আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩০

0
2146

আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩০
লেখা আশিকা জামান

আমি আজকে একটা লাল শাড়ী পড়লাম। ইভানের লাল রঙ খুব প্রছন্দ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন ভাবলাম কিভাবে চুল্টা ঠিক করবো। আমার সাজতে যত লেট তার একমাত্র কারণ এই চুল। অবশ্য খুলা চুল ওর বেশি প্রছন্দ। তাই পনিটেইল করে চুল্গুলো ছেড়ে দিলাম। হাত ভরতি করে কাচেড় চুড়ি আর চোখে কাজল আর ঠোটে হালকে করে লিপিস্টিক দিলাম।
পিছন থেকে ইভান আমাকে জড়িয়ে ধরেছে,
— কি তোমার হলো।
আমি ওর দিকে ঘুরে ওর গাল চেপে ধরে বললাম হুম হয়েছে।
— উহু হয়নিতো। কিছু বাকি আছে।
— কি??
আয়না থেকে একটা লাল টিপ নিয়ে ও আমার কপালে পড়িয়ে দিয়ে বললো,
— এবার হয়েছে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


আমি ওর শার্ট এর বোতামে হাত দিতে দিতে বলি,
— আচ্ছা বললেনাতো আমাকে কেমন লাগছে??
— এই শার্ট এর বোতাম ধরে টানতেছো কেন??
এখন কি শুরু করে দিবো??
আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম।
— এই তুমি এত বাজে কথা বলো না।
— হুম আমি যে বাজে লোক তাই।
আচ্ছা চল লেডি ড্রাকুলা।
— মানে কি??
আমি লেডি ড্রাকুলা কবে থেকে হলাম।
— তোমাকে সত্যি লেডি ড্রাকুলার মত লাগছে। কেমন লাল টকটকে লিপস্টিক দিয়েছো, মনে হচ্ছে এখনি কারো রক্ত পান করে আসছো।
— এই শোন হরর ফিল্ম দেখে কি তোমার মাথাটা গেছে??
আমি কিন্তু যাবোনা এইরকম বাজে কথা বললে।
রাগে গজগজ করতে করতে বললাম
— আমি লিপস্টিক দিলে লেডি ড্রাকুলা অন্য কেউ দিলে ভালো লাগে নাহ…
ও আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,
— আহা রাগ করছো কেন?.
আমার পরি ছোট্ট পরি।
এবার চল।
আমরা দুজন আজকে সেই যায়গায় গেলাম প্রথম যেখানে আমরা ডেটে গিয়েছিলাম। ওখানে গেলে আমার মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায় পাশে ও থাকলেতো কথাই নেই।
নদীর পাড়ের দমকা বাতাস আমার চুলগুলো বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছিল। ও আমার চুল্গুলো বারবার ঠিক করে দিচ্ছিলো। আমার চুল্গুলো নিয়ে খেলতে ওর বরাবরি প্রছন্দ সেটা প্রথম দিন থেকেই বুঝেছি।
— আচ্ছা অরিন তুমি আর কোনদিন আমাকে ভুল বুঝো না। তাহলে সত্যি আমি মরে যাবো।
আমি ওর মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরি।
— প্লিজ বাজে কথা বলো না। আমি তোমাকে আর কোনদিনো ভুল বুঝবো না। বিশ্বাস করো আগে যা করেছি তার জন্য আমি সরি। আমরা এখন থেকে খুব ভালো থাকবো।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরি সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে।
অনেক্ষন ঘুরাঘুরি করে আমরা শপিং এ যাই। ও আমাকে নতুন কয়েকটা শাড়ী কিনে দেয়। সবগুলোই সে প্রছন্দ করে, আমি শুধু চুপচাপ দেখছিলাম। আসলেই ওর প্রছন্দ খুব ভালো। তারপর ও আমাকে বসিয়ে কোথায় যেন গিয়েছিলো। একটুপর ফিরে আসে তারপর রাতে ডিনার করে আমরা বাসায় ফিরি।
অনেক টায়ার্ড লাগছিলো বাসায় এসে কিন্তু ইভান বায়না করছিলো শাড়ীটা পড়ার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে শাড়ীটা পড়ে ওর সামনে দাড়ালাম। ও আমার চোখ বন্ধ করে আমার গলায় কিছু একটা পড়িয়ে দিলো তারপর আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে চোখটা খুলে দিলো।
আমি আয়নায় তাকিয়ে দেখি ডায়মন্ড এর নেকলেস। আমিতো কি বলবো বুঝতেই পারছি না খুব সুন্দর দেখতে।
— এই তুমি এটা কখন কিনেছো।
— যখন তুমি বসে বসে শাড়ী দেখতেছিলে তখন।
কি প্রছন্দ হয়েছে..
— হুম খুব সুন্দর। আচ্ছা তুমি এটা অযথা কেন কিনতে গেলে কতগুলো টাকা নষ্ট।
— এই তুমি এতো কিপ্টে কেন?? এটা পড়ে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে তুমি কি বুঝতে পারছো?? আর আমি হা হয়ে দেখছি সেটার কি কোন মুল্য নাই। যাও তোমার সাথে কথা নাই..
ও অভিমানি মুখ করে বসে পড়লো।
আমি ওর পাশে বসে ওর গালদুটো আমার দিকে ঘুরালাম..
— আচ্ছা সরি বাবা। আর গাল ফুলাতে হবে না কিনেছো বেশ করেছো।
খুব প্রছন্দ হয়েছে।
— সত্যি..
আমি মাথা নেড়ে বললাম হুম। ও আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে একদম ওর কাছে নিয়ে গেল…
আমার চুলের পিছে হাত রেখে আমার নাকে নাক ঘষতে লাগলো। ও আমার দিকে আরো এগিয়ে আসতে লাগলো, আমি ওর ঠোটে হাত চেপে ধরলাম।
— শাড়িটা চেঞ্জ করে আসি নইলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে।
ও ওর হাত দিয়ে আমার হাতটা সরিয়ে দেয়।
— তোমার কষ্ট করা লাগবে না। আমি খুলে দিবোনি।
আবার ও আমার কাছে আসতো লাগলো।
ওই মুহুর্তে ওর ফোন বেজে উঠলো।
— তোমার ফোন বাজে। পিক আপ…
— বাজুক।
আমি পিছন ফিরে ওর ফোনটা ওর হাতে দিলাম। ফোনের স্ক্রিনে যার নাম ভেসে এল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম। মুহুর্তেই জোড়ে যাওয়া মনটা কাচের মত ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
আমি মনে হচ্ছিলো আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। আমি আর বসে থাকতে পারছি না। মাথাটা ঘুরাচ্ছে, দুনিয়াটা অন্ধকার লাগছে মনে হচ্ছে অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছি।
কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি।
যখন আমার সেন্স ফিরে তখন নিজেকে হস্পিটালের বেডে আবিষ্কার করি।
চোখ মেলে ইভানকে আমার হাত ধরে পাশে বসে থাকতে দেখি। আমার চোখ খুলা দেখেই ইভান হকচকিয়ে উঠে বসে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও এতক্ষন কান্না করেছে। চোখের জলের দাগ গুলো এখনো মিশে নি।
এই চোখের জলই কি মিথ্যে??
জানিনা। ও যে এতদিন পরো টুকটুকির সাথে যোগাযোগ রেখেছে সেটাই কি এনাফ রিজন না। ও ঠিক কি চায় তা আমি এখনো জানি না? ওকে হয়ত এখনো আমি পুরোপুরিভাবে চিনে উঠতে পারি।
— অরিন এখন কেমন ফিল করছো?
— দেখতেইতো পাচ্ছো। সেন্স ফিরেছে।
— হুম। ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছে চল সেগুলো করিয়ে আসি। হাটতে পারিবেতো??
— আমি কোন টেস্ট করাতে পারবো না।
— পারবোনা বললেতো হবে না, যেতে হবে। ছেলেমানুষি করোনা।
— একবার যখন বলেছি করাবো না ব্যাস করাবো না। — তুমি যদি নিজের ভালোটা না বুঝো তাহলে আমার কিছু বলার নেই চল বাসায় ফিরে যাই।
আমি ওর প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম।
— আমার মা-বাবাকে ফোন করেছো??
— না।
— আচ্ছা তাহলে ফোন করো। আমি বাড়ি যাবো।
— কেন??
— তোমার সাথে থাকা ইম্পসিবল। বুঝতে পারছো না তুমি?? দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। দিন শেষে নৌকা এক্টাই থাকে। তাই আমার মনে হয় তোমার টুকটুকির কাছেই যাওয়া উচিৎ।
— সেট আপ টুকটিকির নাম আমার সামনে ভুলেও উচ্চারণ করবে না। আর এইটা হসপিটাল কোন সিনক্রিয়েট করবা না।যা বোঝাপড়া করার সেটা বাসায় গিয়ে করবো।
— আমি আর ওই বাসায় ফিরে যাবো না।
ইভান আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে
জোড় করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর বাসায় নিয়াসলো।
আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।
পুরা রাস্তা আমি চুপচাপ ছিলাম। বাসায় এসে রুমে ঢুকে আমি আর কান্না থামাতে পারলাম না।ফ্লোরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ও আমার কান্না দেখে ব্যালকনিতে চলে গেলো যাওয়ার আগে দরজাটা এমন জোড়ে লাগিয়ে দিলো মনে হলো সমস্ত রাগ দরজার উপড় খাটালো।
চলবে।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে