আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩১+৩২+৩৩ একসাথে

0
2287

আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩১+৩২+৩৩ একসাথে
লেখা আশিকা জামান

কিছুক্ষন পর কি মনে করে যেন ইভান রুমে ঢুকলো।
একদম আমার কাছে এসে বসলো।
তারপর চুপ করে গেলো।
আমি তখনো কাঁদছিলাম।
আমি পিঠে একটা হাত রেখে আমাকে ওর দিকে ঘুরাতে লাগলো..
আমি একটা ঝটকানি দিয়ে ওর হাতটা সরিয়ে দিলাম।
— তুমি একদম আমাকে ছোবেনা। এখান থেকে সরো বলছি।
— দেখ অরিন, তুমি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছো। একটা সামান্য কারনে এইভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে আমি সেটাই বুঝতে পারছিনা।
— এতদিন পরেও টুকটুকির সাথে তোমার যোগাযোগ আছে সেটা জানার পরো আমি চুপ করে থাকবো।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


— আশ্চর্য টুকটুকির সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আর কালকে কেন ফোন করেছে সেটা আমি নিজেও জানি না। আর এতেই প্রমান হয়ে গেলো ওর সাথে যোগাযোগ আছে??
ও আমাকে কাধ ধরে বসা থেকে তুলে ফেললো..
— মেজাজ খারাপ করবা না। এই তুমি দেখছো আমাকে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে?? আমার ফোন কখনো বিজি পাইছো?? আমাকে কখনো লেট করে বাসায় ফিরতে দেখেছো??আমার কোন আচরনে তোমার মনে হলো এটা বলো??
— এখানে আমার মনে হওয়া না হওয়ার কি আছে। আল্টিমেটিলি তোমাদের কন্টাক্ট আছে এটাই সত্যি। আর তুমি বাহিরে কি করো না করো আমি কি করে জানবো?? আর তুমি তোমার কল লিস্ট ডিলেট করে দিলে আমার বোঝারতো উপায় নেই।
— দারুন বলেছো। এই চিনেছো আমাকে??
— কেন যা সত্যি তাই বলেছি। আর আমারতো কোন দোষ ছিলো না। আমাকে কেন এই গোলকধাঁধায় জড়ালে?? তোমার আর ওই মেয়ের এইরকম একটা ছবি দেখারপরো আমি একটা মেয়ে হয়ে কি করে ঠিক থাকি বলো। তুমি নিশ্চয় ভুলে যাচ্ছ ওই ছবিটা দেখে আমি সুইসাইড করতেও গিয়েছিলাম। সত্যি আমার বাচতে ইচ্ছে করে না।
— অরিন দেখো তুমি টুকটুকির নাম্বার ব্লক লিস্টে আমি ওর সাথে কোন কথা বলিনি।
ইভান আমাকে ওর ফোনটা দেখালো।
আমি মৃদু হাসলাম।
— এতদিন কেন নাম্বারটা ব্লক লিস্টে স্থান পায় নি ।
আমি ওর শার্ট এর কলার ধরে বলি।
— এই আমি কি এতই বোকা??
আমি দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।
ও আমার পিছুপিছু রুমে আসলো। আমি রুমে এসেই কাপড়চোপড় বের করে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম।
ও আমার হাতে ধরে আমাকে বাধা দিতে লাগলো।
— সরো তুমি। ব্যাগ গুছাতে দাও। আমাকে ঠকানোর সময় তোমারতো মনে ছিলো না আজকের দিনের কথা।
সত্য কোনদিনো চাপা থাকে না।
— বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকাইনি। সেদিন হ্যা একটা ভুল আমি করেছিলাম সেটা হলো তোমাকে মিথ্যে বলে টুকটুকিদের বাসায় যাওয়াটা। বিশ্বাস করো আমি ওদের বাসায় সেদিন যেতে চাইনি শুধু ওর মায়ের রিকোয়েস্টে রাজি হয়েছিলাম। আর তোমাকে জানালে তুমি অহেতুক রেগে যাবে তাই জানাইনি। অন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য আমার ছিলোনা তাই এই মিথ্যেটা বলেছিলাম। কিন্তু এই একটা ডিসিশন যে আমার লাইফে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা আমি তখনো ভাবিনি। আমি সেদিন ওদের বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েকে ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাইনি।
তারপর আমি কাজের মেয়েকে আংকেল আন্টির কথা জিজ্ঞাস করলাম।
— মালা কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না কেন?? আজকে না বার্থডে পার্টি??
— আসলে স্যার…
এমন সময় টুকটুকি রুমে ঢুকে ওকে দেখে মালা চুপ করে যায়।
— আসলে কি হয়ছে ভাইয়া, মা আর বাবা একটু বাহিরে গেছে এই এলো বলে।
আপনি বসুন। এই মালা যাতো ভাইয়ার জন্য শরবত নিয়ায়। আমি কিচেনে রেখে আসছি।
— না থাক লাগবেনা। আচ্ছা আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন??
— আসলে আপনি একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়ছেন। একটু পরেই সবাই চলে আসবে।
আমার খুব অস্বস্তি লাগছিলো একা ওর সাথে কথা বলতে।
— স্যার নেন আফনের শরবত।
আমার দিকে মালা গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।
শরবতটা খাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই।
যখন আমার সেন্স ফিরে তখন আমি নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করি ঠিক যেখানে বসে ছিলাম সেখানে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়া ঘড়ি দেখি ১৮ ঘন্টা আমি এখানে ছিলাম। ও মাই গড আমার মাথা ঘুরাচ্ছিলো, এতক্ষন আমি কি করতেছিলাম। কিছুই মনে নেই। খালি মনে হলো আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম। আমি ওখান থেকে উঠে টুকটুকিরে ডাকতে লাগলাম, কিন্তু কোন শারা পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষনপর মালা বের হয়।
— আফাতো হের কলেজে গেছে। আইচ্ছা স্যার আফনে কালকে এইহানে ঘুমায়ে পড়ছিলেন ক্যান?? আমি আর আফা মিলা কত্ত ডাকলাম আফনেরে কিছুতেই উঠলেন না। আফনার কি শরীর বেশি খারাপ??
আমি ভ্রু কুচকে ওর কথাগুলো শুনছিলাম। আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো।
আমি ওর প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই ওকে জিজ্ঞাস করলাম।
— আংকেল আন্টি ফিরেছে??
— নাহ আসলে কালকে খালুজানের চাচা মারা গেছেন তাই উনারা সেখানে গেছেন। আফার পরীক্ষা আছে আইজকা তাই আমগো দুইজনরে রাইখা গেছে।
— আচ্ছা আমি আসি।
আমি সেদিন কি হয়েছে না হয়েছে কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। তোমাকে আমার আগেই পুরা ব্যাপারটা বলার দরকার ছিলো কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি যদি তুমি উলটা পালটা কিছু বুঝো তাই। কিন্তু আমার সেই ভয়টাই সত্যি হলো। তুমি যেদিন ওই ছবিগুলো আমাকে দেখাও আমার পায়ের তলায় মাটি ছিলোনা। মনে হলো আমি জীবন্ত লাশ হয়ে গেছি। কোন মানুষ এতটা ডেস্পারেট হতে পারে সেটা আমার জানা হতো না যদি টুকটুকিকে না দেখতাম। আমার মেজাজ সপ্তম আকাশে উঠে যায় আমি সরাসরি ওদের বাসায় যাই।
রুমে ঢুকতেই ওকে দেখতে পাই। পিকগুলা ওকে দেখিয়ে ওকে জিজ্ঞাস করি।
— টুকটুকি এইগুলা কি??
— আপনি জানেন না এইগুলা কি?? দেখেইতো বুঝা যাচ্ছে আমাদের একসাথে তুলা পিক সেদিন না আমরা দুজন তুললাম।
আমি আর মেজাজ সামলাতে না পেরে ওকে ঠাসঠাস করে দুইটা চড় বসিয়ে দেই।
ও ওর মুখটা ঘুরিয়ে ফেলে অন্যদিকে। ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
— আচ্ছা অরিনের কি আছে যা আমার মধ্যে নেই। একটা গাইয়া ভুত…
— সেট আপ। অরিনের সাথে নিজের তুলনা করার সাহস তুমি কি করে পাও।
ও মত চরিত্র তোমার মত বেহায়া মেয়ের নেই…
ছিঃ ভাবতেও খারাপ লাগে।
— আমি এত কিছু জানিনা আমি যেকোন মুল্যে আপনার অরিনকে আমার পথ থেকে সরাবো। আপনি দেখে নিয়েন..
— ছিঃ টুক্টুকি তুমি এতটা নিচে নামতে পারো। আচ্ছা তুমি ভাবলে কি করে অরিন আমার লাইফ থেকে সরে গেলে তোমাকে সেইস্থানে বসাবো। শোন জোড় করে কখনো ভালবাসা পাওয়া যায় না। আমি এতদিন তোমার হয়ে অরিনের সাথে অনেক ঝগড়া করেছি। আজ বুঝতে পারছি ও তোমাকে একদম ঠিক চিনেছিলো। আমিই ভুল ছিলাম। আমি তোমাকে স্রেফ ঘৃনা করি। আই হেইট ইউ।
— আমি আপনাকে খুব ভালবাসি। বিশ্বাস করুন যা করেছি তা শুধু আপনাকে পাওয়ার জন্য। খুব ভালবাসি।
আমাদের চিল্লাচিল্লিতে এতক্ষনে টুকটুকির মা রুমে আসেন। আমি ওনাকে ওনার মেয়ের কীর্তিকলাপ সব দেখাই। উনিও আমার সামনে টুকটুকিকে চড় মারেন। আর আমার কাছে টুকটুকির হয়ে ক্ষমা চান। আর কথা দেন ও আমাকে আর ডিস্টার্ব করবে না। সত্যিই এরপর থেকে ও আমার সাথে আর কোন কন্টাক্ট রাখেনি। কিন্তু এতদিন পর কি মনে করে ও আমাকে ফোন দিয়েছে বিশ্বাস করো আমি সেটা জানি না।
আমি ইভানের গালে একটা চড় মারলাম।
— বাহ, বেশ গল্প সাজাতে পারো।আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা।

পার্ট ৩২

আমি সেইরাতে একা একাই বাড়ি ফিরে আসি। ও আমাকে আটকায়নি। তাছাড়া বাসায় আসার পর আমার কোন খবরো নেইনি।
বাসায় একা ঢুকতেই মা আর বাবা আমাকে দেখে অবাক হয়। রাত্রিবেলা তাই বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। পরেরদিন মা আর বাবা দুইজনই আমাকে জিজ্ঞাস করে আমার একা বাসায় আসার কারন।
আমি নিশ্চুপ ছিলাম। তাই বাবা আর জোড় করেনি।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনি যখন আমার শ্বশুর শাশুড়ি দুইজনই আমাকে ফোন করে। আমি কি কারন বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সত্যিটা আমি উনাদের বলতে পারবো না। তাই নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে চুপ করে ছিলাম। ফ্যামিলির সবাই খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে। সামনে অনন্ত ভাইয়ার বিয়ে আর এরমধ্যে আমার কাহিনী সব মিলিয়ে বাসায় একটা থমথমে পরিবেশ। অনন্ত ভাইয়া, নওরিন সবাই অনেক চেষ্টা করেছে সত্যিটা বের করার জন্য কিন্তু শেষম্যাষ সবাই ব্যার্থ হয়েছে। ইভানকে ফোন করলে ও বলতো কি হয়েছে সেটা নওরিন ভালো জানে এটা বলেই ফোন কেটে দিতো। সবাই শেষ পর্যন্ত ওর আসার অপেক্ষা করতে থাকে।
আমি বুঝতে পারছিলাম ব্যাপারটা বেশিদিন চেপে রাখতে পারবো না। কারণ শোনতেছিলাম আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ী নাকি এখানে আসবে। তখন ঠিক আমাকে সত্যিটা স্বীকার করতেই হবে।
ওর ওখান থেকে আসার পর একটা দিনো আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। প্রতিরাতে চোখের জলে বালিশ ভিজাতাম আর সারাদিন চুপচাপ থাকতাম। কয়দিনেই চেহারার বেহাল দশা বানিয়ে ফেলি।
এরমধ্যে একদিন আমি রুমে শুয়ে ছিলাম, তখন অনন্ত ভাইয়া আমাকে দরজার বাইরে থেকে ডাকতে লাগলো।
— অরিন ভিতরে আসবো??
— হুম আসো।
আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম। অনন্ত ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার সামনে বসলো।
— অরিন একটা ঝামেলা হয়ে গেছে একটা হেল্প করবি।
— হুম বলো।
— অর্পিতা না ইদানীং খুব জেদ করছে আমাদের বাসায় আসার জন্য। আমি বুঝতে পারছি না ও এইরকম জেদ করছে কেন?? কিন্তু তুইতো জানিস বিয়ের আগে ওকে এখানে নিয়াসলে সবাই কি ভাববে??
— হুম সেটাই। আচ্ছা আমি কিভাবে হেল্প করতে পারি??
— তুই বলবি যে আজকে তোর একটা ফ্রেন্ড আসবে। তারপর ও আসবে তোরা কিছুক্ষন একসাথে গল্প করবি সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে তারপর সবার সাথে পরিচয় করাই দিবো।
— তারপর সবাই যখন বুঝবে যে এইটা তোর বউ তখন কি হবে??
— ধুর তখন সবাই এইটাকে কো ইন্সইডেন্স ভাববে। তুই ও একটু ভাব ধরবি যে তুই জানতি না যে ওর সাথে আমার বিয়ে। আর ও ভাব ধরবে যে তুই আমার বোন সেটা সে জানতো না।
তাইলেই হলো ব্যাস।
— আচ্ছা ভাইয়া এই ঝামেলার মধ্যে আমাকে না জড়ালে হয় না।
আচ্ছা উঠি বলেই ভাইয়া চলে যেতে লাগলো। কিন্তু ও যে আমায় কথায় মাইন্ড করলো সেটা আমি বুঝে গেছি।
— ভাইয়া দাড়া যাসনা। আচ্ছা তুই যা বলবি তেমনি হবে। এরকম কখনো হয়েছে তুই আমাকে কিছু বলেছিস আর আমি শুনি নাই।
ভাইয়া এক লাফে খাটে এসে আমার গাল চেপে ধরলো
— লক্ষি বোন আমার।
— হুম আমি বরাবরই লক্ষি।
ইদানীং রাত্রিবেলা আমার কিছুতেই ঘুম আসতেছিলো না। আর দিনে খালি ঘুম আর ঘুম পাচ্ছে। তারউপর আজকে সকাল থেকেই এত পেট ব্যাথা করছে বুঝতে পারছি না কি যে হলো। শরীরটাও দূর্বল লাগছে। কিছুই ঠিক করে খেতে পারছি না গন্ধ লাগছে আর গা গুলুচ্ছে।
কখন থেকে বাসায় কলিং বেল বাজছে যেন খুলার কেউ নেই। এই পেট ব্যাথা নিয়ে আমিই গেলাম দরজা খুলতে। অবশ্য কেউ এখনো জানে না যে আমার এত পেট ব্যাথা। গেটটা খুলতেই শাশুড়ি মা আর ইরা হাজীর। ওদের দেখে মনে হয় পেট ব্যাথাটা আরো বেড়ে গেল।
আমি মা কে সালাম করলাম।
— থাক থাক সালাম লাগবে না। উঠ উঠ…
— কেমন আছো ইরা??
— ওই আছি কোনরকম। তোমার খবর বলো??
— ভালো না। আসলে সকাল থেকেই পেট ব্যাথা করছে।
পেছনে কখন যেন মা এসে দাড়িয়েছে আমি খেয়ালই করিনি।
— কখন থেকে কিছুইতো জানাস নাই।
আমি মার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
— কি রে তুই এতক্ষন উনাদের দাড় করাই রাখছিস।
আপা, ইরা মামনি বসো।
ইরা আর মা সোফাতে বসে পড়লো।
— আপা ভালো আছেন?? ভাই কি বাসায় আছেন??
— এইতো ভালোই। আপনার আর ভাইয়ের শরীরতো ভালোই নাহ.
অরিনের বাবা একটু বাহিরে গেছে।
— আর আপা, মন ভালো না থাকলে শরীর ভালো দিয়া আর কি হবে। এই বয়সে কি এইগুলা আর সহ্য হয়। অরিন আমার পাশে বসো।
ভয়ে আমার হাত পা শুকিয়ে আসতেছিলো।
আস্তে আস্তে পেট ব্যাথাটাও বাড়তে লাগলো। আমি কোনরকম সহ্য করে পাশে গিয়ে বসলাম।
— যেদিন আমার ছেলে তোকে আমার বাসায় নিয়া আসে সেদিন থেকে তুই আর ইরার মাঝে কোন তথাৎ খুজে পেয়েছিস? আমি তোকে এখন পর্যন্ত কোন কটু কথা বলেছি??
বলি নাই??
আজকেতো তোমাকে কিছু কথা বলতেই হবে তবে সেটা শাশুড়ি না মা হিসেবে। যদি তুমি আমাকে সেই যায়গাটা দিয়ে থাকো তবেই বলবো।
আমি শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম।
— অরিন মা আমার কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?? আমাকে খুলে বল মা।
— মা তুমি আমাকে বকো মারো যা খুশি তাই করো কিন্তু তোমার ছেলের কাছে যেতে বলোনা। আমি ওর কাছে যেতে পারবো না।
— অরিন শান্ত হ…
আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন মা। জেদ করেনা…
আমার পেট ব্যাথাটা বাড়তে লাগলো প্রচণ্ডরকমভাবে আর সহ্য করতে পারছি না।
— উহু মা মরে এত ব্যাথা। উহু মরে গেলাম।
— কিরে মা পেট ব্যাথা করছে… খুব
— হ্যা খুব ব্যাথা।
মা উঠে বলতে লাগলো,
— আপা ওর বাবাও বাসায় নেই কি যে করি।
আচ্ছা চলেন আগে ডাক্তারের কাছে যাই।
— অবশ্যই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসুন।
মা, শাশুড়ি মা আর ইরার সাথে আমি হস্পিটালে গেলাম।
ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন তারপর রিপোর্ট দেখে বললেন,
— আচ্ছা মেয়ের দিকে কি খেয়াল রাখেন?? এইভাবে অনিয়ম করলেতো চলবে না। আর আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে মেন্টাল স্ট্রেস এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ে এইরকম মেন্টাল স্ট্রেস এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া যাবে না। সেজন্য গার্ডিয়ান দের খেয়াল রাখা উচিৎ। আচ্ছা আপনার হাসবেন্ড আছে সাথে??
— না মানে ও এখানে নেই। — আচ্ছা ঠিক করে খাওয়া দাওয়াতো করেন নাই তার উপর বেশি দৌড়া দৌড়ি করেছেন। ফলে বাবু কষ্ট পাইছে বুঝতে পারছেন।
সবাই একসাথে কি বলে উঠলো।
— হুম উনি প্রেগন্যান্ট ৯ সপ্তাহ রানিং। কেন আপনারা জানতেন নাহ…
সবাই খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
— আচ্ছা আমি মেডিসিন লিখে দিচ্ছি এইগুলা ঠিক মতো খাবেন আর এখানে চার্ট আছে এটা ফলো করবেন। আর হ্যা একদম বেড রেস্ট কস প্লাসেন্টা লো লাইং কেমন মাথায় রাখবেন। আর এক মাস পর আবার আসবেন।
ওই মুহুর্তে আমার অনুভুতিগুলোশুন্য মনে হচ্ছে। আমার কি খুশি হওয়া উচিৎ নাকি দুঃখ পাওয়া উচিৎ বুঝতে পারছি না। সবার মুখের দিকে তাকাই দেখি কি খুশি খুশি মুখ।

পার্ট ৩৩

সবাই খুশিমনে আমাকে বাসায় নিয়াসে। এই খবরটা শোনার পর থেকে বাসায় মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
বাবাতো খবর শুনে বলেই দিলো তার নাতি চাই। শাশুড়ি মা বললেন আল্লাহ যা দেন তাতেই খুশি আমরা। একে একে সবাইকে ফোন করা হচ্ছে খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য। যে কারনে মা আর ইরা এখানে আসছে মনে হয় এতক্ষনে তা ভুলে গেছে। বাবা ফোন করে আমার শ্বশুরকে বলেছেন এখানে আসার জন্য। রাতে সবাই একসাথে খাবেন।
আমাকে খাটের উপর সেই কখন থেকে বসিয়ে রাখছে আর নামাচ্ছেই না।
ইরা এর মাঝে বলে উঠলো,
–মা আসল লোককেতো খবরটা জানানোই হয় নাই।
— হ্যা তাইতো। তাড়াতাড়ি ফোন করো.
ইরা ফোন হাতে নিয়ে ওর ভাইকে কল দিলো..
— হ্যালো।
— হ্যা ভাইয়া বলতো আমি কোথায়??
— আমি কি করে জানবো তুই কোথায়??
— এনি গেস??
— না কোন গেস করতে পারবোনা। বলতে ইচ্ছে হলে বল না হলে চুপ থাক।
— ভাইয়া তুই না কেমন জানি।
— আমি অমনি।
— আমরা তোর শ্বশুরবাড়ি আসছি আমার সুইট ভাবীর কাছে।
— বেশতো এটা আমাকে জানানোর কি আছে।
— আহা খোকার কি রাগ দেখছো। এখন তোকে আমি এমন একটা সুখবর দিতো তোর রাগ পুরা ভেনিশ হয়ে যাবে। কিন্তু তার জন্য কিন্তু তোকে ট্রিট দিতে হবে।
— দেখ আমি অফিসে আজাইরা প্যাচাল পাড়ার টাইম নাই। বলতে ইচ্ছে হলে বল নইলে ফোন রাখ।
— তুই যে বরাবরি কিপটে তা আমি জানতাম। ট্রিট দেয়ার ভয়েই যে এমন ভাব করছিস জানি জানি।
থাক তোকে আমি কিছুই বলবোনা। ভাবি এই নাও তুমিই বলো।
ফোনটা আমার কানে ধরিয়ে দিলো।
কি যে একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় আমাকে ফেলে দিলো তা আমি ছাড়া বোধ হয় আর কেউ বুঝলো না। আমার রাগ লাগছে কেমন সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আরে আমারতো লজ্জাও লাগছে এই খবরটা সবার সামনে ওকে বলতে হবে। কেমন একটা সংকোচ লাগছে অনেকদিন কথা বলি নাই তাই।
— হ্যালো…
ও কিছুক্ষন চুপ থেকে তারপর বললো।
— শুনতে পাচ্ছি কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।
— হুম। সেদিন ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছিলো করাই নাইতো। আজকে আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়ি তাই ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলে যে আমি.
বলতে গিয়েও থেমে গেলাম
— কি?? আমি কি?? কথাটা শেষ করো??
— আমি তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এই কথাটা ওকে বলতে। ও দুই সেকেন্ড চুপ করে গেল খবরটা শুনে…
— আচ্ছা রাখি।
আমি ফোনটা কেটে দিলাম।
— ভাবী ভাইয়া কি বললো??
বলোনা প্লিজ..
— কি আর বলবে সবাই এমন সংবাদ শুনলে যেমন রিএক্ট করে তেমনই করছে…
আমার শাশুড়ি মা উঠে এসে আমাকে বলতে লাগলো,
— আমার ছেলেটা খুব খুশি হয়েছে নারে।
— হুম খুশি হইছে।
— মা ভাইয়া কেমন খারাপ ব্যাবহার করলো আমার সাথে আই থিংক ভাবীর সাথেও সেইম বিহেভ করছে। কেমন খাটাশরে বাবা..
— দাড়া ওর মজা আমি বের করছি?? সব দোষ ওর নইলে আমার লক্ষী বউমা ওর কাছ থেকে এসে পড়ে। ও থাকুক একাই দেখ কেমন লাগে। অরিন তুই আমার সাথেই থাকবি ওর কাছে যাওয়া লাগবে না।
— মা একদম ঠিক বলছো। ভাইয়া একদম বেশি বেশি।
রাতে ডিনার করে সেদিনের মত সবাই বাসায় ফিরে গেলো।
তখন রাত ১২ টা বাজে এমন সময় ফোনে কল আসলো…
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ইভান?? কেন ফোন করেছো ওও?? এতদিনতো ফোন করেনি?? আজ করেছে কারণ স্বার্থ আছেতো?? আরে নাহ ওকেতো খুব একটা খুশি মনে হলোনা। হুম হবেইনাতো ওরতো আর বাচ্চার দরকার নাই?? ধুত এতোকিছু না ভেবে ফোন্টা ধরলেই হতো। ধুর কেটে গেলো যে…
আচ্ছা আমি কি ব্যক করবো??.
ধুর আমার কিসের দায় পড়েছে ওকে ফোন করার?? ওর মত অসভ্য লোকের সাথে ফের কথা বলার কথা আমি ভাবছি কি করে?? ছিঃ কি নিলজ্জ আমি??
আবার ফোনটা বাজছে। আমি অতিদ্রুত ফোন্টা রিসিভ করলাম।কেন করলাম আমি নিজেও জানি না।
— হ্যালো.
— হ্যা বলো কেন ফোন করেছো??
— এত ব্যাস্ত হওয়ার কিছু হয় নাই। আর এটা ভাবার কোন কারণ নেই আমি তোমার খবর নেয়ার জন্য ফোন করেছি। করার হলে আগেই করতাম। আমাকে তোমার এতটা জড় পদার্থ ভাবার কোন কারণ নেই। তুমি একটার পর একটা অন্যায় করে যাবা আর আমি সব সহ্য করে যাবো। নো ওয়ে অরিন।
— এই অন্যায়টা আমি করেছি? হাউ?? আচ্ছা সব কিছু জেনেও আমি সতি স্রির মত চুপ করে মেনে নিলেই ভালো হতো না। তুমিও শোন আমি এতটাও দূর্বল নই।
— হুম সে আমি জানি। আচ্ছা বেশ তা ভালো মানুষ কেন সাজতে গেল?? সবাইকে কেন বললে না তোমার চলে আসার কারন?? আমিতো খারাপ তাহলে কেন বললে না??
— কারন আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসতাম তাই আমার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সত্যিটা আমার মুখ দিয়ে না বের হয় নাই। কারণ আমি যে মুখে একদিন তোমার প্রশংসা সবার সামনে করেছি সে মুখ দিয়ে কুৎসা গাইতে পারবোনা। আর তোমারতো সত্যিটা স্বীকার করার সাহসই নাই। কাপুরুষ কোথাকার।
— অরিন তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো..
ব্যাস আর একটা কথাও শুন্তে চাই না।
— লিমিটতো তুমি ক্রস করছো?? কেন মানুষ তো দোষ করার পর ক্ষমা চায় প্রমিজ করে আর এমন করবে না তোমারতো সেই গুন্টাও নাই।
— সেট আপ। জাস্ট সেট আপ।এই শোন আমি তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ফোন করিনি। তোমার মত বিবেক বিবেচনাহীন, একরোখা জেদি মেয়েকে আমার কিছু বলার নাই। তবে হ্যা একটা কথাই বলবো তুমি কি করবে আমি জানি না। তোমার কোন অনিয়মের কারনে আমার বাচ্চাটার কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না মাথায় রেখো। আর বিছানা থেকে একদম নামবা না বলে দিলাম নইলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
অসভ্য একটা ফোন্টা কেটে দিলো। বাচ্চা, বাচ্চার বাবা হতে আসছে।
দায়িত্ব দেখাতে আসছে, যত্তসব।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনন্ত ভাইয়া এসে আমাকে বললো অর্পিতা আজকেই আসতে চাচ্ছে। আমি ভাইয়ার কথামত সবাইকে বলে দিলাম আমার এক ফ্রেন্ড আসছে ঢাকা থেকে।
মা কিছুটা বিরক্ত বোধ করলো এই সময়ে মেহমান আসবে তাই। কিন্তু আমার শরীরের কথা ভেবে চুপ করে রইলো। সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর একটু শুয়েছি এমন সময় মা ডাকতে লাগলো,
— অরিন দেখ কে এসেছে??
অনন্ত ভাইয়ার হবু বউ মে বি আসছে। অবশ্য মা চিনে না ভয় নেই। ছোট মা দেখতে পেলেই যে কি করবে?? আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ফোনটা বাজছে…
— হ্যা ভাইয়া বল
— তোর ভাবী আসছে, যা যা বলেছি মাথায় রাখিস।
— হুম মাথায় আছে। টেনশন নিসনা।
আচ্ছা ভাবী বাসা কি করে চিনলো??
— আরে আমি বাসা পর্যন্ত দিয়ে পরে ওকে একা গেটের বাহিরে রেখেই চলে আসছি
এবার বাকিটা তুই সামলা।
— হুম সামালাচ্ছি। মা ডাকছে রাখি…
হ্যা মা আসছি..
আমি দ্রুত ড্রইংরুমে গেলাম।
সামনে তাকাতেই চোখ আমার ঝাপসা হয়ে আসছে…
আর কন্ট্রোল করতে পারছিনা নিজেকে। মনে হচ্ছে দুই গালে ঠাসঠাসি চড় বসিয়ে দেই। কিন্তু আমিতো সামনে আগানোর শক্তিই পাচ্ছি না। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো মুহুর্তেই আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম।
চলবে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে