আম সন্দেশ পর্ব-০২

0
1387

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০২
#রিমি_ইসলাম

চোখ,মুখ খিঁচিয়ে দৃঢ় হৃদয়ে আল্লাহকে ডাকছি। বর্তমানে এটাই একমাত্র অস্ত্র। নিজে থেকে ওঠার চেষ্টাও যে করিনি তা না। একবার চেষ্টা করেও ব্যালেন্স বিগড়ে যাওয়ায় টাল খেয়ে পড়েই যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে আল্লাহর সহায়ে বেঁচে গেছি। বরাবরই উঁচুতে ভয় আমার। দূর্বল মানসিকতা নিয়ে কোনো কার্যে সফলতা আসে না। যেখানে আমার মনই দূর্বল সেখানে বেঁচে ফিরব কিনা জানি না।মূল প্রশ্ন হলো, এখানে কে আনলো? পাশে দেখতে চেষ্টা করছি না। যদি পাছে পড়ে যাই! সে ভয়ে। হঠাৎ কড়মড় করে কিছু একটা চিবিয়ে খাওয়ার শব্দ কানে এলো। রাত কত গভীর যে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। মাঝরাত তো হবেই। শুনেছি এমন সময় সাধারণ মানুষ কম অতিপ্রাকৃত শক্তিদের আনাগোনা বেশি হয়। এভাবে করমড় করে চিবিয়ে কেউ খাচ্ছে মানে পরিবেশ ভয়ানক। তার উপর নির্জন ব্রীজ। না জানি কত মানুষ লাফিয়ে এখান থেকে প্রাণ দিয়েছে। নয়তো কোনো দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে অক্কা পেয়েছে। তাদের আত্মা নয়তো?

ভাবনা আসতেই এবার দোয়া ইউনুস পড়তে শুরু করি। ভাগ্য এতটাই খারাপ যে শেষে কিনা ভূতের হাতে প্রাণ যাবে? চিন্তা ধারায় আবারও ছিদ্র পড়ে ওই করমড় আওয়াজে। তারপর হো হো করে হাসির ঝঙ্কার। হাসির সুরটা কেমন পরিচিত ঠেকছে। মাথায় একজনের আবছা চেহারা স্মরণে এসে আমার ডুবে যাচ্ছে।

___’ ইউ এ্যফ্রেইড অফ ঘোস্ট? হা হা হা! মাই স্টোমাক গোন্না বি ব্লাস্ট। বুম! ‘

কথার সমাপ্তি টেনে আবার সেই চওড়া হাসি। কটকটে গলায় বললাম,

___’ প্রভাত ভাই, আপনি তো?’

প্রভাত থমকালো না। হাসি অটল রেখেই বললো,
___’ নো আই আম দ্যা বিগেস্ট ঘোস্ট ইন ইওর লাইফ। নাউ টেল মি হোয়াট কাইন্ড অফ ডেথ ইউ ওয়ান্ট?’

ঘোস্ট! সঠিক উক্তি নয়। এই মানুষের সাথে ভূতের তুলনা চলে না। ভূত বাবাজিরাও ইনাকে দেখলে মাফ চেয়ে পার পাবে না। ইতর লোক!
এমন পরিস্থিতিতে মাথা গরম করলে চলবে না। এখনো আমি ব্রীজে ঝুলন্ত। কাজেই শান্ত মেজাজে কণ্ঠে প্রফুল্লতা এনে বললাম,

___’ প্লিজ এখান থেকে নামান! মরে যাব তো! সাঁতার পারি না। পারলেও পানিতে পড়লে রক্ষা নেই। ‘

___’ তাহলে বিয়ে করবি বল? আদারওয়াইজ এভাবেই থাকবি।’

___’ ব্ল্যাকমেইল করছেন? ‘

___’ ধরে নে।’

কিছুক্ষণ নিরবতা। কি বলবো ভাবছি। অপরদিক থেকেও কোনো সাড়া নেই। লোকটা এ অবস্থায় ফেলে চলে গেল নাতো? ভীত দিশাহীন হয়ে চেঁচিয়ে বললাম,

___’ চলে গেলেন?’

ওপাশে নিরবতা। মাঝে মাঝে শুকনো পাতার মড়মড় ধ্বনি ছাড়া কিছু শুনতে পাচ্ছি না। একটু পর উর্বর পুরুষালী গলা বলে উঠলো।

___’ এভাবে তোকে রেখে গেলে বাসায় যেয়ে শান্তিতে ঘুমোতে পারি? ‘

একটু আস্বস্ত হয়ে বললাম,

___’ এইতো আপনি আমার জন্য কেয়ার করেন। তাহলে শুধু শুধু কেন কষ্ট দিচ্ছেন? নামান না দয়া করুন।’

___’ হাবা একটা, কেয়ার করি এটা এখন বুঝলি? বিয়ে কি সাধে করতে চাচ্ছি? এবার ফটফট বল দেখি তোর ডিসিশন কি? সারারাত এভাবে ঝুলবি নাকি? আর কত মশার কামড় খাওয়াবি? ‘

এ তো দেখি ভারী বিপদ! এ কুল ও কুল কোনো কুলই আমার সমর্থনে নেই। রাত বেশ গভীর। বাড়িতে আমার নিখোঁজ বার্তা দাদি জানলে হেল্প পাবো। তবে বাবা জানলে বাড়ির পাশে জ্যান্ত পুঁতে রাখবেন। উপায়হীন হয়ে করুন স্বরে বলি,

___’ আচ্ছা। দেখবো। ‘

___’ কি দেখবি?’

___’ ভেবে।’

এবার কর্তা আমার কথায় খুশি হয়েছেন। প্রভাত ভাই আমায় পাঁজকোলে তুলে সাবধানী হাতে নিচে নামালেন। হাফ ছেড়ে বাঁচি। জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে থাকি। এতক্ষণ তো ঠিকঠাক শ্বাস নিতেও ভুলে ছিলাম। কতক পর পর শ্বাস নিয়ে আবার অনেকক্ষণ পর শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ফুসফুসে ব্যথা ধরে গেছে। আমার ব্রিথিং প্রসেস দেখে উনিও নকল করছেন। মজার ভঙ্গিমায় নাক দিয়ে শ্বাস টানছেন তো টানছেন। এর পরপরই শ্বাস ছেড়ে হাঁপানী রোগীর ন্যায় হাঁপিয়ে কাশতে শুরু করছেন। দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে। আমাকে জ্বালানোর আর কত অভিনব কায়দা তিনি অবলম্বন করবেন?
প্রভাত ভাইয়ের হাতের ঘড়িটা চোখের সামনে ধরতেই মাথায় ঝনাৎ বজ্রপাত হলো। কেউ ভাবতেও পারবে না রাত ৩ টার সময় তাদের সর্ব কনিষ্ঠ কন্যা বাড়ির বাইরে উন্মুক্ত ঘুরছে।
কোনো এক্সকিউজ খাটবে না। কোনো গাল ভাসানো মরা কান্না দেখবে না। বাবা খুব নরম হাতে কাঠিন্য এনে হাত ধরে দরজার ওপারে রেখে বলবেন, ‘ নিজের রাস্তা মাপ যাহ। আমার দুই মেয়ে থাকলেই চলবে। একটা মেয়ে গেলে কিছু ধ্বংস হবে না, উল্টো তোর প্রতিদিনের বাহারী খচর আর তোর বিয়ের মহা খরচের হাত থেকে বাঁচবো। যা দূর হ। ‘

_____
রাত্রী মধ্যপ্রহর অতিক্রান্ত প্রায়। রাস্তা সুনসান। আকাশে ভাসা ভাসা মেঘের আড়ালে রূপোলী চাঁদ। সাঁকো পেরিয়েছি বেশ আগে। আমার হাতে এক চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছেন দেখে আমিও জম্পেশ খেয়ে যাচ্ছি। কোনো হেলদোল নেই। চিন্তা নেই। কি হবে এত চিন্তা করে! কম বয়সে অক্কা পাবো। আর টেনশন ছাড়া অনেকদিন বাঁচব। একহাতে চিপসের প্যাকেট ধরে গাড়ির সিটে মাথা ঠুকে চোখ বুজে বসে তৃপ্তির সাথে চিপস খাচ্ছি। বর্তমানের কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে থাকতে চাই। ঠিক তখনই পাশে বসা সেই সাদা বিড়ালী চামড়ার অধিকারী বলে উঠলেন।

___’ রাক্ষসী দস্যি মেয়ে, একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না আপনি খাবেন কিনা! সৌজন্যবোধ নেই। ম্যানারস শেখায়নি কেউ? ‘

প্রভাত ভাইয়া বকাঝকা পূর্ণ কথায় আচমকা চিপসের বদলে ঠোঁটে কামড় লেগে গেল। মুহূর্তে ঠোঁট ফুলে বোম। পিঁপড়া কামড়ালে যেমন হয়
। ফ্রন্ট মিররে দেখে নিজেই আঁতকে উঠি। কি বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে! প্রভাত ভাই মহাবিরক্ত নিয়ে বললেন,

___’ এই দেখ, মেয়েরা রাগ ভাঙানোর মার্ভেলাস আইডিয়া নিয়েই জন্মে। ইচ্ছা মতো কতক বকা দেব কি তার আগেই রাজকন্যা নিজেকে আঘাত করে আমার রাগ কর্পূরের মতো উবিয়ে দিলেন। দেখি-দেখি?

তিনি ব্যস্ত হাতে ঠোঁট নিরীক্ষণ করে বললেন,

___’ এ্যন্টিসেপটিক কিছু তো সাথে নেই। এক কাজ করি আমি নিজেই এ্যন্টিসেপটিকের ভূমিকা পালন করি। একটু চুমু খাই।’

আহাম্মক হয়ে প্রশ্ন করলাম।

___’ চুমুতে এ্যন্টিসেপটিক উপাদান থাকে?’

___’ আরে লিপ থেরাপি দরকার তোর। ওতো বুঝবি না। ‘

ঝনাৎ করে তাঁর হাতটা ফেলে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসতেই উনি রেগে তাকালেন আমার দিকে। আমি এবার আর ভয় পেলাম না। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। কোনো হেলদোল নেই। অর্ধেক পথ পেরোতে হুশ ফিরলো আমরা পথ ভুল করেছি। কারণ বা’দিকের মোড় ঘুরে আমার বাড়ির পথ। কিন্তু আমরা ডান মোড়ে ঘুরলাম। তা দেখে ঝাঁঝা করে উঠি।

___’ আরে আরে, ভুল রাস্তা, বামে যান বামে যান। ‘

প্রভাত ভাইয়া লাজুক হাসিতে গলে পড়লেন। ঠিক বুঝলাম না আমার কোন বাক্য তার লাজের হেতু হলো। তিনি হাসি অটল রেখেই বললেন,

___’ এত জান জান করো না তো। আই ফিল সামথিং ডিফ্রেন্ট। আর ঠিক রাস্তায়-ই যাচ্ছি। তুমি তোমার বাসায় না। যাচ্ছ আমার বাসায় ওরফে্ তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি।’

আকাশে ভয়ংকর মেঘের গর্জনের মতো শোনা গেলে ভালো হত। আমার মনের গর্জনের সাথে আকাশের হিংস্র গর্জন মিশে একাকার হয়ে উঠতো। প্রতিবাদী হয়ে আমায় সাহায্য করতো। সবই যেন আমার প্রতিকূলে।

চলবে………( আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য চাই🙂)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে