আলো আঁধার পর্ব-১২

0
992

#আলো_আঁধার

পর্ব ঃ- ১২
~আঁখি দেব তৃপ্তি

“দিয়া আজ হঠাৎ নিলয়কে ফুসকা নিয়ে যেতে বললো কেন রে? ওর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তো আমাকে নয় তোকে বলে। “- শ্রাবণ।

” নিশ্চয়ই প্রমি ওর বাসায় এসেছে। তাই নিলয়কে বলেছে।”- ঈশান।

“প্রমি আসার সাথে নিলয়কে বলার সম্পর্ক কী? ”

“প্রমি বরাবরই নিলয়কে জ্বালাতে মজা পায় ও একটু সহজ সরল আর ভীতু টাইপ কিনা তাই। দেখিস না আমাদের সামনেও ওর সাথে কতো লাগে। তাই দিয়াকে দিয়ে কাজটা করিয়েছে।”

“হুম বুঝেছি। যাক ভালোই হলো গাধাটা চলে গেছে নয়তো আমার হাতে মার খেত।”

“হা হা হা বেচারা।”

“আচ্ছা রে আজ উঠি। আমার আবার টিউশন আছে দুইটা। ”

“ও আজকে বাদ দিলে হয় না? আমার এক কাজিনের বার্থডে পার্টিতে যেতে হবে। তোকে নিয়ে যাব ভাবছিলাম।”

“নারে গত সপ্তাহে অনেক বাদ পড়েছে পড়ানো এখন আর বাদ দেওয়া যাবে না। তুই যা ওখানে তো আরো অনেকেই থাকবে।”

“আচ্ছা।”

দিয়াদের বাসার নিচে এসে নিলয় ফোন দিল দিয়াকে।

“হ্যালো ”

“বাসার নিচে আয় দিয়া।”

“কেন তুই উপরে উঠতে পারিস না?”

“না আমি ভেতরে ঢুকবো না।”

“কেন? কুকুরের ভয়ে হিহিহি।”

“না আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে নিচে আয়।”

“পারবো না আমার পায়ে ব্যাথা। উপরে এসে দিয়ে যা”

“আমি এতোদূর থেকে কষ্ট করে নিয়ে এলাম আর তুই এখন নিচে নামতে পারছিস না?’

” উদ্ধার করেছো আমায়। এখন উপরে এসে দিয়ে গিয়ে আরেকটু উদ্ধার করো। ”

“তার মানে তুই আসবি না?”

“না।”

“আচ্ছা আমিই আসছি।”

“হা হা হা আয়।”

“আর কে হাসছে তোর পাশে? ”

“কই কেউ নয় তো। আয় তাড়াতাড়ি রাখছি।”

নিলয় কাঁপা কাঁপা পায়ে গেটের ভেতরে প্রবেশ করলো। তারপর চারপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিল। না কুকুরটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মনে জোর পেল নিলয়। এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। কিন্তু যেই সিঁড়িতে পা দিল অমনি একপাশ থেকে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলো কুকুরটা। ভয়ে বুক শুকিয়ে গেল নিলয়ের। এক ছুটে ৩ তালায় পৌঁছে গেল সে। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে দিয়াদের বাসার কলিং বেল এ চাপ দিল।

সন্ধ্যার পর চা বিস্কুট খেয়ে পড়তে বসেছে আলো। কিন্তু আজ পড়াতে মন বসছে না তার। মিজাজটা কেমন যেন গরম গরম লাগছে। হঠাৎ পাশে রাখা ফোন বেজে উঠলো।

“হ্যালো।”

“কীরে আলো তুই কোথায়?”

“কোথায় আর বাসায়।”

“তার মানে তুই এখনো রওয়ানা দিস নি?”

“দেখ নিশু তোকে কতোবার বলেছি আমি যেতে পারবো না।”

“কেন পারবি না? তুই তো জানিস এটা আমার বাংলাদেশের শেষ পার্টি। কদিন পরই আমেরিকা চলে যাব তাই সবাইকে একসাথে নিয়ে কিছু সময় কাটাতে চাইছি।”

“সবাই তো যাচ্ছে তাই না? আমি একজন না গেলে কিছু হবে না।”

“এমন করে কেন বলছিস? তোকে আসতেই হবে। জানিস আজকে সবাই তোকে এক্সপেক্ট করছে পার্টিতে আর আমিও সবাইকে বলে দিয়েছি তুই আসবি। প্লিজ না করিস না।”

“হঠাৎ সবাই আমাকে আশা কেন করছে!”

“ওমা তুই তো এখন সেলিব্রিটি হতে চলেছিস রে আলো।”

“ফালতু কথা বলিস না ওসব এখনো অনেক দূরের ব্যাপার। ”

“দূরের না কাছের আজ এলেই বুঝতে পারবি। আয় না প্লিজ। ”

“কেন বুঝতে পারছিস না আমাকে ওসব জায়গায় মানায় না।”

“কেন মানাবে না শুনি? তুই একবার আয় তারপর দেখ।”

“মেয়েটা এতোকরে যখন বলছে তাহলে যা না ঘুরে আয়।”- পাশ থেকে আলোর মা বললেন।”

“আচ্ছা দেখছি। ”

“দেখছি না আয় তাড়াতাড়ি। আর ফিরার চিন্তা করিস না আমি নাহয় গাড়ি দিয়ে তোকে পৌঁছে দেব।”

“আচ্ছা রাখ। ”

“ওকে।”

দিয়ার মা বাসার দরজা খুলে দেখলেন নিলয় খুব হাঁপাচ্ছে।

“কী হলো বাবা এরকম করছো কেন?”

“না মানে আন্টি ওই কুকুর।”

“ও বুঝেছি। আসো ভেতরে আসো।”

নিলয় ভেতরে ঢুকার পর দিয়ার মা থাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। নিলয় এক নিশ্বাসে পুরোটা শেষ করে ফেললো। নিলয়ের এ অবস্থা দেখে দিয়া ও প্রমি খুব হাসছিলো। ওদের হাসি দেখে দিয়ার মা ওদের ধমক দিয়ে বললেন-

“থাম তোরা। ছেলেটা কতো ভয় পেয়ে গেছে আর তোরা মজা নিচ্ছিস?”

“বাচ্চা ছেলে ভয় না পেলে বড় হবে কীভাবে আন্টি?”- বলে প্রমি আবারও হেসে উঠলো। প্রমির হাসি দেখে গা জ্বলে গেল নিলয়ের। বুঝতে বাকি রইলো না সবকিছু প্রমিই যে করিয়েছে।

” আন্টি আমি তাহলে এখন যাই।”- নিলয়।

“সে কী সবেই তো এলে। চা নাস্তা করে যাও।”

“না না লাগবে না। আমার তাড়া আছে। ”

“ভাব দেখাস না ওকে। বস চুপচাপ। কেমন ফুসকা এনেছিস আগে খেয়ে বুঝতে হবে তো।”- প্রমি।

” ফুসকা তো ফুসকাই এতো বুঝার কী আছে?”- নিলয়।

“দাঁড়া বুঝবি। দিয়া প্লেইট নিয়ে আয় তো ফুসকা রেডি করবো।”

দিয়া রান্নাঘর থেকে প্লেইট নিয়ে এলো। তারপর সবগুলো ফুসকা রেডি করলো। বেশি বেশি করে মরিচ দিল সবকটায়। তারপর একটি নিজের মুখে দিয়ে বললো-

“কীরে এগুলোতে তো ঝাল নেই। কী আনলি এসব?”

“এতো মরিচ তাও বলছিস ঝাল নেই?”- নিলয়।

” নে তুই একটা খেয়ে দেখ।”- বলে নিলয়ের দিকে ফুসকার প্লেট এগিয়ে দিল প্রমি।

“না আমি এসব খাই না।”

“কী? খাও না তাই না? ক্যাম্পাসে কে খিলে তাহলে ফুসকা আমাদের সাথে?”

“আমি ঝাল ছাড়া খাই।”

“এগুলাতেও ঝাল নেই বলছি তো। খেয়ে দেখ।”

“সত্যি? ”

“হুম।”

প্রমির কথায় নিলয় একটি ফুসকা মুখে নিল। অমনি ঝালে মুখ পুরো জ্বলে গেল তার।

রাত ৮ টা বাজে। নিশুদের সারা বাড়ি আলোয় ঝকমক করছে। নিশু খুব গর্জিয়াস ভাবে সেজেছে আজ। নীল রঙের জমকালো গাউনের সাথে সাদা রংয়ের ডায়মন্ড কাট নেকলেস। এতোটাই সুন্দর লাগছে তাকে যে, যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য। অতিথিরাও আসতে শুরু করেছে। নিজের সকল ফেন্ড আর কাছের আত্মীয়দেরই শুধু ইনভাইট করেছে নিশু। গেইটে দাঁড়িয়ে সবাইকে নিজেই স্বাগত জানাচ্ছে সে।

৮ঃ৩০ এর মধ্যে মোটামুটি সবাই এসে পড়েছে। কিন্তু আলো এখনো এলো না। এতোবার বলার পরেও কী আসবে না ও? এটা ভেবে মন কিছুটা খারাপ হলো নিশুর।

“শুভ জন্মদিন ডিয়ার সিস্টার। “- একটি গিফটের প্যাকেট নিশুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো ঈশান।

” ধন্যবাদ ভাইয়া। আসতে এতো দেরি করলে যে।”

“রাস্তায় জ্যামের কারণে একটু দেরি হয়ে গেল রে।”

“ও বুঝেছি। ”

“তোর মুখটা শুকনো লাগছে কেন? কারো পথ চেয়ে আছিস নাকি?”

“হুম। আমার এক ফেন্ড আসার কথা। অনেকবার বললাম কিন্তু এখনো এলো না।”

“আসবে চিন্তা করিস না হয়তো জ্যামে আটকা পড়ে গেছে। একটা কল করে দেখ।”

“আচ্ছা দেখছি।”

আলোর নাম্বারটি ডায়েল করলো নিশু কিন্তু ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিল আলো। আবারো মুখ কালো হয়ে গেল নিশুর।

“কী হলো রে?”- ঈশান।

” ফোনটা কেটে দিল।”

“কার এতো বড় সাহস আমার বোনকে কষ্ট দেয়। তুই বাসার ঠিকানা দে আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। “

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে