ঋতুর স্মৃতি পর্ব ০২

0
4606

#ঋতুর_স্মৃতি
#পর্ব_০২
#Jechi

সকালে আমি আর বাবা নাস্তা করে নিজেদের জামাকাপড় গুছিয়ে গাড়িতে উঠলাম।আমি গাড়িতে উঠে শুধু রাহাতের দ্বিতীয় স্ত্রী রিহার কথাই ভাবছি।ওর সাথে এমন কেনো হলো।আর রিহার ওই ইচ্ছার জন্যই তো আমি ওখানে যাচ্ছি।

***ফ্লাসব্যাক***

রাহাত-আব্বু আজ আমি তোমাকে রিহার কথা বলতে এসেছি।আসলে তুমিতো জানো যে রিহাও প্রেগন্যান্ট তাও ৮ মাসের।তাই আমি যখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই চেকাপের জন্য।তখন ডাক্তার আমাকে বলে যে রিহার নাকি সমস্যা আছে।আর সমস্যাটাও এমন যে রিহার যখন বেবি হবে তখন নাকি শুধু বেবিটা বাঁচবে রিহা মারা যাবে।আমি এসব শুনে ঠিক ছিলাম না।তাই আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করি তখন ও বলে এটা সত্যি।তখন ও আমাকে বলে ওর শেষ ইচ্ছা টা রাখতে ঋতুকে আবার বাড়ী নিয়ে যেতে।

বাবা তখন ওকে মানা করে দিলেও রাতে ঠিক আমাকে কথাটা বলে।আর আমিও বলেছি ভেবে দেখি।বাবা রুম থেকে যাওয়ার পর আমি যাবো কিনা তা ভাবতে লাগলাম হঠাৎ মনে হলো আমি যে এখানে আছি এটা রাহাত জানলো কিভাবে।
তারমানে কি রাহাত দূরে থেকে বা কারোর মাধ্যমে আমার খোঁজ নিতো।আর আমার সামনে তো এমন ভাবে থাকে যেনো কিছু জানেইনা।আমাকে সত্যিটা জানতে হবে তাই যাবো ভেবে সিদ্ধান্ত নি।

***প্রেজেন্ট***

আমি আর বাবা গাড়ী থেকে বের হয়ে রাহাতের বাড়ীতে গেলাম।দরজার সামনে এসেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।আসলে এই দরজাটা দিয়েই তো বধূসাজে বাড়ীর ভেতরে ডুকলছিলাম আর বন্দা হয়ে এই দরজা দিয়েই বের হয়ে গিয়েছিলাম।

বাবা-কি হয়েছে ঋতু চল।

আমি-হুম বাবা চলো।

আমি আর বাবা ভেতরে গেলাম।আমি দেখলাম সবাই ব্যস্ত আমরা যে এসেছি তাতে কারোর কোনো খোঁজ।তখন রিহা আমার সামনে আসে।

রিহা-কেমন আছো ঋতু???

আমি-এখানে থেকে যতটা ভালো ছিলাম তার থেকে দ্বিগুণ বেশি ভালো আছি।

রিহা-সরি ঋতু সব আমার জন্য হয়েছে।

আমি-না তোমার জন্য না।এটা আমার ভাগ্য।

এবার রাহাত,রাহাতের আব্বু,রাহাতের আম্মু এসে আমার পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছে।কোনোদিন এমন কিছুও আমার সাথে হবে এটা আমি কল্পনা করিনি।এসব দেখে সহ্য করতে না পেরে আমি কান্না করে দিই।তখন সবাই আমাকে বসায়।

রাহাতের আব্বু-আমাদের ক্ষমা করে দেনা মা।

রাহাতের আম্মু-হ্যাঁ রে মা আমাদের ক্ষমা করে দে না।আমরা হয়তো তোর ক্ষমার যোগ্য নই।তবুও আপন লোক ভেবে ক্ষমা করে দে না মা।

আমি-পিলিজ তোমরা এসব বন্ধ করো।আমি এসব সহ্য করতে পারছিনা।আর তাছাড়া আমার তোমাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই।

রাহাত-তুমি আমাদের ক্ষমা করেছো তো?

আমি-হুম করেছি।

রিহা-ঋতু তুমি আমাকে ক্ষমা করোনি?

আমি-হুম আমি তোমাকেও ক্ষমা করেছি।

রিহা-আচ্ছা চলো উপরে।রাহাত!!!!

রাহাত-হুম।

রাহাত আমাদের কাছে এসে রিহাকে ধরে ধরে উপরে নিয়ে যাচ্ছে আর আমিও রিহার পিছনে হেঁটে হেঁটে রিহার রুমে যাচ্ছি।রিহাকে ধরে ধরে নেওয়ায় আমার কোনো জেলাস ফিল হচ্ছেনা।কিন্তু আমার বাচ্চাটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ও মনে ওর বাবার স্নেহ – ভালোবাসাটা পাবেনা।

রিহা-ঋতু কোথায় হারিয়েছো তুমি?

আমি-না কোথাও না।

রিহা-সরি ঋতু আসলে আমার ৬ মাস থেকেই আমি একা সিড়ি দিয়ে উঠতে পারিনা তাই রাহাত আমাকে হেল্প করে উঠার সময়।তুমি পেরেছো?

আমি-আমার বেবি আমার পেটে আসার পর থেকেই আমি একা একা চলতে শিখে গেছি।

রিহা-ওহহ!!!আচ্ছা তোমার কত মাস?

আমি-৬ মাস চলছে।

রিহা আমাকে এভাবে অনেক প্রশ্ন করে আর আমিও রিহার সব প্রশ্নের উত্তর দিই।সাথে সাথে অনেক গল্পও করি।ওখানে শুধু রিহার সাথে গল্প করেই দিন কাটে।ওখানে কিছুদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম রাহাতকে আমার প্রশ্নগুলো করা উচিত।

আমি-রাহাত তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

রাহাত-হুম বলো।

আমি-ওইদিন তুমি আমার বাড়ীতে গিয়েছিলে বাবাকে কানভেন্স করার জন্য যাতে উনি আমাকে এখানে রেখে যায়।কিন্তু তুমি কি করে জানলে যে আমি আমার বাড়ীতে ছিলাম।

রাহাত-আমিতো জানতাম না।(মিথ্যা)

আমি-মিথ্যা বলোনা।আমি বাবা নই যে তোমার এই কথাটা বিশ্বাস করে ফেলবো।সত্যিটা বলো।

রাহাত-সরি!!! হুম আমি জানতাম যে তুমি বাবার কাছেই ছিলে।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এটা জানতাম না যে তুুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে।

আমি-কি করে জানলে এটা?

রাহাত-তোমাকে প্লাটে রেখে আসার পর আমি রোজ তোমার খোঁজ নিতাম দারোয়ানের মাধ্যমে।আর ওখানে যে কাজ করতো ওর মাধ্যমে।আমি ওখানে যেতে পারতাম না তাই এভাবেই।

আমি-তাহলে আমাকে মিথ্যা কেনো বললে?

রাহাত-মিথ্যা কই বললাম সত্যিই তো বললাম।তোমাকে প্লাটে রেখে আসার পর থেকে কি আমি আর তোমার কাছে গিয়েছিলাম যাইনি তো।

রাহাতের এই কথাটা শুনে আমার চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করলো।আসলেতো রাহাত তো আমাকে প্লাটে রেখে আসার পর থেকে একবারও যায়নি।আমি ওর জন্য কত অপেক্ষা করতাম কিন্তু ও তো আসতোই না।আমি আর ওখানে না দাঁড়িয়ে রিহার রুমে চলে এলাম।

রিহা-আরে ঋতু যে আসো বসো।

আমি-হুম।আচ্ছা রিহা একটা কথা বলি।

রিহা-হুম বলো।

আমি-তুমি বিয়ের পর আমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য এমন উঠেপড়ে লেগেছিলে কেনো?

রিহা-তুমি ওসব এখনো…….আমি সরি ঋতু।

আমি-রিহা ওমন কিছু না বলোনা পিলিজ।

রিহা-আমার কাছে মনে হলো তুৃমি আমার সংসারে চলে আসছো তাই আমি এমন করেছি।

আমি-এটা মনে হয়েছে তোমার।

রিহা-হুম।

আমি-কিন্তু এটা তোমার ভুল ধারণা………..

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে