আস্থা পর্ব-০৪

0
860

#আস্থা

পর্ব ৪

Farzana Akter Mithila

আরফানঃ আমার বোন কে নিয়ে এত মজা করনা দেখো একদিন সব ও এক হাতে সামলাবে

এইভাবেই খুনশুটি আনন্দের মধ্যে আইরার পরীক্ষা শেষ হয়

মহিনঃ আইরা তোমার সাথে কিছু কথা আছে

আইরাঃ পাপা কি কথা বল

মহিনঃ আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি

আইরা বিয়ের কথা শুনতে অবাক হয়ে যায় মনে মনে ভাবতে থাকে পাপা আমাকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলল এখন কিভাবে বলি আমি রায়ান কে ভালবাসি

মহিনঃ আশা করি তোমার কোন আপত্তি নেই।ছেলে ভালো ফ্যামিলি ও ভালো

আইরাঃ পাপা আসলে

মহিনঃ আসলে কি?

আইরাঃ আমি এই বিয়ে করতে পারবনা

মহিনঃ আচ্ছা করোনা।পরে বলোনা তুমি বিয়ে করবা

আইরাঃ বলবো না

আন্নিঃ ছেলেটা কে দেখে রিজেক্ট কর

আইরাঃ দেখার প্রয়োজন নেই ভাবি

আন্নিঃ আফসোস করবি

আইরা চুপ

আন্নি একটা ছবি আইরার সামনে ধরল

আইরা ছবিটি দেখে অবাক-

মহিনঃ আন্নি ওকে জোর করিস না।আমি আজিজ কে বারন করে দিচ্ছি

আইরাঃ না পাপা আমি এই বিয়ে তে রাজি
বলেই মহিন কে জড়িয়ে ধরল

মহিনঃ আমি তো জানি আমার মেয়েটা রায়ান কে ভালবাসে অন্য কারোর সাথে আমি কিভাবে বিয়ে ঠিক করি।কিন্তু রায়ান এখনো জানেনা আজিজ ওর বার্থডে তে সারপ্রাইজ দিবে।ওকে বলিস না

আইরাঃ তুমি বেস্ট পাপা আই লাভ ইউ

বলেই আইরা নিজের রুমে চলে গেল

আইরা খুব খুশি নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে

আজ রায়ান এর বার্থডে

আইরা লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়েছে সাথে হালকা সোনার গয়না কালো লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে কানের পাশে ২টো কাঠগোলাপ গুজে দিল
অসাধারণ লাগছে তাকে নিজে কে আয়নায় দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো আর কিছু সময় পর রায়ান তার অনামিকা আংগুল এ আংটি পড়াবে ভাবতেই মুখে হাসি চলে আসল

আন্নিঃ কিরে তোর হয়েছে

আইরাঃ এইতো ভাবি হয়েছে চল

আন্নিঃ বাহ খুব সুন্দর লাগছে তোকে আজ তো রায়ান চোখ সরাতে পারবেনা
আইরাঃ ☺️☺
আন্নিঃ থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা

আইরাঃ নিচে চল ভাবি

আন্নিঃ হুম চল

আইরা আর আন্নি নিচে আসতেই আরফান আন্নি কে জড়িয়ে ধরল
আন্নি সবার সামনে লজ্জা পেয়ে গেল

আইরাঃ ভাইয়া এটা লিভিং রুম

আরফান তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে

আরফানঃ বোন আজ আমি খুব খুব খুশি

আন্নিঃ কেন আমাকে বিদায় করে দিবি বলে?

আরফানঃ হুর পাগলি
আমি বাবা হতে চলেছি

আন্নিঃ সত্যি

আরফানঃ এই দেখো রিপোর্ট

আন্নিঃ ৫ বছর এই দিন টার অপেক্ষাই ছিলাম আল্লাহ তুমি আমার ডাক শুনেছে

মহিনঃ আজ আমি সব থেকে বেশি খুশি আমার ২ ছেলে মেয়ে মন থেকে খুশি আজ আল্লাহ আমার পরিবারকে সারাজীবন এইভাবে খুশি রেখো

শিমলাঃ এখন থেকে সাবধানে থাকবি আর কোন কাজে হাত দিবিনা

আন্নিঃ আচ্ছা মামনি এবার চল

আরফানঃ হুম চল

সবাই রায়ান দের বাসার উদ্দেশ্য বের হলো

৩০ মিনিট এর মধ্যে চলে আসল রায়ান দের বাসায়

আইরা গাড়ি থেকে নেমে দেখে গোলাপ এর পাপড়ি দিয়ে রাস্তা সাজানো
আইরা অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে

আজিজঃ কি হলো মা আমার বাসার মেয়ে হয়ে আসবিনা??

আইরা কিছু বলল না খুশিতে চোখে পানি চলে এলো

রায়ান এর আম্মু এগিয়ে এসে আইরাকে বাসার ভিতরে নিয়ে এলো

কিছু সময় পর

রিয়াদঃ আসসালামু আলাইকুম আজ আমার ছোট ভাই রায়ান আহমেদ এর শুভ জন্মদিন এর এই ছোট আয়োজন আছে একটা গুড নিউজ

বলতেই রায়ান দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল আমিও তোমাদের একটা গুড নিউজ দিতে চায়

সবাই রায়ান এর দিকে তাকালো আইরা এক দৃষ্টিতে রায়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে রায়ানকে

রায়ানঃ আজ আমার জীবনের সব থেকে খুশির দিন আজ আমি আমার প্রিয় মানুষ টাকে নিজের করে নিয়েছি
মিতু প্লিজ কাম

মিতু দরজার পিছন থেকে রায়ান এর কাছে এসে ওর হাত ধরলো

রায়ানঃ আপনাদের সকল এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এই হচ্ছে আমার ওয়াইফ মিতু আজ আমরা বিয়ে করেছি সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন

রায়ান এর কথা শুনে আইরা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল

রায়ান আর আইরার এর পরিবার রায়ান এর এই কথা শুনে অবাকের শীর্ষে

আজিজ আহমেদ কিছু বলতে যাবে তখন আইরা বলল

আইরাঃ কংগ্রাচুলেশনস রায়ান আহমেদ এন্ড মিতু আফরোজ
প্লিজ আপনারা এসে কেক কাটুন সবাই অপেক্ষা করছে

রায়ান মনে মনে
পারলে আমাকে মাফ করে দিস আইরা কিন্তু আমার যে আর কিছু করার নেই আমি নিরুপায় হয়ে আজ মিতু কে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম

রায়ানঃ ধন্যবাদ
মিতু চল কেক কাটি

রায়ান আর মিতু মিলে কেক কাটে
পরিবারের মানুষ গুলো নিরব হয়ে সব দেখছে
অতিথি গন হাতে তালি দিচ্ছে আর সেই তালির আওয়াজে আইরার বুক ক্ষত হয়ে চলেছে

অতিথি রা খাওয়া দাওয়া করে সবাই চলে গেছে

আহমেদ ম্যানশন এ চুপ করে দাড়িয়ে আছে ২পরিবারের লোক

আজিজঃ রায়ান তুমি আমাদের কাউকে না জানিয়ে এমন করবে আমরা কল্পনা করতে পারিনি

রায়ানঃ আমি মিতু কে ভালবাসি আব্বু আর মিতু অনেক ভালো মেয়ে ওকে তোমরা মেনে নিবে তাই

রাবেয়া(রায়ানের আম্মু) রায়ানের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল

রাবেয়াঃ কেন করলি এমন?? মেয়েটা কি দোষ করেছিল??

রায়ানঃ আম্মু তুমি ওর জন্য আমাকে মারলে?? ওর মত কেয়ার লেস মেয়েকে বিয়ে করা যায়? ও এখন নিজেকে সামলাতে পারেনা সংসার কিভাবে সামলাবে?? ওর সাথে জাস্ট টাইম পাস করেছি আসলে আমি মিতুকে ভালোবাসি আর আইরাকে বন্ধু হিসাবে রাখা যায় বউ হিসাবেনা।আর মিতু খুব ভালো নম্র ভদ্র সংসারী মেয়ে

রাবেয়াঃ কে কেমন আমাকে বুঝাতে আসিস না
মিতু তোর বাবা জানে তুই বিয়ে করেছিস

মিতুঃ জি ফুপি আব্বু জানে

আইরাঃ আন্টি যা হওয়ার হয়ে গেছে তুমি ওদের বরন করে নাও
রায়ান তো ঠিক বলেছে কোথায় মিতু আর কোথায় আমি

রাবেয়াঃ তুই চুপ কর

আইরাঃ আন্টি আমাকে তো মেয়ে মনে কর তাই না

রাবেয়াঃ মনে করিনা তুই আমার মেয়েই

আইরাঃ তাহলে ওদের মেনে নাও

আরফানঃ কি বলছিস তুই এত কিছুর পরও তুই ওর কথা ভাবছিস?? ওকে আমি তো আমি

আইরাঃ না ভাইয়া ওকে তুমি কিছু করবা না

আরফানঃ আইরা

আইরাঃরিয়াদ ভাইয়া তুমি আমাকে একটা হেল্প করবে?

রিয়াদঃ কি হেল্প বল

আইরাঃ আমাকে কিছু ফুল এনে দাও রায়ান এর বাসর ঘর সাজাতে হবে তো

মহিনঃ অনেক হয়েছে আইরা আর সহ্য করতে পারছিনা আমি

আইরাঃ আমি সহ্য করতে পারলে তোমরা কেন পারবেনা পাপা?? রায়ান এর কথা গুলো তো সত্তি তাইনা আমি তো ওর যোগ্য ছিলাম না আর আল্লাহ ওর ভাগ্যে আমাকে রাখেনি তাই ওর সাথে আমার বিয়ে হইনি
ওর ভাগ্যে যে ছিল তাকেই বিয়ে করছে

মহিনঃ বাসায় চল সবাই।

আইরাঃ না

মহিনঃ না মানে বাসায় চল

আইরাঃ আরে পাপা রায়ান আমার ভালোবাসা ছিল কিন্তু তার সাথে আমার বন্ধু ও ছিল ভালোবাসা শেষ হলেও বন্ধুত্ব শেষ হইনি আজকে ওর খুশির দিনে আমি ওর সাথে থাকব না এটা হয়না
বাসায় যাব একটু পরে ওর বাসর সাজিয়ে

আরফানঃ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস??
আইরাঃ না তো ভাইয়া আমি একদম ঠিক আছি

আইরার জেদ এর কাছে সবাই হার মানে
বাধ্য হয় আইরার পাগলামি তে তাল মিলাতে

আইরা নিজে হাতে রায়ান এর বাসর সাজাচ্ছে

বাসর সাজিয়ে মিতুকে রায়ান এর রুমে দিয়ে আসল

রায়ান কে ডেকে রুমে যেতে বলল
আর বলল

আইরাঃ আজ আমার সাথে যা হল তার বিচার উপর এর বিচারক করবে একটা কথা মনে রাখবেন প্রকৃতি কখনো ক্ষমা করবে না।ভালো থাকবেন।

আইরা নিচে চলে আসে বুক ফেটে কান্না আসছে আইরার কিন্তু কাদতে পারছে না
মনে মনে আইরা বলল
আমি চায়না আমার জন্য তোমার কষ্ট পাও

মহিনঃ যা বলেছিস সবাই শুনেছে এবার বাসায় চল

আইরাঃ হুম পাপা যাব
আংকেল আন্টি ভালো থেকো নিজেদের খেয়াল রেখো
রাবেয়া আইরা কে জড়িয়ে ধরে বলে মা রে আমাকে মাফ করে দিস

আইরাঃ তোমাদের কোন দোষ নেই আন্টি আমি তোমাদের মেয়ে হয়েই না হয় থাকলাম

আজিজ মহিন এর কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে
আজিজঃ আমাকে মাফ করে দিস দোস্ত আমার ছেলেটা এমন হবে আমি কল্পনা করতে পারিনি

মহিনঃ তোর কোন দোষ নেই
কিন্তু আমার মেয়েটার কি দোষ ছিলো

আইরাঃ পাপা এসব বাদ দাও বাসায় চল

আইরা সহ তার পরিবার বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়
কিন্তু মাঝ পথে ঘটে দুর্ঘটনা
গাড়ির ব্রেক ফেল করে
আরফান কোন ভাবে কন্ট্রোল করতে পারেনা
আইরাকে ওর পাপা গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই
আইরা একটা গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে
জ্ঞান ফেরার পর যা শুনে আইরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে

চলবে।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে