আমার স্বামী পার্ট-০৪

0
1977

#আমার_স্বামী
#Rayhan_Naim
#পার্ট_৪

– গাড়ি থেকে নামতেই একটা ছেলে এসে আমাকে
জড়িয়ে ধরে আর বলে :

– আমার পেত্নীটা কেমন আছে শুনি ! স্বামীকে পেয়ে তো আমাকে ভুলেই গেছিস (রায়হান)

– আমি ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম
আর #আমার স্বামীর পিছনে গিয়ে নিজেকে
আড়াল করে বললাম :

– আজব তো কে আপনি ! আমি তো আপনাকে চিনিনা সরেন আমাদের সামনে থেকে (আমি)

– এই রে পেত্নীটা দেখি খুব রাগ করছে – আরে বাবা সরি ! তোর বিয়েতে আসতে পারিনাই তো
কি হয়েছে এইতো এখন এসেছি দেখ ! (রায়হান)

– আমি ওনাকে বললাম -?
– আপনি কিছু বলছেন না কেনো লোকটাকে !
তাকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন আমি তাকে
একটু সহ্য করতে পারছিনা (আমি)

– আরে এত রাগ করছিস কেনো ! তুই না আ‌মার লক্ষী বোন – তুই না খুব ভালো পিল্জ রাগ করিসনা ? আর দুলাভাই আপনি কিছু বলছেন না কেনো আপনি তো অন্তত কিছু একটা বলুন (রায়হান)

– আমি আর কি বলবো তোমার বোনের এত রাগ
যে আমি ও তার সামনে কথা বলতে পারি না – না বাবা আমি‌ তোমাদের মাঝে নেই‌ (নাইম)

– আমি‌ আমার স্বামীকে চিমটি দিয়ে বললাম –
– আমি আবার কবে আপনার সাথে‌ রাগ দেখালাম (আমি)
– রোজ ই দেখাও (নাইম)

হঠাৎ মা – বাবা আসলেন ! আমি বাবার কাছে
গিয়ে বললাম –
– আব্বু তুমি এই লোক টাকে বাড়িতে ডুকতে দিছো কেন এখুন্নি চলে যেতে বলো (আমি)

– আরে মা রাগ করিস – ওর তো পরিক্ষা ছিলো
যদি পরিক্ষা টা না দিতো তাহলে কতগুলো বছর
লস হয়ে যেতো তাইনা (আব্বু)

– পরিক্ষা – আগে না আমি আগে সে এমনিতেও
আন্ডা পাবে হু (আমি)
– হঠাৎ ওনি আমার সামনে এসে বললেন –
– থাক যা হয়েছে ভুলে যাও – আর ওতো তোমাকে সরি বলেছে তাই আর রাগ নিয়ে থেকো না (নাইম)
– আচ্ছা (আমি)

আসলে‌ রায়হান আমার ছোট ভাই – সে আমার বিয়েতে ছিলো না হোস্টেল‌ে থেকে পড়াশোনা করে যখন তাকে বিয়ে কথা বলি তখন সে তার পরিক্ষায় ব্যস্ত ছিলো তাই আমার বিয়েতে আসতে পারেনি ।

– তারপর রায়হান আমাকে সরি বললো আর অনেকগুলা আইসক্রিম দিলো – দুঃখের কথা কারে বলি – ওনি আমাকে একটার বেশি আইসক্রিম খেতেই‌ দিলো‌না – বজ্জাত লোক আমাকে আইসক্রিম‌ খেতে দেয়না হু ।

অতপর ওনাকে ঘরে নিয়ে গেলাম –
ওনি বিছানায় শুয়ে বললেন !

– এক গ্লাস পানি আন তো (নাইম)
– জী এখুন্নি আনছি (আমি)

অতপর ওনাকে পানি দিলাম আর বললাম
– আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার আনছি (আমি)
– হমমম তোয়ালে টা দে ! (নাইম).

তারপর ওনাকে তোয়ালে দিলাম – ওনি ফ্রেশ হতে গেলেন । আমি ও রান্না ঘরে গেলাম ওনার জন্য
কিছু খাবার নিতে আসলে এখনো খাবার সময় হয়নি কিন্ত মাঝে মাঝে ওনার হাল্কা ক্ষুধা লাগে
তখন ভাত না খেলেও‌ কিছু খেলেই ওনার পেট ভরে যায় – । আর সেটা এই বাড়ির সবাই জানে ।

– আম্মু আমি সাহায্য করি (আমি).
– না রে মা তুই যা ঘরে যা ! গিয়ে দেখ নাইমের
কিছু লাগবে নাকি (আম্মু)
– ওনার হাল্কা খিদে লেগেছে তাই জন্য কিছু খাবার বানাই ! (আমি).
– আরে না না তোকে কিছু করতে হবে না
আমি নাইমের জন্য পায়েস বানিয়েছি সেটা
নিয়ে যা – (আম্মু).
– আচ্ছা দাও (আমি).

তারপর ওনার জন্য বাটিতে করে পায়েস
নিয়ে গেলাম –

– গিয়ে দেখি ওনি বিছানায় বসে ফোন টিপছেন
আমি যেতেই বলল –

– এতক্ষন লাগে – পেটের মধ্যে ইদুর তো কাবাডি খেলতে শুরু করেছে ! (নাইম)
– এইতো – নিন (আমি).
– ওয়াও‌ পায়েশ ! (নাইম)
– হমম মা বানিয়েছে আপনার জন্য (আমি)
– আচ্ছা খুব ভালো হয়েছে এখন খায়িয়ে দে (নাইম)
– জী (আমি)
ওনাকে তুলে খায়িয়ে দিচ্ছিলাম আর বলছিলাম .
– জানেন স্বামী স্ত্রী একসাথে খেতে বসলেও অনেক ছোয়াব হয় –

যে ঘরে স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাবে – যতক্ষন খাবে ততক্ষন পযন্ত তাদের আমল নামায় সওয়াব লেখা হয় । (তিরমিজি- শরীফ)

– ওহ্ তাই নাকি কিন্ত আমি তো জানতাম –
যে স্বামী তার স্ত্রীকে এক লোকমা ভাত খাইয়িয়ে দিবে আল্লাহ ওই স্বামীর ছগীরা গুন্নাহ্ গুলো মাফ করে দিবেন এবং যে স্ত্রী তার স্বামীকে এক লোকমা ভাত খাইয়িয়ে দিবে আল্লাহ্ ওই স্ত্রীর ছগীরা গুন্নাহ্ গুলো মাফ করে দিবেন এবং উভয়ের আমল নামায় প্রতি লোকমার বিনিময়ে
১০০০ টা করে নেকি দান করবেন ! (মুসলীম শরীফ) (নাইম)

কথা বলতে বলতে ওনি একটু পর পর চোখ টিপ মারছিলেন আর দুষ্টুমি করছিলেন – তিনি আবার বললেন –

স্বামী স্ত্রী যখন একই বিছানায় শয়ন করে অথবা বসে গল্প করে বা হাসি খুশি কথা বলে তখন স্বামী স্ত্রী প্রতিটা কথাতে প্রতিটা সেকেন্ডে তাদের আমল নামায় ১০ টা করে নেকি লেখা হয় । (আবু দাউদ)

– তাই তুই এখান থেকে কোথাও যাবি না! তোর
আম্মুকে বলে যেনো ডিস্টার্ব না করে হিহি (নাইম)

– হু হু ভালোবাসা উতলে উঠছে (আমি)
– হঠাৎ ওনি আমার হাত ধরে বললেন –

– তুই‌ আমাকে সত্যি ক্ষমা করেছিস তো – আমি জানি আমি তোর সাথে যেটা করেছি সেটা অন্যায় আমি তোকে কখনো আঘাত করতে চাইনি!

প্রতিটা মেয়ের ই বাসর রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে তোর ও ছিলো আমি জানি কিন্ত আমার জীবনে বাসর রাতের দিনটায় খুব প্রিয় মানুষ টা হারিয়ে যাওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম – (নাইম)

– আমি কিছু মনে করিনি বিশ্বাস করুন তবে আমার সত্যি টা জানতে খুব ইচ্ছে করছে !
কে হারিয়ে গেছে – আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা নাকি (আমি)

-সত্যি বলতে আমি কখনো প্রেম করিনি ! আমি
ছোট বেলা থেকে তোকেই মনে প্রানে ভালোবেসেছিলাম – আর তোকেই‌ আমার স্ত্রী হবে চাইতাম আল্লাহর কাছে – বিয়ের কিছুদিন আগে বন্ধুদের জম্মদিনের পার্টিতে গিয়ে নেশা করে ফেলি তাদের পাল্লায় পরে কিন্ত আম্মু ভেবে বসে অন্যকিছু – কিন্ত যখন জানলাম আমার একদিন নেশা করায় আম্মু তোর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তখন আর আম্মুকে সত্যিটা বলিনি – মনের মানুষ কে পেতে যাচ্ছি অনেক আনন্দে ছিলাম ঠিক সে কবুল বলে তোকে স্ত্রী হিসেবে
গ্রহন করতেই‌ আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু – আমার ভাই রবি গাড়ি এক্সিডেন্ড এ মৃত্যুবরন করে (নাইম)

– কিহ্ রবি ভাইয়া মারা গেছে ! (আমি)
– হমমম রবি মারা গেছে সেদিন আমাদের বিয়েতে আসার জন্যই বের হয়েছিলো কিন্ত‌ !!! (নাইম).

লক্ষ্য করলাম ওনার চোখে পানি – আসলে খুব ভালো বন্ধু ছিলো – বন্ধু বললে ভুল হবে ভাই থেকেও বেশি আপন ছিলো – আমি সঙ্গে সঙ্গে ওরনা দিয়ে ওনার চোখের জল মুছে দিলাম ।

– কাদবেন না পিল্জ – আল্লাহ্ ওনাকে বেহেশত নসিব করুক – এতে আপনার কোনো দোষ নেই সবই আল্লাহর ইচ্ছে। আর নিজেকে দোষী ভাববেন না মহান আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে বলেছেন –

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১৫৬

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَقَالُوۡا لِاِخۡوَانِہِمۡ اِذَا ضَرَبُوۡا فِی الۡاَرۡضِ اَوۡ کَانُوۡا غُزًّی لَّوۡ کَانُوۡا عِنۡدَنَا مَا مَاتُوۡا وَمَا قُتِلُوۡا ۚ لِیَجۡعَلَ اللّٰہُ ذٰلِکَ حَسۡرَۃً فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ ؕ وَاللّٰہُ یُحۡیٖ وَیُمِیۡتُ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূলা-তাকূনূকাল্লাযীনা কাফারূ ওয়া কা-লূলিইখওয়া-নিহিম ইযা-দারাবূফিল আরদিআও কা-নূগুঝঝাল্লাও কা-নু‘ইনদানা-মা-মা-তূওয়ামাকুতিলূ লিইয়াজ‘আলাল্লা-হু যা-লিকা হাছরাতান ফী কুলূবিহিম ওয়াল্লা-হু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়াল্লা-হু বিমা-ত‘ামালূনা বাসীর।

অর্থঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জেহাদে যায়, তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুৃই দেখেন।

(সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১৫৬)

– তাই পিল্জ আপনি মন খারাপ করবেন না আপনি আমি দুজনে মিলে রবি ভাইয়ার জন্য দোয়া করবো নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু আর ক্ষমাশীল – তিনি আমাদের দোয়া নিশ্চয়ই‌ কবুল করবে । আর আপনি তো জানেন

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ

উচ্চারণঃ কুল্লুনাফছিন যাইকাতুল মাওতি ওয়া ইন্নামা-তুওয়াফফাওনা উজূরাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফামান ঝুহঝিহা ‘আনিন্না-রি ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফা-ঝা ওয়ামাল হায়া-তুদ্দুনইয়া-ইল্লা-মাতা-‘উল গুরুর।

অর্থঃ প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয় ।

(সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১৮৫)

– তাই আর মন খারাপ করবেন না (আমি)
– ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম । ওনি ও‌ আমাকে
খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন ! আর বললেন

– আমি তোর কাছে উত্তম স্বামী হতে চাই‌ !

চলবে ……!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে