আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-১২+১৩

0
1726

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_ ১২
#সুমাইয়া_মনি।

-“তুমি নার্ভাস হচ্ছো, সেটা দেখেছি নবনীতা।”

এতক্ষণ চুপ করে ছিল। কিন্তু নিভ্রর পুনরায় কথা শুনে সে নীরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। স্বস্তির নিঃশ্বাস! সে ভেবেছিল হয়তো নিভ্র দেখে ফেলেছে তার ল্যাং মারার দৃশ্য। কিন্তু না! সে দেখেনি। বেঁচে গেছে তাহলে। নবনী ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,
-“জি!”

-“জি কী? কথা বলো। আমার বেশ বিরক্ত লাগছে। এভাবে চুপচাপ বসে থেকো না।”

মৃদু আওয়াজ করে বলে,
-“কী বলব? ”

-“ইচ্ছে!”

-“আমি কথা বলা শুরু করলে আপনি যে টুকু সুস্থ আছেন, সে টুকু অসুস্থ হয়ে যাবেন স্যার।” বিড়বিড় করে কথাটা বলে নবনী।

-“কিছু বললে?”নবনীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

-“না স্যার।”

-“ওহ!”

বেশ কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ করে রয়। পরে নবনী নিজে থেকেই কিছু বলতে যাবে তখনই একজন সিনিয়র অফিসার কেবিনে প্রবেশ করে। সঙ্গে একজন কনস্টেবলও ছিল। নিভ্র তাকে বসেই সেলুট দেয়। নবনী ওঠে পিছনে এসে সোফায় বসে। কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে তাদের দিকে তাকায়। কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হতে এসেছে। অফিসার না, হাড্ডি স্যার তারা। বিড়বিড় করে বলে ভেংচি কাটে নবনী। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হয় তাদের মধ্যে। নবনী বোর হয়ে যাচ্ছে। কাকে যে ভালোবেসেছে। যে কিনা অসুস্থ অবস্থাও কাজের বিষয় নিয়ে কথা বলছে। সেকেন্ড কয়েক পরই তারা চলে যায়। নবনী কিছুটা হলেও স্বস্থি পায়।
টুলে গিয়ে বসতেই একজন নার্স আসে নিভ্রকে দেখতে। নবনী ফের টুল থেকে ওঠে সরে দাঁড়ায়। নার্সটি নিভ্রকে শারিরীক সুস্থতার কথা জিজ্ঞেস করে। নিভ্র সুস্থ বার্তাটি বলতেই নার্সটি ফিরে যায়। নবনী নখ কামড়াচ্ছে। মনে মনে বলছে, “আর কেউ বাকি আছে!” বলা শেষ হতেই নিলুফা বেগম হাজির হয় নিয়ানকে নিয়ে। নিভ্র তাকে দেখে সালাম দেয়। উত্তর দিতে দিতে সে টুলে বসে। এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন যে বলতে গেল কথাটি।

আধাঘন্টা সে সেখানে থাকে। নিভ্রর সঙ্গে কথা বলে। নিলুফা বেগম নিভ্রর জন্য কিছু ফল এনেছিল। সেগুলো নবনী কেটে দেয় নিভ্রকে খেতে। এক পিস আপেল মুখে পুরে বিরক্ত ফেইসে তাদের পানে তাকিয়ে আছে নবনী। বিশ মিনিট পরই নবনীর আম্মু চলে যায়। নবনী সরু নিশ্বাস ফেলে টুলে বসে। এবার কেউ না আসুন। খুব করে চায় সে।
————-
মায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। জিনান তার পাশেই বসা। কিছুক্ষণ আগে সে পার্কে এসেছে। যেখানে মায়া আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল। চার-পাঁচ মিনিট কেটে যায়। তবুও মায়া কিছু বলে না। জিনান মায়ার এমন নিরবতা দেখে সে নিজেও বিব্রতবোধ করছে। শেষে সে নীরবতা অন্তিম করে বলে,
-“তুমি কী সত্যি আমাকে বিয়ে করবে?”

আরো লজ্জায় পড়ে যায় মায়া। সে ভাবছে এটা না বলে অন্য কিছুও তো বলতে পারতো। কিন্তু পরক্ষণে ভাবে ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করে ভালো করেছে। উত্তরের আশায় মায়ার পানে চেয়ে আছে জিনান। সেটা মায়া বুঝতে পেরে মাথা উপর,নিচ দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। জিনান মনে মনে বেশ খুশি।
চট করে মায়ার এক হাত ধরে ফেলে। বিস্ময় চোখে তাকায় মায়া। জিনান মায়ার চাহনি দেখে মুচকি হাসে। যে হাসি দেখে মায়া লজ্জায় মাথা আগের ন্যায় নুইয়ে রাখে। তাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সেই অধ্যায় শুধু ভালোবাসায় ছড়াছড়ি।
___________
সন্ধ্যার দিকে নবনী বাড়িতে ফিরে। অবশ্য সে আসতে চেয়েছিল না নিভ্র তাকে যেতে বলেছে, যার দরুণ সে আর থাকতে পারেনি। রাতে ওর সঙ্গে জিনান থাকবে বলে আসে। পাশের সোফায় জিনান শুয়ে পড়ে। নিভ্র তার বেডে আধশোয়া অবস্থায় বসে ছিল। জিনান নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“শুইয়ে দেবো তোকে?”

-“না থাক! একটু পড়ে শুই। আরো কিছুক্ষণ বসি।”

-“বোস তাহলে।”

-“তারপর তোর খবর কি বল?”

-“গাড়ি চলতে আরম্ভ করেছে।” খুশি হয়ে বলে।

-“প্রেমের নাকি বিয়ের?”

-“দুটোই!”

-“বাহ!”

-“বাহ! বলিস না। আমি প্রেম, বিয়ে এক সঙ্গে করব। আর তুই শালা আজীবন সিঙ্গেল থেকে যাবি।” মেকি রাখ নিয়ে বলে জিনান।

নিভ্র হেসে ফেলে। বলে,
-“আমার বিয়ে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন বুঝতেছি না।”

-“দোস্ত তুই আমার। তাই চিন্তা হয়। এই-যে আজ তুই এখানে শুয়ে আছিস না। শুধু মাত্র সিঙ্গেল থাকার জন্য। যদি বিয়ে করতি বা একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে তার কথা চিন্তা করে বেপরোয়া গিরি কম করতি।”

-“এসব ফালতু কথা। ভাগ্যের ওপর কারো হাত নেই। যেটা সয়ং আল্লাহ লিখে রাখে। সেটা হবেই। তুই, আমি অন্য কেউ চেষ্টা করেও আটকাতে পারব না।”

-“তোর বচন-প্রবচনকে পিস্তলের ভেতর ভরে রাখ। আমাকে বলার কোনে প্রয়োজন নেই।” বলেই মুখ ঘুরিয়ে রাখে জিনান।

-“আমি নিশ্চিত! আমার ব্যাপারে তোকে কেই কুপরামর্শ দিয়েছে। তো সেই ব্যক্তিটি কে?”

-“কে দিবে শুনি? এমন কেউ আছে নাকি। আজাইরা কথা বলিস, যেটা না লাগে।” উত্তেজিত হয়ে ওঠে বসে বলে জিনান।

-“ক্ষেপে যাচ্ছিস কেন? হঠাৎ ঝগড়া করার মুড হলো নাকি?” শাস্ত গলায় প্রশ্ন করে।

-“অহেতুক কথা বললে ক্ষেপে যাবোই।” বলেই নিভ্রর কাছে এসে ওঁকে ধরে বেডে পুরোপুরি শুইয়ে দেয়। তারপর সোফায় এসে নিজেও ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। নিভ্র জিনানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। খুব ভালোলাগে যখন বুঝতে পারে ওর প্রিয় মানুষগুলো ওঁকে নিয়ে মন থেকে ভাবে, ভালোবাসে।
বিয়ে ব্যাপার নিয়ে ওর আম্মুও কয়েকবার রাগারাগি করেছে। কিন্তু এতে নিভ্রর কোনো ভাবান্তর নেই। কিছুক্ষণ বাদে সে-ও ঘুমিয়ে যায়।
______________
রাত পেরিয়ে সকাল হয়। তারপর দিন, তারপর এক সপ্তাহ কেটে যায়। আজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয় নিভ্রকে। হাত এখন অনেকটাই ভালো। আর ক’দিন রেস্ট নিলে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠবে। কিছুক্ষণ আগেই নিভ্র বাড়িতে ফিরে। টমি নিভ্রকে দেখেই খুশিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেকদিনের জমে থাকা ভালোবাসায় ভরে দেয় তাকে। কোলে গিয়ে বসে থাকে।
নিভ্র সে নিজেও টমিকে আদর করে দেয়। ক্যাথিকে কোলে তুলে পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে নবনী। জিনানও সঙ্গে ছিল।
ভালোবাসা আদান-প্রদান শেষ হলে ভেতরে আসে। আজ নবনী নিজের হাতে রান্না করেছে। সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে টেবিলে। এই এক সপ্তাহে নবনী অল্প সল্প করে রান্না শিখেছে শুধু মাত্র নিভ্রর জন্য। হাসপাতালে প্রতিদিন সে নিজে রান্না করে নিয়ে যেত। কখনো আবার নিলুফা বেগমও রান্না করে দিতো। ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেতে বসে। জিনানও বসে যায় খেতে। দু’জনকে খাবার সার্ভ করে দেয় নবনী।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে জিনান চলে যাওয়ার জন্য বাহিরে আসে। নবনীও ওর পিছু পিছু আসে।

-“ভাইয়া শুনুন? ”

পিছন ফিরে নবনীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কিছু বলবে?”

-“হ্যাঁ!”

-“বলো?”

-“পাঁচটা ইংরেজি অক্ষর একটু ভাঙ্গিয়ে দিন।”

-“মানে?” ভ্রু কিঞ্চিৎ ভাঁজ করে।

-“মানে হলো, S, O ডবল R, R, Y এটার উচ্চারণ কী হবে?”

-“সিম্পেল, Sorry…”

-“ইট’স ওকে ভাইয়া। আমি কিছু মনে করিনি। সেদিনের ব্যাপার তো আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি। স্যরি বলার প্রয়োজন নেই।”

-“তুমি…….” বলেই হেসে জিনান চোখ ডেকে ফেলে। নবনী চালাকচতুর মেয়ে সেটা জানত। কিন্তু এতটা চালাক! আজ তার ধারণা হলো। সেদিনের ব্যাপারটি নিয়ে, সে নিজে থেকে স্যরি না বলে, তাকে দিয়েই স্যরি বলিয়েছে। অন্য কৌশলে। নবনীও হাসে। বলে,
-“আমিও স্যরি ভাইয়া।”

-“আমাকে দিয়ে আগে স্যরি বলিয়ে, এখন নিজে স্যরি বলছো।”

-“আপনি আগে আমাকে পাগল বলেছিলেন। তাই স্যরি আগে আমি ডিজার্ভ করি।”

-“যাক, মেনে নিলাম। প্রচণ্ড চাকাল তুমি নবনী।”

নবনী জিব্বা অল্প বের করে এক চোখ টিপ দেয় জিনানের দিকে তাকিয়ে। জিনান ফের হাসে। নবনীর মাথার আলতো করে হাত রেখে ধাক্কা দেয়। তারপর বলে,

-“আচ্ছা আমি গেলাম। নিভ্রর দিকে খেয়াল রেখো।”

-“অবশ্যই!”

মুচকি হেসে জিনান চলে যায়। নবনী ফিরে আসে ঘরে। নিভ্র বাগানের পেছন থেকে বের হয়। জিনান বের হবার আগেই নিভ্র আগে বাগানে এসেছে ফুল গাছ দেখতে। তারা দু’জন ওঁকে দেখেনি। বাগানে বসেই নিভ্র তাদের কথপোকথন শুনতে পায়। নবনীর কথা শুনে সে নিজেও হাসে। মানতেই হবে নবনী অধিক চালাকচতুর মেয়ে! তাইতো কলাকৌশলে খুব সহজেই স্যরি বলিয়ে নিলো জিনানের কাছ থেকে। নবনীর এই বিষয়টি নিভ্রর কাছে ভালো লাগে।
.
.
.
#চলবে?

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_১৩
#সুমাইয়া_মনি।

কলেজে এসে নবনী খুশির নিকট আসে। বিয়ের পর আজ প্রথম খুশি কলেজে এসেছে। নবনী খুশিকে দেখে আনন্দে বিমোহিত। মায়াও ততক্ষণে ওদের নিকট আসে। তিন বান্ধবী তাদের কথপোকথন শুরু করে।

-“কেমন চলছে তোর বিবাহিত জীবন?” হেসে প্রশ্ন করে নবনী।

-“আল্লাহর রহমতে খুব ভালো। নোমান আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছে। আর ওর বাবা,মাও আমাকে মেনে নিয়েছে।”

-“বাহ! সেটা তো ভালো খবর।” মায়া বলে।

-“হুম,এবার তোদের খবর বল?”

-“আমার খবরে পরে আসি। আগে মায়ার খবর শোন। অতি শীঘ্রই তার বিয়ে হতে যাচ্ছে।”

খুশি আবার হয়ে বলে,
-“কার সঙ্গে? ”

-“ঐ যে! নিভ্র স্যারের বন্ধু জিনান ভাইয়ার সঙ্গে।”

-“কংগ্রাচুলেশনস! মায়া।” খুশি হয়ে বলে।

-“পরে দিস। এখনো ঠিক হয়নি।” মায়া বলে।

-“কেন?”

-“শুক্রবার আসবে বলেছে ওর বাবা,মা আমাদের বাড়িতে। ভাবতেই খুব নার্ভাস লাগছে।”

-“নার্ভাস হোস না। ঠিক হয়ে যাবে সব। ঐ নবনী তোর কথা বল এখন।” নবনীকে গুঁতো দিয়ে বলে।

-“আমার গাড়ি চলা না রে বোইন।” দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গালে হাত রেখে বলে।

-“গাড়ি মানে?”

-“নবনী নিভ্র স্যারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।” ভেংচি দিয়ে বলে মায়া।

-“তাই নাকি।”

-“হুম।”

-“তাকে বলে দে, তোর ভালোবাসার কথা।”

-“মাথা খারাপ! গুলি করে দেবে ঠুস করে।”

খুশি হাসে। বলে,
-“আরে তেমন কিছু হবে না। বলে তো দেখ।”

-“দেখি!”

-“দেখি নয়, বলবিই।”

নবনী ভাবছে। তিন বান্ধবীর মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথপোকথন হয়। তারপর তারা ক্লাসে আসে।
_________________
জায়রাকে আজ কোর্টে চালান করা হবে। সঙ্গে গ্যাংয়ের লিডার রজব আলিকেও। এই জন্য আজ নিভ্রকে থানায় আসতে হয়। জায়রাকে নিয়ে যাওয়ার আগে নিভ্র দেখা করতে আসে। সেদিনের পর জায়রাকে আর কোনো ধরনের টর্চার করা হয় না। কারণ সে সব কিছু স্বীকার করেছে। ফ্লোরের এক পাশে মুখ গোমড়া করে বসে আসে জায়রা। চেহারার রং বদলে গিয়েছে। যেন সে কতকাল যাবত এখানে বন্দী হয়ে আছে। লকাপের গেট খোলার শব্দে জায়রা কিছুটা নড়েচড়ে বসে সেদিকে তাকায়। নিভ্রকে দেখে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিভ্র আজ ইউনিফর্ম ছাড়া এসেছে। একবার জায়রার পানে চেয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
-“রজব আলির সম্পর্কে সব সঠিক বার্তা পেশ করবেন কোর্টে। এতে করে আপনার শাস্তি কম হবে।”

জায়রা কিছু বলে না। নিরব হয়ে রয়। নিভ্র ফের বলে,
-“আপনার কোনো দোষ নেই। রজব আলি তার খারাপ কাজে আপনাকে ব্যবহার করেছে। আপনি চাইলে আমি আপনাকে আপনার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।”

জায়রা এবার মুখ খুলে। কিছুটা তেজ কন্ঠে বলে,
-“আমার কেউ নেই। ”

-“অনাথ আপনি? নাকি বেঁচে থেকেও…..”

কটমট চোখে তাকায় জায়রা নিভ্রর দিকে। নিভ্র জায়রার রাগকে পাত্তা দেয় না। বলে,
-“পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই।”

-“তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?” রেগে বলে।

-“আপনাকে সাহায্য করতে। দেখুন, আপনার বিষয় আমার তেমন কোনো আইডিয়া নেই। তবে আপনাকে সুরক্ষিত ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাই।”

আহত চোখে তাকায় জায়রা। নিভ্রকে দেখা মাত্রই তার গা জ্বলে যাচ্ছে। আর সে কি-না তাকে সুরক্ষিত ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দিতে চায়। অবাক হয় সে। নিভ্র বলে,
-“বলুন?”

জায়রা মুখ খুলে না। দৃষ্টি নত করে রাখে। নিভ্র নিজে থেকেই বলে,
-“আচ্ছা এখন না বললে কোর্ট থেকে ফিরে এসে কনস্টেবলের কাছে বলবেন। নিয়ে চলো তাকে।” নিভ্র হনহনিয়ে চলে যায়৷ একজন মেয়ে কনস্টেবল তাকে ধরে নিয়ে লকাপ থেকে বের হয়। গাড়িতে বসিয়ে কোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তারা।
________________
রাতে….

নবনী এখন নিভ্রর বাড়িতে উপস্থিত। ড্রইংরুমে বসে সে পায়চারী করছে। মূলত সে নিভ্রর জন্য অপেক্ষা করছে। একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নজর বুলিয়ে ন্যায়। দশটা ছুঁই ছুঁই। ধুপ করে সোফায় বসে। হেলান দিয়ে, মনে মনে বেশ ভীষণ বিরক্ত বোধ করছে। সুস্থ হতে পারিনি তার মধ্যেই কাজ শুরু। বিরক্তিকর লোক বটে! তবে হঠাৎ নবনী ওঠে বসে। এখন নিজেকে নিভ্রর ওয়াইফ বলে মনে হচ্ছে। কেননা নিভ্র এত রাত করে বাড়ি ফিরলে, তার অর্ধাঙ্গিনী ঠিক এভাবে অপেক্ষা করতো। ভাবতেই নবনী লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেয়। ঠিক তখনই গাড়ির আওয়াজ শুনতে পায়। নিভ্র এসেছে সেটা বুঝতে পারে সে। দ্রুত বাহিরে গিয়ে মেইন গেট খুলে দেয়। গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নিভ্র। নবনী গেট লাগিয়ে দেয়। নিভ্র গাড়ি রেখে ভেতরে আসে। নবনী তখন টেবিলে খাবার বাড়ছিল।
নিভ্র নবনীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“তুমি এখনো যাও নি কেন?”

নবনী ফিরে তাকায়। নরম স্বরে বলে,
-“চলে গেলে গেট কে খুলে দিতো? আর খাবারই বা কে বেড়ে দিতো?”

-“আগের মতো আমিই সব করে নিতাম।”

নবনী মুখ কালো করে বলে,
-“জিনান ভাইয়া আপনার দিকে খেয়াল রাখতে বলেছে। সেটাই করছি আমি।”

জিনানের বলা কথাটি মনে পড়ে তার। কাল সে এটাই যাওয়ার সময় নবনীকে বলে গিয়েছিল। আর সেই কথাটি নবনী অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে ব্যস্ত। ভেবেই নিভ্র সরু নিশ্বাস ফেলে। চুপ থাকতে দেখে নবনী চোখ তুলে নিভ্রর দিকে তাকায়। পরক্ষণে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। নিভ্র নবনীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে।” বলে ভেতরে চলে যায়।

নবনী আগের ন্যায় খাবার বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর নিভ্র ফিরে এসে খেতে বসে।

-“তুমি খেয়েছো?” নবনীর দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে।

-“জি,না!”

নিভ্র কথাটা শুনে বিরক্ত বোধ করে। ওর সঙ্গে খেতে বসতে বলতে হবে এটা ভেবে তার বিরক্ত লাগছে। তবুও জোর করে বলে,
-“বোসো খেতে।”

বলতে দেরি নবনীর প্লেট নিয়ে খেতে বসতে দেরি হয়না। মনে হচ্ছে সে এতক্ষণ নিভ্রর জবাবের আশায় ছিল। এক সঙ্গে দু’জন খাচ্ছে। নবনী খাচ্ছে কম নিভ্রকে দেখে নিচ্ছে মন ভরে। এ দেখা যেন কখনোই শেষ হবে না। আধাঘন্টা পর খাওয়ার পর্ব শেষ হয়। নিভ্র এবার নবনীকে বাড়িতে ফিরে যেতে বলে। নবনী চুপি চুপি চোরের মতো বাড়িতে ফিরে। মেইন গেটের চাবি আগে থেকেই ছিল। যদি তার আব্বু জানতে পারে এত রাতে মেয়ে অন্যের বাড়িতে ছিল। বিরাট ঝামেলা বাঁধিয়ে দিবে। তাই চোরের পদ্ধতি অবলম্বন করা।
__________________
সকালে…….

নিভ্র হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রাগ, বিরক্ত দুটোই তাকে ঘিরে ধরেছে। কে সে? যে বার বার তাকে এভাবে গোলাপ ফুল দিয়ে বিব্রত করছে। মেজাজ চওড়া হয়ে আছে তার। তখনই জিনান তার বাইক নিয়ে এসে হাজির হয়। বাইক থেকে নেমে নিভ্রর দিকে তাকাতেই ফুলের ওপর নজর পড়ে। এগিয়ে আসতে আসতে মুচকি হেসে বলে,
-“আমার জন্য ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছিলি নাকি?”

-“প্রশ্নই আসে না।”

-“তাহলে কাউকে প্রপোজ করবি?”

-“কক্ষনো না।”

-“তাহলে?”

-“তোর স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে।” বিরক্ত নিয়ে বলে।

-“কিহ! ওহ হ্যাঁ! মনে পড়েছে। সেই অচেনা ছেলেটি আবারও গোলাপ ফুল দিয়েছে নিশ্চয়ই?”

-“ছেলে কিভাবে বুঝলি?”

-“মেয়ে কিভাবে বুঝবো? আবার হিজড়াও হতে পারে।” দুষ্টু হেসে।

-“সেট-আপ!”

জিনান হাসতে থাকে। নিভ্র রাগী দৃষ্টিতে ফুলটির দিকে তাকায়। রাগ হচ্ছে ফুল দেওয়া আগন্তুক ব্যক্তির ওপর। লুকিয়ে ফুল দেওয়ার কারণ সে বুঝতে পারছে না। জিনান হেসে হেসেই বলে,
-“তুই যেমন, ফুল দেওয়া ব্যক্তিটিও ঠিক তেমনই হতে পারে। তাই তো কেউ কারো সামনে আসতে চাইছে না। তবে এই আড়াল থেকে ভালোবাসা আর ক’দিন। তুই পুলিশ, খুঁজে বের কর চোরকে। যে চুরি করে ফুল রেখে যায় তোর বাড়ির সামনে।”

-“খুঁজে তো বের করবোই। যখন তাকে পাবো না, চরম শাস্তি পেতে হবে তাকে।”

-“হ্যাঁ! সে রোমান্টিক শাস্তিযোগ্য!” মাথা দুলিয়ে বলে।

-“ইয়ার্কি বন্ধ কর। ভেতরে আয়।”

-“চল চল।”
.
.
.
#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে