আড়ালে অনুভবে পর্ব-১৬+১৭

0
1625

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১৬+১৭
দোলনায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে এক নবজাতক শিশু।পাশেই তার মা বেডে শুয়ে আছে।একদৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে তার ছেলেকে।সে এমন একটি ফুটফুটে সন্তানের মা!এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
হ্যা ঠিক ই ধরেছেন।এটা রোদেলা আর তার বেবি। বেবির পজিশন হুট করে চেঞ্জ হওয়ায় এক রাতের মাঝেই ডক্টর রা অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।রোদেলার কিছুটা লাইফ রিস্ক ছিলো তবে ভাগ্যক্রমে সে পুড়োপুড়ি সুস্থ।
তড়িঘড়ি করে কেবিন ঢুকে হাপাতে থাকে প্রভা। সকালে উঠেই এমন একটা খবর শুনে আর এক মিনিট ও দেড়ি করেনি সে।ছুটে চলে আসে হসপিটাল এ।
প্রভা এবার হাত স্যানিটাইজ করে দোলনা থেকে কোলে তুলে নেয় শিশুটিকে।বাচ্চাটির ও যেনো সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম ভেঙে গেলো।তবে সে কাদলো না, বরং তাকিয়ে রইলো প্রভার দিকে।যেনো সে চেনার চেষ্টা করছে এই মানুষটি কে।প্রভাও বাচ্চার কাণ্ড থেকে মুচকি হাসলো।
তখনি রুমে ঢুকলো সাদা এপ্রোন পরিহিত এক যুবক।এটা আর কেউ নয় সয়ং নিরব।নিরবের ইন্টার্নশিপ শেষ হয়েছে গত ৬ মাস আগেই। রেজাল্ট অনেক ভালো থাকায় চাকরি পেতে দু দিন ও লাগেনি তার।বর্তমানে এই হসপিটাল এই জয়েন্ট করেছে সে।আরো অনেক জায়গা থাকলেও সে তার দিয়াপাখির চেয়ে দূড়ে যেতে চায়নি।
এত অল্প দিনেই বেশ কয়েকটি ক্রিটিকাল সার্জারি তে সাফল্য অর্জন করায় হসপিটাল এ বেশ নাম ডাক ও হয়ে গেছে তার।
নিরব এপ্রোন এর পকেট থেকে এক হাত বের করে রোদেলার পাশে দাঁড়িয়ে স্যালাইন টা একটু ঠিক করে প্রভার পাশে এসে দাঁড়ায়। পাশেই চেয়ারে ডক্টর লাবনি রোদেলা কে চেক করছিলো।

নিরব:ডঃ লাবনি,পেশেন্ট এর কন্ডিশন ঠিক আছে তো?

লাবনি: জি ডঃ নিরব।পেশেন্ট এন্ড বেবি দুজনেই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। (উঠে দাঁড়িয়ে নিরব এর সামনে এসে বলে)

নিরব:থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ।

লাবনি:থ্যাংক ইউ বলার কিছুই নেই ডঃ।এটা আমার ডিউটি।
লাবনি মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়।

প্রভা:মিঃ চঞ্চল ওকে কোলে নেবে? (ও হ্যা,প্রভা এখন নিরব কে তুমি বলেই ডাকে)

নিরব:না না,আমি পারবোনা।কি ছোট্ট শরীর। যদি পরে যায়!

প্রভা:আরে নিন না কিচ্ছু হবে না।

রোদ্দুর:আরে প্রভা ওকে এতো জোড় করোনা তো।নিজের ছেলে মেয়ে হলে তখন সব ভয় জেটে যাবে।

রোদেলা:ঠিক ই বলেছো।কিন্তু হ্যা,আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি প্রভা।তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের ই বিয়ে দিবি।

সুপ্তি:ইম্পসিবল।ওর মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দেবে।মনে রাখিস সাদু। (বলেই দড়জা থেকে ভিতরে ঢুকলো সুপ্তি।সেও বর্তমানে চার মাসের গর্ভবতী)

অঙ্কিত:কারেক্ট। (সুপ্তির পাশে এসে দাড়ালো)

রোদেলা:মোটেই না।আমার ছেলের সঙ্গে।

সুপ্তি:না আমার ছেলের সঙ্গে।

প্রভা:চুউউউউউউপ।মানে তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো নাকি?আমার এখনো বিয়েই হলো না আর ওনারা মেয়ের কথা ভেবে নিচ্ছে।লাইক সিরিয়াসলি!

রোদেলা:হয়নি তো কি হয়েছে?খুব তাড়াতাড়ি ই হবে।

সুপ্তি:সেটাই আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো।

নিরব:আরে বোনেরা তোমরা ওকে বলছো কেনো? ওকে বলে আর কি ই বা হবে?তার চেয়ে বরং তোমরা আমাকে বলো,তোমাদের কয়টা মেয়ে লাগবে।বাকিটা আমার দায়িত্ব।
(কথাটা বলেই প্রভার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে
প্রভা এবার রাগী লুকে ওর দিকে তাকাতেই নিরব মুচকি হেসে মাথা চুলকালো।)

নিরব:বাই দা ওয়ে,বাচ্চার নাম কি রাখা হয়েছে?

প্রভা:এই আমি বলি,আমি বলি?

রোদেলা:ওকে তুই ই রাখ।

প্রভা:তো ১,২,৩..রোদেলা আর রোদ্দুর এর ছেলে সূর্য।কেমন লাগলো?

রোদেলা আর রোদ্দুর একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।বাকিরাও হাসলো এবং নামের খুব প্রশংসা করলো।

নিরব:(একবার ঘড়ি দেখে নিলো) ওকে গাইজ, আমায় এখন যেতে হবে।একটা ওটি আছে। দু ঘণ্টা পর যেনো ক্যান্টিন এ দেখতে পাই দিয়াপাখি। (শেষের কথাটা প্রভার কানে কানে বললো)

_____””
দীর্ঘ ১০ মিনিট ধরে নিরব কে জড়িয়ে ধরে কেদেই চলেছে প্রভা।ইতিমধ্যে হেচকি উঠে গেছে তার।

নিরব:এই দিয়াপাখি,আর কতো কাঁদবে? এভাবে কেদোনা প্লিজ।আরে আমি কি সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি নাকি?

প্রভা:খ খবরদার এমন কথা নেক্সট টাইম বলবে না।

নিরব:ঠিক আছে তাহলে কান্না থামাও।

প্রভা:আ আমি কি ক করবো?খুব কান্না পাচ্ছে।

নিরব:প্লিজ জানপাখি এভাবে কেদোনা।তুমি এভাবে কাদলে আমি যাবো কি করে বলতো? জাস্ট এক সপ্তাহের ই তো ব্যাপার। আমারো কি তোমায় ছাড়া থাকতে ভালো লাগবে বলো?কিন্তু কি করবো?আমাকে তো যেতেই হবে।

প্রভা:আমার কেনো জানিনা খুব ভয় করছে নিরব।মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে অনেক দূড়ে চলে যাচ্ছো।

নিরব:(সজত্নে প্রেয়সির চোখের জল মুছিয়ে দিলো।তারপর তার কপালে ঠোট ছুইয়ে দিলো) ভালোবাসার আসল মানে কি জানো দিয়াপাখি? অনুভব করা।শত মাইল,হাজার মাইল দূড় থেকেও অনুভব করার নাম ই তো ভালোবাসা।আরে এ কেমন ভালোবাসা যদি তুমি তাকে আড়ালে থেকেও অনুভব ই না করতে পারলে!তাই তো বলছি,আমি তোমার থেকে যতই দূড়ে থাকিনা কেনো তুমি অনুভব করবে আমি তোমার সঙ্গেই আছি।আমিও ঠিক তেমন ভাবেই তোমায় প্রতিমুহূর্তে আড়ালে অনুভব করে যাবো।মাত্র তো সাত টা দিনের ই ব্যাপার।এ কটা দিন পারবেনা আমায় নিজের আড়ালে অনুভবে রেখে কাটাতে?

প্রভা:পারবো।শুধু সাত দিন কেনো আমি বছর এর পর বছরো তোমাকে আড়ালে অনুভব করে কাটিয়ে দিতে পারবো নিরব।কিন্তু আমার ভয়টা সেখানে না।আমার কেনো এমন লাগছে আমি নিজেও জানি না।আচ্ছা তুমি ফোন দেবে তো?

নিরব:ওখানে হয়তোবা নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবেনা দিয়াপাখি।

প্রভা:(মুহূর্তেই মনটা আরো বিষন্ন হয়ে গেলো)

নিরব:আমি তারপর ও চেষ্টা করবো দিয়াপাখি। আফটার অল,আমি কি আমার দিয়াপাখির সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারি?

প্রভা মুচকি হাসে এবার।ইতিমধ্যে ওদের গাড়ি চলে আসে।প্রভা হাসিমুখে বিদায় দেয় নিরব কে। ঠিক তখনি ওর বাম চোখটা লাফিয়ে ওঠে।প্রভার ভয়টা এবার দ্বিগুণ বেড়ে যায়।লোকে বলে বাম চোখ লাফানো নাকি ভালো লক্ষন নয়।প্রভা অবশ্য কখনো এসব বিশ্বাস করেনি তবে আজ ওর ও ভয় করছে।

আসলে নিরব সাত দিনের জন্য বান্দরবন এ মেডিকেল ক্যাম্প এ গেছে।ও যেতে চেয়েছিলো তবে বাধ্য হিয়ে যেতেই হলো।আর এটা শোনার পর থেকেই কেঁদে ভাসাচ্ছে।
যাই হোক,প্রভা যেই না হোস্টেল এ ঢুকতে যাবে তখনি ওর ফোন টা বেজে উঠলো।ফোন টা হাতে নিতেই ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।কারণ সিনথিয়া ফোন দিয়েছে।দ্রুতগতিতে ফোন টা রিসিভ করলো প্রভা।তবে তারপর যা শুনলো তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

____,,,,,
বাড়িতে ঢুকতেই সোফায় আশরাফ কে বসে থাকতে দেখে যতটা না অবাক হলো তার চেয়েও বেশি অবাক হলো তার পাশে মৌমিতা কে দেখে। আর তার পাশেই বসে আছে কাব্য রেজোয়ান। এই কয় মাসে প্রভা নিরবের ব্যাপারে সবটাই জানতে পেরেছে।মৌমিতা অর্থাৎ নিরব এর মা নিরব এর যখন ৬ বছর বয়স তখন পালিয়ে গিয়ে নিজের বয়ফ্রেন্ড অর্থাৎ কাব্য রেজোয়ান কে বিয়ে করে।তাদের একটা ছেলেও আছে।এটা অবশ্য মৌমিতার ছেলে না,কাব্যের আগের ঘড়ের ছেলে।

তবে সেই ছেলে যে আশরাফ তা প্রভার জানা ছিলোনা।এমনকি কল্পনাও করেনি কখনো। ভিতরে ঢোকার সাথে সাথেই প্রভার মা এসে ওকে রুমে যেতে বললো।প্রভা কিছু বলতে চাইলেও বলার সুযোগ দিলো না।

।।
বিয়ের আসরে কনে সেজে বসে আছে প্রভা।তার মা কে হাজার বার বলার পর ও সে কোনো কথা শোনেনি।এমনকি অঙ্কিত,সুপ্তি আর বাকিরাও অনেক বার বলেছে।কিন্তু সে কারোর কথাই শোনেনি বরং প্রভাবে কতগুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছে।এই ছয় দিনে সবাই নিরব এর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।ও যেখানে গেছে সেখানে একটুও নেটওয়ার্ক নেই।
বিয়েটা খুব বেশি বড়সড় ভাবে হচ্ছে না।শুধু বিয়েটা পরিয়ে রাখা হবে তবে মেয়েকে তারা কিছুদিন পর নিয়ে যাবে।ধুমধাম করে আয়োজন এর মাধ্যমে।
প্রভা মনে মনে বারবার বলে যাচ্ছে, প্লিজ নিরব, চলে এসো।আমি যে সারাজীবন নিরব এর দিয়াপাখি হয়ে থাকতে চাই।তোমার দিয়াপাখি যে আজ অন্য কারোর হয়ে যাচ্ছে।

কাজি যেই না বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখন ই দড়জার কাছ থেকে একজন বলে ওঠে,
–এই বিয়ে হবেনা।

দড়জায় আর কেউ নয় সয়ং নিরব দাঁড়িয়ে ছিলো।চোখ দিয়ে তার আগুণ ঝড়ছে।মাথার রগ গুলো খানিকটা ফুলে উঠেছে।হাতের মুঠি শক্ত করে রেখেছে সে।
নিরব কে দেখে যেনো প্রভার জানে পানি আসে। কাপা কাপা গলায় সে বলে ওঠে,
প্রভা:ন ন নিরব..

প্রভার দিকে তাকাতেই নিরব এর শ্বাস আটকে গেলো।কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার!কাদতে কাদতে চোখ ফুলে গেছে।
প্রভা সোফা থেকে উঠে নিরব এর দিকে যেতে চাইলেও তার মা আটকে নেয়।প্রভা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে দেয় এবার।
এদিকে মৌমিতার জান যায় যায় অবস্থা এখানে নিরব কে দেখে।

কাব্য:কি হচ্ছে টা কি এখানে?আর এই ছেলেটা কে?

নিরব:আপনি জানেন না আমি কে?মিঃ কাব্য
রেজোয়ান।

কাব্য:আজব,আমি তোমাকে কি করে চিনবো।

নিরব:তো মিসেস মৌমিতা রেজোয়ান আপনিও কি চেনেন না আমায়?

মৌমিতা:নিরব..

নিরব:যাক,তাও চিনতে পেরেছেন।

কাব্য:নিরব? (অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মৌমিতা কে।মৌমিতা মাথা নিচু করে রইলো।)

নিরব:হ্যা আমি ই নিরব।তবে আমি এখানে অন্য কোনো পরিচয়ে আসিনি।আমি এসেছি একজন বিবাহিত নারীকে আবারো তার অমতে বিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করতে।

আশরাফ:বিবাহিত নারী মানে?

নিরব:দিয়াপাখি,বাকিটা তুমি বলবে নাকি আমি?
(প্রভা মাথা নিচু করে থাকে) ওকে আমি ই বলছি। অঙ্কিত!
ডাকার সাথে সাথেই অঙ্কিত একটা পেপার এনে নিরবের হাতে দিলো।নিরব এবার সেটা খুলে সবার সামনে ধরে।সেটা দেখে সবার চোখ বড় হয়ে যায়।কারণ সেটা নিরব আর প্রভার রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট।
মুনতাহা(প্রভার মা): আমি এ বিয়ে মানিনা।আর তুমি কেনই বা এই অপয়া মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছো বলো তো?এই মেয়ে একটা অলক্ষণে মেয়ে।এই মেয়ে যেখানে থাকবে সেখানে কখনো সুখ আসবে না কখনো না।ও তোমার জীবনে বিপদ ডেকে আনবে।তুমি..

নিরব:ব্যাস আন্টি অনেক বেশি বলে ফেলেছেন আপনি।আর আমার স্ত্রী কে এভাবে বলার সাহস কি করে হয় আপনার?আর আপনার সুবিধার জন্য বলে রাখি, দিয়া যদি মায়ার জন্য বিপদ ও ডেকে আনে তবে সেই বিপদ আমরা দুজন মিলে মোকাবেলা করবো।এই বিষয়ে আপনার এতো নআ ভাবলেও চলবে।

কথাটা বলেই দিয়ার (প্রভাকে এখন থেকে দিয়া বলেই ডাকবো) হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসায়।তাদের সঙ্গে অঙ্কিত আর সুপ্তিও যায়।দিয়া কিচ্ছুটি বলছে না।নিজের মায়ের মুখে এই কথা শুনে কোন মেয়ে সুস্থ থাকতে পারে?
নিরব খেয়াল করলো দিয়া কাদছে।তবুও বাধা দিলোনা।কাদুক না মেয়েটা,কাদতে তবু মনটা একটু হালকা হবে।

________🌼
বাসর ঘরে মেয়েরা বসে থাকে লজ্জা নিয়ে,অথবা ভয় নিয়ে।কিন্তু প্রভার লেন যে এখনো মায়ের বলা কথাটা,”ও তোমার জীবনে বিপদ ডেকে আনবে” এই কথাটাই বাজছে।
বাড়ি থেকে নিরব সোজা কাজি অফিস এ চলে যায়।ইসলামিক ভাবেও ওদের বিয়েটা হয়ে যায়। এর আগেই নিরব প্রভাকে দিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিয়েছিলো।কারণ ও কোনো রিস্ক নিতে চায়না।তার যে দিয়াপাখি কে চাই ই চাই।

দড়জায় খটখট আওয়াজে কেপে ওঠে প্রভা। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও আজ সে আনন্দিত হতে পারছে না।চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে তার।
নিরব এসে প্রভার পাশে বসতেই প্রভার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।ইতিমধ্যে হাত পা কাপতে শুরু করর দিয়েছে।নিরব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রভার হাত দুটো একসাথে করে ধরে।

নিরব:আমার উপর রাগ হচ্ছে তাই না?আমার জন্য আন্টি তোমায় এতগুলো কিথা শোনালো। তবে বিশ্বাস করো দিয়াপাখি,আমি তো এমনটা চাইনি।আমিতো সবার সম্পতিতে তোমায় নিজের কাছে আনতে চেয়েছিলাম।তবে এমনটা কেনো হলো বলতো?আমি আর একটু দেড়ি করলে,,না না নিরবের দিয়াপাখি অন্য কারোর হতেই পারে না।
এভাবে কাপছো কেনো তুমি?চিন্তা নেই,তোমার সঙ্গে তেমন কিছুই করবোনা আমি।

প্রভা:(অবাক চোখে তাকালো নিরব এর দিকে)

নিরব:(মুচকি হেসে প্রভাকে বুকে টেনে নিলো।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো) কারোর মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কিছুর শুভ সূচনা হয়না দিয়াপাখি।তবে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তোমার মা একদিন নিজে তোমায় আমার হাতে তুলে দেবে।মিলিয়ে নিও তুমি,কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমি তোমায় সম্পূর্নরূপে নিজের করে নেবোনা। তোমায় কাছে পেয়েছি এই আমার জন্য অনেক। বুঝলে?

প্রভা:এতো কিছু কি আমার প্রাপ্য নিরব?আপনাকে কি সত্যি ই আমি ডিজার্ভ করি? আমি তো অপয়া তাই না,আমি যদি আপনার জীবনে বিপদ ডেকে আনি?

নিরব:হুশশ,এই কথা আজ বললে কিন্তু পরিবর্তিতে যেনো আর না শুনি।তোমাকে সারা পৃথিবী অলক্ষি বললেও তুমি আমার কাছে লক্ষি। আর এখন থেকে আমার জীবনটা শুধু আমার নয়,তোমারো।তাই আমাদের জীবনে কোনো বিপদ এলে আমরা একসঙ্গে তার মোকাবেলা করবো।

দু হাতে প্রভার মুখ উচু করে ধরে নিরব।অধর ছোয়ায় তার কপালে।প্রভা চোখ বন্ধ করে নেয়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে জমে থাকা অশ্রু।নিরব সজত্নে তা মুছিয়ে দিয়ে নিজের আয়ত্তে করে নেয় প্রেয়সির অধরযুগল।
কিছুক্ষন পর তাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।নিরব নিজেও শুয়ে পরে।প্রভাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবারো ঠোট ছোয়ায় তার কপালে। কানের কাছে গিয়ে বলে,
–এটুকু থেকে কিন্তু মুক্তি পাচ্ছো না দিয়াপাখি।

প্রভা মুচকি হেসে মুখ লোকালো নিরব এর বুকে। নিরব ও সজত্নে বুকে জড়িয়ে নেয় প্রেয়সি কে।
অতঃপর,দুজনে পা রাখে ঘুমের রাজ্যে।

তবে এর পরবর্তি সকালে কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে