আস্থা পর্ব-০১

0
1992

আস্থা
পর্ব ১
Farzana Akter Mithila

১০ বছর পর দেশে ফিরেই যে প্রাক্তন এর দেখা পাবো ভাবতে পারিনি ভেবেছিলাম সে হয়তো আসবেনা কিন্তু সবার সাথে সেও দাঁড়িয়ে আছে। ওহ সে তো শুধু আমার প্রাক্তন নয় সে আমার হাসবেন্ড এর ছোট ভাই।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ রায়েদ (আমার হাসবেন্ড) ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল কি হল চল

আমি আমার মেয়ে রাইদা কে নিয়ে এগিয়ে গেলাম রায়েদ পিছনে রায়ান এর সাথে কথা বলতে বলতে আসছে
আমাকে দেখতে আম্নু(আমার শাশুড়ী) এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অভিমানী কণ্ঠে বলল

আম্মুঃ এত দিন পর আমাকে দেখতে ইচ্ছে হলো??

আমিঃ রোজ এ তো দেখতাম আম্মু

আম্মুঃ এই দেখা সেই দেখা এক না রে পাগলি তখন চাইলেও তোকে ছুতে পারতাম না কিন্তু এখন পারব

আমিঃ হুম আম্মু এইতো চলে এসেছি এখন যত ইচ্ছা ছুয়ে দাও
রিয়াদ ভাইয়া রাইদা কে কোলে নিয়ে বলল

রিয়াদঃ এখানে না বাসায় গিয়ে যত খুশি গল্প করো তোমরা এবার চল

আমিঃ হুম ভাইয়া চলুন

গাড়ি তে গিয়ে বসতেই রায়েদ আর রায়ান চলে এলো
গাড়ি চলতে শুরু করেছে

আমি রায়েদ এর দিকে তাকিয়ে আছি সে হয়তো কিছু বুজতে পেরে আমার হাত টা তার হাতের মধ্যে নিয়ে ইশারায় বলল আমার উপর আস্থা রাখো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে
আমি তার কথা শুনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম

বাসায় যেতে যেতে আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে যায়

(আমি আইরা তাসনিম পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার
আমার হাসবেন্ড রায়েদ আহমেদ আর রাইদা হচ্ছে আমার আর রায়েদ এর কলিজা আমাদের একমাত্র মেয়ে।
রায়েদ রা ৩ ভাই
রিয়াদ ভাইয়া বড় রায়েদ মেজো আর রায়ান ছোট ওদের কোন বোন নাই।

বাকিটা পরে জানবেন বাসায় চলে এসেছি

গাড়ি থেকে নেমে বাসা টার দিকে সব সময় আল্লাহর কাছে চাইতাম আমি এই বাসার বউ হব হ্যা হয়েছি কিন্তু যাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিলো যার হাত ধরে এই বাসায় ঢোকার কথা ছিলো সে অন্য কাউকে বউ করে নিয়ে এসেছিল
সেদিন আমিও লাল টুকটুকে শাড়ি পড়েছিলাম,সুন্দর করে সেজেছিলাম ৫ বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছিল আমার কিন্তু আমি জানতাম না আমার সাথে কি হতে চলেছে

হঠাৎ আম্মুর ডাকে অতিত থেকে ফিরে এলাম

বাসার ভিতরে গেলাম
আমাকে দেখেই মিতু (রায়ান এর বউ)এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে

মিতুঃ ভাবি কেমন আছেন

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো??

মিতুঃ এইতো আছি, ভাবি আপনি বসুন আমি আমি কফি করে আনি

আমিঃ বসো তো এখনি কফি করতে হবেনা

মিতুঃভাবি আপনি কি এখন আমার উপর রেগে আছেন??

আমিঃ তোমার উপর কেন রেগে থাকব

মিতুঃ আমার জন্য তো আপনি

মিতুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি বললাম

আমিঃ পুরাতন কথা মন থেকে বাদ দাও ভুলে যাও অনেক গুলো বছর চলে গেছে বুজেছো এখন এসব কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলো

মিতুঃ কিন্তু

আমিঃ কোন কিন্তু নয়
আচ্ছা আমরা কোন রুম এ থাকব??

নিলাঃ তোমাদের আগের রুমেই থাকবে

ভাবিপু(রিয়াদ ভাইয়ার বউ)এসে আমার পাশে বসতে বসতে বলল

আমিঃ ওহ আচ্ছা।
কেমন আছো??

নিলাঃ এইতো ভালো আছি
জার্নি তে কোন প্রব্লেম হইনি তো

আমিঃ না না কোন প্রবলেম হইনি,আজ কোর্ট এ যাওনি??

নিলাঃ কি বলছো এত বছর পর এসেছো আর আমি কোর্টে যাব??

আমিঃ এসেছি তো তোমারা তো যাওনি কখনো

নিলাঃ কিভাবে যায় বল

আমিঃ হুম

পিছন থেকে কেউ বুড়ি বলে ডাকতেই ছুটে গেলাম তার কাছে

আব্বু বলে জড়িয়ে ধরলাম তাকে

আব্বুঃ এতদিন পর অভিমান ভাংলো

আমিঃ তোমাদের উপর কোন অভিমান নেই আব্বু, সব কিছু হারিয়ে তোমাদের কাছেই তো ঠাই মিলল

আব্বু: আমাদের জন্য তুই সব হারিয়েছিস

আমিঃ না আব্বু তোমাদের দোষ ছিলো না দোষ আমার ভাগ্য এর ছিলো এই জন্য সব কিছু একসাথে হারিয়েছিলাম
আচ্ছা পুরাতন কথা বাদ দাও,কেমন আছো বল

আব্বুঃ একটু আগ পর্যন্ত ভাল ছিলাম না তোকে দেখে অনেক ভালো হয়ে গেছি

রায়েদঃ সব আদর ওর আর আমি বুজি পানির জলে ভেসে এসেছি

আব্বুঃ তোরে তো সত্যি নদীর পাড় থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম

রাইদাঃ আব্বু তত্তি তোমালে দাদান পানিল তেতে তুরাই পাইতিলো

রিয়াদঃ হুন মাম্না ওকে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম

ভাইয়ার কথা শুনে বাসার সবাই হেসে উঠল

সবার এই হাসি দেখে মন টা ভরে গেল
আমার কপালে এত সুখ সইবে তো??

রায়েদঃ উপরে চল ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে তাই গল্প কর না হলে শরিল খারাপ করবে
আমিঃ হুম চল
রায়েদঃ রায়ান ব্যাগ গুলো একটু রুমে নিয়ে
রায়ানঃ তোরা যা আমি নিয়ে আসছি

রাইদাঃ আমালে নিয়ে তলো আমাল থুব দরম লাগতে

আমিঃ হুম মাম্না চল
রায়েদ রাইদা কে উপরে যাচ্ছে আমি ওর পিছনে যাচ্ছি
রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম
রুম টা পুরো আমার মনের মত করে সাজানো

দেয়ালে আমাদের ৩জনের ছবি পেইন্ট করা
আরেক দেয়ালে আমাদের বিশেষ মুহূর্তের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো

কিন্তু এগুলো কে করেছে এটাই ভাবছি

রাইদাঃ মাম্মা দেতো এই তবিটা তত্ত তুন্দর

আমিঃ হুম মা খুব সুন্দর, তোমার পছন্দ হয়েছে রুম??

রাইদাঃ হ্যা তিন্ত থুব গলম

আমিঃ এসি অন করে দিয়েছি সোনা

রায়েদঃ মাম্না তুমি এইখানে থাকবে??

রাইদাঃ হ্যা পাপ্পা থাতব,দাদান,দিতা,কাকায় অলেক ভালো

আমিঃ রায়েদ কি বলছো আমরা শুধু বেড়াতে এসেছি

রায়েদঃ পুরোপুরি কি থাকা যায়না আইরা?? ১০ বছর চলে গেছে এখন অতীত নিয়ে কেন ভাব?? তুমি কি আমাকে নিয়ে হ্যাপি নও আইরা??

আমিঃ তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা রায়েদ, আমি তোমাকে নিয়ে হ্যাপি আর তোমাকে নিয়েই থাকতে চায় কিন্তু এইখানে আমি থাকতে পারবনা রায়েদ।এই শহর টা আমার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল নতুন করে আমি তোমাকে আর আমার রাইদা কে হারাতে চায়না

রায়েদঃ আইরা যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখনো ভয় পেলে হবে??
আমরা মারা যাব জেনেও তো দুনিয়ায় এসেছি তাহলে কেন এত ভয় পাও

আমিঃ তোমাদের হারানোর ভয় পায় রায়েদ সব কিছু হারিয়ে একা হয়ে গেছিলাম তখন কিভাবে আমার দিন যেত আমি জানি একমাত্র
এই শহর টাকে বড্ড ভয় করে

রায়ানঃ ভাইয়া আসব

রায়েদঃ হুম আয়।আইরা তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও

হুম যাচ্ছি
বলে আইরা ল্যাগেজ থেকে কাপড় বের করে ওয়াস রুমে চলে গেল

রায়ানঃ ভাইয়া কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

রায়েদঃ হুম বল

রায়ানঃ আমি তোমাদের কথা সব শুনেছি।জানি আড়াল থেকে কিছু শোনা ঠিক না কিন্তু না শুনে নিজেকে সামলাতে পারিনি

রায়েদঃ সমস্যা নেই

রায়ানঃ তোরা কি আবার কানাডা ফিরে যাবি??

রায়েদঃ আইরা ফিরে যেতে চাই কিন্তু আমি থাকতে চায়।

রায়ানঃ আইরা কে সবাই মিলে বোঝালে কি ও থাকবেনা

রায়েদঃ আমি জানিনা রে ভাই
ওকে অনেক বুঝিয়েছি তবুও ওকে মানাতে পারিনি

রায়ানঃ আইরা এখনো আমাকে মাফ করতে পারিনি ভাইয়া,আমার জন্য ও হয়তো থাকবেনা

ওকে বলিস ও যদি চায় তবে আমি মিতু কে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব

রায়েদঃ রায়ান তুই ভুল বুঝছিস ও তোর জন্য না
ও এই শহর কে ভয় পায় সেই এক্সিডেন্ট এর পর থেকে এখনো রাতে ভয় পেয়ে চেচিয়ে উঠে

রায়ানঃ সব কিছুর জন্য আমি দায়ী ভাইয়া পারলে আমাকে মাফ করে দিস

রায়েদঃ নিজেকে দোষ দিস না।যা হওয়ার হয়ে গেছে বাদ দে

রায়ান আর রায়েদ এর কথা মধ্যে আইরা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বলল

আইরাঃ কি কথা হচ্ছে এখানে

রায়েদ রায়ান কে ইশারায় চুপ থাকতে বলল

রায়েদঃ ও বলছে যে রুম পছন্দ হয়েছে কিনা

আইরাঃ আমার রুম টা খুব পছন্দ হয়েছে কে সাজিয়েছে

রায়ানঃ মিতু

আইরাঃ ওহ খুব সুন্দর হয়েছে

আচ্ছা তোমরা কথা বল আমি রাইদা কে নিচে যায়

রায়েদঃ আচ্ছা যাও

আইরাঃ নিচে যাওয়ার সময় গিফট গুলো নিয়ে এসো

এই বলেই আইরা রুম থেকে বেড়িয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল

চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে