আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১০

0
3758

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১০
মা তাদের দেখে খুব আগ্রহ নিয়ে উঠে গেলেন। “আরে রত্না যে! ভিতরে আয়।“ বলেই সেই বয়স্ক মহিলা কে জড়িয়ে ধরলেন। পাশে থাকা মেয়েটিকে দেখে বললেন “ঝুমা কেমন আছ মা?” বলেই তাকেও জড়িয়ে ধরলেন। আমি উঠে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো দুজন। তারপর মা বলল “আমার বোন হয়। গ্রাম থেকে এসেছে।আর এটা বোনের মেয়ে।” আমি সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। রত্না খালা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন “বাহ! কি সুন্দর বউ। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।” আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতেই সে আমার পাশ কাটিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে জারিফ কে জড়িয়ে ধরল। ধরেই বলল “ভাইয়া কেমন আছ? তোমাকে কত মিস করেছি।” জারিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে আমাকে দেখে নিলো ভালো করে। আমি বড় বড় চোখে চেয়ে আছি। তারপর কি মনে করে তাকে জড়িয়ে নিলো। তারপর বলল “কতদিন পর এলি। আমিও তোকে খুব মিস করেছি।” সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। রত্না খালা বাবার সাথে কথা বলছে। কিন্তু আমার দৃষ্টি তাদের দুজনের দিকে। একে অপরকে পরম সুখে জড়িয়ে রেখেই কথা বলছে। ছাড়ার কোন নামই নেই। এক এক পা করে হেটে তাদের কাছে গেলাম। একটু জোরেই জারিফ কে বললাম “আপনার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।” আমি কথাটা শেষ না করতেই ঝুমা বলে উঠলো “এতদিন পর আমি আসলাম। আর তুমি অফিসে যাবে ভাইয়া?” তার কথা শুনে জারিফ খুব শান্ত ভাবে বলল “আচ্ছা ঠিক আছে। আজ আর কোথাও যাবনা।” “থ্যাংক ইউ ভাইয়া।” বলে আবার জড়িয়ে ধরল। আমি শুধু চেয়ে থাকলাম কিছু বললাম না।

সবাই সোফায় বসে গল্প করছে। বিকেলে চায়ের সাথে হালকা কিছু নাস্তা বানালাম। এখন আমি বাসায় থাকি তাই আমি নিজেই সব কাজ করি। পড়ালেখা নেই জন্য মাও আর তেমন কিছু বলেনা।চা বানিয়ে নিয়ে সবাইকে দিচ্ছিলাম। “বাহ! বউ মা যেমন সুন্দর। তেমন কাজও পারে। খুব লক্ষি মেয়ে।” রত্না খালা তার এক হাত আমার মুখে ধরে বললেন। আমি একটু হেসে ওনাকে চায়ের কাপ দিলাম। মাকেও চা দিয়ে ঝুমাকে খুজতে লাগলাম। আচমা খালা বলল “জারিফ বাবা আর ঝুমা মামনি ছাদে।” আমি ছাদের দিকে হাটা ধরলাম। আচমা খালা আমার পিছনে পিছনে আসছিল। তার হাতে ৩ টা চায়ের কাপ। হঠাৎ ই বললেন “মামনি একটু সাবধানে থাইকেন।” আমি তার কথার মানে বুঝতে না পেরে একটু ভ্রু কুচকে তাকাই। উনি আবার বললেন “মা টা ভালা কিন্তু মাইয়া টা ভালা না। ছোট থেইকাই জারিফ বাবার দিকে নজর। আমি তো ভাবছিলাম ওর লগেই জারিফ বাবার বিয়া হইব। কিন্তু আপনার লগে বিয়ে হইতেই আমি খুব খুশি হইছি।” বলেই সে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলো। আমি একটু ভেবে তার পিছু পিছু উঠতেই যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেল।জারিফের কাধে মাথা দিয়ে ঝুমা বসে আছে। আর সামনে ফোন দিয়ে সেলফি তুলছে। আমি গিয়ে তাদের পিছনে দাড়াতেই ঝুমা বলল “ভাবি সরে যাও। দিলে তো ছবিটা নষ্ট করে।” তার কথায় জারিফ পিছনে তাকিয়ে দেখল আমি রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চাহুনি দেখে জারিফ একটু সরে বসলো। আমি তাদের চা হাতে দিয়ে বললাম “ঝুমা তোমাকে নিচে ডাকছে।” ও চলে গেলো। আমিও রাগ করে চলে যেতে নিলে জারিফ আমার হাত ধরে ফেলে। আমার সামনে এসে বলে “বিকেলের এই রোমান্টিক ওয়েদারে আমার সাথে কি এক কাপ চা খাওয়া যায়?” আমি তার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললাম “কেন এতক্ষন মন ভরেনি বুঝি?” সে আমার কথায় একটু হকচকিয়ে গেলো। আমি আবারো দাঁত কেলিয়ে বললাম “কত সুন্দর ওয়েদার! সাথে ছোট বেলার খালাতো বোন…ওহ সরি!ছোট বেলার সাথি। একসাথে কাধে মাথা দিয়ে।আমার আর কি দরকার।” বলেই আমি নিচে চলে আসলাম। জারিফ বেশ বুঝতে পারছে আমার রাগ করার কারন। সেও আমার পিছে পিছে নিচে নেমে এলো। আমাকে দেখেই ঝুমা এগিয়ে এসে বলল “মিথ্যে কথা কেন বললে ভাবি? আমাকে তো কেউ ডাকেনি।” আমি তার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম “সন্ধ্যা হয়ে আসছে এই সময় এভাবে এলো চুলে ছাদে মেয়ে মানুষ থাকে? গ্রামে বড় হয়েছ এটাও জাননা।” আমার কথা শুনে খালা বললেন “ঠিকই তো বলেছে বউমা।” কিন্তু আমার কথাটা ঝুমার পছন্দ হলনা। একজন কিন্তু বেশ অবাক হল আমার কথা শুনে। জারিফ হা করে তাকিয়ে আছে। সে ভাবেইনি আমি এরকম কিছু বলব। আমি উপরে চলে গেলাম।

রাতে খাবার শেষ করে ঘরে যাব সেই সময় ঘর থেকে জারিফ আর ঝুমার হাসির শব্দ আসছে। আমি একটু রেগে ঘরে গিয়ে দেখি দুজন বারান্দায় বসে চন্দ্র বিলাস করছে। আমি একটু জোরে শব্দ করেই জানালাটা লাগালাম। সেই শব্দে দুজনি কেঁপে উঠলো। আমি কোন কথা না বলে ঘরটাকে গুছিয়ে ফেলছি। এমন সময় ঝুমা বলল “ভাবি তোমার কি ঘুম পেয়েছে। আমরা একটু গল্প করছি। অসুবিধা হবেনা তো?” আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম “না না অসুবিধা কেন হবে? পারলে তোমার ভাইয়া কে আজ রাতে তোমার ঘরেই নিয়ে যাও। অনেক গল্প করবে দুজন মিলে।” “ওয়াও খুব ভালো আইডিয়া।” বলেই ঝুমা উঠে দাঁড়ালো। জারিফ নিচে বসেই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। স্বপ্নেও বোধ হয় ভাবেনি আমি এমন কিছু বলতে পারি। সে এবার ঝুমার দিকে তাকিয়ে বলল “আমার ঘুম পেয়েছে। তুইও শুয়ে পড়। আমরা কাল গল্প করবো।” ঝুমা কিছু না বলে মন খারাপ করে চলে গেলো। আমি বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই জারিফ কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল “চাঁদটা খুব সুন্দর।” আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললাম “এতক্ষন খেয়াল করেন নি বুঝি?” “মানে?” সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। আমি খুব শান্ত ভাবে বললাম “এতক্ষন তো ছোট বেলার সাথি কে নিয়ে চন্দ্র বিলাস করছিলেন কিন্তু কি বলেন তো তার কথা ভেবে চাঁদটাকেই দেখতে ভুলে গেলেন।” সে কিছু না বলে উঠেই আমাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। আমি একটু রাগ দেখাতেই সে বলল “জেলাস?” আমি কোন কথা না বলে তার কাছ থেকে ছুটে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। সেও এসে আমার সাথে শুয়ে পড়লো। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেই আমি বাধা দেই। একটু রাগ করে বলে “ঝুমার সাথে রাতে আড্ডা দেয়ার ব্যপারটা আমার ভাবা উচিৎ ছিল ।” কথাটা বলেই উলটা দিকে ঘুরে ঘুমালেন।

ভোর বেলা হালকা চোখ মেলতেই দেখি ফারিয়া আমার বুকে। আশ্চর্যের বিষয় হল আজ সে নিজে থেকেই আমাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ঝুমার কারনে আমাকে নিয়ে তার মধ্যে ইন্সিকিরিটি কাজ করছে। আর এটা তারই বহি প্রকাশ। এবার দেখি তুমি আমাকে তোমার কাছে আনতে আর কি কি করতে পার। আমি একটু হেসে তাকে আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে আবার ঘুমে গেলাম।

সকালে চোখ খুলতেই দেখলাম ফারিয়া নেই। তার মানে সে উঠে পড়েছে। আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম।নিচে গিয়েই আচমা খালা বলল “বাবা আপনাকে ভাইজান ডাকে।” আমি বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম। “বাবা ডেকেছ?” “হ্যা আসো।” আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম। “ফারিয়াকে আজ ভর্তি করাবে। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। এই নাও ফর্ম। তোমার আজ অফিসে যাওয়ার দরকার নাই। আমি সামলে নিবো।“ আমি মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলাম। সব কিছু ঠিক করে ফেলল কিন্তু আমাকে কিছুই জানালনা।আমার সাথে এই বিষয়ে তার কথা বলা উচিৎ ছিল। আমাকে জানানো উচিৎ ছিল। যাক ডিসিশন যখন নিয়েই ফেলেছে তখন আর আমার কি করার। আমি টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছি। ফারিয়া রেডি হয়ে নামল। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। সে আমার সামনে এসে বসে পড়লো। আমি আর তার দিকে তাকালাম না। ঝুমা এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে আমাদের দুজন কে দেখে বলল “তোমরা কি কোথাও জাচ্ছ?” “তোর ভাবিকে ভর্তি করাতে যাচ্ছি।” আমি খেতে খেতে উত্তর দিলাম। “আমিও যাব।” সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম “রেডি হয়ে নে।” ফারিয়াও আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চাহুনি দেখে বুঝতে পারছি সে খুব অবাক হল। কিন্তু আমার তার উপরে আজ ভীষণ অভিমান। তার জীবনে যে আমার কোন গুরুত্তই নাই।
চলবে…।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে