ঋতুর স্মৃতি পর্ব-০৬

0
1507

#ঋতুর_স্মৃতি
#সিজন_২
#পর্ব_০৬
#Jechi_Jahan

মেয়েটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর হাত ধরে টেনে আরো দূরে গেলাম।

আমি-কেনো করলে এমন রিহা?

রিহা-আমি রিহা নই আমি অধরা।

আমি-নাটক কম করো রিহা।

রিহা-আমি কিসের নাটক করেছি।(ভয়ে ভয়ে)

আমি-ওকে যাও তুমি নাটক করোনি।আচ্ছা বলো তো আমি কে?মানে আমার নাম কি।

রিহা-আমি কি করে জানবো?(ভয়ে ভয়ে)

আমি-একটু আগে তাহলে কিভাবে জানলে?

রিহা-আমি মানে…..

আমি-আর মানে মানে করতে হবেনা।(রেগে)

রিহা-ঋতু প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আমি-রিহা কেনো করলে এমন?

রিহা-আমি রাহাতের সাথে থাকতে পারছিলাম না।

আমি-সেদিনই এটা তোমার মনে হলো?

রিহা-না ঋতু এটা আমার অনেক আগেই মনে…..

আমি-হয়েছে আর না।জানো আমি কল্পনাও করি নি যে তুমি বেঁচে আছো।এমন ভাবে নাটক টা করলে যে নাটকে তিনটা জীবন হয়ে গেছে।

রিহা-মানে???

আমি-বুঝতে পারছো না।তোমার ওই বোকামির জন্য তোমার মেয়ে মা হারা হয়েছে।রাহাত স্ত্রী হারা হয়েছে।তবুও বলছো এর মানে?

রিহা-ওদের টা বুঝলাম কিন্তু আরেকটা।

আমি-তোমার নিজের জীবন।

রিহা-ঋতু???

আমি-হুম তোমার ওই বোকামির জন্য তুমিও স্বামী হারা আর সন্তান হারা হয়েছো।

রিহা-আমি কি করতাম ঋতু।আমি সত্যি রাহাত এর সাথে থাকতে পারছিলাম না।

আমি-কিন্তু কেনো?

রিহা-তা আমি তোমাকে বলতে পারবোনা।

আমি-তোমরা তো সুখেই ছিলে তাহলে?

রিহা-ঋতু এটা সত্যি যে আমরা সুখি ছিলাম কিন্তু একসময় ওই সুখটা আর থাকেনা।

আমি-মানে?

রিহা-হ্যাঁ ঋতু আমাদের বিয়ের পর তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে একটা ফ্ল্যাটে রাখা হয়।আর তুমি ওখানে একা কি করো কিভাবে থাকো তার সব খবর আমাদের কাছে আসছো।

আমি-সবসময় আসতো?

রিহা-হুম রাহাত তোমার খোঁজ নিতো।একদিন আমরা জানতে পারি যে তুমি ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গেছো।কিন্তু কেও এটা জানতাম না যে তুমি…..

আমি-প্রেগন্যান্ট তাইতো।

রিহা-হুম!!!রাহাত তোমার প্রেগন্যান্সির খবর জেনে খুব কেঁদেছিলো।নিজেকে সহ সবাইকে দায় করছিলো।সবসময় রাতেই ও কাঁদতো।

আমি-তা বুঝলাম কিন্তু তোমার যাওয়ার কারণ?

রিহা-আমার কাছে মনে হয়েছিলো তোমাদের সংসার ভাঙ্গার জন্য দায়ী শুধু আমি।কারণ আমি তোমার শ্বাশুড়ি কে বাচ্চার কথা বলেছিলাম আর রাহাত এর আবার বিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছি।

আমি-ওহ!!!

রিহা-ঋতু তুমি রাহাতের কাছে ফিরে যাও।রাহাত তোমাকে ছাড়া ভালো নেই।

আমি-তুমি কি করে এখানে আসলে?

রিহা-আমি রানির প্রত্যেক জন্মদিনেই আসি।

আমি-ওহ!!আচ্ছা তুমি এখানেই থেকো কেমন।

রিহা-আচ্ছা।

আমি রিহাকে ওখানে দাড় করিয়ে বাড়ীর ভেতরে গিয়ে রাহাত এর সামনে দাঁড়ালাম।

আমি-রাহাত তোমার সাথে আমার কথা আছে।

রাহাত-হুম বলো।

আমি-এখানে না ছাদে চলো।

রাহাত-ওকে চলো।

এবার আমি আর রাহাত ছাদে চলে আসলাম।

রাহাত-ঋতু কি বলবে বলছিলে।

আমি-রাহাত আমার বিয়ে হয়নি।

রাহাত-হুম???

আমি-আমি দ্বিতীয় বিয়ে করিনি।

রাহাত-কিহ! তাহলে রবিন?

আমি-তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার ২ বছর আগে রবিন আমাকে প্রপোজ করছিলো।কিন্তু আমি ওসবে ভয় পেতাম বলে একসেপ্ট করিনি।বাট ও বলেছিলো ও আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবে।ওর মনে আমাকে ছাড়া কাওকে জায়গা দিবেনা।আর ও ওর মনে কাওকে জায়গা দেয়নি।

রাহাত-রবিন বিয়েই করেনি?

আমি-তোমার মতো করবে নাকি।

রাহাত-মাথা নিচু করে ফেলে।

আমি-জানো রাহাত তুমি আমাকে এত অবহেলা করেছো যে তোমার জন্য আমার মনে এখন একটু মায়া পর্যন্ত নেই।(কান্না করে)

রাহাত-তাহলে কি রবিন এর জন্য।

আমি-হ্যাঁ ওর জন্যই আছে।তোমার সাথে ডিভোর্স হওয়ার পর পরই ও আমার লাইফে এসেছে।জানো যখন রনি জন্ম নেয় তখন ডাক্তার বলে ছিলো আমি নাকি বাঁচবোনা।তখন রবিন আমার পাশে ছিলো যেখানে তোমার থাকার কথা ছিলো।সেদিন রনিকে প্রথম রবিনই কোলে নিয়েছিলো যেখানে তোমার নেওয়ার কথা ছিলো।এই দৃশ্য দেখে সেদিন আমি খুব কেঁদেছিলাম এটা ভেবে যে আমার ছেলে ওর আসল বাবাকে পেলোনা।
(কান্না করে)

রাহাত-এতোকিছু হয়ে গেলো আর তোমরা আমাকে জানালে না।

আমি-কোন অধিকারে জানাবো।(কান্না করে)

রাহাত-সরি ঋতু।

আমি- বাদ দাও!একটা কথা রাখবে আমার?

রাহাত-হুম বলো।

আমি-পার্টিটা একটু তাড়াতাড়ি শেষ করো।

রাহাত-কিন্তু কেনো?

আমি-না রাখতে পারলে বলে দাও।

রাহাত-ওকে।

আমার কথামতো রাহাত পার্টি টা তাড়াতাড়ি শেষ করে।আর আমি বাইরে রিহার কাছে চলে যাই।

আমি-সরি রিহা তোমাকে এতোক্ষণ…

রিহা-সমস্যা নেই।

আমি-আজকে রানিকে দেখতে যাবে?

রিহা-ওকে তো সবসময়ই দেখি।

আমি-কাছাকাছি থেকে?

রিহা – সেটা সম্ভব নয়।

আমি-তো চলো সম্ভব করি।বলে ওর হাত ধরে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলাম।রিহাকে ভেতরে নেওয়ার সাথে সাথে রাহাত সহ বাকি সবাই শক্ড।আর আমি যে এমন কিছু করবো তা হয়তো রিহা কল্পনাও করেনি।

রিহা-ঋতু এটা তুমি কি করলে?(আস্তে করে)

আমি-রানি তুমি তোমার মাকে দেখতে চাও?

রানি-হুম!!!!

আমি-এ হচ্ছেন তোমার মা(রিহাকে সামনে এনে)

রানি-সত্যি???

আমি-হুম ইনিই তোমার মা।

রানি-না ইনি আমার মা না।ইনি আমার মা হলে আমার কাছে থাকেনা কেনো?

আমি-রাহাত রানিকে বুঝাও।

রাহাত-কি বুঝাবো আমি কাকে না কাকে এনে বলছো যে এটা রানির মা।

আমি-মানে তুমি দেখতে পারছোনা এ রিহা।

রাহাত-হুম দেখেছি কিন্তু আমি মানিনা।

আমি-কিন্তু কেনো?

রাহাত-এ না ৫ বছর আগে মারা গেছে।কিন্তু এখন দেখছি আমার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে আছে।

আমি-তুমি ওকে ভুল বুঝছো।

রাহাত-আরে কিসের ভুল বুঝছি।

আমি-তোমাকে সবকিছু খুলে বলি।

এবার আমি রাহাতকে সবকিছু খুলে বলি। আর রিহাকে ওর কাছে রাখতে বলে চলে আসি।

বাড়ীতে—-

বাবা-কিরে এতো দেরী করলি যে?

আমি-রনিকে একটু ঘুরতে নিয়ে গেছিলাম তাই।

বাবা-ওওও ঠিক আছে যা ঘুমিয়ে যা।

রবিন-ঋতু বাবাকে আসল ঘটনাটা বলো।

আমি-ওহ ওটা সকালে ও বলা যাবে।

রবিন-ওকে গুড নাইট।

আমি-গুড নাইট।রনি যাও বাবা রুমে যাও।

বাবা-ঋতু তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমি-হুম বাবা বলো।

বাবা-ওখানে কি হয়েছে তার সব খবর আমার কাছে এসেছে।তুই ভালো করেছিস কাজটা।

আমি-হুম।

বাবা-ওদের তো ব্যবস্থা করলি এবার নিজের ব্যবস্থা টা কর।

আমি-মানে???

বাবা-এই যে রবিন তোকো বিয়ে করতে চায়, রনি রবিনকে বাবা ডাকে,তুই রবিনকে বন্ধু ভাবিস।

আমি-হুম তো?

বাবা-তাহলে বিয়ে টা করে ফেল।

আমি-বাবা ওসব নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।আগে শুধু ভালোবাসাকে ভয় পেতাম আর এখন বিয়ে টাকেও ভয় পাই।

বাবা-ঠিক আছে যা ঘুৃাতে যা।

আমিও বাবার কথা শুনে রুমে ঘুমাতে চলে আসি আর শুয়ে শুয়ে বাবার বলা কথাটি ভাবতে লাগি।
শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম রবিনকেই বিয়ে করবো।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে