আজ রিক্তার মৃত্যুবার্ষিকী পর্ব-০১

0
4450

গল্প আজ রিক্তার মৃত্যুবার্ষিকী।
#পর্ব এক (০১)
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

স্ত্রীর মৃত্যুর চার বছর পর শশুর বাড়িতে এসেছি। রাতে খাবার শেষে শাশুড়ী বললো,
– বাড়ির পিছন থেকে পালিয়ে যাও বাবা। নাহলে তোমার শশুর তোমাকে মেরে ফেলবে। কোনো কথা না বলে চুপচাপ পালিয়ে যাও। আর কোনদিন আমাদের বাড়িতে এসো না।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
বললাম,
– কিন্তু কেন আম্মা? আমাকে খুন করে আব্বার লাভ কি? আমি কি করেছি?

শাশুড়ী আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে চলে গেল। আমি চুপচাপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এই বাড়িতে যেই ছেলেটা কাজ করে সেই ‘বাদল’ দাঁড়িয়ে আছে। বাদলের বয়স ২২/২৩ বছর হবে। এ বাড়িতে প্রায় পনের বছর ধরে কাজ করে। তার চোখে চোখ পড়তেই অদ্ভুত লাগলো। কেমন জানি ক্ষুধার্ত বা প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়ে দিচ্ছে বাদলের সেই চোখ দুটো।

হঠাৎ মোবাইলে কল এলো। কল করেছে আমার শাশুড়ী নিজেই। আমি রিসিভ করতেই তিনি বললেন,

” বাদল তোমাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছে। বাহিরে আরও তিনজন আছে। কেউ যেন বুঝতে না পারে যে তুমি ওদের উদ্দেশ্য জেনে গেছো। রিক্তার বাবা তোমাকেই রিক্তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে। আমি কিছু করতে পারলে করতাম বাবা। তুমি পালিয়ে যাও আমি চাই তুমি নিজের জীবন নিয়ে যেন ফিরে যাও। আর আমি আমার সংসার নিয়ে বেঁচে থাকি! মেয়ে তো গেছে, এখন তোমাকে মেরে স্বামীকেও হারাতে চাই না। আমি আগে জানলে কিছুতেই তোমাকে আসতে বলতাম না। ”

রিক্তা আমার মৃত স্ত্রীর নাম। শাশুড়ীর কথা শুনে আমি ঘামতে লাগলাম। এদিকে শশুরের প্রহরী বাদল আমার দিকে তাকিয়ে বললো ,

– আপনাকে চাচায় ডাকে।

– কোথায়?

– কাচারি ঘরে বসে আছে , আপনার সঙ্গে নাকি জরুরি কথা আছে। চলেন আমার সঙ্গে।

– তুমি যাও তাহলে, আমি আসছি।

বাদল গেল না , সে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি একটু বিরক্ত কিন্তু ভয়মিশ্রিত কণ্ঠে বললাম,

– কি হলো, তোমাকে যেতে বললাম না?

– আপনাকে নিয়েই যেতে হবে। আপনার কাজ থাকলে কাজ শেষ করেন, তারপর চলেন।

– আমি কাপড় পাল্টাবো, আর সেটা তোমার সামনে কীভাবে করবো বলো তো?

– কেন, আপনি কি মেয়ে মানুষ নাকি আমি মেয়ে মানুষ। আমার সামনেই পাল্টান সমস্যা কি। আমি আপনাকে না নিয়ে গেলে চাচায় ধমক দিবে।

এখন কি বলবো আর খুঁজে পেলাম না। আমার কি যাওয়া উচিৎ নাকি বাদলকে এখানে ঘায়েল করে পালানো উচিৎ বুঝতে পারছি না। যদি সেটা করতে পারি তাহলে পালানোর একটা সুযোগ পাবো কিন্তু যদি কাছারি ঘরে যাই তাহলে তো আর সুযোগ না ও আসতে পারে।

রিক্তা আর আমি বিয়ে করেছিলাম গোপনে। রিক্তা পড়াশোনা করতো ঢাকায় , সেখানেই আমাদের পরিচয়। প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি আমাদের ভালোবাসার গল্প। তারপর এক ছুটিতে রিক্তা তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। বাড়িতে এসেই জানতে পারে রিক্তার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে। তখন ইউনিয়নের পরপর দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান রিক্তার বাবা জুলফিকার মৃধা।

রিক্তা আমাকে কল দিয়ে কান্নাকাটি করলো। আমি তাকে কোনো সমাধান দিতে পারলাম না। কারণ মা-বাবার কাছ থেকে একটা মেয়ে পালিয়ে যাক সেটা আমি চাইনি। আবার নিজের ভালোবাসার মানুষ সারাজীবনের জন্য অন্য কারো হয়ে যাক সেটাও কল্পনা করতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম আমি সরাসরি রিক্তার বাবার সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু তার আগেই রিক্তা তার বাবাকে বলেছে এবং তিনি সরাসরি না করেছে।

সম্পুর্ণ একদিন এক রাত রিক্তার নাম্বার বন্ধ ছিল। রিক্তাদের বাড়ির সম্পুর্ণ ঠিকানা জানতাম না। তবে জেলা উপজেলা আর ইউনিয়নের নাম জানতাম। আর যেহেতু ওর বাবা তখন রানিং চেয়ারম্যান ছিল তাই সহজেই তার বাড়ির খুঁজে পাওয়া যাবে এটাই
স্বাভাবিক।

ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পদ্মা নদীর কাছাকাছি আসতেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। তখন কিন্তু পদ্মা সেতুর উদ্ভোদন হয়নাই। সকল যানবাহন ফেরীতে কিংবা লঞ্চে করে করে পারাপার হতো।
কল রিসিভ করতেই রিক্তার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। রিক্তা এলোমেলো আর কান্নামিস্রিত কণ্ঠে যা বলেছিল তার সারমর্ম হচ্ছে,

” বাবার সঙ্গে রাগারাগি করছে। তার বাবা জোর করার কারণে রিক্তা সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। তারপর তাকে অসুস্থ অবস্থায় খুলনার একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। একবেলা থেকেই খানিকটা সুস্থ হয়ে রিক্তা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেল। যে নাম্বার দিয়ে কল করেছিল সেটা ছিল ওর এমন বান্ধবীর নাম্বার। ওই বান্ধবীও রিক্তার সঙ্গে একসঙ্গে পড়াশোনা করে। রিক্তা একবার তাদের খুলনার বাসায় গেছিল। মেয়েটার নাম সুরমা, সুরমা নিজেও তখন ছুটির কারণে খুলনার বাড়িতে ছিল। তাই রিক্তা সুরমাদের বাসায় গিয়ে আমাকে কল করেছে। ”

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বলার পরে রিক্তা আমাকে বললো,

– তুমি যদি আমাকে সারাজীবন তোমার কাছে রাখতে চাও তাহলে আমাকে এসে নিয়ে যাও। আর যদি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো, আমাকে ছাড়া তোমার জীবন চলে তাহলে বলে দাও। তাহলে আমি হাসপাতালে ফিরে যাবো।

আরেকটা পুরুষ কণ্ঠস্বর শুনে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
– বাদল ভাই আপনাকে চেয়ারম্যান সাহেব কি করতে বলছে। করেন না কেন।

বাদল বিরক্ত গলায় আমাকে বললো,
– তাড়াতাড়ি চলেন তো। চাচায় কিন্তু রেগে যাবে।

– মোবাইলটা চার্জে দিয়ে আসতেছি।

– আচ্ছা চার্জ দেন।

তাকিয়ে দেখি বাদলের পাশে আরেকটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। দুপুরে পুকুর থেকে মাছ ধরার সময় এই লোকটাকে দেখেছিলাম জাল ফেলতে। আমি মোবাইল চার্জে দিয়ে নিরুপায় হয়ে তাদের সঙ্গে হাঁটা ধরলাম। যা আছে কপালে, আগে দেখি ঘটনা কি। তাছাড়া যেহেতু আমার শশুর এখানকার পরপর দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই তিনি চাইলেই তো আমাকে মেরে ফেলতে পারবেন না। সমাজের মধ্যে কেউ তার নিজের সম্মান নষ্ট করতে চায় না।

আমি গিয়ে রিক্তার বাবা জুলফিকার মৃধা অত্র ইউনিয়নের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যানের সামনে গিয়ে বসলাম। আমার পিছনেই বাদল দাঁড়িয়ে আছে তবে জাল দিয়ে মাছ ধরা লোকটাকে এখানে আর দেখতে পাচ্ছি না।

– আব্বা আমাকে ডেকেছেন?

– হ্যাঁ, চা খাও।
বাদলের দিকে তাকিয়ে বললো, “জামাইকে চা দে”

চায়ের মধ্যে বিষ দিবে নাকি? মৃত্যুর পড়ে যেন দায় এড়ানো যায় সেজন্য কৌশল করছে না তো।

বাদল চলে গেল চা আনতে। রিক্তার বাবা সামনে রাখা কাগজপত্র মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। রিক্তার মা-বাবা দুজনই শিক্ষিত মানুষ। আমার শাশুড়ী যখন
অনার্স শেষ করেছেন রিক্তার তখন দুই বছর বয়স।

সেদিন আমি পদ্মা নদী পার হয়ে সরাসরি খুলনা এসেছিলাম। খালিশপুরে রিক্তার বান্ধবীর বাসা থেকে সেই রাতেই ট্রেনে এসেছিলাম ঢাকা। ঢাকায় ফিরে সবার আগে আমার বন্ধুদের ডেকে বিয়ে করলাম। আমার বাবা নেই, মায়ের নতুন বিয়ে হয়েছে নাটোরে। মা সেখানেই থাকে, মা’কে শুধু জানালাম আমি বিয়ে করবো। মা ভিডিও কলে রিক্তাকে দোয়া করলেন।

বিয়ের পরে রিক্তা বললো, আমরা ঢাকা শহরে আর থাকবো না। চলো নতুন কোনো শহরে গিয়ে দুজন মিলে একসঙ্গে থাকবো। ঢাকার মধ্যে থাকলে বাবা আমাদের যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবে। রিক্তার কথা শুনে আমি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তবে চারদিন পরে আমরা সবকিছু গুছিয়ে নাটোরে চলে গেলাম। মা সেখানে আমার একটা জবের ব্যবস্থা করে দিলেন।

নাটোরে আসার তিনদিন পরে আমরা যে বাসায় ভাড়া উঠেছি সেই বাড়ির মালিক আমাদের রুমে এলেন। তার হাতে বড় বড় দুটো লাগেজ আর সেই লাগেজটা যে রিক্তার সেটা আমি এবং রিক্তা দুজনেই বুঝতে পেরেছি।

বাড়িওয়ালা রিক্তাকে বললেন,
– তোমার বাবা এগুলো পাঠিয়েছে , এখানে তোমার ব্যবহৃত সবকিছু ঠিকঠাক আছে। তোমার সখের যা কিছু ছিল তিনি নিয়ে এসেছেন। আশা করি তোমার আর অসুবিধা হবে না।

আমি কিছু বলার আগেই রিক্তা বললো ,

– আপনি আমার বাবাকে চিনেন?

– নাহ , ভদ্রলোক কীভাবে আপনাদের সন্ধান পেয়ে এখানে এসেছে আমি জানি না। তোমাদের বিষয় সবকিছু বললো , তারপর এগুলো দিয়ে তিনি চলে গেছেন।

আমি ও রিক্তা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সবসময় রিক্তার মুখে তার বাবার বিষয় যত কথা শুনেছি তার অনেকটাই ভুল প্রমানিত হলো। রিক্তার কথা অনুযায়ী তার বাবা হচ্ছে তার দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ রাগী মানুষ। অথচ সেই মানুষটা এভাবে আমাদের খুঁজে বের করে নিজের হাতে মেয়ের ব্যবহৃত সবকিছু নিয়ে এসেছে। আবার খুব যত্নে সেগুলো বাড়িওয়ালার কাছে দিয়ে গোপনে বিদায় নিয়ে গেছে। মনে মনে তখন মানুষটাকে একটা অপ্রকাশিত ধন্যবাদ দিলাম।

বাড়িওয়ালা যাবার সময় রিক্তাকে বললেন,
– তোমার বলেছেন তার ভয় পালাতে হবে না। কারণ সবজায়গা থেকে খুঁজে বের করার ক্ষমতা তার আছে। তোমার বাবা চান তুমি তোমার পড়াশোনা শেষ করো। তাই পড়াশোনা বন্ধ না করে ঢাকায় গিয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেছেন।

~
বাদল চা নিয়ে এসেছে আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। রিক্তার বাবা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন ,

– চা খাও নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

– আমি চা খাবো না।

– ওহ্ আচ্ছা , একটু বলতে তাহলে শুধু শুধু নষ্ট হতো না। বাদল চা নিয়ে যা, তুই খেয়ে ফেল।

আমার পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদল চা খাচ্ছে। রিক্তার বাবা এবার তার সামনের কাগজপত্র এক সাইডে রেখে বসলেন। টেবিলে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললেন ,

– তোমার মোবাইল কোই?

– মোবাইল রুমে রেখে এসেছি আব্বা। মোবাইলে চার্জ ছিল না তাই চার্জে দিছিলাম।

রিক্তার বাবা বাদলের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ঘর থেকে জামাইর মোবাইলটা নিয়ে আয় তো।

আমি চুপচাপ বসে আছি, তিনি তার মোবাইলে কি যেন টাইপ করছেন। সম্ভবত কিছু লিখছে কারো কাছে। আমি যেমন ছিলাম তেমনই বসে রইলাম। বাদল ভেতর থেকে মোবাইল নিয়ে আসলো। আমি মোবাইল হাতে নিলাম।

আমার শশুর তখন বললেন,
– তোমার মোবাইলে MB আছে?

– জ্বি আছে।

– ডাটা চালু করো, দেখো তো তোমার মেসেঞ্জারে কোনো মেসেজ এসেছে কি-না।

আমি ডাটা চালু করলাম। আর তখনই মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম।

রিক্তা মারা গেছে আজ থেকে চার বছর আগে। আজ রিক্তার মৃত্যুবার্ষিকী ছিল তাই আমি এসেছি। কিন্তু আজ হঠাৎ রিক্তার সেই পুরনো ফেসবুক আইডি দিয়ে মেসেজ এলো কীভাবে। এই আইডি তো গত চার বছর ধরে বন্ধ ছিল।

আমি মেসেঞ্জারে গিয়ে রিক্তার আইডি দিয়ে আসা মেসেজটা পড়তে লাগলাম ,

” আমার মেয়েটা তো আমাদের চেয়েও তোমাকে বেশি ভালোবেসেছিল। আমি ভেবেছিলাম তুমি হবে আমার মেয়ে সারাজীবন সুখে থাকার অছিলা। কিন্তু ওর মৃত্যুর কারণ যে তুমি হবে, তোমার জন্য ওকে মরতে হবে এটা তো ভাবিনি। আমার মেয়েটাও তো ভাবেনি এমনটা হবে। ”

মেসেজ পড়ে আমি রিক্তার বাবার দিকে তাকালাম। ভয়ঙ্কর সেই চেহারা, প্রতিশোধের জন্য অপেক্ষায় থাকা তার সম্পুর্ণ শরীর।
আমি কিছু বলার আগেই তিনি বলেন,

– আমার মেয়ে যখন মারা যায় তখন থেকে আমার কেন যেন মনে হতো আমার মেয়েটার মৃত্যুর পিছনে কোনো কারণ আছে। রাগ করে ছিলাম ঠিকই কিন্তু ভুলে তো যাইনি তাকে। রিক্তার মৃত্যুর পরে ওর ব্যবহার করা সিমকার্ড ওর মা ব্যবহার করতেন।

– আপনিই ওর আইডিতে লগইন করেছেন।

– রাজনীতিবিদ মানুষ আমি, সবকিছুর একটা গভীর চিন্তা থাকে। আমার দলের একটা ছেলে আছে খুব বিশ্বস্ত। সে বললো যে একটা রিস্ক নিয়ে দেখা যায়। মানুষের সিমকার্ড দিয়ে নাকি তার ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। যদি সেই সিম দিয়ে আইডি চালু করা হয়। আর আমি তো ভালো করে জানি রিক্তা ওর জীবনে মাত্র একটাই সিম ব্যবহার করেছে। তাই আমার দলের সেই ছেলেটার সাহায্যে আমি রিক্তার আইডিতে গেলাম। কারণ সেখানে হয়তো কিছু না কিছু পাবো সেই বিশ্বাস আমার ছিল। হয়তো তোমার কাছে, নয়তো তার নিজের কোনো কাছের বন্ধুর সঙ্গে নিশ্চয়ই হতাশার কথা শেয়ার করেছে।

এবার আমার গলা শুকিয়ে গেল। রিক্তার মৃত্যুর আগে সত্যি সত্যি আমার সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছিল। তবে সেটা রিক্তার এক বন্ধুকে নিয়ে।

রিক্তার বাবা বলেন,
– আমার মেয়ে আমার কাছে অনেক কিছু। আমি ভেবেছিলাম সেই ছোটবেলায় বারবার ভুল করে আবার আমার সামনে আসতো। আর এক হাতে কান ধরে অন্য হাতে নাক ধরে বলবে, ” বাবা এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। ” যখন এসেছে তখন আমি তাকে কাছে টেনে নিতে পারিনি।

আমি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
তিনি আবার বললেন,

– এতটাই যখন অসহ্য লেগেছিল তাহলে আমাকে একটিবার বলতে। আমি গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে আসতাম। তোমার বিশ্বাসঘাতকতার আঘাতে আমার মেয়ে কষ্ট পেত, আমি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম। রাতে নিজে নাহয় ঘুম পারিয়ে দিতাম তবুও আমার কাছে তো থাকতো।

হঠাৎ বাড়ির ভেতর একটা বাইকের শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে কেউ একজন বাইক নিয়ে বাড়ির ভিতরে এসেছে।
একটু পরেই বাদল এসে বললো,

– চাচা একটু সমস্যা হয়ে গেছে।

– কে এসেছে?

– বোরহান দাদুর নাতি, সাজু ভাই এসেছে।

– কিহহ, সাজু এ অসময়ে কেন আসবে? তাকে কে খবর দিয়েছে?
.
কি ছিল মেসেঞ্জারে?
কীভাবে মৃত্যু হলো রিক্তার?
সবকিছুর জন্য কি তার স্বামী দায়ী, নাকি অন্য কিছু?
.
.
.
~ চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে