আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৯

0
1200

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি তার রুমে নেই। অর্শিকে রুমের মধ্যে না দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অবাক হলো। এই সময়ে অর্শি গেলো কোথায়? অর্শির রুমমেট অর্শির বান্ধবীকে আয়াদ জিজ্ঞেস করলো

— আচ্ছা আপু অর্শি কোথায়? ওকে দেখছি না যে!

অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আয়াদ ভাইয়া অর্শি তো আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। আপনার সাথে কথা হয়নি ওর?

মেয়েটার কথা শুনতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপনমনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আয়াদ “অর্শি আমার সাথে দেখা করতে গেলে আমার সাথে দেখা না করেই যে চলে এলো! অনুকে আমার রুমে আবার দেখে কি রাগ করলো নাকি? আচ্ছা রাগ কেনো করবে? আমি কি ওর বর নাকি যে আমার পাশে অন্য কেউ আসলে তাতে রিয়েক্ট করতে হবে! এখন আবার কোথায় গেলো আল্লাহ জানে। মেয়েটা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না” আয়াদ কথাটা ভাবতেই অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— আয়াদ ভাইয়া সব ঠিক আছে তো? আপনি কি চিহ্নিত?

মেয়েটির কথায় আয়াদের ঘোর কাটলো। আয়াদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— উহু। আসলে ভাবছি অর্শি গেলো কোথায়? মেয়েটা বড্ড জেদি। দেখছি কোথায় গেলো!

*আয়াদ হোটেল থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। এই সময়ে অর্শি হোটেল থেকে বেরিয়েছে মানে আমি নিশ্চিত ও সাগর পাড়ে গিয়েছে। ওখানেই গিয়ে দেখতে হবে।

— অর্শি এমন ভাবে মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো? সাগর পাড়ে এসেছিস চল একটু গোসল করে যাই।

মিলির আনন্দিত কন্ঠেস্বর অর্শির কানে আসতেই অর্শি একটা বিরক্তি মাখা কন্ঠ নিয়ে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— তোর মনের মধ্যে এতো আনন্দ থাকলে যা না সাগরে গিয়ে ডুব দে। আমায় কেনো জ্বালাচ্ছিস? আমি একটু ডিপ্রাইজড। একটু একা থাকতে দে আমায়।

— ওমা ডিপ্রেশনের কারন কি? আমায় বল। আমি তোকে সাহায্য করছি।‌

— পারবি না রে। আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া সব সময় এমন করে কেনো? মানে অনুর সাথে ওনার এতো কিসের কথা থাকবে? উনি কেনো অনুর সাথে আলাদা করে সময় কাটাবে? আমি কি এতোটাই খারাপ তার চোখে যে আমার সাথে বসে একটু কথা বলা যায় না।

অর্শির অভিমানি কন্ঠে বলা এক দীর্ঘশ্বাস যুক্ত কথার মানে মিলির কাছে স্পষ্ট। মিলি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— ইমা এসব কি বলছিস? আচ্ছা তুই আবার আয়াদ ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করলি নাকি? এই সত্যি করে বল আমায়।

— মানে? ওনার মতো একটা হনুমানের বংশধরকে আমি ভালোবাসবো! হাউ ফানি। আমি ওনাকে ভালো টালো কিছু বাসি না। অনু ভালো মেয়ে না তাই আর সাথে আয়াদকে দেখলে আমার সহ্য হয় না। এছাড়া আর কিছু না।

— কিন্তু অনু খারাপ কি? ওকে তো যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে মনে হয়। আর‌ ওর পরিবার ও ভালো।

মিলির কথাটা শুনতেই অর্শি রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অর্শি মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তুই সব সময় বেশি বুঝিস। অনু অনেক খারাপ আয়াদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়। যা আমার সহ্য হয় না। আর আমার সহ্য না হলে কি? মানুষ তো ঠিক অনুর সাথে ভালোই থাকে। আমি আর কি বলবো?

অর্শির কথাটা শেষ হতেই অর্শির পিছন থেকে একটা কন্ঠেস্বর ভেসে এলো

— অনুর সাথে আমি গল্প করেছি শুধু আমাদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে নাকি? আর যদি থাকেও তাতে তোর কি? আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের দু চারটা গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। সেটা কি জাতি মেনে নিবে?

অর্শি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে আয়াদকে দেখতে পেয়ে তার রাগ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অর্শি রাগে গজগজ করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— ওরে আমার জাতির জনক রে। সবাক ঘরে ভালোবাসা পৌচ্ছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছেন উনি। দেখলেই গা জ্বলে যায়। শুনুন আপনার চরিত্র সম্পর্কে আমার জানা আছে। আপনি একটা……

— হয়েছে হয়েছে আর গভীরে না যাই। আমার সরল মনের একটাই প্রশ্ন আমায় কিছু না বলে কেনো এখানে এসেছিস?

— আপনি কে ভাই? আপনাকে কেনো বলে আসতে হবে?

— কাল রাতের ঘটনা মনে নেই মনে হচ্ছে।

— এখন সকাল আর আমার সাথে মিলি আছে।

— ওহহহ।

* আয়াদ আর কথা পেঁচালো না। অর্শি এমনিতেই রেগে আছে। এখন আর লাগানো ঠিক হবে না।‌ আয়াদ একটা পাথরের উপর কোনো রকমভাবে বসে পরলো। অর্শি আয়াদের দিকে একটা মুখ ঝামটা মেরে মিলিকে বলতে লাগলো

— চল মিলি আমরা একটু গোসল করে আসি।

অর্শির কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এই সব কি বলছে অর্শি? এর আগে কখনও তো অর্শি সবার সামনে গোসল করার কথা বলেনি। তবে আজ কেনো বলছে? তাছাড়া অর্শি তো একটা পাতলা পোষাক পরে আছে। কি করতে চায় ও? আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে কিছু না বলে চুপ করে বসে অর্শির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আয়াদ অর্শির এমন অদ্ভূত আচরণে হতবাক। অর্শি সাগরে গিয়ে নিজের শরীরে একটু একটু করে পানি দিতে লাগলো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে রাগে ফেটে যাচ্ছে। এতোটা নোংরা দেখাচ্ছে অর্শিকে। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পাতলা কাপড় ভেদ করে অর্শির শরীরের অবয়ক বাহির থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। আশে পাশের মেয়েরাও ঠিক একি কাজ করছে। পানিতে নেমে শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ দেখাচ্ছে সবাইকে। বাকিদের নিয়ে আয়াদের মাথা ব্যথা না থাকলেও অর্শিকে নিয়ে যথেষ্ট মাথা ব্যাথা আছে তার। অর্শি পানি নিয়ে ভালোই ইনজয় করছে। আয়াদ আর ধৈর্য ধারন করতে পারলো না। বসা থেকে উঠে রেগে গিয়ে দৌড়ে ছুটে চলে আসে অর্শির দিকে। আয়াদকে অর্শি নিজের সামনে হঠাৎ করে দেখতে পেয়ে একটু অবাক ও অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অর্শি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠল

— আপনি এখানে কেনো?

আয়াদ অর্শির কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। সজোরে কসিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো অর্শির গালে।

— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস। নোংরামির লিমিট আছে। আজ তুই সব লিমিট ক্রস করেছিস। ব্লাডি স্টুপিট গার্ল। নিজের দেহ সবাইকে দেখাতে ভালো লাগে তাই না।

আয়াদের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে আসবে। অর্শি থাপ্পর খেয়ে মাথা নত মস্ত করে আছে। লজ্জায় মাথা উঁচু করার সাহস করতে পারছে না অর্শি। জেদের বসে কি করে ফেললো অর্শি? আয়াদ নিজের শরীরের উপর থেকে ব্লেজারটা খুলে অর্শির দিকে ছুড়ে মারলো। ব্লেজারটা অর্শির দেহের উপর পরতেই অর্শি ব্লেজারটা ধরে নিলো। আশেপাশের সবাই অর্শি আর আয়াদের দিকে নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি মাথাটা নিচু করে ব্লেজারটা পরে নিলো। আয়াদ অর্শিকে রেখেই হনহন করে চলে এলো সাগর পাড় থেকে। আয়াদের মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। অর্শির কাজে ভিশন কষ্ট পেয়েছে আয়াদ।

— এই অর্শি কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?

সাগর পাড় থেকে ফিরে এসে অর্শি কান্না করতে লাগলো। অর্শির কান্নার কারন হলো আয়াদের করা অপমান। কিন্তু এতে আয়াদের দোষ নেই। আয়াদ যা করেছে তা ঠিক করেছে। কিন্তু জেদের বসে অর্শি এতোটা অশ্লীল কাজ কি করে করতে পারলো? এটা ভেবেই তার চোখে জল চলে আসছে। অর্শিকে শান্ত করতে তার মিলি বলল

— দেখ অর্শি যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন কান্না করিস না। একটু শান্ত হয়ে যা।

— উহু। আয়াদ ভাইয়া ভিশন কষ্ট পেয়েছে আমার কাজে। ওনার চোখে সারা জীবনের জন্য আমি ছোট হয়ে গেলাম।

— ধূর পাগলি এসব কিছুই না। মানুষ মাত্রই ভুল। আয়াদ ভাইয়া তোকে ক্ষমা করে দিবে। দেখে নিস।

— হুম।

* সন্ধ্যার দিকে অর্শি একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদের সাথে কথা বলার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার। অতিরিক্ত কান্না করার জন্য অর্শির চোখ ফুলে গেছে। অর্শি নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। আয়াদকে সরি বলে আয়াদের থেকে ক্ষমা চাইতে হবে তার। এমন ভুল আর কখনও করা যাবে না। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে আসতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। অর্শির চোখ জোড়া থমকে যায় একদম। অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ তার রুমের মধ্যে…………………………..

#চলবে……………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে