আপন মানুষ ৭ম/শেষ পার্ট

0
3200

আপন মানুষ ৭ম/শেষ পার্ট

-কি বলবেন আব্বা বলেন? (আমি)
-তুমি কি বুঝতে পেরেছো কিছু? (বাবা)
-হা, আমার কিডনি নষ্ট হয়নি।
এটা আপনার নাটক ছিলো জুঁইয়ের আসল রুপটা প্রকাশ পাওয়ার জন্য তাইনা আব্বা?
-হা, তবে আরেকটা সত্য লুকিয়ে আছে। তা বাবা হয়ে ছেলেকে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
-কি সেটা? বলেন।
-তার আগে বলো, আমি যা জানতে চাইবো তার সত্য জবাব দেবে কিনা?
-হা দেবো, বলেন।
-তুমি সব ধরনের নেশা করো কতোদিন ধরে?
-আব্বা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
যেদিন প্রথম আপনাদের কাছে জুঁইয়ের কথা বলেছিলাম আর সেদিন আপনারা সরাসরি ওকে ভুলে যেতে বলেন।
তারপরেও কয়েকদিন বলার পরেও যখন মেনে নিলেন না ঠিক তখন থেকেই আমি আপনাদের না জানিয়ে নেশার জগতে চলে যাই।
আমি মদ সহ সব ধরনের নেশার জিনিষ পান করতাম নিয়মিতই।
আমি একটা মেয়ের জন্য আপনাদের না জানিয়ে এই অন্যায়টা করেছি।
আমায় দয়া করে ক্ষমা করে দেন আব্বা।
এসব বলে বাবার দিকে তাকালাম…
ওনার চোখে পানি!
-কি হয়েছে আব্বা, কাঁদছেন কেনো?
-আমরা তো তোমায় কোনকিছুর অভাব দেইনি কখনো।
শুধু ঐ একটা মেয়েকে ভুলে যেতে বলেছিলাম।
কারন মেয়েটির পরিবার সম্পর্কে জানতাম। ওরা ভালো মনের মানুষ না, স্বার্থপর।
আর তুমি আমাদের না বলেই এমন জঘন্য পথ বেছে নিলে?
জানো এতে কতো বড় ক্ষতি হয়েছে তোমার?
-কি হয়েছে আমার? বলেন আব্বা।
-এই নাও, রিপোর্ট টা পড়ে দেখো।
আমি কিডনি নষ্টের ব্যপারটা রিপোর্ট না দেখেই ডাক্তার কে বলতে বলেছিলাম যে তোমার ২টা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে এইটা জানাই দেওয়ার জন্য ।
কারন এতে তুমি বুঝতে পারবে কে
#আপন_মানুষ ও কে নকল ভালোবাসার মানুষ।
কে তোমার আপন, কে তোমার পর।
হা বুঝতেও পেরেছো এখন।
কিন্তু আসল রিপোর্টটা পেয়ে…
আর বলতে পারছে না বাবা। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।
আমি রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম…
আমার এক ধরনের ক্যান্সার হয়েছে।
তবে সময়মতো এর সঠিক চিকিৎসা করালে এই ক্যান্সার নাকি ভালো হতে পারে।
তার আগে একটা অপারেশন করাতে হবে।
প্রচুর টাকা লাগবে এই চিকিৎসায়।
তারচেয়ে বড় কথা এই অপারেশনে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।কারন অপারেশন সাকসেস হলে অনেকটা বেচে থাকার আশ্বাস পাওয়া জাবে।
-রিপোর্ট পড়ে খুব বেশি অবাক লাগছে না আমার।
কারন বেশ কিছুদিন হলো আমার কেমন জানি লাগে।
মাঝে মধ্যে ভিতরে কষ্ট হয়।
কখনো কখনো গলা থেকে মুখ দিয়ে রক্ত আসে।
কখনো আবার মাথা ঘুরে পড়ে যাই।
আবার কখনো ভিতরের যন্ত্রনায় একা একা লুকিয়ে কাঁদি।
কাউকে বলতে পারিনি। বুঝতে পারতাম আমার ভিতরে বড় কোন সমস্যা হয়েছে।
কিছুদিন হলো তাই সব নেশা বাদ দিয়ে শুধু সিগারেট টানি। তাও খুব বেশি না।
আমি ভেবেছিলাম সব ছেড়ে দিয়ে সবার অজান্তে নিজের চিকিৎসা করাবো।কারন আজ #আপন_মানুষ গুলোর জন্য হাজার বছর বাচতে ইচ্ছে করছে।
.
বাবা আমার কাধে হাত রেখেছে।
-আমি ব্যপারটা এখন না বললেও পারতাম খোকা।
কিন্তু ঘরে একটা মেয়েকে এনে দিয়েছি।
মেয়েটা খুবই ভালো। আমি জানি তুমি ওকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নাওনি।
আমি চাই আল্লাহ্ যতদিন তোমায় ভালো রাখে অন্তর ততোদিন মেয়েটাকে আপন করে নাও।
আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করো তোমার রোগটা যেনো ভালো করে দেয় ওই মালিক।
আর তোমার চিকিৎসা আমি করাবো।
যতো টাকা লাগে লাগোক। প্রয়োজনে সব জমি বিক্রি করে দেবো।
-হা আব্বা। মৌ এর জন্যই আজ খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।
মাত্র কয়টা দিন হলো ও আমাদের বাড়িতে এসেছে। অথচ কতোটা ভালোবাসে ও আমায়।
-হা খোকা।
আর এই ব্যাপারটা তোমার মা বা পরিবারের অন্য কাউকে জানাবে না কিন্তু।
আর আজকেই তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।
তবে তোমার যে ক্যান্সার হয়েছে এটা পরিবারের কাউকে জানানো দরকার নাই।
সবাই এই নিয়ে টেনশনে থাকবে।
শুধু কিডনি নষ্টের ব্যাপারটা মিথ্যা এটাই বাড়ির লোক জানবে।
তবেঐ জুঁই নামের মেয়েটাকে ডিভোর্স না দেয়া পর্যন্ত এটা সবাইকে জানানোর দরকার নাই।
.
বাড়িতে এসে দুইদিন পরই কোর্টে গিয়ে আগে জুঁই নামের মেয়েটাকে মুক্তি দিলাম।
ডিভোর্স দিলাম ওকে।
আজ আমি চিন্তা মুক্ত। আজকেই আমি আমার বউ “মৌ” কে বউয়ের অধিকার দেবো।
এখনো আমাদের স্বামী স্ত্রীর মিলন হয়নি। আজকেই হবে আমাদের নতুন করে বাসর রাত।
.
রাত আট”টা বাজে। খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকলাম।
একটুপর মৌ এলো ঘরে,,,ওকে কাছে ডাকলাম…
-আজকে বউ সাজবে তুমি। নিজ হাতে তোমায় সাজিয়ে দেবো আমি।
আজকে হবে আমাদের বাসর রাত।
মৌ লজ্জায় মাথা নিচু করে আমার কাছে আসে।
আমি ওকে নিজ হাতে শাড়ি, গয়না পড়িয়ে বউ সাজিয়েছি।
ও হাসছে মিটিমিটি। সাজানো শেষে ওকে বললাম তুমি খাটে গিয়ে বসো।
খাটে বসে আছে আমার লক্ষি বউ :::::”মৌ।
আমি উঠে ওর ঘোমটা সরিয়ে দিলাম।
ঠিক একটা পরী”কে দেখতেছি আমি। কি সুন্দর লজ্জাময় হাসি ওর।
-এই মৌ…
-হুমম বলো…
-আমি তোমায় খুব কষ্ট দিয়েছি এই কয়টা দিন তাইনা?
-নাহ আমি কষ্ট পাইনি।
গভীর রাতে যখন তুমি উঠে আমার কপালে একটা চুমু দিতে আমি তখন ঘুমের ভান করে থাকতাম।
তখন আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যেতো।
যখন ঘুমের মধ্যেই তোমার ঐ বুকে জড়িয়ে নিতে তখনই বুঝতাম এই লোকটা অনেক ভালো।
শুধু আমায় বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছে না পরিস্থিতির কারনে।
তোমার ভালোবাসার মানুষ যদি তোমার হতো তবে সত্যিই আমি সব মেনে নিতাম।
এমন একটা মানুষের ঘরে চাকরানী হয়ে থাকলেও সুখ।
এই কথাগুলো বলে মৌ আমার বুকে মাথা রাখে।
আমি ওকে বুকের উপর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।
ওর মুখটা আমার মুখের সামনে।
কিছুটা লজ্জাময় হাসি দিয়ে আমায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
আমি ওর মিষ্টি ঠোটের দিকে তাকাই।
ও যেনো আমার চাহনি আর চাওয়াটা বুঝে ফেলে।
আমাকে পাগল করে দিতে থাকে। আমিও আমার স্ত্রীকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিতে থাকি।
অবশেষে শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।
.
ভোরে উঠে চেয়ে আছি মৌ এর ঘুমময় মুখের দিকে।
আগামিকাল আমার অপারেশন। হয়তো হতে পারে এটাই আমার শেষ দিন।
তাই এই সত্যটা ওকে জানানো দরকার।
ওকে ধীরে ডাক দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
ধীরে ধীরে ওকে সব খুলে বললাম।
ও আমায় আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে…
তোমার কিচ্ছুই হবেনা।
আমি নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করবো।
আল্লাহর কাছে আমার স্বামীর প্রান ভিক্ষা চাইবো।
দেখবে তুমি ঠিকই সুস্থ হয়ে যাবে।
-হা পাগলি তাই যেন হয়। আল্লাহ্ আমাকে ভালো করলে আমরা তার দেখানো পথেই সংসার শুরু করবো।
আমার “#আপন_মানুষ” কে বুকে নিয়ে নতুন করে জীবন সাজাবো।
এইভাবে কাটিয়ে দিব বাকি জীবন যেখানে আমার ভালোবাসা টুকু শুধুই তোমার………..
পরের দিনই অপারেশন হয়েছিল ৷ আমি জানি মৌ একটু ঘুমায়নি ৷ সারা অপারেশন থিয়্যাটার এর সামনেই বসে ছিল মা-বাবার সাথে ৷
আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাকসেসফুল হয় ৷
৪৮ ঘন্টা ছুই ছুই, ,,আমার জ্ঞান ফিরেছে ৷
সবাই অনেক দুঃচিন্তায় ছিল ৷
মায়ের কাছে শুনেছি মৌ নামাজ আমার জন্য অনেক দোয়া করেছে ৷ কান্না-কাটি করে মোনাজাত করেছে আল্লাহর দরবারে ৷ এমন ওর জীবনের বিনীময় আমার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছে আল্লাহর কাছে ৷
আর একটু পরপরই ডাক্তাকদের কাছে জানতে চেয়েছে আমার কী অবস্থা, আমি কি আমার স্বামীর কাছে যেতে পারবো?
ডাক্তারের জবাবের অপেক্ষায় ছিল, কতোক্ষনে আমার কাছে আসবে ৷
অতপর,আমার জ্ঞান ফিরতেই অনুভুব করলাম কেউ একজন আমার হাত শক্ত করে ধরে কান্না করতেছে ৷
চোখ খুলতেই দেখি আমার পাগলী বউটা “মৌ ”
চোখে পানি আর কান্না ভেজা কন্ঠেই আমাকে বলতে লাগলো, ,,বলেছিলাম তোমার কিচ্ছু হবে না ৷
আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে ৷
তারপর আমি ঈশারায় একটু কাছে আসতে বললাম ৷
শরীর অনেকটা দূর্বল হলেও ওকে জড়িয়ে ধরতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি ৷ ওর অনিদ্রা আর কান্না ভেজা চেহারা দেখে কখন যে আমার চোখে পানি চলে আসলো টেরই পাইনি ৷ তবে এই অশ্রু কষ্টের নয় এই অশ্রু জীবন ফিরে পাওয়ার সুখ আর বাকীটা জীবন মৌ এর সাথে কাটাতে সেই সুখেরই বহিঃপ্রকাশ ৷
এতোক্ষনে মৌ এর মাথা আমার বুকের সাথে মিশে গেছে ৷ আস্তে করেই বল্লাম মৌ তুমি আমার সবচেয়ে বড় #আপন_মানুষ
অতপর,মৌ বললো তুমি আমার আপনা’র চেয়েও বেশী #আপন_মানুষ
শুরু হলো তাঁদের নতুন জীবন, ,,জনম জনমের জন্য তাঁরা দুজন দুজনার #আপন_মানুষ
*
_______সমাপ্ত______
_
গল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক ছিলো!
তবে এ গল্প থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে আমাদের।
আমরা যুবক, যুবতীরা অনেক সময় কারো চেহারায় পাগল হয়ে তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসি। অথচ তার সম্পর্কে কোনকিছুর জানার প্রয়োজন মনে করিনা।
আবার মা, বাবার কথাও শুনিনা পরে।কিন্তু মা, বাবা বিষয়ে খোঁজ নিয়েই যদি কোন এক সিদ্দান্ত দেয়।
কিন্তু আমরা মনেকরি তারা কেন মেনে নেয় না?
অবশেষে আমরা গল্পের নায়কের মতো নেশায় ডুবে যাই প্রকাশ্যে বা নিরবে।
তারপর মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে যাই প্রিয় মানুষদের ছেড়ে।
আসুন সবাই এই দিকে একটু খেয়াল করে চলি। আর মা, বাবার অজান্তে বা তাদের অবাধ্য হয়ে কোন কাজ না করি।
কারন তারা কখনোই আমাদের খারাপ চায়না।
মনে রাখবেন অহংকারী শামুক গুলোই শুকনাই পড়ে মরে।
মানুষ কে ভালোবাসার পূর্বে ঠিক করে নিবেন যে সেই মায়া ত্যাক করতে পারেন কিনা।
যদি এমন হারাম ভূলে যাওয়া দায়।
তবে এইসব বিয়ের পূর্বে হারাম প্রেম থেকে দূরে থাকায় উত্তম ।
আর মৌ এর মত মেয়ে জেনো বউ হয় সবার ঘরে(আমিন)
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়।
পরবর্তীতে আরো ভালো ভালো পোষ্ট নিয়ে আপনাদের সাথে থাকবো ৷ “ইনশা-আল্লাহ

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে