আমার তুমি পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
1923

#আমার তুমি
#Last part
#Tanisha Sultana (Writer)

রুমটা অন্ধকার করে বসে আছে সায়ান। কেউ দরজায় নক করে।

“কে

” আমি তাজ

সায়ান লাইট জ্বালিয়ে দরজা খোলে। তাজ ভেতরে ঢুকে।

“সায়ান মন খারাপ করিস না। যেটা হয় ভালোর জন্যই হয়।

সায়ান বিছানায় বসে। তাজও সায়ানের পাশে বসে

” তুলি জীমকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তা তো তুই জানিস। যদি জীম তুলিকে ভালো না বাসতো তাহলে অন্য কথা ছিলো। তোর সাথে তুলির বিয়ে হলে না তুই ভালো থাকতে পারতি না তুলি ভালো থাকতো। তিনটা জীবনই নষ্ট হতো।

“হুমমম

” কি হুম। প্লিজ তুই এমন করে থাকিস না। দেখ তুলি যখন জানতে পারবে তুই তুলিকে ভালোবাসিস ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছিস তখন তুলির কি অবস্থা হবে বল তো। ও তো খুব কষ্ট পাবে।

“খিদে পেয়েছে চলো কিছু খাবো

তাজ হেসে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।

তুলি পায়ের ওপর পা তুলে চা খাচ্ছে জীম তুলির দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

” এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?

“কিছু বলতে চাচ্ছি

” কান খোলা আছে

“কাল মারিয়ার শশুর বাড়িতে আমাদের ইনভাইড করা হয়েছে।

” তো

“তো আমাদের যেতে হবে

” আমি তো যাচ্ছি না

“কেনো?

” আপনি আমার সাথে যা করেছেন তারপর আপনার সাথে আপনার গার্লফ্রেন্ডের বাসায় নেমন্তন্ন খেতে যাবো

“তুলি সরি

জীম তুলির সাথে হাঁটু মুরে বসে বলে।

“কেনো?
সায়ান তুলির হাত ধরে বলে

“বিশ্বাস করো আমি কখনোই তোমার জন্য কিছু ফিল করি নি বা করতে চায়ও নি। জাস্ট তুমি আমার কথা শুনতে তাই তোমাকে উপদেশ দিতাম। আমি ভাবতাম আমি মারিয়াকে ভালোবাসি। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পরে বুঝতে পারলাম তুমি আমার কতোটা জায়গা জুড়ে আছো। তুমি ভাবতে পারবে না আমার এক একটা দিন কিভাবে গেছে। কতোবার তোমাকে কল দিছি ফেসবুকে খুঁজেছি কিন্তু তোমাকে পায় নি। রাইয়ের কাছে থেকে তোমার খোঁজ খবর নিতাম।

এক দমে কথা গুলো বলে জীম থামে। তুলি জীমের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলিতো খুব করে চাইতো যেনো জীম ওকে ভালোবাসি বলে। আজ জীম তুলিকে ভালোবাসি বলছে।

জীম তুলির পাশে বসে বলে

” জানো আমি নিজে ছেলে খুঁজে মারিয়ার বিয়ে দিয়েছি। রাই তোমার মন খারাপ করে বসে থাকা আমাকে ভিডিও করে পাঠাতো আমি দেখতাম। তোমার ভয়েসটা শুনতে খুব ইচ্ছে হতো তখন রাই তোমার অগোচরে রাইয়ের ফোনটা তোমার রুমে রেখে আসতো। তোমার আমার সব ছবি গুলো আমি যত্নে তুলে রেখেছি। আমি ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পরেছি তুমি নামক নেশায়।
কথায় আছে না “থাকতে কাছে কে আর বোঝে হারিয়ে গেলে সবাই খোঁজে” আমার অবস্থা সেরকম। যখন তুমি আমার প্রতি আসক্ত ছিলে তখন আমি তোমাকে অবহেলা করেছি। সরি তুলি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ হ্মমা করে দাও। প্লিজ

তুলি দাঁত কেলিয়ে বলে

“পা ধরে সরি বলতে হবে। অনেক কাঁদিয়েছেন আমায়।

” আমি তোমার হাজবেন্ড আমি কি করে তোমার পা ধরবো

“হাতটা বাড়াবেন আর ধরবেন। নিন তারাতাড়ি

জীম তুলির পায়ে হাত দিতে যায় তুলি হাত ধরে ফেলে

” থাক আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটাই অনেক আমার কাছে। একটা বছর আপনার ওপর রেগে ছিলাম আপনাকে ঘৃণা করতাম বাট কখনো মন থেকে সরাতে পারি নি আপনাকে। ফাস্ট লাভ আপনি আমার।

সায়ান আলমারি খুলে একটা ফাইল বের করে

“এটা কি

” দেখোই না

সায়ান ফাইলটা খুলে সেখানে শুরু তুলির ছবি। ছবি গুলো তুলি হাতে নিয়ে দেখছে।

“এগুলো আপনি কোথায় পেয়েছেন?

” তুমি যখন যে অবস্থায় থাকতে রাই আমাকে সেভাবেই ছবি পাঠাতো আর আমি ওগুলো যত্নে রেখেছি।

“আমি কিছুই জানি না

” সারাদিন বাইক নিয়ে দেবদাস হয়ে ঘুরলে জানবে কেমনে

রাই নক করে। সায়ান দরজা খুলে দেয়।

“ভাবি তুমি আমাকে আগে কেনো বলো নি

” বলতে গেছি অনেকবার তুমি শুনোনি

“হুম

তুলি কারো সাথে ভালো ভাবে কথা বলতো না।

” তোমাদের মান অভিমানের পালা শেষ হলে এবার তুলিকে নিয়ে যায় পার্লার থেকে বিউটিশেয়ানরা চলে এসেছে।

“তুই যা তুলি যাচ্ছে

” না আমি তুলিকে নিয়েই যাবো

“রাই

রাই জীমের কোনো কথা না শুনে তুলিকে টেনে নিয়ে যায়। তুলি পেছনে তাকিয়ে জীমকে বাই বলে চলে যায়।
একটা চেয়ারে বসে আছে তুলি। সেই কখন থেকে ভারি ভারি শাড়ি গহনা পরে আছে। এবার তুলির বিরক্ত লাগছে। সায়ান সব গেস্টদের সাথে কথা বলছে।
জিসান তমা এসে তুলিকে ঝাপটে ধরে। তুলি প্রথমে ভয় পেয়ে যায় পরে ওদের দেখে।

” দোস্ত তোকে ফাটাফাটি লাগছে (জিসান)

“এই প্রথমবার তুই আমার প্রশংসা করলি তাই ধন্যবাদ দিতে পারছি না।

” তুলি

তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান।

“আরে তুই এতো সাজাগুজু করে এসেছিস যে মেয়ে পটানোর ধান্দা

” মেয়ে তো পটাতেই হবে কতোদিন আর সিঙ্গেল থাকমু

“শোন না জীমের একটা কাজিন আছে হেব্বি দেখতে পটাই দিবো না কি

” দে

“ঘুস দিতে হবে

” কি চায়

“আমার আর জীমের হানিমুনের খরচ তুই দিবি

” ঠিক আছে

তুলি ওদের সাথে আরও কিছুখন গল্প করে। অনেক পিক তুলে। তুলি জীমের সাথে পিক তোলার জন্য জীমকে খুঁজছে কিন্তু জীমের দেখা নেই। তুলি এদিক ওদিক খুঁজছে। হঠাৎ দেখে জীম একপাশে দাঁড়িয়ে মারিয়ার সাথে কথা বলছে তুলি এগিয়ে যায়।

“আপনাকে খুঁজছিলাম

মারিয়া জীম তুলির দিকে তাকায়। মারিয়া তুলির কাছে গিয়ে তুলির গালে হাত দিয়ে বলে

” অনেক ভালো থেকো তুলি। জীমের খেয়াল রাখবা। ওতো তোমায় চোখে হারায়।

“তোমার হাজবেন্ড আসে নি আপু

তুলির কথায় মারিয়ার মনটা একটু খারাপ হয়

” ওর কাজ আছে তাই আসতে পারে নি।

“একদিন ভাইয়াকে নিয়ে আসবেন

” আচ্ছা। আমি আসি

তুলি আর জীম মারিয়াকে এগিয়ে দেয়।

“তুলি একটা জায়গায় যাবে

” বাড়ি ভর্তি মেহমান আমরা এখন কোথায় যাবো

“আগে চলো তো
জীম তুলির হাত ধরে হাটা শুরু করে। রাতের অন্ধকার। রাস্তায় একটা কুকুরও নেই। এরকম একটা পরিবেশে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতে ভালোই লাগে।

” জীম আর কতো দুর

“চলে এসেছি

তুলি এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখে ওরা একটা ব্রিজের কাছে এসেছে। জীম তুলিকে উঁচু করে ব্রিজের ওপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে

” এখানে কেনো আসলাম

জীম তুলিকে এক হাতে জড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে

“জোছনা বিলাস করতে

তুলি কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকায়। অন্য দিনের তুলনায় চাঁদটা বোধহয় আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

” অনেক ইচ্ছে ছিলো একদিন আমার তুমিটাকে নিয়ে এখানে বসে চাঁদ দেখবো সেই ইচ্ছে আজ পূরণ হলো

তুলি একটু মুচকি হাসে

“আমি কখনো ভাবি নি আমার জীবনে এরকম দিন আসবে। আপনি আমাকে এতো ভালোবাসবেন। আমার কাছে সব স্বপ্নের মতো লাগছে

জীম তুলির হাতে চিমটি কাটে। তুলি ব্যাথা পায়

” এটা কি হলো

“স্বপ্ন সত্যি করে দিলাম।

” আপনিও না

“আমিও না কি

” আমার তুমি। ভালোবাসি খুব আপনাকে

“মি টু

” কিহহহহহহ

“আমিও ভালোবাসি

দুজনের হেসে ওঠে।
এভাবেই হাসিখুশি থাকুক জীম তুলি।

________________সমাপ্ত ______________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে