আমার স্বামী পার্ট-০১

0
3699

#আমার_স্বামী
#Rayhan_Naim
#পার্ট_১

– আমার স্বামী নেশাখোর । এটার জানার পর ও বাবা তার সাথে আমার বিয়েটা দেয় ! কারন আমার স্বামী আমার আপন মামাতো ভাই ।

সেদিন বিকেল বেলা – আছরের নামাজ পড়ে যখন ঘরে বসে কুরআন তেলায়ত করছিলাম
এমন সময় মামি কাদতে কাদতে ঘরে আসে।

মামীর কান্নার আওয়াজ শুনে আমি উঠে দরজার
কাছে যাই দেখতে –

তখন মামী আব্বুকে কাদতে কাদতে বলল-

– ভাই আমার ছেলেটা বরবাদ হয়ে গেছে
ও কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ে নিজেকে ধ্বংস করে
দিচ্ছে কিছু দিন ধরে দেখছি ছেলেটা আমার নেশা করে বেড়াচ্ছে তুই কিছু একটা কর ?(মামী)

– মামীর কথা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো ! কেনো যে মানুষ হারাম সম্পর্কে জড়ায় আর নিজেকে এভাবে ধ্বংস করে বুজিনা !

– তারা কি জানে না নেশাখোর ব্যক্তিরা কোনোদিন জান্নাতের সুঘ্রান ও‌ পাবেনা – তারা কি আল্লাহ্ কে ভয় করেনা – আল্লাহ্ তায়ালা তাদের এত সুন্দর জীবন দান করার পর ও নিজেকে এভাবে বরবাদ করে কিভাবে – হঠাৎ করে মামী আবার বলতে শুরু করলেন –

– যদি আমার নাইমের কিছু হয় তাহলে আমি‌
ও বাচবো না চোখের সামনে আমার একমাত্র ছেলে এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না (মামী)

– শান্ত হো বোন তুই এত ভেঙে পড়লে চলবে না
তোর ছেলেকে যেভাবেই‌ হোক দ্বীনের পথে আনতে হবে (আব্বু)
– কিন্ত কিভাবে আনবো ! তুই বল ? অনেক বুজিয়েছি কিন্ত কিছুতেই আমার কথা শুনচ্ছে না(মামী)

আব্বু কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল –

– এরকম একদিন আমিও‌ পথভ্রষ্ট ছিলাম ! সেটা তুই‌ ভালো করেই জানিস – তখন আমার স্ত্রী রাবেয়া আমাকে দ্বীনের পথে আনে – এখন তোর যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আমার মেয়েকে আমি তোর কাছে পাঠাতে চাই – তোর ছেলের বউ হিসেবে ! আমার বিশ্বাস একমাত্র জান্নাত ই পারবে তোর ছেলেকে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে । (আব্বু)

কথাটা শোনা মাত্র আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে
দেই কি কারনে জানি না – কিন্ত হঠাৎ খুব লজ্জা লাগতে শুরু করলো – শেষ পযন্ত কিনা আমার স্বামী হবে নাইম ভাইয়া – যে ছোট বেলা থেকেই আমাকে গাইয়া বলে ক্ষেপায় ।

কারন আমি সব সময় পর্দায় থাকতাম । মাদরাসায় যখন পড়তাম তখন ভাইয়া আমাকে
মাঝে মাঝে মাদরাসা থেকে আনতো যেতো ।

তখন ভাইয়া আমাকে এই বলে ক্ষেপাতো যে
– তোকে বিয়ে করার মতো দুনিয়াতে একটা
ছেলেও নেই দেখিস তোর কপালে জামাই জুটবে না – তুই যে ব্যাকডেটেট মেয়ে আজকালকার ছেলেরা তোর মতো মেয়েকে দেখলে দূরে সরে যায় ।

আরো অনেক কথা শুনাতো কিন্ত আমার কিছু যায় আসতো না – কারন আমি জানি ওগুলো তিনি আমাকে ক্ষেপানির জন্য বলতো । আর যখন আমি রাগ করতাম তখন আমাকে আইসক্রিম ঘুষ দিতো ।

আজ আব্বু কিনা সেই নাইম ভাইয়াকে আমার
স্বামী বানাতে চাচ্ছে – বুজতে পারছিনা আমি খুশি হবো নাকি দুঃখি । তবুও মন কে বুজালাম আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে । হয়তো এটাই আমার তকদিরে ছিলো ।

ভাবনার দেশ ছেদ করে কানে ভেসে আসলো
আব্বুর ডাক –

আমি দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম –
– আসসালামলাইকুম মামী – তুমি কেমন আছো (আমি)
– মামী হাসি মুখে আমার পাশে এসে মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে বলল –

– আমি তো ভালোই আছি মা – কিন্ত আমার
ছেলেটা ভালো নেই‌ । তুই‌ কি আমার ছেলেটার
দায়িত্ব নিতে পারবি । পারবি কি আমার পাগল ছেলেটাকে একটু মানুষের মত মানুষ বানাতে (মামী)

আমি লজ্জায় চুপ মেরে গেলাম – এখন কি বলবো এমতাবস্থায় কি করা উচিত – আব্বুর দিকে তাকালাম – আব্বু বলল !

– বল মা তোর নাইম কে বিয়ে করতে
কোনো আপত্তি আছে (আব্বু).
– তোমার যা ভালো মনে হয় করো আব্বু (আমি)

বলেই এক দৌড়ে সোজা ঘরে চলে আসলাম –
বুকটা এখনো ধুরপুর করছে কি হতে চলেছে আমার জীবনে । আল্লাহ্ তুমি রহম করো ।

অতপর আমার আর নাইম ভাইয়ার বিয়েটা
সম্পূর্ন হয় । এখন আমি বাসর ঘরে বউ‌ সেজে
আছি কিন্ত জানি না এরপর কি হবে । এই রাত টা নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো আমার । স্বামীর সঙ্গে সারারাত গল্প করবো । ছাদে বসে ওনার কোলে মাথা রেখে জোসনা বিলাস করবো । কিন্ত আজ হয়তো এগুলোর কোনোটাই হবে না –
একটু পর ই হয়তো নাইম ভাইয়া আসবে – ধুর কি বলি এখন তো সে আমার স্বামী এখন আর ভাইয়া ডাকা যাবে না ।

অপেক্ষা করতে করতে রাত বারোটা পেরিয়ে গেলো । কিন্ত ওনার আসার কোনো নাম গন্ধ নাই । এদিকে বসে থাকতে থাকতে ঘুম এসে চোখে কড়া নাড়ছে । হঠাৎ একটা আওয়াজ হলো
মনে হয় ওনি এসে পড়েছেন ওনার উপস্থিতি টের পেয়ে আমি বিছানায় থেকে নেমে ওনাকে সালাম করতে যাবো ঠিক তখন মারলো এক ধমক । আমি কিছুটা কেপে উঠলাম ।

– কিরে এখনো ঘুমাস নি তুই (নাইম)
– না মানে আপনি বাইরে ছিলেন ? (জান্নাত)
– তো কি আমি যদি সারারাত বাইরে থাকি
তাহলে কি তুই সারারাত জেগে থাকবি – যা ঘুমা (নাইম)(উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে)

লক্ষ্য করলাম উনি প্রায় ডুলছে । সোজা হয়ে দাড়াতে পারছেন না । তার মানে আজকেও নেশা করেছে ।

ওনি আমাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে বিছানায়
শুয়ে পড়লো । কেমন ছেলে দেখছেন বাসর রাতের মতো একটা পবিত্র রাতেও নেশা করে ।
আনরোমানটিক ব্যাটা একটা হু ।

ওনার কাছে গিয়ে ওনার পা থেকে জুতো জোড়া
খুলে দিলাম – ঠিক ভাবে শুইয়িয়ে চাদর টেনে দিলাম । চাদের আলো ওনার জানলা ভেদ করে ওনার মুখে এসে পড়ছিলো । এতদিন ওনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি ছিলোনা । কিন্ত আজ কেনো জানি ওনার জন্য অন্যরকম অনূভুতি জাগছে মনে । খেয়াল করলাম ওনি ঘুমিয়ে পড়েছেন ।

লজ্জার মাথা খেয়ে ওনার কপালে একটা
চুমু দিলাম । আর বললাম আপনি #আমার স্বামী
আজ এবং এখন থেকে আপনার সব কষ্টের ভাগিদার আমি । নিজের জীবন দিয়ে হলেও‌ আপনাকে আমি এই নেশার জগৎ থেকে বের করে আনবো ।

– ঠাসসসস ঠাসসসস ! তোর সাহস কি করে
হয় আমাকে চুমু দেওয়ার শুনে রাখ তোকে
আমি স্ত্রী হিসেবে মানি না – একদম অধিকার ফলাতে আসবি না (নাইম)

হঠাৎ করে যখন ওনি থাপ্পর দিয়ে কথাগুলো বললেন তখন নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে
অশ্রু ঝরে পড়লো। ওনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন ।

ওনার পাশে আর শুলাম না যদি আবার রেগে‌ যায় যাই করুক না কেনো যতই মারুক আমাকে তবুও আমার কোনো অভিযোগ থাকবে না কারন ওনি আমার স্বামী ওনার অধিকার আছে আমার উপর ।

ওনার পাশেই বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুজতে পারিনি – ।

সকাল বেলা হঠাৎ কারো গরম নিশ্বাস আমার
মুুখের উ‌পর পড়তেই আমি চোখ মেলে তাকাল‌াম – যা দেখলাম তাতে মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো বুজি !

আমি নাইম ভাইয়ার বুকে আর ওনি আমাকে
খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে রয়েছেন ।
এখন যদি জেগে যায় তাহলে তো রাগ করবে ।

এটা ভাবতেই বুকটা ভয়ে কেপে উঠলো।
ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানির জন্য
চেষ্টা করতে লাগলাম হঠাৎ একটা জোরে ধাক্কা দেওয়ায় ওনি মেঝেতে পড়ে গেলেন ? আল্লাহ্ এখন তো আমাকে মেরেই ফেলবেন ।

– ওনি চোখ মেলে আমার দিকে রাগি চোখে
তাকালেন ।

– তুই আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিলি (নাইম)

চলবে ………….!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে