
তিথি তৎক্ষণাৎ নিজের পা সরিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি রান্না ঘরে যা___!”

কথাটুকু শেষ করতে পারল না তিথি। আয়াশ আলতো করে তার ঠোঁটের উপর হাত রাখল।

কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল, “আজ আর তোমায় এই রুম থেকে কোথাও বের হতে দিচ্ছি না।”

কথাটি বলেই তিথি কে পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে যায়। তিথির চুলের খোঁপা খুলে চুলগুলো ছড়িয়ে দেয়। চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে বলল, “আমায় একটুও ভালোবাসো না, তাই না?”

“তাই মনে হয় আপনার?”

“যদি ভালোই বাসো আমায়, তাহলে এত দূরে দূরে সরে থাকো কেন সব সময়?”

তিথি ভারি ভারি নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বললো, “আপনি আমার কোন অনুভূতি ই বুঝতে পারেন না?”

“তুমি তো সেটা বোঝার সুযোগই দাওনি কখনো! আচ্ছা বলোতো, আমি কি তোমার দূরের কেউ?”

“দূরের কেউ হবেন কেন?”

“তাহলে সব সময় এরকম আপনি আপনি করে আমাকে দূরে সরিয়ে দাও কেন?”

আহত হলো তিথি। বললো, “কি বলবো?”

“তুমিই ভালো জানো সেটা। নেক্সট টাইম যদি আপনি করে ডাকছো, সিরিয়াসলি তিথি আমিও তোমায় আপনি করেই ডাকবো।
তিথি এইটা দেন, ওইটা দেন। তখন শুনতে কেমন লাগবে বলোতো?”

“একদম বাজে লাগবে।”

“তাহলে আমার কথাটা মাথায় রেখো। এখন থেকে এসব আপনি আপনি করা বাদ।”
তিথি ধরতে পারল আয়াশের অভিমান মাখানো কন্ঠ। তার প্রতিটা কথায় যেন অভিমান ঝরে ঝরে পড়ছে!
কিন্তু, কিসের জন্য এত অভিমান?
অবশ্য অভিমান থাকারই কথা। তিথি ভেবেছিল আয়াশ ই হয়তো ওর‌ অনুভূতিগুলোকেবোঝে না।
কিন্তু না, তিথি ই আয়াশের অনুভূতিগুলোকে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। কারণ এই মানুষটা একটু চাপা স্বভাবের।
বিয়ের আগে যেরকম দেখেছিল এখন তার উল্টো পুরো। নিজের অনুভূতি গুলো কখনোই মুখে প্রকাশ করতে পারে না।
বিয়ের এক মাস পার হয়ে গেছে অথচ তার মধ্যে সংকোচ রয়েই গেছে। অদ্ভুত মানুষ! কিন্তু আজ আবার হঠাৎ করে কি হলো? সব অভিমান যেন ঝরে ঝরে পড়ছে।
.
.
আয়াশ আর একটু এগিয়ে এলো তিথির দিকে।
তখনই আয়াশের ফোন বেজে উঠলো।
আয়াশ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার শাশুড়ি আম্মাজান আর ফোন করার সময় পেল না?”

তিথি মুচকি হেসে সরে গেল।
আয়াশ মায়ের সাথে কথা বলার শেষ করে, তিথি কে ডাক দিলো।
সারা শব্দ না পেয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিল।
হ্যাঁ, ম্যাডাম রান্নাঘরে আছে।

আয়াশ পেছন থেকে গিয়ে তিথির হাত ধরলো। তিথি ভয় পেয়ে এক দফা লাফ দিয়ে উঠলো।

চকিত নয়নে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি করছেন আপনি এখানে?”

“মা ফুপির বাড়িতে যেতে বলেছে। রেডি হয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”

“মা সত্যি বলেছেন, নাকি আপনি মিথ্যা মিথ্যা নাটক করতেছেন?”

আয়াশ তিথির চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট গলায় বলল, “কি জানি, আমার ভালোবাসা ও কি তোমার কাছে নাটক মনে হয়?”

আয়াশের এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল তিথির।
তারা রেডি হয়ে ফুফির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। দুপুরে সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেল নাগাদ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
সন্ধ্যার পর বাড়ি পৌছে গেলো।
এই পুরো সময়টুকু আয়াশ তিথির সাথে কথা বলেনি। একটুও যে বলেনি তা নয়, প্রয়োজনে টুকটাক কথা হয়েছে।

তিথির মনটা ক্রমেই খারাপ হয়ে গেল।

আয়াশকে একবার ডেকে বলল, “সরি!”

আয়াশ কাঠকাঠ কন্ঠে জবাব দিল, “সরি কেন বলতেছ তুমি? সরি তো আমার তোমাকে বলা উচিত। নাটক তো সব সময় আমিই করি তাই না? আমার সব কথাবার্তা কাজ তোমার নাটকই মনে হয়!”

“আচ্ছা শুনেন না, ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমি তো জাস্ট কথার কথা হিসেবে বলছি।”

আয়াশ ছোট্ট করে বলল, “হুম।”
তিথি বুঝলো আয়াশ এখনো তার ওপর রাগ করেই আছে।
.
.
রাতে ঘুমানোর সময় ও আয়াশ একদিক ফিরে শুয়ে পড়লো। তিথির সাথে কথা বললো না।
এইবার তিথি নিজেই এগিয়ে গেলো।
আয়াশের গায়ে হাত রেখে বলল, “আপনি আমার সাথে এরকম কেন করতেছেন?”

“নাটক বাজ মানুষের সাথে কথা না বলাই ভালো তোমার তিথি।”

তিথির চোখে পানি এসে গেল এই কথা শুনে।
সব চেষ্টা বাদ দিয়ে তিথিঝ অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর আয়াশ আপনা আপনি এসে জড়িয়ে ধরলো তিথিকে। তিথির শোক বোধহয় হু হু করে বেড়ে গেল আরো কয়েকগুণ!

আয়াশ ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল, “ধুর পাগলি! আমি কি রাগ করে আছি নাকি? তোমার উপর রাগ করে থাকতে পারবো?”

“তাহলে এতক্ষণ এমন কেন করলেন?”

“তোমার মত আমিও একটু ফাইজলামি করলাম। আমি কি তোমাকে বুঝিনা, বলো?”

তিথি চোখ মুছে আয়াশের বুকে মাথা রাখলো।
আয়াশ কিছু না বলে ঠোঁটেই মুচকি হাসির রেখা ফুটালো।
প্রসন্ন কণ্ঠে ডাকলো তিথিকে।
তিথি মাথা উঁচিয়ে তাকালো আয়াশের দিকে।

“এভাবেই থাকবে তো সারা জীবন আমার সাথে।”

“নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।”

আয়াশ ফের হাসলো। তৃপ্তির সেই হাসি।

ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে হঠাৎই ঘরটাকে অন্যরকম মনে হচ্ছে। আবছা নীল নীল ভাব!
আয়াশ এক ধ্যানে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি লজ্জায় মাথা নিচু করে রয়েছে। আয়াশ তিথির চিবুক ধরে বলল, “দেখি এক পলক তাকাও তো আমার দিকে।”

তিথি তাকালো। আবিষ্কার করলো, আয়াশের নেশা ভরা দৃষ্টি! ভাবতেই কেমন অবাক লাগে, এই মানুষটা নিতান্তই তার। একদম আপন। এতদিন যে আড়ষ্টতা ছিল, আজ বোধহয় সেইটুকুও উবে গিয়েছে।

আয়াশ আচমকা তিথির ঠোঁটে চুমু খেলো।

পরম তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলল তিথি।

কি এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে! আয়াশের সামান্য এই স্পর্শে সর্বাঙ্গে উথাল পাথাল ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই খেয়াল কি আছে?

তিথি হঠাৎ ই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আয়াশকে।
আদুরে বললো, “আমি শুধুমাত্র তোমাকেই ভালবাসি। শুধুমাত্র তুমি, তুমি আর তুমি!
.
.
.
.

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে